Monday 31 October 2016

পাকিস্থান – একটি ব্যর্থ দেশ তবে কি ক্লাইম্যাক্স আসন্ন?






পাকিস্থান – একটি ব্যর্থ দেশ তবে কি ক্লাইম্যাক্স আসন্ন?

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে চোখ বোলালে একটি প্রশ্ন সবার মনে উঠে আসে, সীমান্তে আবার বর্বরোচিত ঘটনা, আবার এক সৈনিকের মুণ্ডছেদ, দেহ বিকৃতি তবে কি যুদ্ধ আসন্ন্য? নাপাক পাকিস্থানকে কি সঠিক এবং জুতসই জবাব দেওয়া হবে?

না আমি যুদ্ধের স্বপক্ষে বা বিপক্ষে গলাবাজি করতে কলম ধরিনি, আমি জানি ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধলে সেটা পুরোদস্তুর যুদ্ধের রুপ নেবে, হয়তো কেন পাকিস্থান প্রথমেই পরমাণু হামলা করবে আর তাঁর প্রত্যুত্তরে পাল্টা ভারত, যার ফলে এই উপমহাদেশে আড়াই কোটির বেশি মানুষ প্রান হারাবেন, গুরুতর জখম বা সারাজীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যাবেন কম করে ৬০লক্ষের বেশি মানুষ। কিন্তু একশ্রেণীর মানুষের ভ্রান্ত উচ্চাশা, মনগড়া কিছু ভাবনার সমূলে আঘাত করাটা বেশি দরকার।

হয়তো এক এক সময় পরিস্থিতিটাই এমন দাঁড়ায় যে যুদ্ধটাই অবধারিত হয়ে যায়, এটাই যুগধর্ম। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকে যে দেশ শুধু ভারত বিরোধিতা করে এসেছে, সমগ্র বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাস রপ্তানি করে চলেছে সেই দেশের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু শত্রুর ক্ষমতা, দোষত্রুটি ভালোভাবে অনুধাবন না করে যুদ্ধে জড়িয়ে পরাটা আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ নয়। টাই যারা যুদ্ধ যুদ্ধ জিগির তুলছেন তাঁরা সবদিক চিন্তা বিবেচনা করে এই দাবি তুলছেন তো? একটু তলিয়ে দেখে নেওয়া যাক।

পাকিস্থানের নাপাক নীতি, কূট কৌশল

সম্প্রতি জইশের মুখপত্র আল-কালামের সর্বশেষ সংখ্যায় মাসুদ আজাহারের বক্ত্যব্য - ৯০-এর দশক থেকে পাক সরকার জঙ্গিদের সরাসরি সমর্থন করে ফায়দা পেয়েছে। এখন পাক সরকার আর একটু সাহস দেখালে কাশ্মীর তো বটেই, সিন্ধু জল-সমস্যাও মিটে যাবে চিরকালের জন্য। শুধু মুজাহিদিনদের জন্য দরজাটা খুলে দিক পাক সরকার। কি অকপট উক্তি? না এটা নতুন কোন কিছু নয়, আসলে এই সবই জেনারেল জিয়া উল হকের উর্বর বুদ্ধির দান। যিনি বলে গেছিলেন ভারতকে হাজার ক্ষত দিতে হবে আর সেটা ভিতর থেকেই, যাতে ভিতরের বুনিয়াদ নড়বড়ে হয়ে যায় আর আমাদের এক আঘাতেই ভেঙ্গে পড়ে। তিন তিনবার শোচনীয় পরাজয়ের পর পাকিস্থানের অঘোষিত নীতিই হল “হাজার ক্ষত আর হিট অ্যান্ড রান”। ১৯৯৯ সালে এই জেনারেল জিয়া উল হকের প্ল্যান অনুযায়ী টার্গেট বানানো হয় দেশের ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাদ্রাসা গুলিকে, যেখানে উস্কে দেওয়া হবে ভারত বিরোধী জিগির তাও ধর্ম রক্ষার নামে আগুনে সেঁকে নিয়ে। ছড়িয়ে দিতে হবে এই বার্তা – কাশ্মীরে মুসলমান ভাইরা ভারতের হিন্দু শাসকের হাতে অত্যাচারিত এবং নিপীড়িত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর একটি গাঁজর – আম পাবলিককে গিলিয়ে দাও জিহাদের লক্ষ্য হল মুঘল আমলের মুসলিম শাসন কে ফিরিয়ে আনা, অর্থাৎ কিনা ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশ, আফগানিস্থান সব এক শাসনের ছাতার নীচে চলে আসবে।


এই স্বপ্নের পোলাওতে ঘি ঢেলে চলেছে সবকটি ভারত বিরোধী সংগঠন, আর প্রধান বাবুর্চি পাকিস্থান তো আছেই।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে নবতম সংযজন রাজধানীর অলিন্দে আইএসআইএর চর, এর আগেও এধরনের ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি বারবার সামনে চলে আসছে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ছিদ্রগুলি। শত্রুকে আক্রমণ করতে গিয়ে এটা ভুলে গেলে চলবে না দেশের ভিতরে আজও ঘাঁটি গেঁড়ে বসে আছে মিরজাফর, জগতশেঠের দল, কে বলতে পারে শত্রুর আক্রমণ বা প্রতি আক্রমনে তাঁরা শত্রুকে রসদ যোগাবেন না দেশের ভিতর থেকে? তাই যারা আবার একটি সারজিক্যাল স্ট্রাইক  চেয়ে গলা ফাটাচ্ছেন তাঁদের উদ্দেশে বলি আজ সীমান্তে সারজিক্যাল স্ট্রাইকের  পাশাপাশি আশু প্রয়োজন দেশের অভ্যন্তরে সারজিক্যাল স্ট্রাইকের যাতে শত্রু শিবিরে তথ্য বা অন্য কোনও রকম সাহায্য না পৌছাতে পারে সেবিষয়ে সুনিচ্ছিত হওয়া দরকার।

পাকিস্থানের বিরুদ্ধে কি আদৌ পাশে পাওয়া যাবে কোনও দেশ কে?

উরি হামলার পর আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, রাশিয়ার খানিকটা সমর্থন পেয়েছি আমরা, কিন্তু পাকিস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কোনও দেশই এগিয়ে আসবে না। সবাই গা বাঁচাতে ব্যাস্ত যাতে তথাকথিত জিহাদের আঁচ নিজেদের দেশে যাতে না পড়ে। আজ যে আমেরিকা ভারতের কাছাকাছি এসেছে (হয়তো খানিকটা নিজেদের তাগিদেই, পরবর্তীকালে এই নিয়ে লেখা যাবে) ভুলে গেলে চলবে না এই আমেরিকাই সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, তদানীন্তন দোসর পাকিস্থান কে বাঁচানোর জন্যে। সেই সময় রাশিয়া ভারতের সাহায্যে এগিয়ে না এলে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতো।

বৃহৎ শক্তিগুলি অস্ত্র বিক্রয়ের সহজলভ্য বাজার হিসাবে এই উপমহাদেশে কখনই চাইবে না সমস্যার সমাধান হোক বরং চাইবে তোমরা যুদ্ধ করো, সমরাস্ত্র যা লাগবে আমরা দেবো, তোমরা শুদু কড়ি ফেলো। কে না জানে অস্ত্র যখন লাভজনক পন্য তখন যুদ্ধের থেকে বড় বিজ্ঞ্যাপন আর কিছু হতে পারে না।

তাহলে আমাদের এখন কি করা উচিত?

