Friday 15 April 2016

নীলকণ্ঠের ডায়েরি – বাঙালির একলা বৈশাখ, অতঃকিম্ ঘোড়ার ডিম!




আমি বাপু একটু সেকেলে, শে তোমরা পুরাতন কে ভুলে নতুনের যতই জয়গান করোনা কেন, আমি পুরাতন কে স্থান দি হৃদয়ের গভীরে। তাই গতকাল সন্ধ্যায় ১৪২২ কে বিদায় জানাতে গিয়ে একটু ভাববিহ্বল হয়ে নেশাটি কিঞ্চিত বেশি করে ফেলেছিলাম, জার ফলশ্রুতি এই ১৪২৩ এ দেরি করে ওঠা আর পুঁটির মায়ের গজগজানি। পুঁটির মা নাকি সাড়ে চোদ্দবার আমার দরজার কলিং বেল টিপে গেছে, কিন্তু আমার সাড়া পায় নি। পাবে কি করে আমি তো তখন ভাব রাজ্যে বিরাজমান, কি যেন ভাবছিলাম, যা কচুপোড়া ভুলে গেছি যে। চিন্তাই জল ধলে গজগজ করতে করতে পুঁটির মা থকাস করে চায়ের কাপ রেখে বলল – এবার আমায় বিদায় দাও বাপু, এসব ওনাসিস্তি আর সহ্য হয় না। বলি শুদু তোমার বাড়িতে কাজ করলেই হবে আমার? পোড়া পেট চলবে কিভাবে? যাও এবার গতর নেড়ে বাজারে যাও আর কিছু এনে আমায় ধন্য করো।

অতএব চা কে ঠেলে পেটে পাঠিয়ে, ব্যাগ হাতে হাটা দিলুম বাজারের দিকে। পথে দেখা হল খিটকেল মুখুজ্জে মশায়ের সাথে (বুড়ো কে দেখলে মটকা হেব্বি গরম হয়ে থাকে, বুড়ো যেন আমার জ্যাঠামশাই, কিলিয়ে আমায় শোধরাবে স্থির করেছে!), সাইড কেটে পালানো হল না তার আগেই ধরে ফেলল শালা, আর প্রবচন শুরু হয়ে গেলো – বলি ভায়া, একটু শুধরে যাও এবার ( মনে মনে বললাম - যাচ্ছি অমনি, তুই শালা শুধরে দেখা দেখি?), বয়স তো কম হলনা (হ্যাঁ যেন নিজে যেন কচি খোকা!)। বলি এবার নববর্ষে একটা রেজোলিউশন নিয়ে ফেল দেখি একবার, বোলো সন্ধ্যে বেলায় ওই সব ছাইপাঁশ না গিলে একটু সাহিত্য চর্চা করব, কিছু সমাজ সেবা মুলক কাজ কর্ম করবোমনে মনে বললাম – ওঁরে আমার দাদা ঠাকুর রে, বাঙালি কবে কোথায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে যে আমি রাখবো? মুখে বললাম – হা দাদা এই ভোট টা মিটে যাক তারপর বেশ বসে একটা রেজোলিউশন নিয়ে ফেলবো এবার। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিলে আবার নির্বাচনের বিধিভঙ্গের দায়ে পড়ে যাবো যে। বুড়ো বলল – সবেতেই তোমার মশকরা, আজ সন্ধ্যে বেলায় একবার এসো দেখি, একটু গল্পগুজব হবে। গোঁজ হয়ে ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলে বাজারের দিকে এগুলাম।
   
বাজারে গিয়ে মটকা আরও গরম হয়ে গেলো, সব জিনিষের দাম আকাশছোঁয়া। অচ্ছে দিন যে কোথায় কে জানে? ছাপোষা বাঙালি দেখি না খেয়ে মরবে! কোনক্রমে চারাপোনা, আর অল্প কিছু সবজি বাজার করে ফিরতে গিয়ে দেখা হল অনিমেশের সাথে, ছোকরা আইবিম এ চাকরী করে, কেতাই আলাদা। বলল – আরে দাদা, আজ ও বাজার করছেন? আজ কোথায় আউটিঙে ভজহরি মান্না নয়ত সিক্সথ বালিগঞ্জ প্লেস – এ যাবেন টা নয়, আজ ও থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়? হেঁসে বললাম – না ভায়া ওসব তোমাদের জন্নে, আমাদের মতন বুড়োহাবরা দের আজ বাড়ী তেই মহাভোজ। অবিনাশ ঠোঁট উল্টে বলল – দাদা একদিন তো স্পেশাল কিছু করুন। ওকে এই ইয়ার এ আমার বন্ধু দের সাথে পার্টি আছে তাই নেক্সট ইয়ার এ আপনাকে নিয়ে আমি ভজহরি মান্নাতে যাবই, এটাই আমার এই নববর্ষের রেজোলিউশন। মনে মনে বললাম – হা গতবারে নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের মতো, নেক্সট বারেও ক্রেডিট কার্ড মিসিং হবে তোমার, আর আমার গাঁট খসবে। দেঁতো হেঁসে বাড়ী ফিরে ভাবতে বসলাম সবাই তো নববর্ষের রেজোলিউশন নিয়ে ভাবছে, আমিই বা বাদ যাই কেন? তাই ফটাফট নিয়ে ফেললাম কয়েকটা নববর্ষের রেজোলিউশন। আশা করি ভেতো বাঙালীর এগুলো জেনে মুখ ভার হলেও মেনে দেখতে পারেন, আখেরে বাঙালীর মুখ উজ্জ্বল না হলেও মুখ পুড়বে না এতলিস্ট।

১) পরস্ত্রী বা পরশ্রী কাতর না হয়ে নিজেরটি নিয়ে ভাবব
২) যদিও আমাদের মধ্যে কাঁকড়ার জিন বিদ্যমান তথাপি আসে পাশের লোককে লেঙ্গি না মেরে নিজ দক্ষতায় এগুবার চেষ্টা করবো।
৩) উপদেশ ঝাড়বো কম, পারলে উপদেশ মেনে চলবো।
৪) পরনিন্দা, পরচর্চা না করে আত্মবিশ্লেশনে মনোনিবেশ করবো।
৫) বাজারে গিয়ে গরীব সব্জিওলার সাথে বেশি দরদাম না করে, তাকে না ঠকিয়ে ন্যায্য পাওনা অবশ্যই দেবো।
৬) সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লব না করে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ টা করবো।
৭) সমাজে কেতা দেখানোর জন্নে বাংরেজি পরিত্যাগ করে হয় ইংরাজি নয়ত বাংলায় কথা বলব।
8) অফিসে, রাস্তায় সাম্যবাদ, আর যা যা বাদ নিয়ে লেকচার ঝারি না কেন, বাড়ী ঢুকে চেষ্টা করবো বাড়ীর কাজের লোকের সাথে মানবিক ব্যবহার টা করার। ২-৪দিন কামাই করলে তার মাইনে কেটে নেওয়ার প্রবনতা থেকে বিরত থাকব।
৯) নিজের বাড়ীর চৌহদ্দি টুকু পরিষ্কার না রেখে আসে পাশে ময়লা ফেলে অপরিষ্কার করার বদ অভ্যাস টি ত্যাগ করবো।
১০) সব বিষয়ে আমার অসীম জ্ঞান , এটা ফলাও করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকব।

বাকী কি কিছু রইল? যদি থাকে সেটা নিউ ইয়ার রেজোলিউশনের জন্নে তোলা থাক, আপাতত এই টুকুই।
 

No comments:

Post a Comment