Friday 26 August 2016

কাশ্মীর – এক নিরন্তর বধ্যভূমির কথা



কাশ্মীর – এক নিরন্তর বধ্যভূমির কথা

সেই কবে মুঘল বাদশা জাহাঙ্গীর বলেছিলেন – “ আগর ফিরদাউস বার রুই-ই জমিন অস্ত, হামিন অস্ত – উ হামিন অস্ত - উ হামিন অস্ত”, অর্থাৎ “If there is a paradise on earth, It is this, it is this, it is thisকিন্তু আজকের কাশ্মীর কে দেখে, কাশ্মীরের কথা নিউজ পেপার বা টিভি তে দেখে এর উল্টোটাই মনে হয়, বিষবৃক্ষের বিষময় ফল।

কাশ্মীর নামের উৎস সন্ধানে - 

পৌরাণিক লোকশ্রুতি অনুসারে বহু যুগ আগে হিমালয় আর পীর পাঞ্জাল পাহাড় ঘেরা এই এলাকায় ছিল এক বিশাল হ্রদ, দক্ষরাজ তনয়া দেবী সতীর হ্রদ তাই এটিকে সতীসর বলা হতো। সেই হ্রদে বাস করতো এক দুষ্ট দৈত্য, নাম ছিল – জলোদ্ভব, এই দুষ্ট দৈত্যের অত্যাচারে সর্বদা লোকজন ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে থাকত। অবশেষে সপ্তর্ষিদের মধ্যে অন্যতম ঋষি কাশ্যপ এগিয়ে লেন তাঁদের সাহায্য করতে, ঋষির তপস্যায় তুষ্ট হয়ে বিষ্ণুদেব এক বিশাল শূকর বা বরাহের রুপ ধরে গুঁতো দিয়ে ভেঙ্গে ফেললেন একদিকের পাহাড়, ফলে সতীসর হ্রদ গেলো শুকিয়ে আর মারা গেলো সেই অত্যাচারী দৈত্য। যেখানে শূকর বা বরাহ রুপী বিষ্ণুদেব পাহাড় ভেঙ্গেছিলেন তাঁর নাম হল বরাহমূল, যা এখন বারমুল্লা নামে পরিচিত। আর হ্রদ শুকিয়ে জেগে ওঠা পাহাড় ঘেরা এই উপত্যকাই হল কাশ্মীর উপত্যকা। ধীরে ধীরে লোকজনের বসতি গড়ে উঠল, কাশ্যপ ঋষির দেশ বা “কাশ্যপ-মার” থেকে এই উপত্যকার নাম হল কাশ্মীর। মহাভারতে কাশ্মীরের উল্লেখ পাওয়া যায়, গ্রীকরা এই জায়গাটিকে বলতো কাশপেরিয়া বা কাম্পরিয়া, এছাড়া চীনা পর্যটক হিউএন সাঙ্গের বইতে এই এলাকার পরিচয় পাওয়া যায় কাশীমিলো নামে।

ইতিহাসের পাতায় কাশ্মীর - 

মৌর্য সম্রাট অশোক খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে কাশ্মীরের রাজধানি শ্রী নগরের পত্তন করেন, তখন বৌদ্ধধর্ম ছিল এই এলাকার প্রধান ধর্ম। ১৩৪৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন হিন্দু রাজার শাসনে ছিল কাশ্মীর, সেই সময়ে ব্যাপকহারে উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায় সংস্কৃত শিক্ষার। তারপর শুরু হয় একের পর এক বহিরাগত মুসলিম শক্তির আক্রমণ, সাথে ধর্মান্তরকরণ। মোটামুটি ভাবে ১৫৮৭ থেকে ১৭৫২ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর থাকে মুঘলদের অধিকারে, ঔরঙ্গজেবের পর মুঘল সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত গেলে কাশ্মীরে পা রাখে আফগান লুঠেরারা, কাশ্মীর আফগান শাসনে থাকে ১৭৫২ সাল থেকে ১৮১৯ সাল অবধি। এরপর কাশ্মীর আফগানদের থেকে ছিনিয়ে নেয় শিখরা, পরবর্তীকালে শিখরা রাজ্য হারায় ব্রিটিশদের কাছে। ১৮৪৬ সালে ব্রিটিশদের থেকে কাশ্মীর কিনে নেয় হিন্দু ডোগরা রাজা গুলাব সিং, তৎকালীন ৭৫ লক্ষ নানকশাহী রুপী তে।

ডোগরা রাজাদের বংশ পরম্পরা ছিল এই রকম : মহারাজা গুলাব সিং(রাজত্বকাল: ১৮৪৬-১৮৫৭), মহারাজা রণবীর সিং(রাজত্বকাল: ১৮৫৭-১৮৮৫), মহারাজা প্রতাপ সিং(রাজত্বকাল: ১৮৮৫-১৯২৫) এবং মহারাজা হরি সিং (রাজত্বকাল: ১৯২৫-১৯৫০)।