১) এবিষয়ে মহামতি চাণক্যের নীতি অনুসরণ করা উচিত আমাদের – আমাদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গুলিকে ঢেলে সাজাতে হবে। উস্কে দিতে হবে বালুচিস্থান, ওয়াজিরিস্থান, সিন্ধু প্রদেশ সমস্যাগুলি, যাতে ভিতরে ভিতরে গৃহযুদ্ধে ক্ষয়ে যায় পাকিস্থান। তবে ঢাকঢোল পিটিয়ে ৫৬ইঞ্চি ছাতি না পিটিয়ে (আমাদের সহজাত অভ্যাস হল যে কোনও সফলটাকে ভোট বাক্সের রাজনীতি বানানো, এর থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন) অতি সঙ্গোপনে।

২) আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সেনা ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর আমুল পরিবর্তন দরকার। দেশে নতুন নতুন শিল্প, ব্যাবসার দিক খুলে দিয়ে অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র হয়ে উঠতে হবে ভারতকে। অস্ত্র আমদানির চেয়ে দেশেই বানাতে হবে উন্নত অস্ত্র, এতে কর্মসংস্থানও হবে, দেশের পরিকাঠামো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

৩) আমেরিকা, ইসরায়েল, রাশিয়ার সাথে সামরিক সুসম্পর্ক আরও উন্নত করতে হবে, পাশাপাশি পাকিস্থানের পাশাপাশি সম্ভাব্য শত্রু কে চিনে নিতে হবে। হ্যাঁ আমি চীনের কথা বলছি, চীনই একমাত্র দেশ যে পাকিস্থানকে দরাজ হাতে সমর্থন করে। অবশ্যই নিজের স্বার্থে, চীন এশিয়া সহ সারা বিশ্বে দাদাগিরি করতে চায়, এমতাবস্থায় শত্রুর শত্রু আমার মিত্র প্রবাদটিকে যথাযথ রুপে কাজে লাগাতে হবে। চীনের প্রতিপক্ষ্য দেশগুলিকে নিয়ে একটি জোট তৈরি করতে হবে, যাতে পারস্পরিক নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। ভুলে গেলে চলবে না ভারতে বিশাল বাজারের উপর চীনের নজর আছে, সেই বাজারকে কাজে লাগিয়ে চীনকে পাকিস্থানের পাশ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। চীন ও পাকিস্থান দুটি দেশের বিরুদ্ধেই সব সময় তৈরি থাকতে হবে সামরিক এবং অর্থনৈতিক উভয়দিকেই।

৪) রক্ষণাত্মক নীতি থেকে সরে এসে রক্ষণাত্মক আক্রমণের নীতি নিতে হবে আমাদের। পাকিস্থানের অর্থনীতি এমনি বিধ্বস্ত, দৈনন্দিন পরিকাঠামোগত খরচ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে শরিফ সরকার। জঙ্গি পোষার খরচ, তাঁদের অস্ত্র শস্ত্র সমেত যাবতীয় খরচার একটা বড় অংশ আসে বিদেশ থেকে অনুদান বাবদ। পাকিস্থান এই অনুদান পেয়ে থাকে দেশের আভ্যন্তরীণ উন্নয়ন আর সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্যে, যেটা তাঁরা ব্যয় করে থাকে জঙ্গি দের মদতের কাজে।  কিন্তু আন্তজাতিক বিশ্ব ধীরে হলেও পাকিস্থানের স্বরূপ বুজতে পারছে, তাই তারাও আজ হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। আরও ব্যাপক হারে পাকিস্থানের মুখোশ বহিবিশ্বের কাছে খুলে দিতে হবে যাতে আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে পাকিস্থান। তাঁদের অর্থের যোগান বন্ধ করে দিতে হবে। সময় এসেছে মোস্ট ফেভারদ নেশনের তকমা কেড়ে নিয়ে পাকিস্থানের সাথে ব্যাবসা বানিজ্য বন্ধ করার। যাতে পাকিস্থান সমুহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, সাথে সাথে কূটনৈতিক দিক থেকেও বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে পাকিস্থানকে। নদী কূট নীতির সম্মুখীন হয়েছি আমরা, মিত্র পাকিস্থানের কথায় ইতিমধ্যে চীন ব্রহ্মপুত্রের একটি উপনদীর জল আটকাতে শুরু করে দিয়েছে, সেখানে সিন্ধু জলচুক্তি ভাঙ্গার রাস্তায় ভারত যাবে কিনা সেটা ভাবার অবকাশ থাকলেও, পাল্টা চাপ আফগানিস্থানের দিক থেকে দেওয়া যেতেই পারে। ইতিমধ্যে আফগানিস্থানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি আফগানিস্থানের পূর্বাঞ্চলে যে তিনটি প্রধান নদী আছে তাঁর উপর বাঁধ নির্মাণের জন্যে ভারতের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। যেখানে ইতিমধ্যে আফগানিস্থানের পশ্চিমাংশে হেরাট প্রদেশে হরি নদীর উপর সালমা বাঁধ ও জলাধার তৈরি করছে ভারত তাই আফগানিস্থান চায় দেশের পূর্বাঞ্চলেও এই ধরনের বাঁধ তৈরি করে দিক ভারত। আফগানিস্থান এমনিতেই পাকিস্থানি জঙ্গি সন্ত্রাসের শিকার, তাই পারস্পরিক নির্ভরতা বাড়িয়ে দুটি দেশ একত্রে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করলে আখেরে লাভ হবে। আফগানিস্থানে একটি শক্তিশালী বেস থাকা দরকার ভারতের এটা উপলব্ধি করতে হবে। 

৫) সর্বোপরি নিজের দেশের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে আস্তিনের সাপ ছোবল মারতে না পারে। সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি, তোষণের নীতি ছেড়ে সব ধর্মের মানুষকে একত্র করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই দেশ শুধু মাত্র কোনও একটি জাতির, ধর্মের মানুষের জন্যে নয় এই দেশ সমগ্র ভারতবাসীর। জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে কোনও সম্প্রদায়কে একঘরে বা নিপীড়ন করে নয়, তাঁদের সমস্যা আন্তরিকভাবে অনুধাবন করতে হবে। যাতে তাঁরা কোনও দেশ বিরোধী শক্তির কাঠপুতুল না হয়ে যেতে পারে।

দেশ নানান সমস্যার সম্মুখীন, এই দ্রোহকালে যদি শুভ বুদ্ধির উদয় না হয় তাহলে আমরাই পিছিয়ে পড়ব। অতীতকাল থেকে যুদ্ধ কোনও সমস্যার সমাধান দিতে না পারলেও যুদ্ধ হয়েছে আর ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু যুদ্ধকে এড়িয়ে কূটনৈতিক পথে যদি পাকিস্থানকে সমুচিত জবাব দেওয়া যায় এর থেকে ভালো কি বা হতে পারে। এরপরেও যদি যুদ্ধের পথে যেতে হয় সেটা নির্ণায়ক যুদ্ধই হোক।

Wednesday 26 October 2016

ছোটবেলায় ভুত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশী



ছোটবেলায় ভুত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশী

কালীপূজো এলে আমি যেন আমার কৈশোরে ফিরে যাই, মনে পড়ে যায় সেই সব ফেলে আসা দিনের কথা। সেই সময় হাওয়ার বদল টের পাইয়ে দিত, কালীপূজো আসছে। আমাদের বাড়িতে এই সময় আকাশ প্রদীপ দেওয়া হতো, সেই সময় তো ডিশ টিভি ছিল না, সম্বল বলতে ছিল ছাদের মাথায় অ্যান্টেনা। তার সাথেই একটুকরো বাঁশ বেঁধে তাতে একটি নীল রঙের ছোট ডুম দিয়ে আলো দেওয়া হতো। কোন এক পড়ন্ত বিকালে আমি আর বাবা ছাদে উঠে এই কাজে লেগে পড়তাম গভীর আগ্রহ নিয়ে, সন্ধ্যার আকাশে যখন সেই নীল ডুমখানি জ্বলে উঠত, অদ্ভুত এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হতো চারিদিকে। আমি চুপ করে বসে সেই নিস্তব্দতায় হারিয়ে যেতাম।

