Friday 29 January 2016

অম্বিকা কালনা – আর এক মন্দির নগরীর ইতিকথা




অম্বিকা কালনা – আর এক মন্দির নগরীর ইতিকথা


“ক্ষান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ির, পাঁচ বোন থাকে কালনায়। শাড়িগুলো তারা উনুনে বিছায়, হাঁড়িগুলো রাখে আলনায়”। ছোটবেলায় পড়া এই কবিতাটি আমার বেশ লাগত, কে জানে তখন থেকেই কালনায় যাবার টান তৈরি হয়েছিলো কিনা? তবে এটা ঠিক কালনার গৌরবময় ইতিহাস আমায় হাতছানি দিয়ে বারবার ডাকতো। এই অমোঘ টানের জন্নেই হয়তো আজ বেরিয়ে পড়লাম কালনার উদ্দেশে। 


সকাল ০৮:০০

কোথাও যাওয়ার হলে আমি একটু টেনশনে ভুগি তাই বোধহয় স্টেশনে একটু আগেই পৌঁছে যাই, এবারও তার অন্যথা হলনা। টিকিট কেটে ৩নং প্ল্যাটফর্মে গিয়ে শুনলাম ট্রেন সেই ৮:৪০ এ, অতকিম বসে বসে লোক দেখা ছাড়া কাজ নেই। যাইহোক ভারতীয় রেল তার টাইম মতো এলো, আর আমিও সওয়ার হলাম ট্রেনে। ইতিউতি দেখে একটু বসার জায়গা পেলাম, অতএব চিন্তার ঘোড়া দৌড়াতে লাগলো আপনমনে। কালনা সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছি পড়েছি, আজ দেখতে পাবো ভেবে আনন্দ হচ্ছে খুব। ভাবতে লাগলাম কোথায় কোথায় কি কি দেখবো?

সকাল ০৯:৫০
আরও অনেকের সাথে আমিও নেমে পড়লাম কালনা স্টেশনে। স্টেশনের বাইরে এসে দেখি অনেক রিকশা আছে, অতএব যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলো। কিন্তু মন যে বড় চা চা করছে, সুতরাং জনৈক চায়ের দোকানে গমন আর চা পান শেষে রিকশার জন্নে তারাহুড়ো। একটি রিকশার সাথে ১৫০ টাকাতে চুক্তি হল যে সে আমাকে রাজবাড়ী কমপ্লেক্স, ১০৮ শিব মন্দির আর কয়েকটি দর্শনীয় মন্দির ঘুরিয়ে আবার স্টেশনে এনে দেবে। রিকশা ওলা বেশ ইয়ং, নাম জিজ্ঞেস করাতে বলল – আমার নাম বিকাশ দাদা।  চেপে বসলাম রিকশা তে, প্রথম গন্তব্য রাজবাড়ী কমপ্লেক্স। এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি কালনা সম্পর্কে কিছু কথা, ঐটিহাসিক বা উইকিহাসিক কোনটাই আমি নই, তাও যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করেছি তা হল এই – পুন্যসলিলা ভাগীরথীর পশ্চিম কুল, বারানসি সমতুল, আর অম্বিকা কালনা বা শ্রীপাট কালনাও যে একটি প্রাচীন এবং বর্ধিষ্ণু জনপদ ছিল এটা বলা বাহুল্য। পঞ্চদশ, ষোড়শ শতকে এই স্থানের উল্লেখ আছে আম্বুয়া বাঁ অম্বুয়া মুলুক হিসাবে। অনেকের অনুমান, অম্বুঋষির আশ্রম স্থল হিসাবে স্থানটি প্রসিদ্ধিলাভ করেছিল অম্বিকা নামে।বৃন্দাবন দাস তাঁর চৈতন্য ভাগবতে অম্বিকা কালনাকে উল্লেখ করেছেন – “এই মতে সপ্তগ্রামে অম্বয়া মুলুকে। বিহরেন নিত্যানন্দ পরম কৌতুকে”। এছাড়া জানা যায় অম্বিকা কালনা তৎকালীন সময়ে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্নেও বিখ্যাত ছিল, এখান থেকেই নদীপথে চাল, ডাল যেত।  

