Friday 24 March 2017

ভাবের বাঙালি অথবা লোভী কাঙালির চুপকথা – পর্ব ২


ভাবের বাঙালি অথবা লোভী কাঙালির চুপকথা – পর্ব ২

হাঁস ছিল সজারু ব্যাকরণ মানিনা, হয়ে গেল "হাঁসজারু" কেমনে তা জানিনা। উঁহু এই হাঁসজারু জীবটির দেখা শুধু সুকুমার রায়ের কবিতায় মিলবে এমন ভুলেও ভাববেন না, চোখকান খোলা রাখিলে মদীয় শিক্ষিত ভদ্দরলোকেদের মাঝে থুড়ি এই বঙ্গ সমাজেও এদের যত্র তত্র দেখিতে পাইবেন। দেখিবেন ইহারা জনগনের মাঝে সমাজ শোধরানোর বুলি থুড়ি মানবতার ঝুলি হাতে জ্ঞ্যান বিতরনের জন্যে উপস্থিত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কেউ শ্রীযুক্ত কবি, কেউ কালো কোটধারি আইনের রক্ষক, কেউ বা শিক্ষক, শিক্ষিকা নামক মহান কুলোদ্ভবজাত, কেউ ইঞ্জিনিয়ার - ডাক্তার, মানে সব হোয়াইট কালার প্রফেশনাল, আর কেউবা নিতান্তই স্বতন্ত্র অর্থাৎ আঁতেল গোষ্ঠীভুক্ত। তবে এনাদের উদ্দেশ্য মহৎ অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের মুণ্ডপাত। বেশ কিছুদিন আগে মুক্তমনা বলে একটি ওয়েবসাইটে কিছু লেখা দেখলাম স্বামীজি কে নিয়ে, মনে ঘৃণা হল এঁরা মুক্তমনা না হীনমনা? নইলে এইভাবে ঘৃণা, অবিশ্বাসের বিষ ছড়াতে পারতেন না। নিজেরা এই দেশ সমাজ কে কি দিতে পেরেছেন তাঁর বিশ্লেষণ না করে স্বামীজির মূল্যায়ন করতে বসেছেন!

স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসাবে এই “হাঁসজারু” দের মত প্রকাশের অধিকার অবশ্যই আছে, আমি এটাকে সন্মান জানাই। কিন্তু মনে খুব প্রশ্ন জাগে যে শ্রী যুক্ত বাবু/ বিবিদের প্রতি প্রতিবাদ যদি করতেই হয় তাহলে সব ক্ষেত্রে করেন না কেন? যখন দেগঙ্গা, কালিয়াচক, তেহত্ত বা ধুলাগরের মতো ঘটনাগুলি ঘটে তখন কি আপনাদের কলমগুলি কনডম পড়ে থাকে? যখন ভারতে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রে হিন্দু নিগ্রহের ঘটনা ঘটে কোথায় থাকেন এঁরা আর এঁদের লেখনী? যদি প্রকৃত মানবতাবাদী হিসাবে নিজেদের তুলে ধরতে চান তাহলে সব ধর্মের উগ্রতা, গোঁড়ামি নিয়ে লিখুন নইলে শুদু হিন্দু ধর্মকে সফট টার্গেট করবেন না। কিন্তু জানি আপনারা পারবেন না, আপনাদের মস্তিস্ক, বিচার বিবেচনা সবই বিক্রিত এবং বিকৃত। ভারতের মতো বহু ধর্ম, বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি, বহু জাতি-উপজাতি-জনজাতির দেশে না হিন্দু মৌলবাদ কাম্য না ইসলামী মৌলবাদ কাম্য। তাই প্রতিবাদ করতে হলে সব ক্ষেত্রেই করা উচিত যাতে কোনও একটি পক্ষ তোষণের সুবিধা না পেয়ে বসে, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহল ও রাজনীতির ব্যাপারীরা সেটাই করে চলেছেন দিনের পর দিন ধরে। 

এটা কি আমরা বুঝতে পারছি যে এই অনৈতিক তোষণের ফলে কেবল হাত শক্ত হবে হিন্দু, মুসলিম উভয় মৌলবাদীদের। অপরদিকে সবথকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ শান্তিপ্রিয় হিন্দু-মুসলমানরা, যারা কোনভাবেই এই মৌলবাদীদের সমর্থন করেন না। একটু ভেবে দেখুন না আইএস, আল-কায়দা প্রভৃতি জঙ্গি সংগঠনগুলির সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য সকল মুসলমানরা দায়ী নয়, তবু তো সারা বিশ্বই আজ তাদেরই সন্দেহের চোখে দেখছে! তাহলে এই পারস্পরিক সন্দেহের বাতাবরণে যেখানে সমাজের সব স্তরের বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী ও কলাকুশলীদেরই প্রত্যেকটি ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ করা উচিত ছিলো সেখানে তাঁরা তা না করে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মকেই টার্গেট বানিয়ে নিলেন কিসের আশায়? 

