Tuesday 26 April 2016

কোহিনূর মামলা ও একটি অলীক কুনাট্য মাত্র

 কোহিনূর মামলা ও একটি অলীক কুনাট্য মাত্র  

স্থান – রয়্যাল কোর্ট অফ জাস্টিস, লন্ডন

মামলার বিষয় – ভারতের জনৈক পার্থ বসু মহাশয় জনস্বার্থে মামলা ঠুকে দিয়েছেন, কোহিনূর ভারতের সম্পত্তি, তাই টা ফেরত দিতে হবে ব্রিটেনের মহারানী কে। এই নিয়ে সাড়া ব্রিটেন তোলপাড়, দেশভক্ত ব্রিটিশ নাগরিকরা সমবেত স্বরে দাবী করছেন তাহলে তো গোটা মিউজিয়াম খালি হয়ে যাবে, এইভাবে ব্রিটিশ মিউজিয়াম খালি করার আন্তজাতিক ষড়যন্ত্র তারা মানবেন না। গোটা কোর্ট চত্বর পুলিশে ঘিরে রেখেছে, সবজান্তা বাঙালি রিপোর্টারও হাজির লাইভ টেলিকাস্ট নিয়ে।

বিচারক - অর্ডার অর্ডার সব চুপ একদম চুপ, নইলে মামলা অনির্দিষ্ট কালের জন্নে মুলতুবি করে দেওয়া হবে (স্বগতোক্তি – একবার মুলতুবি করে দিলে আমার লাইফে এরকম Controversial কেস ফেস করতে হবে না বাবা)। এ কথা কি সত্য যে অবুজ এবং নাবালক মহারাজা দীলিপ সিংহের থেকে কোহিনূর ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিলো?

ব্রিটিশ উকিল (ডেভিড অ্যান্দ্রুল) – অবজেকশন ইয়র অনার, মহারাজা দীলিপ সিংহ ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞ্যির প্রতি সন্মান এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে উপহার সরূপ দিয়েছিলেন, ছিনিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমরা ন্যায়প্রিয় ব্রিটিশ এহেন অন্যায় করতেই পারি না।

ভারতীয় উকিল (মুকেশ ঝুনঝুনওয়ালা) - অবজেকশন ইয়র অনার, আমার লারনেদ ফ্রেন্ড ইতিহাস না পরে কোর্টে এসেছেন মনে হচ্ছে। ১৮৩৯ সালে মহারাজা রনজিৎ সিং মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে উড়িষ্যার জগন্নাথ মন্দিরের জন্য কোহিনূর উইল করে দান করে যান। কিন্তু মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সরকার তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করেনি। উল্টে ১৮৪৯ সালের ২৯ মার্চ ব্রিটিশরা লাহোর দুর্গে তাদের পতাকা উত্তোলন করে। পাঞ্জাবকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। লর্ড ডালহৌসি ১৮৫০ সালে লাহোর চুক্তির মাধ্যমে কিশোর মহারাজা দীলিপ সিংহ কে বাধ্য করেন উক্ত হীরা টি মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দিতে। ওই সময় মহারাজা দীলিপ সিংহের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বৎসর, আমার প্রশ্ন একজন নাবালককে ভুলিয়ে ভালিয়ে এই ভাবে উপহার দিতে বাধ্য করা কি ছিনিয়ে নেওয়া নয়? (সমবেত ভারতীয় লন্ডনবাসী হই হই করে উঠল, শাবাশ ঝুনঝুনওয়ালা মুদি ভাই ডুবিয়ে দিলেও তুমি লড়ে যাও, আমরা তোমার পিছনে আছি,  ওদিকে কতিপয় ব্রিটিশ রাজভক্ত ভারতীয়র মুখ লটকে গেছে)
ব্রিটিশ উকিল (ডেভিড অ্যান্দ্রুল) – (স্বগতোক্তি –এইরে শালা জব্বর প্যাঁচ কষেছে তো? ওকে আমিও খাঁটি ব্রিটিশ, সেই মোক্ষম অস্ত্র আমিয় ভুলি নি, Divide and Rule, কভি মাউত ভুল)। ইয়র অনার, মহারাজা দীলিপ সিংহ নিজ ইচ্ছায় কোহিনূর দিয়েছিলেন কিনা পরের প্রশ্ন, কিন্তু আদপে এই মহামূল্য হীরা কি ভারতের সেটি এখনও ঠিক করা যায় নি। অধুনা পাকিস্থান, আফগানিস্থান, ইরান এবং বাংলাদেশ, এমন কি আফ্রিকাও এই হীরার দাবীদার। আমার ভারতীয় বন্ধু মুদি ভাই কে এই বিষয়ে আমি প্রশ্ন কোর্টে চাই।