কাশ্মীরের শেষ স্বাধীন রাজা হরি সিং কে খুব ভালো করে মনে রাখুন, কারণ স্বাধীনতা পরবর্তী নাটকে অন্যতম কুশীলব হচ্ছেন এই মহারাজা হরি সিং, সাথে অন্যান্য প্রধান চরিত্ররা হলেন – মহামান্য লর্ড মাউন্তব্যাটেন, জওহরলাল নেহেরু, মোহম্মদ আলি জিন্নাহ এবং শেখ আবদুল্লা। বাকী চরিত্রদের সম্পর্কে আজকের ভারতবাসী জানলেও হয়তো শেখ আবদুল্লার সম্পর্কে অনেকেই জানেন না, তাই আসুন অন্যতম, প্রধান কুশীলব শেখ আবদুল্লা সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা যাক। ১৯০৫ সালে এক সাধারন ধর্মান্তরিত কাশ্মীরি মুসলিম পরিবারে জন্ম শেখ আবদুল্লার, ১৯৩০ সালে ভারতের আলী গড় মুসলিম বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে এমএসসি করেন, আদতে শেখ আবদুল্লা ছিলেন খুবই উচ্চাকাঙ্খি, ১৯৩৭ সালে জওহরলাল নেহেরুর সাথে পরিচয় এবং বন্ধুত্ব। দুজনেই কাশ্মীরি – একজন কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিত অন্যজন কাশ্মীরি মুসলিম, দুজনের কেউই মহারাজা হরি সিং কে পছন্দ করেন না, উল্টে তাঁর পতন চান। এর আগেই ১৯৩২ সালে শেখ আবদুল্লা প্রতিষ্ঠা করেছিনে তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক দল মুসলিম কনফারেন্স, যা পরবর্তীকালে নাম পাল্টে হয় ন্যাশানাল কনফারেন্স, কারণ তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন রাজনৈতিক স্বীকৃতি ভিন্ন্য ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা তাঁর পক্ষে সুবিধার হবে না। ১৯৩৮ সালে বিভিন্ন দাবী দাওয়া ঘিরে মহারাজা হরি সিং এর সাথে তাঁর মতবিরোধ তৈরি হয়, ফলে তিনি কারারুদ্ধ হয়ে পরেন ৬মাসের জন্নে, পরে যদিও মহাত্মা গান্ধীর হস্তক্ষেপে হরি সিং তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন, কিন্তু ততদিনে শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরের নেতৃস্তরে পৌঁছে গেছেন। 
 
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট – ভারত ভাগ, দুই পাশে দুই স্বাধীন রাষ্ট্র – মহারাজা হরি সিং দ্বিধাবিভক্ত পরবর্তী কর্মসূচী নিয়ে – 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে লর্ড মাউন্তব্যাটেন চাপ বাড়ালেন যাতে মহারাজা হরি সিং সিদ্ধান্ত নেন তিনি কি করবেন? তাঁকে তিনটি অপশন দেওয়া হল – ১) ভারতের সাথে সংযুক্তি, ২) পাকিস্থানের সাথে সংযুক্তি অথবা স্বাধীন হিসাবে থেকে যাওয়া। মহারাজা হরি সিং সময় চাইলেন, আসলে তিনি মনে মনে বিভিন্ন পার্মুটেশন -কম্বিনেশন ছকছিলেন। শেখ আবদুল্লা বিষয়টিকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, তিনি জানতেন বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাধীন ভাবে কাশ্মীরের টিকে থাকা সত্যি দুস্কর, কারণ জিন্নাহ এটা হতে দেবেন না, আর যদি কাশ্মীর পাকিস্থানের অন্তভুক্ত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার সলিল সমাধি ঘটবে। মনে মনে চাইছিলেন শর্ত সাপেক্ষে ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার, যাতে মহারাজার অবর্তমানে তিনি হবেন কাশ্মীরের সর্বেসর্বা