কালীপূজোর সাথে আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল ভুত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশী নিয়ে, দুপুরে মায়ের হাতের চোদ্দশাঁক ভাজা, গরম ভাতের সাথে ঘি দিয়ে অপূর্ব লাগতো। মা বাবা কে বলে দিতো – ঠিক করে দেখে আনবে, ভুলে যাবে না কিন্তু। বাবা্ ঠিক বাজার থেকে খুঁজেপেতে নিয়ে আসতো, তবে তথাকথিত চোদ্দশাঁকের মধ্যে সব ঠিক ঠিক থাকতো কিনা দেবা ন জানন্তি। শাস্ত্রমতে এই শাকগুলি হল যথাক্রমে— ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা এবং শুষণী। আজকের প্রজন্ম হয়তো জানেই না এই চোদ্দশাঁকের কথা। তাঁরা হয়তো হেঁসে উড়িয়ে দেবে এসব গ্রাম্য প্রথা বলে। কিন্তু এর পিছনেও বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা আছে – এই সময় যেহেতু ঠাণ্ডার আমেজ এসে যায়, হাওয়ায় ভাসে হিম যা থেকে নানারকমের রোগ সৃষ্টি হয়, তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ানোর জন্যে এই চোদ্দশাঁক খাওয়ার প্রথা। তাই আমার মতে খাওয়াই ভালো, আর যাই হোক এতে ক্ষতি তো কিছু নেই। যাই হোক ফিরে আসি প্রসঙ্গে, নরক চতুর্দশীর দিন বাড়ীর আনাচে কানাচে ১৪টি প্রদীপ দেওয়া হতো। আমি খুঁজে খুঁজে বের করতাম অন্ধকার জায়গাগুলো, মা বলতো এই দিনে প্রেতলোক থেকে আত্মারা পৃথিবীতে নেমে আসে। যেসব আত্মারা প্রেতলোক প্রাপ্ত হয়, যারা স্বর্গ/নরক কোনটাতেই যেতে পারে না, তারা এই দিনে জেগে ওঠে। এই একদিন তাঁদের আলো দেখানো হয়, এতে তাঁরা খুশি হয়, এছাড়া আজকের দিনে এই চোদ্দ প্রদীপ দিয়ে মা লক্ষ্মীকেও গৃহে আসার আমন্ত্রণ দেওয়া হয়। আমিও বেশ খুশি হতাম আর যাই হোক আজ ভুতে আমার ঘাড় মটকাবে না, তাঁদের যে খুশি করা হচ্ছে আজ। আগে মাটির প্রদীপ দেওয়া হতো, তাতে রেড়ির তেল দেওয়া হতো, পরে অবশ্য প্রদীপের জায়গা নিয়েছিল মোমবাতি। পরে বাবার কাছে, বই পড়ে জেনে ছিলাম আরও অনেক অজানা তথ্য যে – এই নরক চতুর্দশীর দিনই কৃষ্ণ ভগবান নরকাসুরকে বোধ করে ছিলেন, থুড়ি তিনি তো নন বধ করেছিলেন তাঁর স্ত্রী সত্যভামা। দশেরায় যেমন রাবণের মূর্তি দাহ করেন উত্তর ভারতের মানুষজন, গোয়ায় তেমনি দাহ করা হয় নরকাসুরের মূর্তি। মনে করা হয়, নরাকসুরের এই প্রতীকী দহন সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে, দূর করবে যাবতীয় অশুভ শক্তি, সমাজ পাপমুক্ত হবে। কে জানে আদৌ আমাদের সমাজ কোনদিন পাপমুক্ত, অশুভ শক্তির হাত থেকে পরিত্রাণ পাবে কিনা? আবার প্রসঙ্গ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি, ফিরে আসি নিজের কথায়। বাড়ীর আনাচে কানাচে, কুয়োর ধারে, তুলসী মঞ্চের পিছনে মোমবাতির নরম আলো অদ্ভুত এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করতো। আমি আর আমার পোষা কুকুর লুসি চুপ করে বসে সেই মায়াবী পরিবেশের আনন্দ নিতাম যতক্ষণ না মা ডাক দিতো।

আজকের কর্মব্যাস্ত জীবনে যখন সব হারানোর পালা, তখন হয়তো স্মৃতি সবথেকে বড় পাওয়া। 

আমি মনেপ্রানে বিশ্বাস করি প্রত্যেকটি সার্বজনীন উৎসব মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদযাপন করে হয়ে থাকে। দীপাবলির এই উৎসব অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালানোর উৎসব, নিজের অন্তরের সকল অজ্ঞতা, অন্ধকারকে মুছে ফেলে আলোয় উত্তরণের উৎসব। হয়তো অঞ্চল বিশেষে দীপাবলির মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু মূল কথা এক - আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার পথই দেখায় এই উৎসব। সবার ভালো হোক, সবাই ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Thursday 20 October 2016

ভারতীয়দের থুড়ি বাঙ্গালীর শোকের আয়ু ঠিক কত?




ভারতীয়দের থুড়ি বাঙ্গালীর শোকের আয়ু ঠিক কত?

বেশ কিছুদিন আগে কোন এক লেখায় পড়েছিলাম –

“বিংশ শতাব্দীতে
মানুষের শোকের আয়ু
বড় জোর এক বছর।”
তুমি একবিংশতে নেই
তাই পারোনি দেখে যেতে,
একবিংশ শতাব্দীতে
মানুষের শোকের আয়ু
বড় জোর এক দিন কি দুই দিন।
শিশির জমতে শুরু করার সময়ে
শোক এখন বাষ্প হয়ে উবে যায়,
সুর্য্য ডোবার সময়কাল পর্যন্ত
মানুষ আর অপেক্ষা করেনা
প্রহসনের কোরাসে মিশে যেতে।
লাশগুলো নিমেষে পঁচে যায়,
ভাগ্যবান দুই – একজন
মায়াকান্নার সাগরে ভেসে যেতে যেতে
বিক্রয়যোগ্য মমি হয়ে উঠেন!!”

এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত উরি হামলায় নিহত জওয়ানদের জন্যে চোখের জল ধরে রাখতে পারছিল না দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীরা, সোশ্যাল মিডিয়াকেই ব্যাটেলফিল্ড বানিয়ে পাকিস্থানের মুণ্ডু পাত চলছিলো তীব্র গতিতে, কোন পথে পাকিস্থানকে দিতে হবে উপযুক্ত জবাব, সে বিষয়ে মোদীজী কিংবা দোভাল সাহেব কে পরামর্শ দিতে পিছপা নই আমরা, আজ একি ছন্দপতন? উরি হামলা, সারজিক্যাল স্ট্রাইক এর পর সিন্ধু দিয়ে কত জল তো গড়িয়ে গেলো, আরও কতবার ক্ষতবিক্ষত হল কাশ্মীর, কিন্তু বীর বাঙ্গালীদের কোন পোস্ট তো চোখে পড়ল না? অবশ্য সংস্কৃতিমনস্ক, উদার মানুষ আমরা, অসব হামলাতামলা তো কাশ্মীরে হয়েই থাকে, এর জন্য শারদউৎসবে যাতে ঘাটতি না থাকে তার জন্যে দেদার সেলফি তুলেছি আর পোস্ট করেছি।  না আমি উৎসব, আনন্দ এসবের বিরোধিতা করছিনা, আমার আপত্তি লোক দেখানো দেশপ্রেমে, আধুনিকটায়। সত্যিই তো আমরা দোষী, এর আগেও তো কতবার রক্তাক্ত হয়েছে দেশ, কেউ না কেউ হারিয়েছে তাঁদের স্বজনকে, কিন্তু কিছুদিন বাদে আমরা আবার সব ভুলে চক্রী, মদতদাতা, খুনিদের হয়ে গলা ফাটিয়েছি, ধুয়ো তুলেছি তথাকথিত মানবতা, নৈতিক দায়িত্ব আরও কত কিছুর? কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করি নি, বলা ভালো করার চেষ্টাই করিনি, হয়তো তার জন্যেই পড়শি দেশে আমাদের ঠিক চিনেছে, আমরা ঘেউ ঘেউ বেশি করি এর থেকে বেশি কিছু করার ক্ষমতা নেই আমাদের। 