বিচারক - (স্বগতোক্তি – লে হালুয়া এতো কেঁচে গণ্ডূষ, আমার summer vacation চুলোয় গেলো দেখছি)। ওকে আপনি মুদি ভাই কে প্রশ্ন করতে পারেন।

মুদি ভাই হাজির হন।

ঈশ্বরের নামে শপথ নিন জাহা বলিব মিথ্যা থুড়ি সত্যি বলিব, মিথ্যা থুড়ি সত্যি বই মিথ্যা বলিব না।
মুদি ভাই – আমি খাঁটি দেশপ্রেমিক তাই শপথ নিতে হইলে আমি ভারতমাতার নেব, নচেৎ নহে।

বিচারক – না ভারতমাতার নামে শপথ নিলে এটা communal issue হয়ে যাবে, প্রশ্ন উঠবে কেন ভারতআম্মির নামে নেওয়া হচ্ছে না। আপনি বিকল্প চিন্তা করুন।

মুদি ভাই – (স্বগতোক্তি – এই সুযোগ, নিজেকে সেকুলার প্রমান করার)। ইওর অনার আমি দুজনের নামে অর্থাৎ ভারতমাতা ও ভারতআম্মির দুজনের নামেই শপথ নিচ্ছি যে জাহা বলিব মিথ্যা থুড়ি সত্যি বলিব, মিথ্যা থুড়ি সত্যি বই মিথ্যা বলিব না। 

বিচারক – নিন যা জিজ্ঞেস করার করে নিন।

ব্রিটিশ উকিল (ডেভিড অ্যান্দ্রুল) – মাই ডিয়ার মুদি ভাই, সোজাসুজি কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই, খুব সংক্ষেপে উত্তর দিয়ে আদালতের সময় বাঁচান।

মুদি ভাই – (স্বগতোক্তি – হ্যাঁ টা আর বলতে, মানে মানে কেটে পড়তে পারলে বাঁচি)। ওকে যা জিজ্ঞেস করার জিজ্ঞেস করতে পারেন।

ব্রিটিশ উকিল (ডেভিড অ্যান্দ্রুল) – আচ্ছা আপনারা কি সিওর যে কোহিনূর ব্রিটিশ রা ভারতের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে? এবিষয়ে আপনাদের কি বক্তব্য?

মুদি ভাই – (স্বগতোক্তি – এই রে দিলো ফাঁসিয়ে, রাজকুমার, রাজকুমারি কে দেওয়া কথা ফেললেও বিপদ আবার সত্যি কথা প্রকাশ করলেও বিপদ, হে মা ভারতআম্মি এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও মা)। হ্যাঁ না মানে এই বিষয়ে আমাদের আরও একটু খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে হবে ইওর অনার। মানে আমি চাইছি আমাদের সংস্কৃতি বিভাগ এবং তথ্য মন্ত্রক একযোগে বিবৃতি দিক, যাতে বিভ্রান্তি না সৃষ্টি হয়। (সমবেত ভারতীয়দের মধ্যে গুঞ্জন, না দেখছি ব্যাটা  পাক্কা পলিটিসিয়ান, এখানেও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি?)

ব্রিটিশ উকিল (ডেভিড অ্যান্দ্রুল) – ইওর অনার, আমি আরও বলতে চাই যে এই হীরার দাবীদার অন্য দেশের প্রতিনিধি দের ও প্রশ্ন করতে দেওয়া হোক, যাতে দুধ কা দুধ পানি কা পানি হয়ে যায়। (স্বগতোক্তি – হু হু যাই করো বাবা পানিই বেরোবে, নইলে কি আর আমার চাকরী থাকবে বাবা)।