আর রাজনৈতিক ছাতার তলায় মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা বুলি আওড়ে যাতে নিজেদের ব্যক্তিগত আখের গুছিয়ে নেওয়া যায় এই আশায় তো? না কবিতার ঘায়ে ধর্ম মুচ্ছ যায় না, অত ঠুনকো নয় ধর্মের ভিত, কিন্তু হ্যাঁ এতে মৌলবাদীদের হাত শক্ত হয়, আর অবশ্যই নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়া যায়। আর এই ছল চাতুরী কেউ ধরে ফেললেই তাঁর উপর তকমা লাগিয়ে দাও সাম্প্রদায়িক, তারপর বাকি কাজ তো সহযোগী মৌলবাদী, রাজনৈতিক নেতা/ নেত্রী, তাঁদের চ্যালা চামুণ্ডারাই করে দেবে। 

বাহরে বুদ্ধিজীবী সমাজ কি সুন্দর তোমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার মাপকাঠি? আসলে মেকি বুদ্ধিজীবী মহল ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের শিকড়, অন্তরাত্মা থেকে আহরণ না করে পাশ্চাত্য দেশগুলি থেকে টুকে মেরে দিয়েছে তাই আজ আমরা উপহারে পেয়েছি আজকের এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা।
আজকের ভারতে এই বুদ্ধিজীবী মহল দুর্যোধনের প্রকৃত উত্তরসূরি কারণ দুর্যোধন অন্ততও মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করেছিলেন "জানামি ধর্মম্ ন চ মে প্রবৃত্তি, জানামি অধর্মম্ ন চ মে নিবৃত্তি"। অর্থাৎ ধর্ম কি, তা আমি জানি। কিন্তু আমার তাতে প্রবৃত্তি নেই। আর অধর্ম কি, তাও আমি জানি কিন্তু তা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করার ক্ষমতা আমার নেই। আর এই বুদ্ধিজীবীরা তো সেটুকু স্বীকার করার মতো সৎসাহস দেখাতে পারছেন না।

তাহলে উপায়? মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারার একটি উক্তি মনে পড়ে গেলো – “অন্যায় যখন নিয়ম হয়ে উঠে, তখন প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়“। একটা গানের কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছে – “পথে এবার নামো সাথী পথেই হবে পথ চেনা, জনস্রোতে নানান মতে মনোরথের ঠিকানা, হবে চেনা, হবে জানা”। সমাজের সর্বস্তরে আজ এই মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চাই, নইলে আগামী দিনে ক্ষতিগ্রস্ত আমরাই হবো, আর এই ধূর্ত বুদ্ধিজীবী মহল আর রাজনীতির কারবারিরা আখের গুছিয়ে বিদেশে গিয়ে ভারত দহনের দৃশ্য দেখে বেহালা বাজাবে। 

তাই আকুতি একটাই চিনে নিন এই ভণ্ড ধর্ম নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী দের ও তাঁদের প্রভু রাজনীতির ব্যাপারীদের, ভুলে যাবেন না কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের সেই কবিতার লাইন – অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে। অন্যাযের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিক্ষা আমাদের ভাগবত গীতাও দিয়ে গেছে (অবশ্য যদি ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী মহল গীতাকে হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থ হিসাবে চিহ্নিত করেন তাহলে আলাদা কথা), তাহলে আমরা আজ বিস্মৃত কেন? 

কিন্তু আমি স্মরনাপন্ন আজ ভাগবত গীতার, কানে যেন বাজছে সেই অমোঘ শাশ্বত বরাভয় ধ্বনি - “यदा यदा हि धर्मस्य ग्लानिर्भवति भारत। अभ्युत्थानमधर्मस्य तदात्मानं सृजाम्यहम्॥ परित्राणाय साधूनां विनाशाय च दुष्कृताम्। धर्मसंस्थापनार्थाय सम्भवामि युगे युगे “॥ জয় হোক এই ভারতের, এই ভারতের সকল অধিবাসীগণের। শান্তি, সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক তাঁদের জীবন। উত্তরসূরিদের জন্যে থাকুক এক শক্তিশালী, সঙ্ঘবদ্ধ ভারত।  


(আমার এই লেখা কারও ভাবাবেগে/ স্বার্থে আঘাত দেওয়ার জন্যে নয়, অপিতু এই লেখা আমার মনোকষ্টের বহিঃপ্রকাশ মাত্র, তবু যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তা অনিচ্ছাকৃত ও এই ত্রুটি মার্জনীয়) 



No comments:

Post a Comment