Saturday 15 October 2016

লক্ষ্মী পুজোর পাঁচালী


লক্ষ্মী পুজোর পাঁচালী

“শঙ্খ বাজিয়ে মাকে ঘরে এনেছি
সুগন্ধে ধূপ জ্বেলে আসন পেতেছি।
প্রদীপ জ্বেলে নিলাম তোমায় বরণ করে
আমার এ ঘরে থেকো আলো করে।
এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে
আমার এ ঘরে থেকো আলো করে।“

আজ কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো, কোজাগর – কে জাগে? যার নেই সে পাবার আশায় জাগে, যার আছে ভুরি ভুরি সেও জাগে হারাবার ভয়ে। হয়তো সারা রাত জাগবার জন্যেই এই লক্ষ্মী আগমনী গান গুলো তৈরি হয়েছিলো। যাই হোক লক্ষ্মী পুজো শুনলে আমার আগে মনে পড়ে যায় এক পূর্ববঙ্গীয় মানে বাঙাল বন্ধুর বাড়িতে পেট পুরে খিচুড়ি, লাবড়া, আলুরদমের কথা। তখন বাঙাল – ঘটি লড়াই ছিল খেলার মাঠে, মনের মাঝে নয়। তাই অকপটে, অম্লানভাবে আমরা সব বন্ধুরা মিশে যেতে পারতাম। লক্ষ্মী পুজোর দিন বিকাল থেকেই আমরা সেজে গুঁজে, সাইকেল নিয়ে দল বেঁধে ওই বন্ধুটির বাড়ী পৌঁছে যেতাম, দিদি, কাকিমা আমাদের সাদরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসাতেন ভিতরে। হাতে ধরিয়ে দিতেন শাল পাতার থালা, তাতে লক্ষ্মী পুজো উপলক্ষে ঘরে বানানো মুড়কি, নারকেল নাড়ু, তিলের নাড়ু, ফলমুল কত কিছু। তবে প্রধান আকর্ষণ ছিল সেই ভুনি খিচুড়ি, লাবড়া আর ঝাল ঝাল আলুরদম। উফফ এখনও যেন মুখে লেগে আছে সে স্বাদ, গন্ধ। কর্মসূত্রে, সময়ের আবর্তনে আজ সব বন্ধুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছি নানান জায়গায়, যোগাযোগ বলতে হোয়াটসঅ্যাপ, আর মোবাইলে কথা। আর এখন কাজের সুবাদে লক্ষ্মীপুজোর ছুটি উপভোগ করা যায়না, তাই আজকের জ্যোৎস্না প্লাবিত সন্ধায় স্মৃতি একমাত্র সাথী আমার।

(ছবি প্রতীকী মাত্র, গুগল এর থেকে নেওয়া)

Friday 14 October 2016

পিতৃপক্ষ, দেবীপক্ষের পর এবার কি অগ্নিপক্ষ?






পিতৃপক্ষ, দেবীপক্ষের পর এবার কি অগ্নিপক্ষ?

কালামজী আজ আপনার জন্মদিন, সমগ্র দেশ আজ শ্রদ্ধার সাথে আপনাকে স্মরণ করছে। কিন্তু আমার আপনার উপর খুব খুব রাগ হচ্ছে। আপনি কি বলুন তো? সারা কর্ম জীবনে মাত্র দুদিন ছুটি নিলেন? তাও একদিন মায়ের আর একদিন বাবার মৃত্যুদিনে। কি অদ্ভুত কথা বলে গেলেন বলুন তো? আমার মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা করো না - আমায় যদি ভালবাসো, মন দিয়ে কাজ করো সে দিন। একি সর্বনেশে কথা বলুন তো? একটু ছুটিছাঁটা না পেলে আমোদ প্রমোদের কি হবে? আপনি কেন রাজনীতিতে এলেন? আর যদিও বা এলেন নিজের আখের না গুছিয়ে সারা জীবনের সঞ্চয়, বেতনের সব টাকা নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি ট্রাস্টে দান করে দিলেন? যখন আপনাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হল আপনি কি বললেন? ‘আমি তো এখন ভারতের রাষ্ট্রপতি। যতদিন বেঁচে আছি, সরকার আমার ভরণ-পোষণ দিতে যাচ্ছে। তবে আমার সারা জীবনের সঞ্চয় ও বেতন কী করব?’ খুব ভুল বললেন আপনি যে ভারতবর্ষে রাজনীতি একটি লাভদায়ক পেশা, সেই পেশায় থেকে এতটা নির্লোভ কিভাবে হলেন আপনি? বড় অদ্ভুত কথা বলে গেলেন - ‘স্বপ্ন তা নয়, যা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন তা যা পূরণের আকাঙ্ক্ষা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না’। আমৃত্যু আমাদের একি স্বপ্ন দেখতে শেখালেন আপনি? ভোগ নির্ভর আধুনিক সমাজে আপনি বড্ড বেমানান কালাম সাহেব।

ব্যক্তিগত জীবনে অকৃতদার, নির্লোভ, নিরহংকার ও সততার এক উজ্জ্বল মূর্তি স্তাপন করে গেলেন, ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেও আপনি কখনও সততার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি, উল্টে জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও রেখে গেলেন এক অদ্ভুত নিদর্শন -  শার্ট আর ট্রাউজার ছিল আপনার নিত্যসঙ্গী, আর বাড়িতে আপনি  পরতেন লুঙ্গি ও ফতুয়া! কি সাদামাঠা জীবনজাপন আপনার? আমাদের ভারতবর্ষ কে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিনত করেও পরমাণু অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচারে যোগ দিলেন আপনি? শুধু কি তাই শোনা যায় একবার রাষ্ট্রপতি ভবনে আপনার কয়েকজন নিকট আত্মীয় কয়েকদিন কাটিয়ে যাওয়ায়, তাঁদের সব খরচ খরচা বাবদ পুরো টাকা আপনি বেতনের টাকা থেকে মিটিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে সপরিবারে সরকারী খরচায় বিদেশ ভ্রমন, অকাতরে ব্যয় আজকালকার রাজনৈতিক নেতাদের ফ্যাশান সেখানে একি দৃষ্টান্ত স্তাপন করলেন আপনি?

আপনার জন্মদিনে আপনার বলা কিছু কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছে, তাই সেগুলো উল্লেখ না করে পারলাম না। যদি পারেন অধমের ধৃষ্টতা নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন।

নিজেকে একা মনে হলে আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। পৃথিবীটা আমাদের বন্ধু। যারা কাজ করে ও স্বপ্ন দেখে প্রকৃতি তাঁদের সাহায্য করে।

যদি সূর্য হতে চাও তবে সূর্যের মতো নিজেকে পোড়াও।

মানুষের জীবনে প্রতিবন্ধকতা থাকা দরকার। বাধা না থাকলে সফলতা উপভোগ করা যায় না।

তিনজনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।

স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না।

যারা পরিশ্রম করেন সৃষ্টিকর্তা তাঁদের সাহায্য করেন।

স্বপ্নবাজরাই সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারেন।

উন্নত ও নিরাপদ ভারত রেখে যেতে পারলেই পরের প্রজন্ম আমাদের মনে রাখবে।

মন থেকে যারা কাজ করে না তাঁদের জীবন ফাঁপা। সাফল্যের স্বাদ তাঁরা পায় না।

কেবল বিশেষ সময়ে নয় সবসময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে।

তরুণদের নতুন চিন্তা করতে হবে, নতুন কিছু ভাবতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে। তবেই তারুণ্যের জয় হবে।

উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।

যদি আমরা স্বাধীন হতে না পারি কেউ আমাদের শ্রদ্ধা করবে না।

বিজ্ঞান মানুষের জন্য উপহার। ধ্বংসের জন্য বিজ্ঞান নয়।

প্রশংসা করতে হবে প্রকাশ্যে কিন্তু সমালোচনা ব্যক্তিগতভাবে।

আমি কখনো সন্দেহ করিনি যে আমাদের মসজিদের প্রার্থনা যেখানে পৌঁছায়, সেই একই গন্তব্যে পৌঁছায় মন্দিরের প্রার্থনাও।