বিচারক – আপীল গ্রান্তেদ। (স্বগতোক্তি – যা করার করে ধন্য কর বাপু)।

ব্রিটিশ উকিল (ডেভিড অ্যান্দ্রুল) – আমার পরবর্তী সাক্ষ্য, পারস্যের পক্ষ হইতে জনাব ইদ্রিস আলি।

ইদ্রিস আলি হাজির হন।

ব্রিটিশ উকিল (ডেভিড অ্যান্দ্রুল) – জনাব ইদ্রিস আলি, আপনার দাবির স্বপক্ষে আপনার বক্তব্য মহামান্য আদালতের কাছে পেশ করুন।

ইদ্রিস আলি – বলি এই কোহিনূর নাম টা কাদের দেওয়া বাপু? আমাদের নাদির শাহ নেশার ঘোরে থুড়ি আনন্দে কোহিনূর মানে আলোর পাহাড় আলোর পাহাড় করে চেঁচিয়ে উঠেছিলো, তবে না ফুল ওয়ার্ল্ড জানে এটা কোহিনূর বলে? আর এটা তো নাদির শাহের হেফাজতেই ছিল, বদমাশ তালিবান মানে আফগানীরা এটা পরে ঝেড়ে দেয়।

জনৈক আফগানী ইরফান তারিক মহাশয় শোরগোল শুরু করে দেন বদমাশ বলে অভিহিত করায়।
বিচারক – সাইলেন্ট সাইলেন্ট, নইলে কিন্তু একতরফা ব্রিটিশ পক্ষে রায় দিয়ে দেবো। যা কিছু বলার উইটনেস বক্সে এসে বলুন, ওই ভাবে আনসিভিলাইজদওয়ে তে চেঁচামিচি করবেন না আফতার অল আমরা ন্যায় প্রিয়, সুসভ্য ব্রিটিশ জাতি। 

ইরফান তারিক – আজ্ঞ্যে আমরা বদমাশ কবে থেকে হলাম, বীরভোগ্যা বসুন্ধারা, আমরা রীতিমতো লড়াই করে ওই কোহিনূর হীরা অর্জন করেছি ইওর অনার। এছাড়া আমরা খাঁটি মুসলিম মিথ্যা, অনাচার করতেই পারি না ওটা হারাম আমাদের কাছে।

ইদ্রিস আলি – বলি তুমি তালিবান না আইসিস? যে খাঁটি মুসলিম বলছ হে?

বিচারক – সাইলেন্ট সাইলেন্ট, নো পার্সোনাল অ্যাটাক। আর এটা communal issue নয়, তাই এসব চলবেনা, ইরফান তারিক আপনি নিজ জায়গায় গ্যাঁট হয়ে বসে পরুন। আচ্ছা মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা আপনার কি কোন প্রশ্ন করার আছে? 

ভারতীয় উকিল (মুকেশ ঝুনঝুনওয়ালা) – মুচকি হেঁসে আমি পরে সবাইকে একসাথে প্রশ্ন করতে চাই ইওর অনার। 

বিচারক – ওকে ওকে। (স্বগতোক্তি – পরে আবার কি প্যাঁচ মারবে হে বাপু)। আচ্ছা ডেভিড অ্যান্দ্রুল মহাশয়, আপনার কি আর কোন সাক্ষী আছে?

ব্রিটিশ উকিল (ডেভিড অ্যান্দ্রুল) – একপিস এখনও আছে, আমার সহৃদয় বন্ধু পাকিস্থানের খোজা নবাব সরিফ মহাশয়। ওনারাও এই মহামুল্যবান হীরার দাবীদার।

বিচারক – ওকে ওকে। খোজা সাহেব কে হাজির হতে বলা হচ্ছে।

খোজা নবাব সরিফ – ইওর অনার, এখানে মুল বক্তব্য হচ্ছে এই কোহিনূর কি কিশোর মহারাজা দীলিপ সিংহ বাধ্য হয়ে উক্ত হীরা টি মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দিয়েছিলেন না উপহার দিয়েছিলেন? আর যদি দিয়েই থাকেন বা বন্ধু ব্রিটিশ রা ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন, এখন ফেরত দেওয়া হলে অর্ধেক হীরা আমাদের মানে পাকিস্থানের প্রাপ্য। কেন না আধা পাঞ্জাব তো আমদের দিকেও পড়েছে, তাই আধা আমাদের দিতে হবে কমসে কম।

