Thursday 26 January 2017

বঙ্গে কালী পূজা ও কালী মন্দির – পর্ব ৪


বঙ্গে কালী পূজা ও কালী মন্দির – পর্ব ৪

বেশ কয়েক বছর আগে একবার একটি লেখায় পড়েছিলাম যে ১২৮৭ সালে সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজ সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’-এর অগ্রহায়ণ সংখ্যায় একটি মনোজ্ঞ প্রবন্ধ লিখেছিলেন ‘বাঙ্গালার ইতিহাস সম্বন্ধে কয়েকটি কথা’ শিরোনামে, তাতে তিনি অনেক আক্ষেপ করে লিখেছিলেন – ‘বাংলার ইতিহাস নাই। নহিলে বাঙালী কখন মানুষ হইবে না। আইস আমরা সকলে মিলিয়া বাংলার ইতিহাস অনুসন্ধান করি। যাহার যত দূর সাধ্য সে তত দূর করুক। ক্ষুদ্র কীট যোজনব্যাপী দ্বীপ নির্মাণ করে। একের কাজ নয়, সকলে মিলিয়া করিতে হইবে’। হয়তো স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে অনুসন্ধানের আকাঙ্ক্ষা সেই সময় থেকেই, তবে আমার জ্ঞ্যান, শিক্ষা সর্বোপরি সুযোগ কম হওয়ায় কাজের কাজ কিছুই করে উঠতে পারি নি। তবে আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি আঞ্চলিক ইতিহাস সামাজিক তথা দেশ-ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, একে বাদ দিয়ে সমাজের পূর্নাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়। আমার ক্ষুদ্রাটিক্ষুদ্র প্রয়াস “বঙ্গে কালী পূজা ও কালী মন্দির” শীর্ষক লেখায় তারই যথসামান্য চেষ্টা করেছি মাত্র।  

এবারের গন্তব্য শ্যামনগরের ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির, এটি মূলাজোড়ের কালীবাড়ী নামেও বিখ্যাত। আবারও সাথী হল সহধর্মিণী আর কন্যা, যদিও তাঁদের ঘোরা জায়গা তবু পিছু ছাড়ল না, অগত্যা একাকী যাওয়ার ইচ্ছে ত্যাগ করতে হল। যাওয়ার পথে রুমি মানে আমার সহধর্মিণীটিকে জিজ্ঞেস করলাম – যাচ্ছ ঠিক আছে কিন্তু শ্যামনগর নামের উৎপত্তি আর ব্রহ্মময়ী কালীমন্দিরের ইতিহাস তোমাকেই কিন্তু শোনাতে হবে। প্রতিবার আমি গল্প শোনাবো না এবারে আমি শুনবো। কন্যা আর গিন্নী সমস্বরে প্রতিবাদ করে বলল – না তুমিই বলবে আর আমরা শুনবো, আমরা বেড়াতে আর গল্প শুনতে যাচ্ছি, তাই দায়িত্ব তোমারই। দু দুটো হোম মিনিস্টারের আদেশ অতএব ব্যাজার মুখে বললাম – আগে চল মন্দির চত্বরে কোথাও বসি তারপর তোমাদের গল্প শোনাবো। ভুটভুটি করে গঙ্গা পার হয়ে পৌঁছানো গেলো ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির, একটু খুঁজে পেতে একটু নিরিবিলি জায়গা দেখে দুদণ্ড জিরাবো বলে ঠিক করেছি, অমনি খচরমচর শুরু হল – কি হল বেশ তো বসার জায়গা পাওয়া গেলো এবারে গল্প বল দেখি। না ভালো জ্বালা দেখছি, কোথায় ভালো করে ঘুরব ছবি তুলবো তা না এখন বক বক করো। বললাম আচ্ছা বলছি শোন – শ্যামনগরের সাথে বর্ধমানের রাজপরিবারের যোগ ছিল কোন এক সময়। শ্যামনগরে এক সময় নদীয়ারাজ মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জমিদারী ছিল, ঐশী মানে আমার কন্যা হাততালি দিয়ে বলে উঠলো আমি জানি সেই গোপাল ভাঁড় আর রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের গল্প আমি শুনেছি। হেঁসে বললাম – হ্যাঁ এই সেই মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, কিন্তু তাঁর গল্প এটা নয়, সব বলছি মন দিয়ে শোন। বর্গী হামলার সময়ে বর্ধমানের রাজমাতা কৃষ্ণকুমারী দেবী কৃষ্ণচন্দ্রের কাছ থেকে রামদেব নাগ নামে এক কর্মচারীর নামে শ্যামনগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ইজারা নিয়ে বর্তমান কাউগাছির কাছে একটি গড় তৈরি করেন। 