২২শে অক্টোবর, ১৯৪৭ – জিন্নার অঙ্গুলিহেলনে কাশ্মীরের পশ্চিম অংশের উপজাতীয় বিদ্রোহীরা আর পাকিস্থানি সেনারা কাশ্মীর আক্রমণ করলো, মহারাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তাদের লক্ষ্য মহারাজ কে জোর করে অপসারিত করে কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা।ঐ সময় যে স্লোগানটি পাকিস্তানীদের মুখে মুখে ফিরত তা হল হসকে লিয়া পাকিস্তান লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্তানঅর্থাৎ হেসে হেসে পাকিস্তান পেয়েছি এবার লড়াই করে হিন্দুস্থান নেবো। এছাড়া জিন্নার শ্লোগান -কাশ্মীর বনেগা পাকিস্তান তো ছিলই। বিদ্রোহীদের অভিযোগ ছিল এই যে মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগদানের মতলব আঁটছিলেন বিদ্রোহীরা মোজাফফরপুর, ডোমেল দখল করে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পৌছে গেল রাজধানী শ্রীনগরের উপকন্ঠে। পুঞ্চ এ মহারাজা হরি সিং এর বাহিনী হল বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ, জয়ের সাথে সাথে সমানে চলল লুটপাট ও নৃশংস হত্যালীলা মহারাজা হরি সিং প্রমাদ গুনলেন, বিপদ বুজে তিনি সাহায্য চাইলেন নেহেরুজীর কাছে এবং জানালেন তিনি ভারতের সাথে যুক্ত হতে চান। ২৬শে অক্টোবর, ১৯৪৭, লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর উপস্থিতিতে সাক্ষরিত হল "Instrument of Accession", জম্মু -কাশ্মীর হল এক ভারতীয় রাজ্য। আর ভারতভুক্তির শর্ত হিসাবে জম্মু-কাশ্মীর কে সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা দেবার সংস্থান রাখা হয়। এই বিষয়ে পরে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করছি। আগে দেখে নি সেই সময়ে কি হয়েছিলো? নেহেরুজীর আদেশ অনুসারে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রতি আক্রমণ শুরু করলো হানাদার পাক বাহিনীকে হটানোর জন্নে, শুরু হল স্বাধীনতার পর ভারত এবং পাকিস্থানের প্রথম যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে যখন ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীর ভ্যালির প্রায় দুই- তৃতীয়াংশ পুনুরুদ্ধার করে ফেলে বাকী এক-তৃতীয়াংশ এবং গিলগিট, বালতিস্থান উদ্ধারের জন্নে আগুয়ান, জয় যখন প্রায় করায়ত্ত, তখন কোন এক রহস্যময় কারণে নেহেরুজীর আদেশে ভারতীয় বাহিনী মাঝপথে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। নেহেরুজীর এই অমার্জনীয় ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ভারত আজও করে চলেছে। যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার সময়ে পাকিস্থান যে জায়গা দখলে রাখতে সমর্থ হয়েছিলো সেটাই আজকের Pakisthan Occupied Kashmir বা POK, পাকিস্থান অবশ্য বিশ্বের চোখে ধুলো দিতে এর গালভরা নাম দিয়েছে – “আজাদ কাশ্মীর”, যেখানে আজাদির ছিটেফোঁটা নেই, আছে শুদু না পাওয়ার জ্বালা আর তীব্র শোষণ। এরপর সিন্ধু নদ দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, পাকিস্থান তাঁদের দখলীকৃত কাশ্মীরের একটা অংশ তাঁদের আকা চীন কে উপহার স্বরুপ দিয়েছে, যা আজ Chaina Occupied Kashmir বা COK নামে অধিক পরিচিত।

পাকিস্থান এর পরেও ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে কাশ্মীর ফিরে পাওয়ার আশায় যুদ্ধ করেছে, আর প্রতিবার শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে শোচনীয় হারের পর পাকিস্থান ভারতের সাথে “সিমলা চুক্তি” করে যেখানে সিদ্ধান্ত হয় কাশ্মীর নিয়ে যাবতীয় শত্রুতা দুই দেশই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে নেবে। কিন্তু  বাস্তবে কি দেখা গেলো? মোটামুটিভাবে ১৯৯০ সাল অবধি কাশ্মীর বেশ শান্তই ছিল, বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ কমই ছিল। ১৯৪৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ন্যাশানাল কনফারেন্স পার্টির শেখ আবদুল্লা, তাঁর পুত্র ফারুক আবদুল্লা, পৌত্র অমর আবদুল্লা, কংগ্রেস পার্টির গুলাম নবী আজাদ এবং পিপলস ডেমোক্রাতিক পার্টির মুফতি মোহাম্মদ সইদ প্রমুখ। তাহলে ১৯৯০ সালে কি এমন হল? কেনই বা নতুন করে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠল কাশ্মীর উপত্যকায়? এই বিষয়ে সঠিক অনুধাবন করতে গেলে আমাদের কয়েক দশক পিছিয়ে যেতে হবে এবং দেখতে হবে ১৯৭৫ – ১৯৯০ এই সময়ে পাকিস্থান আর আফগানিস্থানে কি হয়েছিলো?