জনৈক গ্রীক যুবক (ব্রান্দ পিট) ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার, চেঁচামিচি জুড়ে দিলো যে এই ইরান, ইরাক, পাকিস্থান, আফগানিস্থান, ভারত সবই তো একদিন মহান গ্রীক রাজা অ্যালেকজান্ডারের অধীনে ছিল, তাই ইহা গ্রীক প্রপার্টি। এমনিতেও এই দুঃসময়ে বিশ্বব্যাঙ্ক আমদের দেখছে না এই হীরা বেঁচে যদি আমাদের অর্থনৈতিক হাল ফেরে।

ইদ্রিস আলি – মহামান্য আদালত আপনি এই গ্রীক পাঁঠা টির কোথায় কান দেবেন না। ওদের ওই রাজা অ্যালেকজান্ডারের আগে আমাদের রাজা মহান সাইরাসের পৈতৃক পপার্টি ছিল এই সব জায়গা, তাহলে অরিজিনাল দাবীদার আমরাই।

বিচারক – এই গালাগালি একদম চলবে না, আপনারা ভুলে যাবেন না যে আফতার অল আমরা ন্যায় প্রিয়, সুসভ্য ব্রিটিশ জাতি।

খোজা নবাব সরিফ – হ্যাঁ আল্লার দিব্যি তাতো মানি আমরা।(স্বগতোক্তি – সাধে কি পাকিস্থান পেয়েছি বাবা)।

ভারতীয় উকিল (মুকেশ ঝুনঝুনওয়ালা) – অবজেকশন ইওর অনার, অনেকক্ষণ ধরে অনেকের বক্তব্য বা প্রলাপ শুনলাম, এখন আমায় যদি আমার বক্তব্য পেশ করতে দেওয়া হয় তাহলে বাধিত হই। 

বিচারক – ওকে, আপনি আপনার বক্তব্য পেশ করতে পারেন।(স্বগতোক্তি – দেখি এই উল্লুক টা আবার কি বলে?)

ভারতীয় উকিল (মুকেশ ঝুনঝুনওয়ালা) – মহামান্য আদালত এবং সমবেত শিক্ষিত, সুসভ্য ব্রিটিশ সমাজ, একথা ভুলে গেলে চলবে না যে কোহিনূর আকাশ থেকে খসে পরেনি বা বাড়ীর পাশের লাউগাছেও ঝুলে ছিল না। এই বিষয়ে আমি কিঞ্চিত আলোকপাত করতে চাই। এই মহামুল্য হীরা আমাদের ভারতবর্ষের দাক্ষিণাত্যের খনি থেকে পাওয়া গেছে, আর হীরা শুদু আফ্রিকা তে নয় তার আগে থাকতে আমাদের এখানে পাওয়া যেত। আর যে সময় পাওয়া যেত সে সময় পৃথিবীর অর্ধেক দেশ সভ্যতা কি জানত না। এ হীরা দ্বাদশ শতাব্দীতে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টার জেলার সন্তোষনগর অঞ্চলে কোন খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। খনি থেকে উত্তোলনের পর এ মূল্যবান রত্মটি কাকাতিয়া রাজাদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। কাকাতিয়া রাজারা তাদের রাজধানী বারাঙ্গলে একটি মন্দিরে দেবীর চোখ হিসাবে হীরাটি বসিয়েছিলেন।পরে গিয়াসুদ্দিন তুঘলক কাকাতিয়া রাজাকে হত্যা করে এই হীরা দিল্লি নিয়ে যায়, এবং এটি দিল্লীর সুলতানদের দখলে থাকে। পরে মোগল আক্রমনকারী বাবর ইব্রাহিম লোদী কে হত্যা করে এই হীরা দখল করে নেন। পরে নাদির শাহ দিল্লি লুঠ করে ময়ুর সিংহাসনের সাথে এই হীরাটি লুঠ করেন। ১৭৪৭ সালে নাদির শাহের হত্যার পরে হীরা কোনভাবে আফগানিস্থানের শাসক আহমেদ শাহ আবদালির হাতে যায়। পরবর্তী কালে ১৮৩০ সালে আফগানিস্থানের ক্ষমতাচ্যুত শাসক শাহ শূজা কোহিনূর নিয়ে পালিয়ে যান আর তিনি লাহোরে মহারাজা রনজিৎ সিংয়ের কাছে সাহায্য চান, বিনিময়ে এই মহামুল্য কোহিনূর প্রদান করেন। রনজিৎ সিং শাহ শূজাকে আফগানিস্তানের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করে দেন।

