Friday 14 April 2017

পয়লা বৈশাখ, বাঙালী আর কিছু ঢপের কিসসা!


পয়লা বৈশাখ, বাঙালী আর কিছু ঢপের কিসসা!

আজ পয়লা বৈশাখ, সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালীর বড় আদরের দিন, অন্যান্য দিন ডমিনজ, পিজ্জা হাট ইত্যাদি জায়গায় বিচরিত বাঙালী (সাথে অদ্ভুত বাংরেজি বুলি, সাহেবি আদবকায়দা সহ) আজ মাটির টানে (?) ধুতি, পাঞ্জাবীতে ফুল বাবুটি সেজে সিক্সথ বালিগঞ্জ প্লেস বা ভজহরি মান্নায় ঢুঁ মারবে, সাথে ইলিশের বড় পেটির কাঁটা (সাথে আরও কতকিছু) চিবুতে চিবুতে দেশ/ বিদেশ, কালচার কতকিছু নিয়ে লম্বা লেকচার ঝাড়বে। শেষে টিস্যু পেপারে হাত মুছে, বাহারি পান চেবাতে চেবাতে ‘শুভ রাত্রি’ বলে ঘুমাতে চলে যাবে। না এই পর্যন্ত গল্পটি ঠিকঠাকই আছে, বরং এর অন্যথা হলেই মনে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক।

তবু বেয়াদব মনে প্রশ্ন জাগে আচ্ছা প্রতিবেশী দেশে কেমন আছে কুলভূষণ যাদব? জাস্ট ফাঁসির জন্যে অপেক্ষা করেছেন না ইতিমধ্যে ঝুলে পড়েছেন কে জানে? তাঁর কথা কি ভুলে গেছি আমরা? আসুন একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক, আশা করি ইতিহাসের এই ছোট্ট সফর খারাপ লাগবে না নববর্ষের এই শুভ দিনে।

২০০১ সাল, ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলা, ৯ জন মৃত, যার মধ্যে একজন মালি, ১৯ জন আহত। ঘটনার তদন্তে পাওয়া গেলো, এই সুন্দর ঘটনার মাষ্টার মাইন্ড শ্রীযুক্ত আফজল গুরু।৯ই, ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ঘটনার তেরো বছর বাদে জামাই আদরে রাখার পর বারে বারে বিচার করে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আফজল গুরুকে ফাঁসি দেয় ভারত সরকার। তখন আমাদের মানবতাবাদী মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল মায় ছাত্র সংগঠন গুলি অবধি (APDR, JKLM) এই ফাঁসির মানে পরিকল্পিত হত্যার বিরোধিতা করে। পরবর্তীকালে অর্থাৎ ২০১৫ তে JNU থেকে স্লোগান ওঠে - "আফজল হম সরমিন্দা হ্যায়, তেরা কাতিল জিন্দা হ্যায়", আমাদের সাধের পশ্চিমবঙ্গও পিছিয়ে থাকেনি এই প্রতিবাদ/ বিক্ষোভ কর্মসূচী থেকে, JU থেকে স্লোগান ওঠে - "আফজল বোলে আজাদী", “কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি”।

আর একটু আগে যাওয়া যাক, ১৯৯৩ মুম্বাই বিস্ফোরণ, ৫ই অগাস্ট, ১৯৯৪ এবারেও একজন কুচক্রী ধরা পড়ল, নাম ইয়াকুব মেমন। সুদীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পরে, ৩০শে জুলাই, ২০১৫ লটকে দেওয়া হল ফাঁসিতে, যথারীতি নিউজ পেপার, সদা জাগুরুক বুদ্ধিজীবী, মানবতাবাদীর দল কেঁদে ভাসিয়ে দিলেন। 
হাল ছেড়ো বন্ধু তুমি আরও আছে, বুরহান ওয়ানি আপনার আমার প্রিয় কাশ্মীরের ভুমিপুত্র, বেচারি আম কাশ্মিরির দুঃখ দুর্দশা সহ্য করতে না পেরে হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছিল কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্যে, কাশ্মীর কে ভারতীয় সেনার থেকে অত্যাচারমুক্ত করার জন্যে। কতবার না জানি তার ak47 এর সামনে লুটিয়ে পড়েছে কত অত্যাচারী সেনার দম্ভ, বুরহানের স্বাধীন বুলেট ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে কত সেনার অত্যাচারী বুক। এরকম সোনার টুকরো ছেলে একদিন ভারতীয় সেনার সাথে লড়াই লড়াই খেলতে গিয়ে শহীদ হল, কবীর সুমন গান বাঁধলেন,  চারিদিকে ধিক্কার/ হাহাকার উঠে গেলো।