রিকশা এসে দাঁড়ালো রাজবাড়ী কমপ্লেক্সের সামনে, রিকশাওলা বলল – যান ভিতরে অনেক মন্দির আছে, দেখে আসুন, আর এর সামনেই ১০৮ শিব মন্দির, আপনি ঘুরে দেখুন আমি বসে আছি। আমি ঠিক আছে বলে ভিতরে এসে হতবাক। কি সুন্দর সাজানো গোছানো ভিতরটা। সামনেই প্রতাপেশ্বর শিবমন্দির, মহারাজ প্রতাপচাঁদের প্রথমা মহিষী রানী প্যারী কুমারি দেবী ১৮৪৯ সালে এই মন্দিরটি নির্মাণ করান। সুন্দর টেরাকোটার অপরূপ কারুকার্যে খচিত এই মন্দিরের গাত্র।

এই মন্দিরের ঠিক পাশেই আছে একটি ছাদবিহীন রাসমঞ্চ, এটি দেখে সামনে এগিয়ে এসে একটি ফটকের মধ্য দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে পঁচিশ চূড়াবিশিষ্ট বিশালাকার মন্দিরটি। এটি লালজি মন্দির নামেই বেশি পরিচিত, মন্দিরের সামনে আছে একটি নাট মণ্ডপ আর একটি পর্বতাকৃতি যা গিরিগোবর্ধন নামে পরিচিত। মুল মন্দিরটি টেরাকোটার অপরূপ অলঙ্করণে সুসজ্জিত।

১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা কীর্তিচাঁদ তার মাতা ব্রজকিশোরী দেবীর অনুরোধে তৈরি করান এই মন্দির টি। রাজবাড়ী কমপ্লেক্সে অন্যতম প্রাচীন মন্দির এটি, এর স্তাপত্য শিল্প সত্যি অসাধারন। পঁচিশরত্ন বা চুড়াবিশিষ্ট (Panchabimsati Ratna) পোড়ামাটির অনুপম টেরাকোটার কাজে সুশোভিত মন্দির টি বাংলার মন্দির শিল্পে এক অনবদ্য সংযোজন। এই ধরনের মন্দির বাংলায় খুব একটা বেশি নেই। 
          
মন্দিরে স্থাপিত শ্রীকৃষ্ণ বা লালজির বিগ্রহ নিয়ে একটি কাহিনি প্রচলিত আছে আজও। একদিন মহারাজা কীর্তিচাঁদের মাতা ব্রজকিশোরী দেবী গঙ্গাস্নান সেরে উঠে ঘাটে দেখলেন, একজন বৈষ্ণব সাধক তার ভিক্ষালব্ধ অল্প চালের ভোগ দিচ্ছে লালজি কে। তখন রাজমাতা ব্রজকুমারী দেবী বললেন, ‘সামান্য এই ভোগের অন্নে লালজির কি পেট ভরবে? এক কাজ করো। আমি রাজমাতা। তুমি বরং লালজিকে দাও আমায়। আমি তোমায় কথাদিচ্ছি, পুরুষোত্তমে প্রভু জগন্নাথ দেবের মতো আমিও প্রতিদিন বাহান্নভোগ নিবেদন করব লালজিকে’। একথা শুনে হেসে সেই বৈষ্ণব সাধক বললেন - মা, ভোগ প্রাচুর্যে কি কখনও ভগবান তুষ্ট হন? কখনও এক মুঠি ভোগান্নে তুষ্ট হন তিনি, কখনও ইচ্ছে না হলে কিছুই গ্রহন করেন না তিনি। তবে ভক্তের নিবেদিত অন্তরের একান্ত আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ আকুতিভোগই যে গ্রহণ করেন তিনি”। যাইহোক, পড়ে কোন কারনে ওই বৈষ্ণব সাধক শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন বিগ্রহটি অর্পণ করেন রাজমাতা কে, সেই থেকে আজ ওই বিগ্রহ নিত্যসেবা আর পুজা পেয়ে আসছে। পরে অবশ্য শ্রী রাধিকার বিগ্রহ স্থাপন করা হয় শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহের পাশে। তবে কালের নিয়মে আজ আর সেই ভোগপ্রাচুর্য  নেই।  

