Monday 26 December 2016

বিপ্লবী উধম সিং আর কিছু কথা


বিপ্লবী উধম সিং আর কিছু কথা

রবিঠাকুরের একটি লেখায় কোন এক সময় পড়েছিলাম – 
“সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ-
হে ভৈরব,শক্তি দাও, ভক্তপানে চাহো।
দূর করো মহারুদ্র,যাহা মুগ্ধ, যাহা ক্ষুদ্র
মৃত্যুরে করিবে তুচ্ছ প্রাণের উৎসাহ।।
দুঃখের মন্থন বেগে উঠিবে অমৃত,
শঙ্কা হতে রা পাবে যারা মৃত্যুভীত।
তব দীপ্ত রৌদ্রতেজে নির্ঝরিয়া গলিবে যে
প্রস্তরশৃঙ্খলোন্মুক্ত ত্যাগের প্রবাহ।।”

ত্যাগের আদর্শে যাঁরা জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন, আপন জীবন পরাধীনতার যূপকাষ্ঠে বলিদান দিয়েছেন তাঁরাই তো অগ্নিপুত্র। এমনই এক অগ্নিপুত্র সর্দার উধম সিং, ১৮৯৯ সালের ২৬শে ডিসেম্বর ভারত মায়ের কোল আলো করে এসেছিলেন তিনি, অগ্নিযুগের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে সর্দার উধম সিং এর কথা। এই প্রাতঃস্মরণীয় বিপ্লবীকে অবশ্য শ্রদ্ধেয় বাপুজি উন্মাদ বলেছিলেন, তিনি এও বলেছিলেন ‘the outrage has caused me deep pain, I regard it as an act of insanity.. I hope this will not be allowed to affect political judgment’, আসুন একবার এই মহান বিপ্লবীর কিছু কথা জেনে নি তারপর না হয় বিচার করবেন বাপুজি তাঁর সম্পর্কে সঠিক মূল্যায়ন করেছিলেন না কি চরম অন্যায়?

১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে সভা শুরুর আগেই জেনারেল মাইকেল ও’ডায়ারের নেতৃত্বে ব্রিটিশ পুলিশ ও গুর্খা সেনারা বিনা প্ররোচনায় অবিরাম গুলিবর্ষণ করে, যার ফলস্বরূপ ৩৭৯ জন মারা যায় এবং ১৫২৬ জন আহত হয়। এই পুরো ঘটনাটি বিপ্লবী উধম সিং নিজের চোখে দেখেছিলেন আর এর পর থেকে তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় জেনারেল মাইকেল ও’ডায়ারের মৃত্যু। কিন্তু পরবর্তীকালে কাপুরুষ ব্রিটিশ সরকার জেনারেল মাইকেল ও’ডায়ারের জীবনহানির আশঙ্কায় তাঁকে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে নেন। কিন্তু ভারত মায়ের এই দামাল পুত্র এতে দমে যাননি, তিনিও ইংল্যান্ডে পারি দেন ভারত মায়ের ঋণ শোধের আশায়। অবশেষে ১৯৪১ সালের ১৩ই মার্চ আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ক্যাক্সটন হলে সর্দার উধম সিং জেনারেল মাইকেল ও’ডায়ারকে গুলি করে হত্যা করেন। তারপর আত্মসমর্পণ করেন, আদালতে তিনি বলেন তাঁর নাম-রাম মুহম্মদ সিং আজাদ, এইভাবে তিনি ভারতের সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করলেন আর প্রতিশোধ নিলেন প্রায় দুই দশক আগে ঘটে যাওয়া সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের, গোটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিলেন ভারতবাসীরা কাপুরুষ নয়, দরকার পড়লে আমরা আততায়ীর ঘরে ঢুকে তাঁকে মারতে পারি। 

তাহলে পাঠক, আমরা কি দেখলাম অগ্নিপুত্র উধম সিং এর ভারত মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা, দেশের মানুষের প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধের বদলা নেওয়ার কি ঐকান্তিক প্রচেষ্টা? হ্যাঁ এমন মানুষ তো উন্মাদ বটেই, তবে তিনি কোনও রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্যে উন্মাদ নন, তিনি উন্মাদ পরাধীনতার যূপকাষ্ঠে আপন প্রান বলি দিতে, নিজের রক্তের বিনিময়ে ভারত মায়ের ঋণ শোধ করতে। এমন লোকের যথাযোগ্য বিচার গান্ধীজীর মতো ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব বটে। অধিক বলার ক্ষমতা আমার মতো তুচ্ছ লোকের নেই, শুদু স্মরণ করি এই মহান বিপ্লবীকে আর প্রার্থনা করি ঈশ্বরের কাছে আবার ফিরে আসুক ভারত মায়ের এইসব দামাল ছেলেরা, দেশের, দেশবাসীর যে তাঁদের আশু প্রয়োজন। 

ভারতমাতার জয় হোক, জয় হিন্দ। বিপ্লব জিন্দাবাদ। 

No comments:

Post a Comment