Tuesday 25 April 2017

সুকনায় মাওবাদী হামলা আর কিছু প্রশ্ন?



সুকনায় মাওবাদী হামলা আর কিছু প্রশ্ন?

সোমবার দুপুরের এই  বৈপ্লবিক (?)( নাকি কাপুরুষের মতো পিছন থেকে ছুরিকাঘাত, এটা আমার বিপ্লবী বন্ধুরাই বলতে পারবেন) হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৫ সিআরপিএফ জওয়ানের, কিন্তু আজ অবধি ফেসবুকে একজন মানবতাবাদী, সেকুলারবাদি বুদ্ধিজীবীকেও সমবেদনা জানাতে দেখলাম না। কারণ অবশ্য সহজেই অনুমেয়, আরে ওরা সব ডিউটি করতে গিয়ে মারা গেছে ওদের জন্যে চোখের জল ফেলার থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে - সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আটকানো, হিন্দুত্বের ধজ্জিয়া ওড়ানো প্রমুখ। আর যারা মারা গেছে তাঁরা সব মিডিওকার ছেলেপুলে, আমাদের মতন বুদ্ধিজীবী নাকি এইসব হোয়াইট কালার প্রফেশনাল কি? বাব্বা মার্কেটে কল্কে পাই নি তাই গেছে সৈনিক হতে, আর এসব কাজে একটু লাইফ রিস্ক থেকেই যায়।

ঠিকই তো সৈনিক হওয়া কি এমন ব্যাপার? তাঁর থেকে আমাদের মতো বুদ্ধিজীবী, সেকুলারবাদি, মানবতাবাদী হওয়াটা কি চাট্টিখানি ব্যাপার?

গ্রামের কোন ছেলে যখন সৈনিক হবার স্বপ্ন দেখে তো ওর সকাল হয় চারটায়, উঠেই গ্রামের রাস্তায় দৌড়তে থাকে, কতই বা বয়স হয় এই ষোলো কি সতেরো বছর। মুখে  তখনও কৈশোরের নিস্পাপ ভাব, লালিত্য থেকে যায় আর ঘাড়ে থাকে সংসারের গুরুভার। কোনক্রমে মাধ্যমিক/ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ আর সৈনিক হওয়ার জন্যে দিন রাত এক করে দেয়। এই স্বপ্নের ভাগীদার ছেলেটি একা নয় একচিলতে ঘরে বসে থাকা যুবতী বোন/ দিদি, বয়স্কা মা আর সময়ের ভারে, গরিবির সাথে যুজতে যুজতে দুর্বল ক্ষয়াটে হয়ে যাওয়া বাবাও। সবাই মিলে স্বপ্ন দেখে বাড়ীর ছেলেটা যদি কোনক্রমে সিআরপিএফ, আর্মি বা সেনাবাহিনীর যেকোনো একটি শাখায় একটি চাকরি জোটাতে পারে (থুড়ি আপানাদের মতে সরকারী চাকরি, মানে ছেলেটি আপন জব সিকুইরিটির স্বার্থে জুটিয়ে নিয়েছে তাই) তাহলে সংসারের হাল একটু ফিরবে, ভালো জায়গায় বিয়ে হবে যুবতী বোন বা দিদিটির, ভাইটিও পড়াশুনা শেষে দাদার মতো সৈনিকের জীবন বেঁছে নিতে পারবে, বাড়ীতে অসুস্থ মা-এর চিকিৎসা হবে, বুড়ো বাবা একটু বিশ্রাম নিতে পারবে, কিংবা মহাজনের কাছে বাঁধা পড়া জমিটি ছাড়িয়ে নিয়ে চাষাবাদ করতে পারবে, এরকমই কত আটপৌরে স্বপ্ন দেখে তাঁরা। আর এঁরা যখন যোগ দেয় সশস্ত্র বাহিনীতে, মনের কোনায় এই স্বপ্নটিয়ও থাকে যে সে দেশের সেবায় লাগছে, দেশকে রক্ষার মহান দায়িত্ব নিয়েছে। তাই বোধহয় প্রাণঘাতী হামলার সময়েও যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে না অকাতরে নিজের প্রান বলিদান করে যায়। এঁদের মৃত্যুকেই তো ছোট করা যায় তাই না?

যারা ২৪ ঘণ্টা মৃত্যুর ছায়ায় বাস করে, জলে জঙ্গলে তাঁবুর ভিতরে আধপোড়া রুটি, একটু ডাল, সবজি খেয়ে নিজের কর্তব্য পালন করে চলে, যাঁদের মাইনে থেকে সরকার ইনকাম ট্যাক্স কেটে নেয় (অথচও মাননীয় সাংসদদের ইনকাম ট্যাক্স ফ্রি), বাড়ী থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে থাকা জওয়ান ভাইটির ফোনের জন্যে কত হ্যাপা পোহাতে হয়, অনেক সময় অসুস্থ মায়ের খবর, সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর খবর কিংবা অসুস্থ সন্তানের খবরও নিতে পারে না মাসের পর মাস, অথচও আমরা নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লবের ঝড় তুলে দিই, ফোন/ মেসেঞ্জারে আপনজনের সাথে কানেক্ট করে থাকি তাঁরাই এঁদের ভুলে যাই কিভাবে?

না ভুলি না এঁদের নিয়ে রাজনীতি করতে ভুলি না, অথচও দেশকে জয় এনে দেওয়া খেলোয়াড়দের জন্যে এক কোটি টাকা পুরষ্কার দাবি করতে পারি (না আমি কোনও খেলোয়াড়কে ছোট করছি না) অথচও কোনও সৈনিক শহীদ হলে তাঁদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্যে আওয়াজ ওঠাতে পারি না। অথচও জাতপাতের নামে সংরক্ষণ ব্যাবস্থার সুযোগ নিতে পারি।  

ঠিকই, দেশে কত পরিবর্তন হয়েছে, অচ্ছে দিন আসছে শুনতে পাই, দেখতে পাই না। আর হবে নাই বা কেন? আমাদের দেশে সততার প্রতীক মুখ্যমন্ত্রী আছে, চাওয়ালা প্রধানমন্ত্রী আছে, চপ্পলবাজ নেতা/ নেত্রী আছে, দুর্নীতিতে ডুবে থেকেও আমাদের নেতা/ নেত্রীরা সন্মানের সাথে ঘুরে বেড়াতে পারে সেই দেশে এরকমটাই সম্ভব।

No comments:

Post a Comment