এরপর আরও একটি মন্দির, পঞ্চরত্ন মন্দির (পাঁচটি শিব মন্দির) দেখে দেখতে এলাম কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির। রাধাকৃষ্ণের সুদর্শন যুগলবিগ্রহে মন্দির জমজমাট, আলোকিত, এই মন্দিরটিও পঁচিশরত্ন শৈলীতে নির্মিত। ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের মহারাজা ত্রিলোকচন্দ্র রাজমাতা রাজলক্ষ্মী দেবীর উদ্দেশ্যে এই মন্দির নির্মাণ করান।চোখ জুড়ানো টেরাকোটার অলঙ্করণ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা যে এতো সুন্দর মন্দিরটি। এই রাজবাড়ী কমপ্লেক্সে অবশ্য শুদু রাধা কৃষ্ণের মন্দিরই নয় এছাড়াও  বিজয় বৈদ্যনামে একটি বিশাল শিবমন্দির রয়েছে কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির অঙ্গনের পূর্বভাগে। অনুপম স্থাপত্য শিল্পকলায় এই মন্দিরের আকর্ষণে ঘাটতি নেই এতটুকুও। মহারাজা ত্রিলোকচন্দ্র মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন পিতা কুমার মিত্রসেন রায় ও মাতা রাজলক্ষ্মী দেবীর উদ্দেশে। এছাড়া বদ্রিনাথ মন্দির ঘুরে দেখলাম, এক জায়গায় মনে হল রান্নাঘরই হবে, সেখানে একজন পেটমোটা বাউন বসে বসে রান্না করছে আর তাঁকে একজন সিরিঙ্গে মতো লোক সাহায্য করছে – অদ্ভুত কম্বিনেশন দুজনায়, যাই হোক কৌতূহল বশত উকি দিয়ে দেখলাম – বেগুন ভাজা, লুচি, ডাল হয়েছে, মনে হয় ভোগের রান্না। দেবতার ভোগে নজর দেওয়া মানা, তাই মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে চলে এলাম। 
  
মোটামুটি সব কটি মন্দির দর্শন ই হল, এবার ১০৮ শিব মন্দির দেখতে যেতে হবে, বাইরে এসে খোঁজ করলাম, বিকাশ মানে আমার রিকশাওলা আছে কিনা। দেখি বসে আছে, আমায় দেখে বলল – যান দাদা শিব মন্দির দেখে আসুন আমি তারপর অন্য মন্দিরে নিয়ে যাবো।

অতএব ঢুকে পড়লাম ১০৮ শিব মন্দির দেখতে, ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে এই শিবমন্দির গুলি নির্মাণ করান মহারাজা তেজচন্দ্র। এককেন্দ্রিক বৃত্তাকারেই সাজানো মন্দিরগুলি। এগুলির সংস্থান বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মতো। বিশাল বিস্তৃত গোল অঙ্গন ঘিরে চক্রাকারে প্রথম একসারি মন্দির, তারপর ভিতর দিকে আবার চক্রাকারে একসারি শিবমন্দির। বাইরের বৃত্তে সাদা ও কালোরঙের শিবলিঙ্গসহ ৭৪টি এবং ভিতরের বৃত্তে রয়েছে ৩৪টি মন্দির। আটচালা শৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরগুলিকে উঁচু জায়গা থেকে দেখলে মনে হবে পাপড়ি মেলা পদ্ম। ভিতরে কিছুক্ষণ ঘুরে সব দেখে ছবি তুলে নিয়ে বাইরে এলাম।

দুপুর ০১:৩০
বেরিয়ে এসে বিকাশের খোঁজ করতে দেখি – বসে বসে দুজনের সাথে তাস খেলছে। আমায় দেখে বলল – দাদা এখানেই তো ০১:৩০ বাজিয়ে দিলেন, বাকী মন্দির দেখতে গেলে তো সন্ধে করে দেবেন দেখছি। সারাদিনে এই একটা ত্রিপ খাটলে আমার চলবে? কি আর বলব দোষ আমার মুগ্ধ হয়ে যত দেখেছি, ঘড়ির কাঁটা তত দৌড়েছে, আর আমি বুজতে পারি নি। বললাম – চলো বাকী কয়েকটা মন্দিরে, আমার জন্নে তোমার লস হবে না, আমি ঠিক পুসিয়ে দেবো। চলো এবার বাকী মন্দির গুলো চলো, রিকশা একটু বাদে এলো কালনার সবচেয়ে বিখ্যাত আর পবিত্র মন্দির - সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দোরগোড়ায়। কিন্তু বিধি বাম, কি একটা পুজা থাকার জন্নে বিশাল ভিড় মন্দির চত্বরে। অতএব আর কি বাইরে থেকে মন্দিরের প্রবেশ পথের ছবি তুলে আবার এগিয়ে গেলাম পরবর্তী মন্দিরে সন্ধানে।

সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস বলতে আমি যা জানি তা হল এই – রাজা কীর্তি চন্দ্রের পুত্র ছিলেন চিত্রসেন রায়, নিজগুনে আর দক্ষ প্রশাসনের গুনে তৎকালীন বাংলা সুবার নবাব ও দিল্লীর সম্রাটের প্রিয় ছিলেন তিনি। আর এরজন্নেই হয়তো ১৭৪১ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেন। একদিন রাজা চিত্র সেন নবদ্বীপের উদ্দেশে ঘোড়ায় চেপে যাচ্ছিলেন, জঙ্গলের মাঝে তার কানে ঘণ্টাধ্বনি আসায় আরও গভীর জঙ্গলে ঢুকে প্রত্যক্ষ করেন জনমানবহীন একটি প্রাচীন মন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহে তিনি দেখেন মা কালীর বিগ্রহের সামনে থরে থরে সাজানো আছে পুজার নানবিধ উপকরন। প্রাসাদে ফিরে আসার পর, ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরক্ষেত্রেই নতুন মন্দির নির্মাণ করে নিত্যপুজোর ব্যবস্থা করেন রাজা।

এর পর দেখলাম গোপাল জিউ-র মন্দির, এটিও পঁচিশরত্ন বা চুড়াবিশিষ্ট (Panchabimsati Ratna) পোড়ামাটির অনুপম টেরাকোটার কাজে সুশোভিত মন্দির। এটি ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিলো।  মন্দির চত্বরে সুসজ্জিত কাঠের তৈরি রথ দেখে একজন কে জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলাম যে রথে খুব ধুমধাম করে রথ টানাও হয়। এরপর দেখতে এলাম অনন্ত বাসুদেব মন্দির। এটি সম্প্রতি সংস্কার হয়েছে, তাই এর পুরাতন রুপ আর নেই। বিগ্রহ দর্শন করে ফিরে আসছি, এমন সময় ডাক শুনে ফিরে দেখলাম – একজন বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা বলছেন – বাবা একটু প্রসাদ মুখে দিয়ে যাও। এতো আন্তরিক ভাবে বললেন যেন কতদিনের চেনা। আমি বললাম – হ্যাঁ ঠাকুমা দিন প্রসাদ দিন। কথায় কথায় জানতে পারলাম উনি এই আশ্রমেই থাকেন, মন্দিরের কাজকর্ম করেন আর গোপালের সেবা করেন। জানতে চাইলাম বাড়ী যান না? ঠাকুমা বললেন – যাই বাবা মাঝে মধ্যে, তাও কমই। আসলে গোপাল কে ছেড়ে থাকতে পারি না। ভক্তির পরাকাষ্ঠা বোধহয় এরকমই হয়। একটু বসে ওনার দেওয়া প্রসাদ (গুজিয়া) আর জল খেয়ে ওনার থেকে বিদায় নিলাম। ফিরে আসার সময় ঠাকুমা বললেন – আবার এসো বাবা, ফিরে আসার সময় দেখি দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন।
ফিরে এসে বিকাশ কে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা বাকী মন্দির দেখতে আরও কত সময় লাগবে। বিকাশ বলল – আরও প্রায় ঘণ্টা দুই ধরতে পারেন।