আপনারা আপনাদের মাকে খুশি করুন। কেননা প্রতিটি ঘরের মা সুখী থাকলে সুখী হয় প্রতিটি ঘর। ঘর সুখী হলে সুখী হয় সমাজ, সমাজ হলে দেশ। এভাবেই সুখী হবে পুরো বিশ্ব।

(ক্ষমা করবেন আমি মনে করি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম আমাদের কাছে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা ওনার কাছ থেকে কিছু শিখতে পারি, তাই আজও তিনি অনুকরণীয়। আমাদের দেশে যে সব রাজনৈতিকরা বর্তমানে আছেন কেন জানি না তাঁদের অনুসরণ করার স্পৃহা জাগে না। এটা সত্যিই কোন ভালো লক্ষণ নয় - আমাদের সামনে যদি অনুসরণের মত আলোক শিখাগুলো নিভে যায় বা হারিয়ে যায় তাহলে আমরা অন্ধকারে পথ হারাব। সেটা আমি বা আমরা কেউই চাই না। অন্ধকারের হাতে সমর্পণ নয়, আমরা আলোর মিছিলে সামিল হতে চাই। যদি আমার লেখা কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে আঘাত করে তার জন্যে আমি ক্ষমা চেয়ে নিলাম)।

নামানুষের ইতি কাহিনী








একটু অন্যরকম খবর চোখে পড়ল, “২৬ নভেম্বরের মুম্বই হামলায় পুলিশকে সাহায্যকারী ডগ স্কোয়াডের আর এক নায়ক সিজারের মৃত্যু হল”। সেদিনের সেই হামলায় মুম্বই পুলিশের ডগ স্কোয়াডের অনেকেই সেদিন বড় ভূমিকা নিয়েছিল, যখন হামলা আর প্রতি আক্রমণ চলছিলো, এঁদের কার্যকুশলটায় বেশ কিছু প্রান বেঁচে গেছিলো। নইলে হয়তো নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতো। ফুসফুস সংক্রমণে টাইগার নামের কালো রঙের ল্যাব্রাডারের মৃত্যু হয়েছে আগেই। ৮ই এপ্রিল ম্যাক্স এবং ১৮ই জুন সুলতান মারা যায়, শেষ নায়ক সিজারও চলে গেলো। পিছনে রয়ে গেলো এক নীরব কাহিনী। আজ যখন চারিদিকে অমানুষের ছড়াছড়ি, তখন সিজার,ম্যাক্স, সুলতানের মতন নামানুষ দের কথা বেশি মনে পড়ে। ভালো থেকো তোমরা - আমাদের প্রকৃত বন্ধু বোধহয় এরাই, জানিনা এর পর কেউ কোন দেশদ্রোহীকে কুকুরের মতো গুলি করার কথা বলবেন না নিশ্চয়ই? নইলে যে এই নামানুষ গুলোকেই ছোট করা হয়।

(ছবি গুগুল থেকে নেওয়া)

Saturday 8 October 2016

কুমারী পূজা সম্বন্ধে কিছু কথা



(ছবি প্রতীকী মাত্র, গুগুল থেকে সংগৃহীত)

কুমারী পূজা সম্বন্ধে কিছু কথা

স্বামী বিবেকানন্দ একবার বলেছিলেন – মেয়েদের পূজা করেই সব জাত বড় হয়েছে। যে দেশে, যে জাতে মেয়েদের পূজা নেই, সেই দেশ, সেই জাত কখনও বড় হতে পারেনি আর কস্মিনকালেও পারবে না। আজ যখন চারিদিকে নারী অবমানননার ঘটনা ঘটছে, তখন কুমারী পূজার প্রাসঙ্গিকটা আর বেশি করে মনে পরে।  

কুমারী পূজা কি না জেনে অনেকে একে খাটো করেন, ব্যাঙ্গ করেন। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছেন - শুদ্ধাত্মা কুমারীতে দেবী শক্তি বেশি প্রকাশ পায়। তিনি চেয়েছিলেন কুমারী পূজার মাধ্যমে আমরা নারী জাতির প্রতি আর শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবো, আরও ভাল করে জানতে পারব সেই পবিত্র মাতৃ শক্তির স্বরূপ। সেই জন্যেই স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০১ সালে বেলুর মঠে নয়জন কুমারী কন্যার পূজার মাধ্যমে এই কুমারী পূজার পুনঃপ্রচলন করেন। সাধারণতও দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমী তিথিতে ৫ বৎসর থেকে নয় বৎসরের কোন কুমারী কন্যাকে দেবী রুপে কল্পনা করে তাঁর পূজা করা হয়। অবশ্য জগধাত্রী পুজাতেও কুমারী পূজার উল্লেখ বা উদাহরণ পাওয়া যায়।

কুমারী পূজা সম্পর্কে বিভিন্ন শাস্ত্রীয় ধারনা - বৃহদ্ধর্মপুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী দেবতাদের স্তবে প্রসন্ন হয়ে দেবী চণ্ডিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে দেখা দিয়েছিলেন। দেবীপুরাণে বিস্তারিত এ বিষয় উল্লেখ আছে। তবে অনেকে মনে করেন যে, দুর্গা পূজায় কুমারী পূজা সংযুক্ত হয়েছে তান্ত্রিক সাধনামতে। এক সময় শক্তিপীঠ সমূহে কুমারী পূজার রীতি প্রচলিত ছিল। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেও কুমারীর কথা উল্লেখ আছে। আর এ থেকে অনুমান করা কঠিন নয় যে, দেবীর কুমারী নাম অনেক পুরনো। দেবীর কুমারী নাম যেমন পুরনো, তার আরাধনা ও পূজার রীতিনীতিও তেমনি প্রাচীন এবং ব্যাপক। যোগিনীতন্ত্র, কুলার্ণবতন্য, দেবীপুরাণ, স্তোত্র, কবচ, সহস্রনাম,তন্যসার, প্রাণতোষিণী, পুরোহিতদর্পণ প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি এবং মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনানুসারে কুমারী পূজায় কোন জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যে-কোন কুমারীই পূজনীয়, এমনকি বেশ্যাকুলজাত কুমারীও। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত। তন্ত্রমতে এক থেকে ষোল বছর পর্যন্ত ব্রাহ্মণ বালিকাদের কুমারী পূজার জন্য নির্বাচিত করা যায়। তবে অন্য জাতির কন্যাকেও কুমারীরূপে পূজা করতে বাধা নেই। কিন্তু অবশ্যই তাদের ঋতুবতী হওয়া চলবে না। এদিন নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়।

দেবীর মত সাজিয়ে হাতে দেয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুরের তিলক এবং পায়ে আলতা। সঠিক সময়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়। চারদিক শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তব-স্তুতিতে পূজাঙ্গণ মুখরিত থাকে । ধর্মের বিধান অনুযায়ী এক একবয়সের কুমারীর এক এক নাম রয়েছে, যেমন - (১)এক বছরের কন্যার নাম সন্ধ্যা (২)দুই বছরের কন্যার নাম সরস্বতী (৩)তিন বছরের কন্যার নাম ত্রিধামূর্তি (৪)চার বছরের কন্যার নাম কালীকা (৫) পাঁচ বছরের কন্যার নাম সুভাগা (৬)ছয় বছরের কন্যার নাম উমা (৭)সাত বছরের কন্যার নাম মালিনী (৮)আট বছরের কন্যার নাম কুব্জিকা (৯)নয় বছরের কন্যার নাম কালসন্দর্ভা (১০)দশ বছরের কন্যার নাম অপরাজিতা (১১)এগার বছরের কন্যার নাম রুদ্রাণী (১২)বার বছরের কন্যার নাম ভৈরবী (১৩) তের বছরের কন্যার নাম মহালক্ষ্মী (১৪)চৌদ্দ বছরের কন্যার নাম পীঠনায়িকা (১৫)পনের বছরের কন্যার নাম ক্ষেত্রজ্ঞা ও (১৬)ষোল বছরের কন্যার নাম অম্বিকা।

কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব - কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। সকল নারীর মধ্যেই বিরাজিত রয়েছে দেবী শক্তি। তাই কুমারী রূপে, নারীকে দেবীজ্ঞানে সন্মান জানানোর একটি বাস্তব উদারহণ হচ্ছে কুমারী পূজা।

Tuesday 4 October 2016

কিছু টুকরো টুকরো কথা আর আমি






কিছু টুকরো টুকরো কথা আর আমি

আচ্ছা মানুষ মাত্রেই কি নিঃসঙ্গ? এই পৃথিবীতে আসা একা আবার ফিরে যাওয়াও এক একাই। মাঝে এক একটা স্টপেজে এক একজনের সাথে কিছু সময়ের পরিচয়, সম্পর্ক, ভালোবাসা কিংবা খারাপ লাগার সম্পর্ক। কে জানে এগুলো সাময়িক না সারা জীবনের? নইলে হাজারো কাজের বাস্ততায়, চেনা অচেনা লোকের ভিড়ে, উৎসবে, আনন্দে, শোকে, দুঃখে কেন আমি নিঃসঙ্গ?

