Thursday 22 June 2017

‘অম্বুবাচী’ নিছকই কি একটি ধর্মীয় প্রথা না মাতৃশক্তির আরাধনা!


‘অম্বুবাচী’ নিছকই কি একটি ধর্মীয় প্রথা না মাতৃশক্তির আরাধনা!

আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা হিসাবে কল্পনা করা হয়েছে, আরাধনা করা হয়েছে। এই গাছ, ফুল, পাখি, মানুষ, জীব জগত সবই এই ধরিত্রী মাতারই সন্তান। এবারে সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক ‘অম্বুবাচী’ কি? এবং আমাদের দেশে কিভাবে পালন করা হয়?

মহাজাগতিক নিয়মে পৃথিবী যখন সূর্যের মিথুন রাশিস্থ আদ্রা নক্ষত্রে অবস্থান করে সেদিন থেকে বর্ষাকাল শুরু ধরা হয়। যেহেতু আগে আমাদের দেশ, সমাজ কৃষি ভিত্তিক ছিল (হয়তো এখনও আছে, এই বিষয়ে যুক্তি বা তর্ক এড়িয়ে যেতে চাই), আমরা তাই হয়তো আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী যখন বর্ষার নতুন জলে সিক্ত হয়ে ওঠে তখন তাকে ঋতুমতি নারী তথা মাতা রূপে গণ্য করা হয় এবং মেনে চলা হয় এক রীতি যা অম্বুবাচী প্রবৃত্তি হিসাবেই পরিচিত, আর এর ঠিক তিন দিন পরে এই রীতি শেষ হয়, এটাকে বলা হয় অম্বুবাচী নিবৃত্তি। এই নিবৃত্তির পরই প্রাচীন কালে ভারতে জমি চাষ বা কর্ষণ করত কৃষকেরা। এর পিছনে যে ধারণা যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে তা হল – নারী  রজঃস্বলা হয় প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে আর তারপরেই সেই নারী তারপরই সন্তান ধারণে সক্ষম হন। ঠিক তেমনি প্রতিবছর অম্বুবাচীর এই তিনদিনকে পৃথিবীর বা মা ধরিত্রীর ঋতুকাল ধরা হয়, এই তিন দিন জমিতে কোনও চাষবাস, কৃষিকাজ করা হয় না। এখনও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ম মেনে চলা হয় আর এটা রজোৎসব নামেও পালিত হয়।

এই অম্বুবাচীর সময়ে ব্রহ্মচারী, সাধু,সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলারা অনেকেই এই সময়ে পৃথিবীকে মা ধরিত্রী হিসাবে কল্পনা করে নিয়ে আগুন দ্বারা প্রস্তুত কোনও রান্না করা খাবার কিছু খান না, বেশিরভাগই ফলমূল খেয়ে থাকেন। আধুনিক সমাজ এটাকে হিন্দুদের একটা লৌকিক আচার হিসাবেই ভাবে, কিন্তু এর পিছনে যে শ্রদ্ধা, ভক্তি বা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা আছে সেটাকে স্বীকার করেন না। 

অম্বুবাচীর বা অমাবতির সব থেকে বড় উৎসব বা মেলা হয় ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাংশে নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত কামাক্ষ্যা মন্দিরে। এ বার ২২ জুন বন্ধ হবে মন্দির, খুলবে চার দিন পর। ওই সময়ই শুরু হবে অম্বুবাচী মেলা, ইতিমধ্যেই গেরুয়া, লাল, কালো বস্ত্রে সজ্জিত সাধু-সন্ন্যাসীরা রওনা হয়ে গেছেন মন্দিরের পথে। কি ভাবছেন একবার যাবেন নাকি কামাক্ষা? যেতেই পারেন ঘুরে আসতে পারেন আর পরিচয় করতে পারেন বিশাল এই দেশের আধ্যাত্মিক চিন্তা ভাবনার এক অংশের সাথে। 

No comments:

Post a Comment