সেখানে মন্দির তৈরি করে নিজেদের কুলদেবতা শ্যামকিশোরের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। রাজমাতা কৃষ্ণকুমারী ও রাজকুমার তিলকচাঁদ মহাতাব এই গড়ে থাকতে শুরু করেন। শোনা যায় শামুক আকৃতির গড় ছিল বলেই এই গড়ের নাম শামুকগড় হয়েছিল, পরবর্তীকালে সেই শামুকগড় থেকে ‘সামনে গড়’, পরবর্তীকালে সেখান থেকেই শামনগর বা শ্যামনগরের উৎপত্তি। তবে এও মনে করা হয় যে বর্ধমান রাজপরিবার যেহেতু তাদের পারিবারিক বিগ্রহ শ্যামকিশোরকে নিয়ে এসেছিলেন, আর ফিরে যাওয়ার সময় শ্যামকিশোরকে নিয়ে যান নি পরবর্তী সময়ে এই শ্যামকিশোরের নাম থেকেও এই অঞ্চলের নাম শ্যামনগর হয়ে থাকতে পারে।

তবে পুরাতন কাব্যে এই শ্যামনগরের উল্লেখ আছে, জানো পঞ্চদশ শতকে কবি বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসার ভাসান’কাব্যে গঙ্গার দু’পারের বর্ণনায় কবি লিখেছিলেন, ‘‘মূলাজোড়া গাড়ুলিয়া বাহিল সত্বর/ পশ্চিমে পাইকপাড়া বাহে ভদ্রেশ্বর/ চাঁপদানি ডাইনে বামেতে ইছাপুর/ বাহ বাহ বলি রাজা ডাকিছে প্রচুর। এই ‘মূলাজোড়া’ই পরবর্তী সময়ে মূলাজোড়, যা বর্তমান শ্যামনগরের অন্যতম আদি জনপদ ছিল।  