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমার অগোছালো এক জীবন। অঙ্কে বরাবরের কাঁচা আমি তাই জীবনের জটিল হিসাব কোনদিনও মিলাতে পারিনি আর এখন মেলানোর ইচ্ছাও নেই। যা পেয়েছি তার থেকে হারিয়েছি অনেক বেশি, জীবনে অনেক কঠিন, প্রতিকুল দুঃসময় পার করেছি, না করেছি বললে ভুল বলা হবে, এখনও তো তাই করে চলেছি। মাঝে মধ্যে এমন অনেক কিছুর মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয় জীবন যার জন্যে আদৌ প্রস্তুত নই আমি। এরকম যে ঘটতে পারে, সেটা নিজেকে বোঝাতে বোঝাতে অনেকটা সময় কেটে যায়, ফলপ্রাপ্তি বলতে আর একটা নতুন আঘাত। ইদানীং মনের মধ্যে কালবৈশাখীর অস্থিরতা জাগে, সারাদিনের শেষে যখন ক্লান্ত হয়ে বাড়ীর পানে ফিরি, তখন ইচ্ছে করে স্বপ্নের জাল বুনতে, প্রিয়ার আদরে হারিয়ে যেতে, একটু বাড়তি Attention পেতে। যতদিন  যাচ্ছে ইচ্ছে গুলো যেন আরও চেপে বসছে মনের গভীরে।

ধুসস নিজেকে মাঝে মাঝে মনে হয় এক দিকভ্রষ্ট নাবিক, যে কোনদিনও তার গন্তব্য খুঁজে পাবে না। অসীম শূন্যতার মাঝে হারিয়ে যাবে চিরদিনের মতো, আমি কেন আমার স্বপ্নের মতো হতে পারিনা? নিদ্রাহীন চোখে হাজার একটা স্বপ্ন, ভাবি অবাক হয়ে কেন এত স্বপ্ন দেখছি? কি হবে স্বপ্ন দেখে? স্বপ্ন পুরন কি হবে এই জীবনে? জানিনা কি দোষে বা কারনে স্বপ্ন গুলো সব হারিয়ে যায়, মিথ্যে হয়ে যায়। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে গিয়ে বাস্তবকে তো ভুলে যাইনি কোনদিনও তাহলে কেন কেন? এলোমেলো ভাবনায়, অগোছালো জীবনে, গন্তব্যহীন পথে দিকভ্রান্ত পথিক আমি আজও বন্দী স্বপ্নের বেড়াজালে। খুব ভালো হতো যদি জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, স্বপ্ন গুলোকে বস্তাবন্দী করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারতাম, হয়ত মুক্তি পেয়ে যেতাম।  

আজ উপলব্ধি করেছি যদি নিজে ভালো থাকতে চাও তাহলে “স্বার্থপর” হয়ে যাও, আর সবার কাছে ভালমানুষ হয়ে থাকতে চাইলে “নিঃস্বার্থ” হও। নিঃস্বার্থ হয়ে হয়তো সবার কাছে "ভালো" সাজা যায়, কিন্তু নিজে ভালো থাকা যায় না। হয়তো সবাই তোমার প্রশংসা করে বলবে, "তুমি না খুব ভালো, তুমি মহান"। তুমি সবার জন্য স্বার্থত্যাগ করে যাবে, সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে যাবে, সবার সুখে দুঃখে পাশে থাকবে। কিন্তু দিন শেষে, যে যার মত সুখ খুঁজে নিয়ে চলে যাবে, একা তুমিই পড়ে থাকবে। কারণ তুমি "নিঃস্বার্থ"। তাই আমি মনে করি "স্বার্থপর" মানুষই ভালো থাকে। হয়ত সবাই তাকে "ভালো, মহান ইত্যাদি" বলে না, তাতে তার কিছু যায় আসে না। সে সুখেই থাকে, ঘুরে ঘুরে সে একজন "নিঃস্বার্থ" মানুষের দেখা পায় তার কাছ থেকে সে "সুখ" কুড়ায়। তারপর চলে যায় অন্য কারো কাছে সুখের সন্ধানে ... শেষ হলে আবার নতুন একজন, কিন্তু তার সুখ কুড়ানো চলতেই থাকে।   

"স্বার্থপর" মানুষ গুলোকে রাগ করে, ঈর্ষা করে "ধুরন্ধর" বলে ডাকা হয়। "নিঃস্বার্থ" মানুষগুলোকে আদর করে "বোকা" বলে ডাকা হয়। পৃথিবীর সব "কষ্ট", "শূন্যতা" আর "একাকীত্ব" নামের অনুভূতি গুলো বোকাদের জন্যই বরাদ্দ। বোকারা এগুলো প্রথমে নিতে চায় না, তাও এগুলো তাদের জোর করে গছিয়ে দেয়া হয়। এগুলোই তাদের উপহার, "নিঃস্বার্থ" হওয়ার উপহার। উপহার তো আর ফেরত দেয়া যায় না। কিন্তু আমি আজ সব ফেরত দিয়ে এখন স্বার্থপর হতে চাই।

এখন আমার খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। একটা জনমানব শূন্য দ্বীপ চাই আমার, অনেক গাছ, পশু-পাখি থাকবে, সমুদ্রের ধারে বসে আমি সমুদ্রের গর্জন শুনবো, মাথার উপরে পাখিরা উড়ে যাবে দল বেঁধে। বসে বসে দেখব টুপ করে কেমন সূর্য টা ডুবে গেলো সমুদ্রের অতল জলে। নীল জলরাশির মাঝে সাঁতার কাটবো আমি, পাশে কোন হাঙররুপী মানুষ থাকবে না। দ্বীপের মাঝে একটুকরো সবুজ গালিচা পাতা মাঠ, তার মাঝে ছোট্ট একটু মাথা গোঁজার ঠিকানা, সবুজ গালিচায় শুয়ে শান্তিতে ঘুমাব আমি, যখন চোখ মেলবো মাথার উপর হাজার তারা ঝলমল করবে। একটা চুপচাপ দ্বীপ চাই, যেখানে আমি নিজের সাথে কথা বলব। কেউ এসে মেকি সহানুভুতি জানাবে না, উপদেশ দেবে না, কোন স্বার্থ, হিংসা, লোভ থাকবেনা। কে জানে এরকম কোন দ্বীপ খুঁজে পাব কিনা? চারিদিকে সব আধুনিক, শিক্ষিত, সভ্য মানুষে ভরা, বাস্তব জগতেও গিজগিজ করছে মানুষ আবার ভার্চুয়াল জগতেও। কার হাতের ঘুড়ি হয়ে আর উড়তে চাইনা আমি, তার থেকে সুতো ছিঁড়ে অচেনা, অজানা কোন জায়গায় পরে থাকতে চাই আমি, যেখানে ঘুড়ি টাকে কেউ খুঁজতে আসবেনা।




সাধু সাবধান !!





সাধু সাবধান !!