১৮৩৯ সালে শিখ রাজা রনজিৎ সিং মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে উড়িষ্যার জগন্নাথ মন্দিরের জন্য কোহিনূর উইল করে দান করে যান। কিন্তু মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সরকার তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করেনি। ১৮৪৯ সালের ২৯ মার্চ ব্রিটিশরা লাহোর দুর্গে তাদের পতাকা উত্তোলন করে। পাঞ্জাবকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। লাহোর চুক্তির শর্তে বলা হয়েছিল, কোহিনূর নামে পরিচিত যে রত্ম মহারাজা রনজিৎ সিং শাহ শূজা-উল-মুলকের কাছ থেকে লাভ করেছিলেন, লাহোরের মহারাজাকে তা ইংল্যান্ডের রানীর কাছে সমর্পণ করতে হবে।

অতএব ইতিহাস অনুধাবন করলে দেখা যাবে যে এই হীরা সর্বত ভাবেই ভারতের একান্ত নিজের, এখন সুসভ্য ব্রিটিশ ইহা প্রদান করলে আমরা বাধিত হই।

মুদি ভাই – (স্বগতোক্তি – এই রে এ ব্যাটা যদি ভোটে দাঁড়ায় আমার গদি গেলো বলে, কিন্তু এখন একে সাপোর্ট করতে হবে, নইলে দেশে গালাগালি খেতে হবে)। হ্যাঁ এই কোহিনুরের দাবির সাথে আমাদের স্বাভিমান, আমাদের আত্মসন্মান জড়িয়ে আছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না।

ব্রিটিশ উকিল (ডেভিড অ্যান্দ্রুল) – (স্বগতোক্তি – জাহ এতো দেখি হাতের মাছ পালিয়ে যায়। কি নেমকহারাম এই ভারতীয়রা, বলি আমাদেরই ২০০ বছরের সুশাসনের ফলেই তো তোরা আজ একটু ভদ্র সব্য হয়েছিস, বলি সেই কারনেও কি পারিশ্রমিক বাবদ কোহিনূর আমাদের প্রাপ্য নয়? নাহ হাল ছাড়লে চলবে না, শেষ চেষ্টা করে দেখতে হবে)। মহামান্য আদালত এই হীরা যে ভারতের টা ইতিহাস দিয়ে শুদু প্রমান করা যাবে না, কারন ইতিহাস কে লিখেছে তার উদ্দেশ্য কি এটাও খতিয়ে দেখা দরকার। তাই হীরার DNA টেস্ট করে দেখতে হবে, তৎসহ সব দেশগুলির দাবী পুনরায় বিচার করতে হবে তবেই এই বিষয়ে কোন রায় দেওয়া যেতে পারে।

বিচারক – আর কোন দাবীদার আছে নাকি?

জনৈক আফ্রিকান ব্যক্তি (থাবো মসাম্বা)- আছে হুজুর, আমদের দেশ আফ্রিকায় এই ধরনের হীরা পাওয়া যায়, এখনও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভারতের হীরার খনি নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে, আমাদের দাবী ইহা আফ্রিকান হীরা, তাই ইহা আমাদের দেওয়া হোক।

বিচারক – (স্বগতোক্তি – নাহ পুরো পেচিদা কেস, একা কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না, তার থেকে ইওর হাইনেসের বুদ্ধি নিয়ে কিছু করা টাই বুদ্ধিমানের কাজ)। এই কোহিনূর হীরা আদপে কাদের ইহা নির্ধারণ করা এখনই সম্বভ নয়, পরবর্তী শুনানিতে ইহা ঠিক করা হইবে।


(পুনঃ- এই লেখা কোন ব্যক্তিবিশেষ কে আঘাত করার জন্নেয় নয়, ঘুমিয়ে থাকা, ম্যাদা মেরে যাওয়া স্বাভিমান, আত্মসন্মান জাগিয়ে তোলার জন্নে লেখা), তাই কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে আমি আন্তরিক ভাবেই ক্ষমা চাইছি)।