রুমি বলল – হুম শ্যামনগরের কথা তো শুনলাম এবারে ব্রহ্মময়ী কালীমন্দিরের গল্প শোনাও তো? বললাম – হ্যাঁ বলছি শোন, এই ব্রহ্মময়ী কালীমন্দিরের সাথে জড়িয়ে আছে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভাই গোপীমোহন ঠাকুরের নাম। কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার বাসিন্দা গোপীমোহন ১৮০৯ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন (মন্দির গাত্রে উল্লেখ আছে ৩১শে বৈশাখ ১২১৯ সনে)। কথিত আছে, তাঁর আট বছরের মেয়ে ব্রহ্মময়ীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল, তখনকার দিনে অনেক কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো, আর বিশেষ করে আট বছরের মেয়ের বিয়ে দেওয়াকে পুণ্যকাজ বলে গন্য করা হতো, বলা হতো গৌরীদান। যাই হোক বিয়ের দিন পাল্কি করে আহিরীটোলা গঙ্গার ঘাটে গোপীমোহন ঠাকুরের মেয়ে ব্রহ্মময়ীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। স্নান করে জল ভরে আনার জন্য জলে নেমে হঠাৎ করে তলিয়ে যায় ব্রহ্মময়ী। এই সংবাদে গোপীমোহন কন্যার শোকে পাথর হয়ে যান আর বারবার বিলাপ করতে থাকেন। শোনা যায় এরপরেই স্বপ্নাদিষ্ট হন গোপীমোহন, কন্যা ব্রহ্মময়ীকেই মাকালীর রুপে স্বপ্নে দেখেন তিনি। এবং মূলাজোড় ঘাটে তার দেহ ভেসে উঠেছে স্বপ্নে জানতে পারেন আর কালীরূপী ব্রহ্মময়ী তাঁকে বলেন - আমি তোমার মেয়ে, আমার দেহ যেখানে ভেসে উঠেছে সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা কর। গোপীমোহন মূলাজোড়ে গিয়ে মেয়ের দেহ পান এবং কাছাকাছি জঙ্গলের মধ্যে কষ্টিপাথরের একটি কালীমূর্তিও পান। অবশ্য গোপীমোহন ঠাকুর মন্দিরের কাজ শেষ করার আগেই মারা গিয়েছিলেন, মন্দিরটি সম্পূর্ণ করেন তাঁর ছোট ছেলে প্রসন্নকুমার ঠাকুর। ব্যাস আমি যতটুকু জানতাম তা তোমাদের বললাম, চল এবার মন্দির ও মাকে দর্শন করে আসি। রুমি বলল – এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠার সাথে এত করুণ কাহিনি জড়িয়ে আছে তা আগে জানতাম না, জেনে মন ভারী হয়ে গেলো। আমি বললাম – আমিও জানতাম না পরে জেনেছি, আর দেখ কেউই কিছু আগে জেনে আসে না সবাই ক্রমে ক্রমে জানতে পারে। নাও এবারে চলো, ঐশীও বলল - হ্যাঁ মা চলো মেলাতেও তো ঘুরতে হবে।  

পুজার ডালা কিনে মন্দির চত্বরে এসে ছবি তুলতে গিয়ে বাধা পেলাম একজন সেবায়েত ঠাকুর মশাইয়ের থেকে, তিনি গুরু গম্ভীর কণ্ঠে আদেশ করলেন – মায়ের মন্দির ও রাধাকৃষ্ণের মন্দিরের সামনে থেকে কোন ছবি তোলা যাবে না, আর মায়ের বা রাধাকৃষ্ণের ছবি তো একদমই তোলা যাবে না। দেখুন সামনে নির্দেশাবলী দেওয়া আছে। আপনি ছবি তুলতে চাইলে সাইড থেকে তুলতে পারেন। 

তাকিয়ে দেখলাম বড় বড় করে লেখা আছে নির্দেশাবলী, অগত্যা মায়ের পূজা দিয়ে, দর্শন করে মন ভরে গেলো। পিতলের সিংহাসনে কষ্টিপাথরের মনোরম মূর্তি বিরাজমান, গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষেধ। মাতৃমূর্তি এখানে পশ্চিমমুখী, জনশ্রুতি অনুসারে বলা হয় মহাসাধক শ্রী রামপ্রসাদ সেন যখন নৌকাপথে গঙ্গা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁর গান শোনার জন্য দেবী পশ্চিম দিকে মুখ ফেরান। তবে ইতিহাস অনুসারে মহাসাধক রামপ্রসাদ সেন মারা যান ১৭৭৫ খ্রীঃ আর মন্দির তৈরি হয় ১৮০৯ এ তাই এই ঘটনা সত্য নয়। আরও জনশ্রুতি আছে যে সাধক বামাক্ষ্যাপা এক সময়ে এই কালীমূর্তি পুজো করতেন। ঐতিহ্যের সাথে কত জনশ্রুতি মিশে থাকে তার তুলনা মেলা ভার। 
   