মিডিয়া সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল, বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে প্রদীপ জ্বলে উঠলো, কত জ্বালাময়ী ভাষণ দেওয়া হল অত্যাচারী ভারত সরকারের প্রতি। মনের ভিতর থেকে বিবেক বলে উঠলো “ সাবাস, এই তো চাই, এই তো চাই”।

সত্যি এতো উদারমনস্ক, মুক্ত চিন্তার ব্যাপ্তি, মানুষের জন্য এতো ভালোবাসা অন্য কোথাও পাবেন? এই জন্যেই আমরা বুক ঠুকে বলতে পারি - " এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবেনাকো তুমি। সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি"। যারা আমার দেশের মানুষের প্রান নিয়েছে, তাঁদের প্রতি এই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের মতো অসহিষ্ণু দেশেই সম্ভব।

এবার সাম্প্রতিক ঘটনায় আসি, ৩রা মার্চ ২০১৬, ইরান থেকে অপহরণ করা হল কুলভূষণ যাদবকে, চরবৃত্তির অভিযোগে (যদিও প্রমানিত নয় এখনও), একটু দেখে নেওয়া যাক তিনি কি কি করেছিলেন?

১) পাকিস্তান পার্লামেন্টে হামলা করেছিলো? – না। 
২) আজমল কাসভের মত অস্ত্র নিয়ে করাচী/ লাহোরে হামলা করেছিলো, আর অনেক নিরীহ পাকিস্থানি নাগরিক মারা গিয়েছিলো? – না। 
৩) বুরহান ওয়ানির মতো পাকিস্থানি সেনাদের হত্যা করেছিলো? – না। 

তাহলে তাহলে? না না এইসব অবান্তর প্রশ্ন করা যাবে না? কুলভূষণ যাদব ভারতীয় তদুপরি RAW এর এজেন্ট (পাকিস্তানের দাবী অনুযায়ী), তাই ১০ই এপ্রিল ২০১৭, পাকিস্থানি সেনা আদালত তাঁকে  মৃত্যুদন্ড দিতেই পারে। আর কে জানে এতদিনে তা কার্যকর হয়ে গেছে কিনা? এর আগে সরবজিত, রবিন্দর কৌশিক এরকমই সুবিচারের ফল ভোগ করেছেন কিনা।

আজ কিন্তু APDR, JKLM, JNU, JU তে বড়ই অন্ধকার, কোনও মোমবাতি জ্বলছে না। কোনও বিক্ষোভ/ মিছিল, প্রতিবাদ সভা হচ্ছে না।

পশ্চিমি দুনিয়ায় ফেক নিউজ, পেড নিউজ এই কথাগুলি খুব শোনা যায়। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছি আজকের ভারত এর ছোঁয়াচ থেকে বেঁচে তো? আমাদের দেশ, সরকার অসহিষ্ণু, সেনা অত্যাচারী যারা এসব বলেন সেইসব মানবতাবাদী, বুদ্ধিজীবী শিক্ষিত নাগরিকদের বলতে চাই, হ্যাঁ ভারত অসহিষ্ণু, নইলে আজমল কাসভকে হাতেনাতে অকুস্থলে ধরার পরও বছরের বছর জামাই আদর দিয়ে বিচার, আফজলকে ১৩ বছর সময় দেওয়া এসব ভারতের অসহিষ্ণুতারই প্রমান তাই না? আর ভেবে দেখুন না ভারত যদি না অসহিষ্ণু হতো, তাহলে তাঁরা নির্বিঘ্নে তাঁদের এই জাগরুক প্রতিবাদ কর্মসূচী কি চালিয়ে যেতে পারতেন? পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে চোখ রাখলে কি বলবেন তাঁরা? 

না আর কিছু বলতে বা ভাবতে ভালো লাগছে না, আর আমাদের বুদ্ধিজীবী, বিদ্বজ্জন কন্টকিত বাংলায় বসে এর থেকে বেশি কি বা চিন্তা করতে পারি? তবু অনুরোধ করব নববর্ষের হুল্লোড়ে আনন্দ, মজা করতে করতে যদি পারেন তাহলে একবার নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখুন, ঠিক দিশায় যাচ্ছি তো আমরা? ব্যাস আর কিছু না হলেও চলবে।

(আমার এই লেখা কারও ভাবাবেগে/ স্বার্থে আঘাত দেওয়ার জন্যে নয়, অপিতু এই লেখা আমার মনোকষ্টের বহিঃপ্রকাশ মাত্র, তবু যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তা অনিচ্ছাকৃত ও এই ত্রুটি মার্জনীয়) 

No comments:

Post a Comment