Sunday 2 July 2017

চন্দননগরের রথের ইতিকথা


চন্দননগরের রথের ইতিকথা
  
“রথ টানা সেই রঙ্গিন বিকেল আসবেনা আর ফিরে, শৈশবটাই হারিয়ে গেল দায়িত্ব বোধের ভিড়ে...।।” না আমার লেখা নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া এই দুই লাইন বোধ হয় মনে গেঁথে বসে গেছিলো আজ লেখার সময়ে মনে পড়ে গেল। আজ রাত্রি পোহালেই কাল উল্টো রথের টান, সপ্তাহভর যে উৎসবের সূচনা হয়েছিলো কাল তার পরিসমাপ্তি, আবার এক বৎসরের প্রতীক্ষা।

আজ চন্দননগরের রথের কথা বলব, ঐতিহ্যে ও প্রাচীনতার দিক থেকে মাহেশ আর গুপ্তিপাড়ার পরেই এই রথের স্থান।  কথিত আছে ১৭৭৪ শ্রী যাদবেন্দু ঘোষ নামে এক আড়তদার (চাল ব্যবসায়ী) নিজ বাড়ীর নিমগাছের কাঠ দিয়ে এই রথ প্রস্তুত করান। এই রথের পিছনে যে জনশ্রুতি আছে যে রথযাত্রার সময়ে একবার শ্রী যাদবেন্দু ঘোষ মহাশয়ের শ্রীক্ষেত্র যাওয়ার ইচ্ছে হয়, সেইমতো লোকজন, পরিবার পরিজন সাথে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু অসুস্থতার কারনে তাঁর শ্রীক্ষেত্র দর্শন হয়ে ওঠেনি। বিফল, ভগ্নমনোরথ শ্রী যাদবেন্দু ঘোষ দুঃখে ভেঙ্গে পড়েন, তখন প্রভু জগন্নাথ দেবের সপ্নাদেশ পেয়ে ১৭৬৩ সালে পুণ্যতোয়া গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের নিকট জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এর পরের রথ প্রতিষ্ঠার কথা তো আগেই উল্লেখ করেছি, যাই হোক উক্ত রথটি নির্মাণের প্রায় ১৮০ বৎসর পড়ে কালের নিয়মে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। 

পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে, চন্দননগর রথ পরিচালনা সমিতির নিরলস কর্মী শ্রী মদনমোহন দাস ও তৎকালীন গোন্দলপাড়া জুট মিলের সাধারন সম্পাদক শ্রী প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জী মহাশয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আর চন্দননগরের জনসাধারণের অনুদানে এবং M/S BRAITHWET & CO.LTD এর সহযোগিতায় আগের রথটির  অনুকরণে  আজকের এই লোহার, প্রায় ৬০ টন ওজনের রথটি নির্মিত হয়। শোনা যায় সেই ১৯৬২ সালেই আনুষ্ঠানিক ভাবে কাঠের রথটি বিসর্জন দেওয়া হয়, আর  রথের গায়ে কারুকার্য করা কাঠের প্যানেলের কিছু অংশ এখনও চন্দননগর যাদুঘরে রাখা আছে।

কি ভাবছেন আসবেন নাকি ঐতিহ্যের শহর চন্দননগরে? আমন্ত্রণ রইল কিন্তু, আজ এই পর্যন্তই, আবার ফিরে আসবো এরকমই কোনও গল্প সাথে নিয়ে। সাথে থাকুন, সঙ্গে থাকুন। ভাল থাকবেন সবাই, শুভ রথযাত্রা। প্রভু জগন্নাথ দেব সবার মঙ্গল করুন।


তথ্যসূত্র – গুগুল, ছবিটি আমার এক বন্ধুর তোলা

No comments:

Post a Comment