Friday 14 October 2016

পিতৃপক্ষ, দেবীপক্ষের পর এবার কি অগ্নিপক্ষ?






পিতৃপক্ষ, দেবীপক্ষের পর এবার কি অগ্নিপক্ষ?

কালামজী আজ আপনার জন্মদিন, সমগ্র দেশ আজ শ্রদ্ধার সাথে আপনাকে স্মরণ করছে। কিন্তু আমার আপনার উপর খুব খুব রাগ হচ্ছে। আপনি কি বলুন তো? সারা কর্ম জীবনে মাত্র দুদিন ছুটি নিলেন? তাও একদিন মায়ের আর একদিন বাবার মৃত্যুদিনে। কি অদ্ভুত কথা বলে গেলেন বলুন তো? আমার মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা করো না - আমায় যদি ভালবাসো, মন দিয়ে কাজ করো সে দিন। একি সর্বনেশে কথা বলুন তো? একটু ছুটিছাঁটা না পেলে আমোদ প্রমোদের কি হবে? আপনি কেন রাজনীতিতে এলেন? আর যদিও বা এলেন নিজের আখের না গুছিয়ে সারা জীবনের সঞ্চয়, বেতনের সব টাকা নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি ট্রাস্টে দান করে দিলেন? যখন আপনাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হল আপনি কি বললেন? ‘আমি তো এখন ভারতের রাষ্ট্রপতি। যতদিন বেঁচে আছি, সরকার আমার ভরণ-পোষণ দিতে যাচ্ছে। তবে আমার সারা জীবনের সঞ্চয় ও বেতন কী করব?’ খুব ভুল বললেন আপনি যে ভারতবর্ষে রাজনীতি একটি লাভদায়ক পেশা, সেই পেশায় থেকে এতটা নির্লোভ কিভাবে হলেন আপনি? বড় অদ্ভুত কথা বলে গেলেন - ‘স্বপ্ন তা নয়, যা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন তা যা পূরণের আকাঙ্ক্ষা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না’। আমৃত্যু আমাদের একি স্বপ্ন দেখতে শেখালেন আপনি? ভোগ নির্ভর আধুনিক সমাজে আপনি বড্ড বেমানান কালাম সাহেব।

ব্যক্তিগত জীবনে অকৃতদার, নির্লোভ, নিরহংকার ও সততার এক উজ্জ্বল মূর্তি স্তাপন করে গেলেন, ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেও আপনি কখনও সততার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি, উল্টে জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও রেখে গেলেন এক অদ্ভুত নিদর্শন -  শার্ট আর ট্রাউজার ছিল আপনার নিত্যসঙ্গী, আর বাড়িতে আপনি  পরতেন লুঙ্গি ও ফতুয়া! কি সাদামাঠা জীবনজাপন আপনার? আমাদের ভারতবর্ষ কে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিনত করেও পরমাণু অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচারে যোগ দিলেন আপনি? শুধু কি তাই শোনা যায় একবার রাষ্ট্রপতি ভবনে আপনার কয়েকজন নিকট আত্মীয় কয়েকদিন কাটিয়ে যাওয়ায়, তাঁদের সব খরচ খরচা বাবদ পুরো টাকা আপনি বেতনের টাকা থেকে মিটিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে সপরিবারে সরকারী খরচায় বিদেশ ভ্রমন, অকাতরে ব্যয় আজকালকার রাজনৈতিক নেতাদের ফ্যাশান সেখানে একি দৃষ্টান্ত স্তাপন করলেন আপনি?

আপনার জন্মদিনে আপনার বলা কিছু কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছে, তাই সেগুলো উল্লেখ না করে পারলাম না। যদি পারেন অধমের ধৃষ্টতা নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন।

নিজেকে একা মনে হলে আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। পৃথিবীটা আমাদের বন্ধু। যারা কাজ করে ও স্বপ্ন দেখে প্রকৃতি তাঁদের সাহায্য করে।

যদি সূর্য হতে চাও তবে সূর্যের মতো নিজেকে পোড়াও।

মানুষের জীবনে প্রতিবন্ধকতা থাকা দরকার। বাধা না থাকলে সফলতা উপভোগ করা যায় না।

তিনজনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।

স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না।

যারা পরিশ্রম করেন সৃষ্টিকর্তা তাঁদের সাহায্য করেন।

স্বপ্নবাজরাই সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারেন।

উন্নত ও নিরাপদ ভারত রেখে যেতে পারলেই পরের প্রজন্ম আমাদের মনে রাখবে।

মন থেকে যারা কাজ করে না তাঁদের জীবন ফাঁপা। সাফল্যের স্বাদ তাঁরা পায় না।

কেবল বিশেষ সময়ে নয় সবসময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে।

তরুণদের নতুন চিন্তা করতে হবে, নতুন কিছু ভাবতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে। তবেই তারুণ্যের জয় হবে।

উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।

যদি আমরা স্বাধীন হতে না পারি কেউ আমাদের শ্রদ্ধা করবে না।

বিজ্ঞান মানুষের জন্য উপহার। ধ্বংসের জন্য বিজ্ঞান নয়।

প্রশংসা করতে হবে প্রকাশ্যে কিন্তু সমালোচনা ব্যক্তিগতভাবে।

আমি কখনো সন্দেহ করিনি যে আমাদের মসজিদের প্রার্থনা যেখানে পৌঁছায়, সেই একই গন্তব্যে পৌঁছায় মন্দিরের প্রার্থনাও।

আপনারা আপনাদের মাকে খুশি করুন। কেননা প্রতিটি ঘরের মা সুখী থাকলে সুখী হয় প্রতিটি ঘর। ঘর সুখী হলে সুখী হয় সমাজ, সমাজ হলে দেশ। এভাবেই সুখী হবে পুরো বিশ্ব।

(ক্ষমা করবেন আমি মনে করি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম আমাদের কাছে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা ওনার কাছ থেকে কিছু শিখতে পারি, তাই আজও তিনি অনুকরণীয়। আমাদের দেশে যে সব রাজনৈতিকরা বর্তমানে আছেন কেন জানি না তাঁদের অনুসরণ করার স্পৃহা জাগে না। এটা সত্যিই কোন ভালো লক্ষণ নয় - আমাদের সামনে যদি অনুসরণের মত আলোক শিখাগুলো নিভে যায় বা হারিয়ে যায় তাহলে আমরা অন্ধকারে পথ হারাব। সেটা আমি বা আমরা কেউই চাই না। অন্ধকারের হাতে সমর্পণ নয়, আমরা আলোর মিছিলে সামিল হতে চাই। যদি আমার লেখা কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে আঘাত করে তার জন্যে আমি ক্ষমা চেয়ে নিলাম)।

No comments:

Post a Comment