ঘড়ি দেখে দেখলাম অনেক দেরি হয়ে যাবে, তাই মন না মানলেও বললাম – আর দেখবো না বিকাশ চলো স্টেশনে ফিরে যাই। যাবার সময় কোন একটা খাবার দোকানে একটু দাঁড়িয়ো, একটু খেয়ে নেব। তুমিও তো খাওনি, তাই আমার সাথে কিছু খেয়ে নিয়ো। বিকাশ বলল – দাদা আপনি যখন ১০৮ শিব মন্দির দেখছিলেন, আমি বাইরে খেয়ে নিয়েছি, তাই আপনি একাই খেয়ে নেবেন। চলুন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি, তারপর কি মনে হওয়াতে বলল – আচ্ছা দাদা আপনি আমাদের এখানকার মাখা সন্দেশ খেয়েছেন কখনও? আমি বললাম – না ভাই আজই তো প্রথম এসেছি এখানে। বিকাশ বলল – দাদা অল্প করে নিয়ে যান, মুখে লেগে থাকবে টেস্ট। আমি আপনাকে ভালো দোকান দেখে নিয়ে যাচ্ছি, কিনে নিয়ে যান বাড়িতে সবাই ভালো বলবে। যেতে যেতে একটা মিষ্টির দোকান দেখে বলল – যান দাদা নিয়ে নিন, আমি বলে দিচ্ছি। বলে চেঁচিয়ে বলল - দাদা কে একটু ভালো দেখে মাখা সন্দেশ দেবেন, দাদা নিয়ে যাবেন। আমি বেশ খানিকটা মাখা সন্দেশ কিনে, আর গোটাকয়েক রসগোল্লা কিনে ফিরলাম। রসগোল্লা বিকাশ কে দিয়ে বললাম  - এটা তুমি খেও, আজ অনেক্ষন তুমি আমার সাথে ঘুরে ঘুরে সব দেখালে, তাই এটা আমার গিফট তোমাকে। বিকাশ হেসে বলল – দাদা এটা আবার দিলেন কেন? আবার চড়ে বসলাম রিকশা তে, এগিয়ে চলল রিকশা স্টেশনের দিকে। বিকাশ বলল প্রায় সোয়া তিনটে বাজে, এখন কি আপনি গরম ভাত ডাল কিছু পাবেন?  আমি বললাম – ভাই তোমাদের এখানে ভালো চায়ের দোকানে নিয়ে চলো তাহলেই হবে। ও আমি ডিমটোস্ট আর চা খেয়ে নেব। বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি এসে বিকাশ বলল – দাদা আপনি এই দোকানে খান, এ মোটামুটি ভালোই করে। আমি বিকাশকেও আসতে বললাম কিন্তু ও বলল দাদা শুদু চা খাবো আর কিছু খাবো না। অতএব একটা ডিম টোস্ট আর দুটো চা বলে বসলাম বেঞ্চে। বিকাশ কে জিজ্ঞেস করলাম – আচ্ছা এখানে মহাপ্রভু বাড়ী তাও তো খুব বিখ্যাত না? বিকাশ বলল – দাদা এখানে জগন্নাথ বাড়ীর শিব মন্দির, ভবা পাগলার মন্দির, দাতন কাঠি মসজিদ দেখতেও লোক আসে দূর দূর থেকে। হেসে বললাম – নেক্সট বার এলে তুমি এগুলো নিয়ে যাবে তো আমায়। বিকাশ বলল – হ্যাঁ দাদা নিশ্চয়ই নিয়ে যাবো। এর মধ্যেই গরম গরম ডিম টোস্ট আর চা এসে হাজির, খবার দেখে খিদে টা জাগান দিয়ে উঠল। খেয়ে দেয়ে, দোকানীর হিসেব মিটিয়ে যখন বাইরে এলাম তখন ঘড়িতে প্রায় চারটে বাজছে। বিকাশ বলল – চলুন দাদা এসেই গেছি আপনি ৪:২৫ এর ট্রেন টা পেয়ে যাবেন। আপনার টিকেট কাঁটা আছে তো? আমি বললাম – হাঁ রিটার্ন কেটেই এসেছি। একটু বাদে স্টেশনে পৌঁছে গেলাম।
           
নেমে বিকাশ কে ২৫০ টাকা দিয়ে বললাম ভাই কম হোল নাতো? বিকাশ বলল না না দাদা ঠিকই আছে, এতো বেশি দিলেন কেন? আমি বললাম – না আজ তুমি অনেক্ষন আমার সাথে ছিলে তাই এটা তোমার প্রাপ্য। বিকাশ বলল – দাদা আবার আসবেন, আমি এখানেই রিকশা নিয়ে থাকি।

আবার আসব এই বলে স্টেশনে এগিয়ে গেলাম, পিছনে পরে রইল রূপসী কালনা। মনে মনে ঠিক করলাম বাকী মন্দির ও দ্রষ্টব্যস্তান গুলি দেখতে খুব শিগগিরি আবার আসব কালনা তে। আমরা মন্দির নগরী বলে বিষ্ণুপুর কে জানি, কিন্তু কালনা কোন অংশে কম নয় বিষ্ণুপুরের চেয়ে। ঐতিহ্যে, গরিমায় অনায়সে ঠাই পেতে পারে বাংলার পর্যটন মানচিত্রে। শুদু দরকার সরকারের একটু সদিচ্ছা আর ঠিকঠাক প্রচার, তাহলেই পর্যটকের ঢল নামবে এই সুন্দর জায়গাটিতে।
  

কিভাবে যাবেন?

হাওড়া – কাটওয়া শাখার ট্রেন ধরে সরাসরি নামতে পারেন কালনা স্টেশনে। নেমে রিকশা করে ঘুরে নিতে পারেন সুন্দর সুন্দর মন্দির আর বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থান গুলি। তবে আমি অবশ্যই অনুরোধ করব – কালনার মাখা সন্দেশ আর মিষ্টি চেখে দেখতে। আমি শিওর যে কালনার মিষ্টি আপনার মন জয় করবেই।
      
কালনার ছবি দেখার জন্নে অনুরোধ করব নীচের লিঙ্কে visit করতে