Tuesday 26 April 2016

সব চরিত্র কাল্পনিক মাত্র


 সব চরিত্র কাল্পনিক মাত্র

সকাল ০৮:১৫ –এর বারাসাত লোকাল, ভিড় ঠেলে অপূর্ব বাবু নিজেদের চেনা জাইগায় এসে দেখলেন, বিকাশ, সুমিত, ভজা, কেষ্ট সবাই আছে, মনে মনে ভাব্লেন যাক বাবা একটু বসা যাবে তাহলে। কেষ্ট উঠে বলল – দাদা বসুন একটু। অপূর্ব বাবু হাঁফ ছেড়ে একটু বসে আনন্দবাজার টা খুললেন, পেপার টা নেওয়া হছে কিন্তু পড়া হয়নি, একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক, বাকী অফিসে বসে পড়া যাবে। পেপার খুলতেই, ভজা চেঁচিয়ে বলল – দাদা ধর্ষণ তরশন কিছু থাকলে বলবেন, একটু পরে নেওয়া যাবে। অপূর্ব বাবু চটে গেলেও কিছু বলতে পারলেন না, হাজার হলেও এরাই তার জন্নে জায়গা ম্যানেজ করে রাখে, না হয় একটু রকবাজ, ছ্যাবলা টাইপের তবে এদের দিয়ে বেশ কাজ হয়। অপূর্ব বাবু মুখে বললেন – আরে রোজ কি ধর্ষণের খবরই থাকবে নাকি? অন্ন্য খব গুলো একটু পড়তে তো পারিস। সুমিত পাশ থেকে বলল – আরে দাদা National Crime Records Bureau এর রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ ধর্ষণে তৃতীয়, দিল্লি, বাঙ্গালরের পরেই আমরা, এখানে দু একটা ধর্ষণ হবে নাতো আর কি হবে? অপূর্ব বাবু কিছু না বলে পেপারে মনোনিবেশ করলেন, হঠাৎ একটা নিউজে চোখ টা আটকে গেল – গত রবিবার ঝারগ্রাম জেলা হসপিটালে বেলপাহাড়ির সেই নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যু। খবর টা দেখে নিজের কলেজে পড়া মেয়ে মানে, অমৃতার মুখ টা ভেসে উঠল, মেয়েটা আজ কলেজে প্রাকটিক্যাল এর জন্নে সকালেই বেড়িয়ে গেছে, আচ্ছা বাড়িতে ফোন করেছে কি? তমা তো জানায়নি কিছু? এই এক অপূর্ব বাবুর চিন্তা রোগ, এর জন্নে মেয়ে আর মা কম খোঁটা দেয় না, তবু আজও কিছু খারাপ খবর সুনলে অপূর্ব বাবু বাড়িতে একবার ফোন না করে থাকতে পারেন না। ফোন করবো না করবোনা এই করতে করতে অপূর্ব বাবু অমৃতা কে ফোন করেই ফেললেন, উফফ কতক্ষণ হয়ে যাচ্ছে মেয়ে টা ফোন ধরছে না কেন? রিং হতে হতে ওপারে মেয়ের বিরক্তি ভরা গলা  শুনতে পেলেন অপূর্ব বাবু, বাবা আমার প্রাকটিক্যাল ক্লাস চলছে ফোন করলে কেন? অপূর্ব বাবু আমতা আমতা করে বললেন – তুই কলেজে গিয়ে তোর মা কে ফোন করিস নি তো, তাই একবার ফোন করে নিলাম আর কি? অমৃতা রেগে গিয়ে বলল – ধুস বাবা আমি তো ফোন করেছি মা কে, তুমি মাকে ফোন না করেই আমায় করেছ কি? ঠিক আছে এখন রাখ আমি কলেজ থেকে বেড়িয়ে পরে তোমায় ফোন করবো।

অপূর্ব বাবু নিশ্চিন্ত মনে ফোন টা রেখে দিলেন, তার পর বিকাশ, সুমিতের সাথে জোর তর্কে মেতে উঠলেন যে বেলপাহাড়ির ঘটনায় এখনও কেউ ধরা পড়ল না কেন? কেন দেশে এতো ধর্ষণ বাড়ছে?  রাজ্য তথা কেন্দ্র সরকারের কি ভুমিকা থাকা উচিত ইত্যাদি ইত্যাদি। 

উপরিউক্ত ঘটনাটি কাল্পনিক, আর সব চরিত্রও কাল্পনিক, হয়তো এইধরনের ঘটনা বাসে ট্রেনে অহরহ ঘটে চলেছে, কখনও কখনও আমরাও এইভাবেই তর্কে তুফান তুলে মেতে উঠি আর মনে মনে ভাবি যাক আমার পরিবার, আমার মেয়ে ঠিক আছে। কিন্তু কখনও কি ভাবি – এইভাবে কি বাঁচা যায়? আমরা যারা Publicity পাওয়ার জন্নেই হোক বা বিবেকের তাড়নায় মোমবাতি মিছিল করি, সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দর সুন্দর কথা পোস্ট করি, প্রতিবাদী হিসাবে নিজেদের তুলে ধরি? কখনও বা বুদ্ধিজীবী সেজে মেকআপ নিয়ে নিউজ চ্যানেলে বসে তর্কে তুফান তুলে দি একজন ধর্ষণকারীর কি শাস্তি হওয়া উচিত বা তারও মানবধিকার আছে অতএব তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না এই সব নিয়ে?

আর উঠতে বসতে রাজ্য তথা কেন্দ্র সরকারের গুষ্টির ষষ্ঠী পূজা করি, কেন সরকার এই বলল বা রেপের কি রেট হয় এই নিয়ে? আমাদের রাজনৈতিক নেতা রা কেন এটা বলল, এটা বলা তাঁদের উচিত হয়নি, কত কথা আমাদের। তবু এটা ভাবব না যারা রেপের মতো জঘন্য অপরাধে দোষী তারাও আমার আপনার মতো সমাজেরই অংশ, কোন না কোন পরিবারের অংশ, হয়তো কোন বাবা মার আদরের দুলহারা, বখে যাওয়া ছেলে, তার নষ্টামির দায় কি তার পরিবারের সংস্কারের, বাবা মার শিক্ষাদীক্ষার নয়? আর কত দিন ভুবনের মাসী সেজে থাকব আমরা? বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয় ভাগের কথা বাস্তবিক জীবনে যে অচল এটাই ভাববসমাজে যে ক্রুড লালসা আছে নারী যে তার সহজ শিকার এটাকে অগ্রাহ্য করি কিভাবে? আমরা দেবী পুজা করবো, নারী মুক্তি নিয়ে গরম গরম লেকচার ঝাড়বো নারী শক্তি মাতৃ শক্তি এসব বলে বেড়াব, অথচও নিজের পরিবারের ছেলেকে মাতৃ শক্তির সন্মান করতে শেখাতে পারব না। খবর বাসি হয়ে যাবে, কিন্তু যে দগদগে ঘা সমাজের বুকে ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে তার শিকার যে একদিন আমরা হব না তার কি গ্যারান্টি আছে? এর পরেও কি আমরা ভাবব মেরা দেশ মহান হ্যাঁয় (সো মে সে ৯৯ বেইমান হ্যাঁয়)


No comments:

Post a Comment