বিধি বাম তাই নির্দেশ অনুসারে সাইড থেকে ছবি তুলেই খুশী থাকতে হল। ব্রহ্মময়ীর মন্দিরটি নবরত্ন মন্দির, এরকম মন্দির পশ্চিমবঙ্গে বেশী দেখা যায় নি। মন্দিরের সামনে একটি নবনির্মিত পূজা দালান আছে, ভক্ত বৃন্দ একসাথে বসতেও পারে সেখানে। মন্দিরের দুই পার্শ্বে ছয়টি করে সারিবদ্ধ শিবদেউল। শিব দেউলে সাদা ও কালো দুই ধরনের শিবলিঙ্গ দেখা যায়। শিব মন্দিরগুলো অবশ্য গোপীমোহন পুত্র প্রসন্নকুমার সম্পূর্ণ করেন। মন্দিরের দালানের বাতিগুলি ইউরোপীয় প্রভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, মন্দিরে সোপানের কাছে দুই স্তম্ভের উপর শ্বেত পাথরের দুই সিংহ মূর্তি। আর উথার সময়ে পাশের দুই স্তম্ভের গাত্রে খোদাই করা আছে দুটি বিষ্ণু মূর্তি। অনুমান করা হয় এই মূর্তিদুটো ব্রহ্মময়ী মূর্তির চাইতেও প্রাচীন, শোনা যায় এগুলি বাংলাদেশের রাজশাহীর কোন জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ির সময় পাওয়া যায়।

পরবর্তী কালে মন্দির প্রতিষ্ঠার সময়ে এগুলি এনে স্থাপন করা হয়। পরবর্তী গন্তব্য রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সেখানেও বড় বড় করে লেখা আছে ছবি তোলা নিষেধ, অন্যথায় ক্যামেরা জমা নিয়ে নেওয়া হবে। যাক শ্রী জিৎ কুমার ঠাকুরের (সেবায়েত, মূলাজোড় ট্রাষ্ট) আদেশ শিরোধার্য, হৃদয়ের ক্যামেরায় মন ভরে তুলে নিলাম নয়ানভিরাম রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি, এখানেও পিতলের ভব্য সিংহাসনে রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি বিরাজমান। দেখে বাইরে এলাম, বাইরে দেখলাম পুরাতন তিনটি শিব মন্দিরের আমুল সংস্কার হচ্ছে, মন্দিরগুলি যদিও সর্বসাধারনের জন্যে এখনও খোলা হয়নি।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি কালী পুজো উপলক্ষে এই কালীবাড়ির পুজো নামকরা। সেদিন রাতে এখানে বিশেষ পুজো হয়ে থাকে। কালীপুজার দিন রাত্রে অনেক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এই মন্দির প্রাঙ্গনে। তার পরের দিন সকলকে বিনামূল্যে মায়ের ভোগ বিতরণ করা হয়। গ্রীষ্মকালে মায়ের মন্দির সকাল ৬:১৫ থেকে বেলা ১২:৩০ এবং বিকেল ৪:০০ থেকে ৮:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে এবং শীতকালে সকাল ৬:৩০ থেকে বেলা ১২:৩০ ও বিকেল ৩:৩০ থেকে রাত্রি ৭:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়াও পৌষ মাসে এখানে এক মাস ধরে বিশাল মেলা বসে এবং তখন এখানে জোড়া মুলো দিয়ে পুজা দেওয়ার রীতি প্রচলন আছে। হয়ত এর থেকেই মূলাজোড়ের কালী নামটি এসেছে। 

এর পরে মেলা চত্বর ঘুরে দেখার পালা, কত কিছুর বিকিকিনি হচ্ছে, বাইরে নানা রকম খাওয়ার জিনিসের সম্ভার – জিলাবি, গজা, মালপো, নিমকি আরও কত কিছু। তবে একটা জিনিসের কথা না বললেই নয়, সেটা হল স্টেশনের কাছে বিক্রি হওয়া পরোটা আর লাল করে ডিমের কারী। না খেলে এর মজা বোঝাই যাবে না। একবার এসে দেখুন না হলপ করে বলতে পারি নানা রকমের খাবারে রসনা আর মন দুইয়ের তৃপ্তি হবেই হবে।