তালিবান – পেট্রো ডলার – ওয়াহাবি টক্সিক- জিহাদ

সত্তরের দশকের শেষ দিকে আফগানিস্থানে হানা দেয় তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া, সেই সময়ে আমেরিকার সাথে সোভিয়েত রাশিয়ার ঠাণ্ডা যুদ্ধ তুঙ্গে। অতএব আফগানিস্থানে রাশিয়াকে আটকাতে আমেরিকার বোড়ের চাল হয়ে উঠল পাকিস্থান। সবে  সামরিক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় এসেছেন জেনারেল জিয়া উল হক, আমেরিকার হাত তখন তাঁর মাথায়। ডলার আর উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের লোভে পাকিস্থান বিদ্রোহী আফগানদের সাহায্যের জন্নে শুরু করলো জিহাদি ট্রেনিং ক্যাম্প, বেশ কিছু আবার দখলীকৃত “আজাদ কাশ্মীর” অংশে। সেইসব ক্যাম্পে তৈরি হতে লাগলো হাজার হাজার ঈমানী জোশে উদ্বুদ্ধ তালিবান জিহাদি। এই জিহাদি যুবকদের হাতে অস্ত্র জোগানর ভার নিয়েছিল আমেরিকা, পরবর্তীকালে এই সর্বনাশা জোটে এলো সৌদি আরব। আরব ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে তখন বিশ্ব বাজারে হু হু করে বাড়ছে পেট্রো- তেলের দাম, সৌদি রাজবংশের তখন রমরমা অবস্থা, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ আর কি। এই সুযোগে তাঁরা বিশ্ব জুড়ে রপ্তানী করা শুরু করলো ওয়াহাবি ইসলামের বিষ, বিভিন্ন দেশে তখন সৌদি অর্থে তৈরি হচ্ছে একের পর এক মসজিদ। এগুলির মাধ্যমেই সৌদি রাজবংশ ছড়িয়ে দিতে লাগলো তাঁদের ওয়াহাবি প্রপাগান্দা। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল ধর্মের ভাইরাস আরে অর্থের সংমিশ্রনে তৈরি এক ভয়ঙ্কর টাইমবম্ব। পাকিস্থানে প্রশিক্ষিত জিহাদি/ মুজাহিদ আফগান, পাঠান ভাইরা তখন আফগানিস্থানে হাজারে হাজারে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, এই যুদ্ধ তাঁদের কাছে তখন ধর্মযুদ্ধের সমান। চিন্তায়, মননে কি ভয়ানক ওয়াহাবি টক্সিক, আর শহিদ হওয়ার পর তাঁদের জন্নে তো আছেই জান্নাত, হুরী ইত্যাদি।

পাকিস্থান তো আনন্দে আটখানা, একদিকে আফগান যুদ্ধে সাহায্য করবার জন্নে আমেরিকা দিচ্ছে কোটি কোটি ডলার, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র (পরবর্তীকালে যা ব্যবহৃত হবে কাশ্মীর ছিনিয়ে নেওয়ার জন্নে), অন্যদিকে দেশের বেকার সমস্যার কি চটজলদি সমাধান? দেশের হাজার হাজার যুবক ওয়াহাবি মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে জিহাদি হয়ে উঠছে, সুতরাং তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের কোন দায় দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হচ্ছে না। পাকিস্থানি আর্মি, আইএসআই এবং ভ্রষ্ট রাজনীতিবিদ দের বিদেশী ব্যাঙ্ক ভরে উঠছে ডলারে। কিন্তু হায়রে অদৃষ্ট, সময়ের চাকা যে এক জায়গায় থেমে থাকে না এই সত্যটা অনুধাবন করতে পাকিস্থানের নেতৃ বর্গের বোধহয় কষ্ট হয়েছিলো। কারণ ৮০র দশকের শেষদিকে আফগানিস্থান থেকে পিছু হটতে থাকে রাশিয়া, পরবর্তীকালে আমেরিকাও হাত ধুয়ে ফেলে আফগানিস্থান থেকে। পাকিস্থান সমস্যায় পরে তাঁদের নিজেদের সৃষ্ট ফ্রাঙ্কেনস্তাইন মানে এই জিহাদি দের নিয়ে – যারা ধর্মের নামে মারা আর মরা ছাড়া কিছুই শেখেনি। আসলে বাঘের পিঠে চাপলে অত সহজে তো নামা যাবে না, তাই পাকিস্থান এই জিহাদিদের কিছু অংশকে ভিড়িয়ে দিলো ভারতের কাশ্মীর অংশে, সেই সাথে স্থানীয় কাশ্মীরি যুবকদের মগজধোলাই করে তাঁদের হাতে তুলে দিলো অস্ত্র আর মগজে ওয়াহাবি টক্সিকের বিষ। কাশ্মীরি যুবকেরা জিহাদি হয়ে উঠল, শান্ত কাশ্মীরে প্রবেশ করলো টক্সিক ওয়াহাবি মতবাদ। যেখানে কাশ্মীরি মুসলমানেরা এতকাল অনুসরণ করে এসেছে সুফি ইসলাম, শত শত বছর ধরে তাঁরা পাশাপাশি বাস করেছে কাশ্মীরি পণ্ডিত দের সাথে, যা মিলে মিশে সৃষ্টি করেছে এক অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, যাকে বলা হতো – “কাশ্মিরিয়াত”। হিন্দু কাশ্মীরি পণ্ডিতের বাড়ীর অনুষ্ঠানে পাত পেড়ে খেত কাশ্মীরি মুসলমান, আবার ইদের দিনে কাশ্মীরি মুসলমান ভাইয়ের বাড়ী নিমন্ত্রন থাকত ওই কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারটির।  কিন্তু পরবর্তীকালে ধর্মের বিষ মেরে ফেলল এই অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ভালোবাসাকে। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হল কাশ্মীরি পণ্ডিত খেদাও অভিযান, মিছিল জমায়েত থেকে আওয়াজ উঠতে লাগলো – “নারায়ে তকদির, আল্লা হো আকবর। পণ্ডিত মহল্লায় হামলার সময় মসজিদের মাইকে আজানের আওয়াজ বহু গুন বাড়িয়ে দেওয়া হল যাতে আর্তনাদ, চিৎকার বাইরে শোনা না যায়। স্লোগান  দেওয়া হতে লাগলো – “ হাম ক্যা চাহতে আজাদি কিংবা অ্যায় জালিমো, অ্যায় কাফিরোঁ, কাশ্মীর হমারা ছোড় দো”  হত্যা, অপহরন, লুটপাট, মহিলাদের রেপ কোন কিছুই বাদ গেলো না, ১৯৯০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ পণ্ডিত পরিবার হল কাশ্মীর ছাড়া। বেশির ভাগ আশ্রয় পেল জম্মুতে তৈরি হওয়া আশ্রয় শিবিরে আর বাকিরা ছড়িয়ে পড়ল ভারতের অন্যান্য শহরে। জম্মুর হাঁসফাঁস করা গরমে নোংরা বস্তির এক চিলতে তাঁবুতে কোনমতে সংসার, সরকারের দেওয়া রেশনের চাল-দালের ডোল নিয়ে কোনরকমে ক্ষুন্নিবৃত্তি। এক সময়ে যাঁদের আপেলের বাগান ছিল, দেওদার কাঠের বহুমুল্য আসবাব ছিল তারাই জম্মুতে চরম অসন্মানের জীবন যাপন করে চলেছেন। কই তাঁদের জন্নে তো তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহলের কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করতে দেখি না?