জীবন মানে কি শুধুই বেঁচে থাকা? নাকি পরনিন্দা/ পরচর্চার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত? যদি শুদু অস্তিত্ব রক্ষাই বেঁচে থাকা হয় তাহলে জলে ভেসে যাওয়া কচুরিপানার সাথে আমাদের জীবনের কোন পার্থক্য নেই বলে মানতে হবে। এই গৌরচণ্ডিকার কারন গত কয়েকদিন ধরে কিছু কিছু মানুষকে নিয়ে আমি ভাবছি। ভাবছি এরা কি আদপে সত্যিই শিক্ষিত, ভদ্র- ভালো মানুষ নাকি মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক একটা শয়তান। এরা কি সত্যি করেই দেশকে ভালোবাসে, দেশবাসীর আবেগ, স্বার্থ নিয়ে ভাবে না ভড়ং করে সস্তা জনপ্রিয়টা কুড়ানোর জন্যে?নাকি আরও বৃহৎ কোন স্বার্থ আছে এর পিছনে?  

যারা গীতা পরেছেন তারা জানেন যে গীতার শেষ অংশে কলি যুগ সম্পর্কে বেশ কিছু ভবিষ্যত্বাণী করা হয়েছে, যেমন - কলিযুগে অর্থই মানুষের একমাত্র ক্ষমতা হিসেবে বিবেচিত হবে। আইন ও সুবিচার পাওয়ার সম্ভাবনা আর্থিক ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। আজ কেন জানি না এটাই মনে পরে গেল – পাকিস্থানি তারকা, গায়কদের প্রতি কোন একজন তথাকথিত স্টার নায়কের দরদ দেখে। হ্যাঁ মানছি ওনারা কেউই টেররিষ্ট নন, ওনারা পাকিস্থানি শিল্পী। ভিসা নিয়েই ওনারা এদেশে এসেছেন। কিন্তু একজন পাকিস্থানি শিল্পীর কি দায় বর্তায় না তাঁর দেশের অপকর্মের প্রতিবাদ করা? যখন এদেশে এসে কামানোর সুযোগ হাত ছাড়া করতে তাঁদের গায়ে লাগে, এদেশের নিরীহ মানুষ, সৈন্য মারা গেলে নুন্যতম প্রতিবাদ তো করা উচিত? মুম্বাই হামলা, সংসদ ভবন হামলা, পাঠানকোট, উরি হামলা এছাড়া অতীতে ঘটে যাওয়া অসংখ্য হামলার সাক্ষি আমার আপনার ভারত, কই প্রতিবেশী দেশের শিল্পীরা কেউ আহা উহু পর্যন্ত করেন না, প্রতিবাদ তো অনেক দুরের কথা। একটা দেশ তাঁর জন্মলগ্ন থেকে শুদু ভারতের ধ্বংস চেয়ে এসেছে, তাঁদের একমাত্র পলিসি আর এজেন্দাই হল ভারত আমাদের শত্রু, অতএব ভারতের যথাসম্ভব ক্ষতি করে যাও। সেই দেশের শিল্পী দের আমরা সাদরে বুকে টেনে নিচ্ছি, রেড কার্পেট পেতে সাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছি? সত্যি কি উদার আমরা? যখন তাঁদের ব্যান করার কথা উঠছে তখনই গেলো গেলো রব? তথাকথিত নায়ক, গায়ক, দেশের বুদ্ধিজীবী (পড়ুন পরজীবী) মহল, সেকুলারবাদিরা যুক্তি তর্কের ফোয়ারা ছুটিয়ে দিচ্ছেন? এঁদের কাছে দেশ আগে না তাঁদের ব্যবসায়িক স্বার্থ আগে কে জানে? তবে আমি মনে করি তাঁদের মাটিতে পা থাকাই উচিত, কারন জনপ্রিয়টার ফানুস চুপসে গেলে মুখ থুবড়ে মাটিতে আছড়ে পরতে সময় লাগবে না। সময় একজায়গায় থেমে থাকে না, ইতিহাস ফিরে আসে বারবার তাই সাধু সাবধান।  

Monday 3 October 2016

পুজোর চিঠি


পুজোর চিঠি

শ্রী শ্রী দুর্গা মাতা,
কেয়ার অফ বাবা মহাদেব
কৈলাশ ভিলা
কৈলাশ নগর, গঞ্জিকা সরণী।

প্রিয় মা,

অপরাধ নিয়ো না মা, অত উপরে নেটওয়ার্ক ঠিক মত কাজ করবে কিনা জানি না তাই আর whatsapp/ email এর ঝামেলায় গেলাম না চিঠি লিখে বসলাম। আর তো পাঁচদিন মা, এর পরেই তুমি এসে পড়বে, জানি এবারে ঘোটকে আগমন তোমার তাই লেট হবে না তবু প্রতিবারের মত এবারেও অধমের কিছু আরজি আছে তাই জানাতে সাধ হল। একটু ক্ষমা ঘেন্না করে দিয়ো জানোই তো ছিঁচকাঁদুনী নেকু পেশু বাঙালি আমরা মুখে যতটা বড় কাজে ততটা দড় নই। যাক গে যে কথা বলছিলাম মা – জানো আজকালকার ছেলেপুলেগুলো মহিষাসুরমর্দিণী শুনে শিহরিত হয়না। অথচও দেখো আজও “আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির, ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা…” শুনলেই যেন শিহরণ হয়, সেই এক অনুভূতি কোন চেঞ্জ নেই? সেই ভাবগম্ভির স্ত্রোত্র, আগমনীর সুরে যেন মনের ভেতরটায় বেজে ওঠে কিসের সুর…মনে হয় আবার শরত এলো, আবার পুজো এসে গেল। জানো মা আজ আর রেডিও কেউ শোনে না, রেডিওর, আকাশবাণীর জায়গা নিয়েছে এফ এম, মহিষাসুরমর্দিণীর এমপিথ্রি এখন সবার মোবাইলে, তবু কজন শোনে কে জানে? জানো মা অফিসের কাঁচের জানলা দিয়ে আজও খুঁজি পেঁজা তুলোর মত মেঘ, দেখতে পেলে আজও হাততালি দিয়ে নেচে উঠতে ইচ্ছে করে। আগে তো মা এই সেপ্টেম্বর/ অক্টোবর মাসে বেশ ঠাণ্ডা পড়ত, ভোঁরে শিউলি ফুল কোড়াতে গেলে বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগতো, আর এখন ভাদ্রের ভরা গুমোট? ওয়েদারের গুমোট যদিও বা কখনও কাটে, মনের গুমোট কেন কাটে না মা? জানো মা ভট্টাচার্যবাবু দের বাগানে শিউলি গাছ টা কেটে দিয়েছে, বড্ড নাকি শুঁয়াপোকার উৎপাত হয়? শুনেছি বাড়িটাও নাকি কোন প্রমোটার কে দিয়ে দিয়েছে, সুন্দর ফ্ল্যাট তৈরি হবে ভাঙ্গাচোরা আদ্দিকালের প্রকাণ্ড বাড়ীটা ভেঙ্গে! মাগো  মনে হচ্ছে পরের প্রজন্ম প্লাস্টিকের শিউলি ফুলেই তোমার পূজা দেবে? জানো মা আগে ট্রেনে চেপে অফিসে বা যেখানেই জেতাম না কেন, কাশফুলের বন দেখতে পেতাম, এখন বোধহয় কয়েকশো মাইল পারি দিলেও কাশফুলের বন চোখে পড়বে না। 

আজও নিউজ পেপারের স্টলে থরে থরে সাজানো পূজাবার্ষিকী, দেখলে ছোটবেলার কথা মনে পরে যায়, নতুন পূজাবার্ষিকীর গন্ধ খুঁজে বেড়ায় ফেলে আসা মন। মাগো আর একবার আমায় ছোটবেলায় ফেরত পাঠাবে? জানো মা, এখন পাড়ায় পাড়ায় চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, তবু মা, দিদার হাতের নাড়ু, নিমকি, গজার জন্যে প্রানটা হা হুতাশ করে। জানো মা, আগে পাড়ায় পুজোর মধ্যে আন্তরিকটা ছিল, এখন আড়ম্বর আছে, থিম আছে, চোখ ধাঁধানো এলএডি লাইট আছে, তবু মা কেন টুনি লাইট, একচালার তোমার মূর্তি খোঁজে মন?