ফেরার পথে রুমিকে বললাম – জানো এই শ্যামনগরে বাংলার কয়েকজন কৃতি মানুষের বসবাস ছিল, রুমি বলল – হ্যাঁ জানি কবি ভারত চন্দ্র রায়গুণাকর এখানেই থাকতেন। আমি বললাম – হ্যাঁ মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কবিকে যে জমি প্রদান করে ছিলেন সেখানেই আনুমানিক ১৭৪৯ খ্রীঃ নাগাদ এখানে বসতবাটি তৈরি করে বাস করতে থাকেন, আর ১৭৬০ খ্রীঃ এই মূলাজোড়েই কবি মারা যান। কবি ভারতচন্দ্রের কাছে মূলাজোড় ছিল বার্ধক্যের বারানসী এবং তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য “অন্নদামঙ্গল” এই মূলাজোড়েই রচিত হয়। মূলাজোড়ের মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিকভাবেই যে তাঁর কাব্যে প্রভাব ফেলে ছিল তার উদাহরন ওনার বিখ্যাত প্রার্থনা ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’- এর মধ্যে দিয়ে এই অঞ্চলের গরিব সাধারন মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এছাড়া আর একজন কৃতি পুরুষ ছিলেন শ্রী রঙ্গলাল। বর্ধমানের মহারাজা তাঁকে “বাক্য রত্নাকর”উপাধি দিয়েছিলেন। শরৎ শশি চিত্ত, চৈতন্য উদয়, বৈ্রাগ্য, বিপিন বিহার কাব্য, হরিদাস সাধু প্রভৃতি গ্রন্থ লিখে তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন, তবে তাঁর যুগান্তকারী কাজ ছিল বাংলায় বিশ্বকোষ রচনা যা প্রকাশিত হয়েছিল তারই তত্বাবধানে ও তারই প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানায় যা এই অধুনা শ্যামনগরেই ছিল। তখনকার দিনে এইরুপ গণ্ডগ্রামে বসে এরূপ একটি কাজ রীতিমত বৈপ্লবিক, যা বাঙালীর শিক্ষা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। খেয়ে দেয়ে মেলা থেকে অনেক কিছু কিনে এবারে ফেরার পালা, পিছনে পরে থাকলো হরিমোহন ঠাকুরের প্রতিষ্ঠা করা এক অনন্য সুন্দর মন্দির আর তার সাথে জড়িয়ে থাকা এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। মন নিজে থেকেই গুন গুন করে উঠলো একটি গান – ‘মন রে কৃষিকাজ জান না| এমন মানব জনম রইল পতিত, আবাদ করলে ফলত সোনা| কালী নামে দেওরে বেড়া, ফসলে তছরুপ হবে না|’ সত্যিই কি সার কথা, বৃথা কাজে, স্বার্থের ঠোকাঠুকিতেই জীবন গেলো, জীবনের উদ্দেশ্যই আজও বুঝতে পারলাম না।  

লেখা শেষ করি শ্যামা মায়ের আর একটি রুপ বর্ণনা করে, যদি কিছু ভুল ভ্রান্তি থেকে থাকে, নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন। 

মহাকালী
তন্ত্রসার গ্রন্থমতে, মহাকালী পঞ্চবক্ত্রা ও পঞ্চদশনয়না। তবে শ্রী শ্রী চণ্ডীতে তাঁকে আদ্যাশক্তি, দশবক্ত্রা, দশভূজা, দশপাদা ও ত্রিংশলোচনা রূপে কল্পনা করা হয়েছে। তাঁর দশ হাতে রয়েছে যথাক্রমে খড়্গ, চক্র, গদা, ধনুক, বাণ, পরিঘ, শূল, ভূসুণ্ডি, নরমুণ্ড ও শঙ্খ।

আজ এই পর্যন্তই, আবার ফিরে আসব বাংলার কোনও কালীমন্দিরের ছবি ও লেখা নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন, সবার মঙ্গল হউক। 

(ছবির জন্যে ফটো আলব্যাম দেখুন)

No comments:

Post a Comment