কেউ তো প্রশ্নও করেন না – এ কি রকম স্বাধীনতার লড়াই? যেখানে এক সম্প্রদায়কে স্বদেশ, ঘর বাড়ী, পরিবার, ইজ্জত সব কিছু হারাতে হবে আর এক সম্প্রদায়ের লোভের আগুনে ঝলসে? কেনই বা দারিদ্রটার সুযোগ নিয়ে, উপত্যকায় পণ্ডিতদের ফেরার সম্ভাবনা কমে আসায়, অন্য সম্প্রদায়ের নেকড়েরা তাঁদের বসতবাড়ি, বাগান জলের দরে কিনে নিতে জম্মুতে দালাল পাঠাতে থাকবে? ভাবছেন হয়তো মিথ্যা বলছি, একবার রাহুল পণ্ডিতার Our Moon has Blood Clots পড়ে দেখতে পারেন, কিংবা কথা বলতে পারেন সর্বহারা কোন কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের সাথে। আশা করি বাস্তব অনুধাবন করতে খুব একটা অসুবিধা হবে না। খুব জানতে ইচ্ছে করে আচ্ছা কাশ্মীরি পণ্ডিত রাও তো সব হারিয়েছিলেন – তাঁদের ভিটেমাটি, ঘরের মেয়ের ইজ্জত, কি অবর্ণনীয় দুরবস্থার মধ্যে দিয়ে তো তারাও গিয়েছিলেন কই এটা তো শুনি নি যে কোন কাশ্মীরি পণ্ডিত হাতে AK47 তুলে নিয়েছে বা পাথর ছুঁড়েছে সেনা তথা সরকারের দিকে? না এই প্রশ্ন আমাদের করতে নেই তাহলে সেকুলার তকমা তা খসে যাবে যে। যাক ফিরে আসি প্রসঙ্গে, এই এত বড় exodus কিন্তু তদানীন্তন ভারত সরকারের টনক নড়ল অনেক বাদে, ততদিনে কাশ্মীরি পণ্ডিত দের যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে। কাশ্মীরের স্টেট পুলিশের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে দেওয়া হল সেনাবাহিনী আর প্যারা মিলিটারি বাহিনীর হাতে, কাশ্মীর পরিণত হল battlefield এ। যেকোনো যুদ্ধক্ষেত্রে যা হয়, সন্ত্রাসবাদী/ জিহাদিদের সাথে প্রাণ যেতে লাগলো সাধারন নিরাপরাধ মানুষের।

কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবী এবং বাস্তবতা –

পাকিস্থানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো একসময় বলেছিলেন “ হাম হাজার সাল ঘাস খায়েঙ্গে, লেকিন কাশ্মীর লেকে রেহেঙ্গে”, পাকিস্থানের চিরদিনের স্বপ্ন কাশ্মীর বনেগা পাকিস্থান। তাই বাস্তবতার নিরিখে কাশ্মীরের স্বাধীনতার অসম্ভব। একটু জেনে নেওয়া যাক এই স্বাধীনতার দাবী কি আপামর জম্মু এবং কাশ্মীরের জনগনের? না, এই দাবী প্রধানত মুসলিম প্রধান কাশ্মীর ভ্যালির। কয়েকটি জেলা নিয়ে এই কাশ্মীর ভ্যালি। হিন্দু প্রধান জম্মু এবং বৌদ্ধ প্রধান লাদাখ ভারতের সাথেই থাকতে চায়। তাহলে কয়েকটি জেলা নিয়ে তৈরি কাশ্মীর ভ্যালির অবস্থা কেমন? একটি ল্যান্ড লকড জায়গার মতন, ভারতের মাথার উপর এধরনের একটি ল্যান্ড লকড দেশ না ভারতের পক্ষে শুভ হবে না সেই দেশটির পক্ষে শুভ। তর্কের খাতিরে যদি মেনে নেওয়া হয় যে কাশ্মীর ভ্যালি স্বাধীনতা পায়ও তবে পরের দিনই পাকিস্থান এটিকে দখল করে নেবে। আর তাঁর ফল হবে কাশ্মীর ভ্যালীতে এখনও যে কয়েক লক্ষ হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ আছে তাঁদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হবে নয়ত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সাথে যা ঘটে ছিল ঠিক টাই হবে। আর গোটা দুনিয়ার কাছে আজ সুস্পষ্ট পাকিস্থান সন্ত্রাস দমনের নামে বালুচিস্থান, ওয়াজিরিস্থানে ঠিক কি করছে? আর আজাদ কাশ্মীরের জনগনের পাকিস্থান বিরোধিতা প্রমাণ করে দেয় কি ধরনের আজাদি ভোগ করছে সেখানকার কাশ্মীরিরা?

কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থা –

বর্তমানে কাশ্মীরের অবস্থা অগ্নিগর্ভ, রোজ নিউজ পেপারের পাতা উলতালে বা টিভির পর্দায় চোখ রাখলে দেখা যায় কি সংঘাত  তথাকথিত কাশ্মীরের আম জনগনের সাথে রাষ্ট্রশক্তির? মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী মহল ফলাও করে বিবৃতি/ বাইট  দিতে ব্যাস্ত কিভাবে ভারতীয় সেনা অত্যাচার করছে নিরীহ জনগনের প্রতি, প্রতি মুহূর্তে লুণ্ঠিত হচ্ছে মানবতা ইত্যাদি ইত্যাদি।

যে বুরহান ওয়ানির জন্নে আজ এতো বিক্ষোভ, সমাবেশ, তিনি কি ছিলেন আদতে? সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীনের নেতা আর হাতে ছিল পাকিস্তানের দেওয়া বন্দুক। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে এনকাউন্টারে নিহত আরো তিন সঙ্গীর সাথে। আশা করি ভারতীয় সেনাবাহিনী কে দেখে এনারা নিশ্চয়ই পুস্পবৃষ্টি করছিলেন না? তাহলে মোদ্দা কথাটি কি দাঁড়ালো? আত্মরক্ষার অধিকার একজন জঙ্গির আছে, অথচও একজন সেনার নেই? ও হ্যাঁ আমরা শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সমাজ তো আবার মনে করি ভারতীয় সেনা কর্ম ক্ষেত্রে যোগদানের পরবর্তী মুহূর্ত থেকে আত্মবলিদানের জন্য শিকলে বাঁধা বলির বকরা মাত্র, কারণ সে যে চাকরী করছে, তাঁর বিনিময়ে মাসিক রোকরার বন্দোবস্ত করেছে ভারত সরকার থুড়ি করপ্রদানকারী আপামর ভারতীয় জনতা সুতরাং দেশভক্ত কাশ্মীরি ভাইদের ছড়া পাথরে বা গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে কোন সেনা আহত হলে তাঁর আত্মরক্ষার অধিকার নেই, বা প্রতিরোধের জন্নে গুলিও চালাতে পারবে না। তাহলে সে কি বলবে – এই দুষ্টু এমন করতে নেই? যদিওবা আহত, কোণঠাসা সেনা গুলি চালায় পরেরদিন পাকিস্থানের সংবাদ পত্র গুলিতে হেডলাইন – অত্যাচারী ভারতীয় সেনার হাতে নিরীহ কাশ্মীরি যুবকের মৃত্যু। আর এখানে বুদ্ধিজীবী ও মানবতাবাদীরা বসে যাবেন সরকার ও সেনার মুণ্ডপাত করতে এবং চুলচেরা বিশ্লেষণে যে ভারতীয় সেনা ঠিক কতটা দোষী? কিন্তু কেউ একবারও প্রশ্নও করবে না যে শুক্রবারের পবিত্র জুম্মার নামাজের পর কাশ্মীরি ভাইদের ঈমানী জোশ কেন এতো বেড়ে যায় যে তাঁদের মসজিদের বাইরে এসে পাথর, গ্রেনেড  ছুড়তে হয়? আসলে সব কিছুরই রেট বাঁধা, হাওয়ালা রুটে ISI কাশ্মীরি যুবকদের অর্থ পাঠায়, আর ঈমানী জোশ নিয়ে মুখে কাপড় বেঁধে কাফের ভারতীয় সেনা দের লক্ষ করে পাথর, গ্রেনেড ছুঁড়ে স্বাধীনতার লড়াই লড়ে হতভাগ্য কাশ্মীরি যুবকেরা।