জানো মা এখন চারিদিকে কত মল, শপিং কমপ্লেক্স, কিন্তু সেই বয়োজ্যেষ্ঠ কাকুর দোকান আজও মনের মাঝে অমলিন হয়ে আছে। বারবার নতুন জামাকাপড়ের প্যাকেট খুলে গন্ধ নিতাম, আজ সেসব শুদুই স্মৃতি। জানি মা অনেকে আমায় ব্যাকডেটেড বলবে, ক্ষতি নেই। তবু তোমার একরাশ কালো চুল দেখতে চাই, মেমসাহেবের মত সোনালি চুল চাই না। চাইনা কর্পোরেট ঢঙের পূজা, তাতে যদি বাজেট কমে ক্ষতি নেই, না হয় এবার ভাসানে ডিস্ক লাইট হবে না, ডিজে হবে না, কিন্তু মা ঢাক তো আছে। ওই দিয়েই জীবনের বাকি কটা দিন ঠিক চালিয়ে নেব।

জানো মা আজও স্মৃতি কোঠায় পূজার দিন গুলো অমলিন। ষষ্ঠীর দিন ভোরেই মা কে দেখতাম স্নান করে বাড়ির প্রতিটি দরজায় চন্দন আর সিঁদুরের ফোঁটা দিতে, এটি নাকি মাঙ্গলিক কাজ। আমার কাছে পুজোর শুভ সূচনা আর কি। তারপর দুর্গাষষ্ঠীর ব্রতকথা পড়ে মা জল, সন্দেশ খেতেন। মা বলতেন, তিনি যখন ব্রতকথা পাঠ করবেন, তখন যেন তাঁর পাশে বসে আমি শুনি। সেই একই গল্প প্রতিবার… মাদুর্গার গায়ের ময়লা থেকে তাঁর নিজের হাতে গড়া একরত্তি গণেশের জন্ম, তারপর গণেশের কি করে হাতির মুখ হল …কতবার শোনা তবুও ঐ বিশেষদিনে তার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। দুপুরে নিরামিষ অতএব লুচির কড়ায় পোষ্টম্যান বা ডালডা ঢেলে জলখাবারে লুচি, দুপুরে লুচি আবার রাতেও লুচি, সঙ্গে বেগুণ ভাজা, নারকোল দেওয়া ছোলারডাল, মাখামাখা আলুর দম অথবা ছোলা দেওয়া কুমড়োর ছক্কা আর শেষ পাতে সিমুইয়ের পায়েস। মনে মনে বলতাম ইসস এরকম দিন কেন রোজ আসেনা মা? সপ্তমীর ভোর জানান দিত ঢাক ঢোল পিটিয়ে কলাবৌ স্নান করাতে যাওয়ায়। সেদিন দুপুরে মাস্ট মাছ হত এটা আমাদের বাড়ীর অলিখিত নিয়ম – রুই মাছের কালিয়া আর চিংড়ির মালাইকারী হবেই সেদিন। সপ্তমীর সন্ধ্যেয় সেজেগুজে ঠাকুর দেখার পালা। পরদিন সকালে উপোস করে, স্নান সেরে, নতুন জামা পরে মহাষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া। দুপুরে আবারো লুচি। সেদিন হয়তো ছানার ডানলা কিম্বা ধোঁকার ডানলা বা নিরামিষ ফুলকপির তরকারি, এই ছিল তখনকার স্পেশাল মেনু। রাতে সবচেয়ে দামী পোষাক। রিক্সা ভাড়া করে ঠাকুর দেখতে বেরুনো। নবমীর সকাল হলেই মনখারাপ একটু একটু করে গ্রাস করতে শুরু করত, পরেরদিন দশমীর কথা ভেবে। সেদিন বাড়ীতে আমিষের আয়োজন – হয় মুরগির মাংস নয়ত খাসীর মাংস। সন্ধ্যেয় ধুনুচিনাচ দেখতে যাওয়া। আরও ঠাকুর দেখা ঘুরে ঘুরে। নবমী নিশি পোহালেই পুজো শেষ যেন …সেই অমোঘ সত্যিটা মেনে নিতে কষ্ট হত। আমার সব মনখারাপ আছড়ে পড়ত মায়ের আঁচলে। মনে পড়ে, দশমীর বিকেলে বাবা আমাদের নতুন খাতার মধ্যে লালকালির দোয়াতে খাগের কলম ডুবিয়ে লেখাতেন “শ্রী শ্রী দুর্গা সহায়’, আজ  আর কেউ লেখেনা  বোধহয়। পরদিন থেকেই শুরু হত সব আত্মীয়/ বন্ধুদের বিজয়ার চিঠি লেখা। মধ্যবিত্ত বাড়িতে বেড়ে ওঠার দরুন সেই আটপৌরে আভিজাত্য কোথায় হারিয়ে গেলো মা? আজ ডিজিটাল যুগে নতুন ধরনের সামাজিকতায় ভুলেই গেছি সেই সব চিঠির বয়ান, আজ যে শুদুই ই মেল, এসএমএস, হোয়াটস্যাপ। তাতে হয়ত দায় মেটে, কিন্তু ভালোবাসার বাঁধন অনুভব হয়না।  

দশমীর দিন মা, দিদার করা এলোঝেলো নিমকি, কুচো নিমকি, ঝাল নিমকি, নারকেল নাড়ু আর চন্দ্রপুলি, নানা রকম গজা, সুজির নাড়ু, বেসমের নাড়ু সব যে হারিয়ে যাচ্ছে মা? জানো মা আগে রান্না ঘরে একটা বড় হাঁড়ি করে ঘুগনি করতো মা, আমি খালি নানান ছুতো করে ঘুর ঘুর করতাম যে কখন মা আমায় একটু টেস্ট করে দেখতে বলবে। সন্ধ্যে হলেই পাড়ায় বিজয়া দশমী করতে বেরোতাম আমরা, উফফ সে কি মজা পাড়ার এক এক কাকিমা/ জেঠিমা যেন রান্নায় সেদিন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা, কেউ বানাত কাটলেট, কেউ দই বড়া তো কেউ অন্য কিছু। এখন ফাস্ট ফুডের জমানা সেই মা, কাকিমাদের হাতের স্বাদ, ভালবাসা খুঁজে পাই না। হাই হ্যালো তে বিজয়া সারা আজকে। বড় মেকি হয়ে গেছে আজকের সমাজ, আমরা বড্ড স্বার্থপর হয়ে গেছি। আজকের গ্লোবাল দুনিয়ায় সম্পর্ক, ভালবাসা সব মিথ্যে, সবই বোধহয় বাস্তবের ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড।  

তুমি এসো মা, প্রতিবারের মতো এবারেও এসো, খালি দিনগুলো সব আগের মতন করে দাও মা। এটাই অধমের আর্জি। জানি মা নস্টালজিয়া ধুয়ে জল খাবো না, আবেগ নিয়ে এই দুনিয়ায় বাঁচা সম্ভব নয়, কিন্তু কি করব মা? তুমি যে আমায় এইভাবে গড়েছ, তাই এবারে আমার আর্জি একটু শুনবে? আমার রুপ, যশ কিছুই চাইনা, এমন কি কোটিপতিও হতে চাইনা। কি হবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে, তাঁর থেকে মা আমায় সারল্য দাও, মনুসত্ত্য বোধ দাও, প্রকৃত শিক্ষা দাও, শিক্ষার অহঙ্কার দিয়ো না, সর্বোপরি যে শিক্ষা মানুষে মানুষে বিভেদ শেখায় সেই শিক্ষা চাই না মা। আশীর্বাদ করো যাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুদ্র তেজে রুখে দাঁড়াতে পারি, ভয় পেয়ে পিছিয়ে না আসি। মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই মা, কার দয়া দাক্ষিনে নয়। একটু ভেবে দেখো মা খুব বেশি কিছু কি চাইলাম? জানিনা। 

প্রণাম নিয়ো।