আমি কখনই বলব না বা মানি না যে সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরে কোন ভুল করেনি বা করছেনা, একটি সংস্থায় সাধু, অসাধু দুই ধরনের লোকই থাকে, তাই মুষ্টিমেয় কয়েকজনের ভুলের মাশুল গোটা সেনাবাহিনী বা সরকার কেন দেবে? আচ্ছা এটা বলুন তো পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশগুলিতে যদি সেনাবাহিনীর উদ্দেশে প্ররোচনামূলক স্লোগান আর পাথর/ গ্রেনেড ছোড়া হতো তাহলে সেই সব সেনাবাহিনী ঠিক কি করতো?

জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য –

জম্মু -কাশ্মীর ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শুধু স্কুল শিক্ষাই ফ্রী নয়, মেডিক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াও ফ্রী, সমস্ত খরচা ভারত সরকারের।  জম্মু ও কাশ্মীরে আছে একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বিখ্যাত NIT এবং IIM. সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে বিখ্যাত AIMS ও গড়ে তোলার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরিরা যদি ভারতের অনান্য রাজ্যে পড়াশুনা করতে চায় তাহলে তারা পায় স্কলারশিপ। জম্মু-কাশ্মীর ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে ষাট শতাংশেরও বেশী জনগণ ৮ রুপী কেজি দরে গম এবং ১০ রুপী কেজি দরে চাল পায় সরকারের রেশন দোকানগুলি থেকে। ভারত সরকার বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো গরীব রাজ্যের মুখ থেকে অন্ন ছিনিয়ে নিয়ে জম্মু- কাশ্মীর কে সাবসিডি রুপে দেয়। তাহলে বন্ধুরা ব্যাপার তা কি দাঁড়ালো? ভারত সরকার দমননীতি নিয়ে চলছে না আম আদমির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে? তাই কাশ্মীরের জনগনকেই বেছে নিতে হবে তাঁরা কি চান? প্রগতি, উন্নতি, শান্তি না বিশৃঙ্খলা, অরাজকটা? এই প্রসঙ্গে একজনের কথা উল্লেখ না করে পারছি না, তিনি হলেন শাহ ফয়সাল, Indian Administrative Service Exam টপার, সাড়া ভারতের যুব সমাজের কাছে একজন দৃষ্টান্ত। তাহলে বুরহান ওয়ানি না শাহ ফয়সাল কাকে অনুসরন করা উচিত, এটা ভুলে গেলে চলবে না ইতিহাস মনে রাখে শাহ ফয়সালের মতো কৃতি ছাত্র কে, আর বুরহান ওয়ানির মতো জিহাদিরা শুয়ে থাকে কবরে। 

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা – “শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইন কানুন সর্বনেশে”

এই বিতর্কিত ধারা নিয়ে কিছু বলার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক এই ৩৭০ ধারার ফলে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের মূল ধারা থেকে কিভাবে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

১) জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকদের দুই দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ আছে।
২) জম্মু ও কাশ্মীরের দুটি পতাকা – একটি রাজ্যের অন্যটি জাতীয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে গেলে অনুমতি লাগবে আর রাজ্যের পতাকা সাথে উত্তোলন করতে হবে।
৩) জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভার কার্যকাল ৬ বৎসরের, যেখানে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভার কার্যকাল ৫ বৎসরের।
৪) ভারতের জাতীয় প্রতীকের অবমাননা বা জাতীয় পতাকা পোড়ানোর মতো কাজ কে অপরাধ বলে মনে করা হয় না।
৫) স্টেট গভর্নমেন্টের সম্মতি ব্যাতিত ভারতীয় আইন (কেবলমাত্র প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক ও যোগাযোগের ক্ষেত্র ছাড়া) জম্মু ও কাশ্মীরে লাগু হতে পারে না।
৬) এমনকি সুপ্রিম কোর্টের আদেশও জম্মু ও কাশ্মীরের জন্নে লাগু নয়।
৭) জম্মু ও কাশ্মীরের কোন মহিলা যদি জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাতিরেকে অন্য পুরুষকে বিবাহ করে, তাহলে তাঁর জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকত্ব চলে যাবে, অথচও যদি সে কোন পাকিস্থানি নাগরিককে বিবাহ করে তাহলে দ্বৈত নাগরিকত্ব বজায় থাকবে।
8) যদি কোন পাকিস্থানি নাগরিক কোন কাশ্মীরি মহিলাকে বিবাহ করে তবে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে।
৯) Right to Information (RTI) Act এবং CAG লাগু হবে না এই ৩৭০ ধারার জন্নে।
১০) জম্মু ও কাশ্মীরের মহিলারা শরিয়ত আইনের দ্বারা শাসিত।
১১) পঞ্চায়েত ব্যবস্থা জম্মু ও কাশ্মীরে লাগু হবে না এই ৩৭০ ধারার জন্নে।
১২) ভারতের কোন নাগরিক জম্মু ও কাশ্মীরের কোন জমি কেনা, বেছা করতে পারবে না।

তাহলে বন্ধুগন আমরা কি দেখতে পারছি? এই সংবিধানের ৩৭০ ধারা কাশ্মীরের সংস্কৃতিকে রক্ষা করছে না কি আরও পিছনে ফেলে দিচ্ছে? এই কঠিন বাস্তবটি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন ভারতকেশরি ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, তাই তিনি বলেছিলেন “ এক দেশ মে দো বিধান, দো প্রধান আউর দো নিশান নেহি চলেঙ্গে”। এই কালা কানুনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রহস্যময় ভাবে মৃত্যু ঘটলো তাঁর। সেই ইতিহাস অন্য কোনোদিন আলোচনা করা যাবে।

কিন্তু আমাদের পূর্বসূরি নেতৃবৃন্দ ক্ষমতার লোভে এটা ভুলে গিয়েছিলেন, এইভাবে জম্মু ও কাশ্মীরকে বাকী দেশ থেকে আলাদা/ বিচ্ছিন্ন করে রাখলে আখেরে পিছিয়ে পড়বে এখানকার জনগন, না হবে কোন শিল্প স্তাপন, না হবে কর্মসংস্থান, না জনসংখ্যার সঠিক বিন্যাস ঘটবে। এই জন্নেই সংস্কৃতির আদানপ্রদান ও সেইভাবে গড়ে ওঠেনি, উল্টে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ঘরছাড়া হয়েছেন সাম্প্রদায়িকটার বিষাক্ত রোষানলে পড়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে, জম্মু ও কাশ্মীরের অন্তভুক্তির সময়ে বলা হয়েছিলো বা স্বপ্ন দেখানো হয়েছিলো যে ৩৭০ধারা কাশ্মীরের সংস্কৃতি কে রক্ষা করবে, উল্টে এটাই ঘাতক অস্ত্র হিসাবে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। তাই সময় এসেছে ৩৭০ ধারা নিয়ে বিতর্কের, আলোচনার যাতে এই কালা কানুন বিলোপ করে জম্মু ও কাশ্মীরকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় আর সেখানে ঘটে চলা নিরন্তর সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে।

কেন আমরা ভুলে যাচ্ছি যে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং গৌরবময় সভ্যতা এই সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো রিভার ইন্দাস বা সিন্ধু নদের অববাহিকায়, সিন্ধু এই শব্দ থেকেই হিন্দু কথাটি এসেছে যার থেকে হিন্দুস্থান বা ভারত, ইন্দাস থেকে ইন্ডিয়া। এখানে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না সেই সময় সিন্ধু অববাহিকায় বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠী কে হিন্দু বলা হত, হিন্দু বলতে কোন একটি ধর্মকে বোঝাতো না। তাই সাম্প্রদায়িকটার নয় আজ দরকার ঐক্যের,  নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান/ বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।‌ ’‘বৈচিত্রের মাঝে ঐক্যআমাদের ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য, এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।  

আমার এই লেখা কোন সম্প্রদায়, ধর্মকে আঘাত করার জন্নে নয়, অপিতু বাস্তব চিত্রকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা মাত্র, সেই প্রচেষ্টায় যদি কোন ব্যক্তি বিশেষ বা সম্প্রদায় আঘাত পেয়ে থাকেন আমি আন্তরিক ভাবেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। জয় হউক সমগ্র ভারতবাসীর, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক আমার আপনার স্বপ্নের ভারত, জয় হিন্দ।