Sunday 14 August 2016

নীলকণ্ঠের ডায়রি থেকে – ১৫ই আগস্ট, ২০১৬









নীলকণ্ঠের ডায়রি থেকে – ১৫ই আগস্ট, ২০১৬  

লে হালুয়া যতই বালিশ মাথাই চেপে ঘুমানোর চেষ্টা করি না কেন, ঠিক কানের মাথা খেয়ে ফেলার উপক্রম  হল দেখছি। সকাল থেকে একী র‍্যালা শুরু হল মাইরি কে জানে – চারিদিকে ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ, কোথাও “মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে “ কোথাও বা আবার “চল্ রে চল্ সবে ভারত সন্তান, মাতৃভূমি করে আহ্বান৷ না এ আহ্বান উপেক্ষা করার সাধ্য নেই, অতএব উঠে পরতেই হল। হাঙ্গওভার কাটিয়ে খেয়াল হল ও হরি আজ যে ১৫ই আগস্ট, ভারতবাসীর সাধের স্বাধীনতা দিবস। এদিকে পুঁটির মা তো আসবে না বলেই দিয়েছে গতকাল, আজ সেও স্বাধীন। অতএব ফ্রেশ হয়ে এসে চায়ের বাবস্থ্যা নিজেকেই করতে হল। চা নিয়ে আয়েশ করে জানালার পাশে বসে খুঁজতে লাগলাম স্বাধীনতা, ওই যে কত পতাকা পতপত করে উড়ছে, আচ্ছা ওটাই স্বাধীনতা? বহুদিন আগে শোনা একটা কথা মনে পরে গেলো – “উই দেখ স্বাধীনতা, আরে ওটা স্বাধীনতা হবেক ক্যানে, উটা তো পতাকা। তাহলে স্বাধীনতা, হ্যা উই বাঁশ আর দড়ি আছেক ল্যাই, উটাই হোল স্বাধীনতা”, কে বলেছিল কে জানে ১২৫ কোটির দেশে স্বাধীনতা খুঁজে পাওয়া কি চাট্টি খানি কথা? বসে বসে ভাবতে লাগলাম - ১৫ই আগস্ট, ২০১৬, স্বাধীনতা দিবস, দেশপ্রেমী কংগ্রেসের দেওয়া কি সুন্দর গাল ভরা নাম। ঐতিহাসিকরাও কত সহজে মাথা নুইয়ে মেনে নিয়েছে এই ধাপ্পাবাজি আর আমাদের পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে খাঁটি দেশপ্রেম! সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ?
ঐতিহাসিকরা তো চিরকালই কর্তাভজা, তাঁদের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা আশা করা মুর্খামি। তাঁদের গিলিয়ে দেওয়া ইতিহাস কি ভাবীকালের প্রামান্য তথ্য হিসেবে বিবেচিত হবে? নাকি অতীতের প্রতিটি ঘটনার চুলচেরা, সত্য ও নিরপেক্ষ্য বিশ্লেষণ ঠিক করে দেবে ভবিষ্যতের দিশা? জানি আমার কথায় গেলো গেলো রব উঠতে বাধ্য, হয়তো দেশদ্রোহী হিসেবেই চিহ্নিত হব, তবু আমি মনেপ্রানে বিশ্বাস করি ভাবি কালের বিচারে ১৫ই আগস্ট চিহ্নিত হবে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে নয়, ভারতের জাতীয় জীবনের চরম কলঙ্কদিবস হিসাবে।

মাউন্তব্যাটেনের হাত থেকে স্বাধীনতার দান এলো ১৫ই আগস্ট এর ঊষালগ্নে। স্বাধীনতাকামী মানুষ আনন্দে মাতোয়ারা, সব দুঃখ কষ্টের হবে অবসান, অথচও জয়োল্লাসের মাঝে বাংলা আর পাঞ্জাবে অসংখ্য শিশু, নারীর মর্মভেদী আর্তনাদ, কানে গিয়েছিলো আমাদের জাতীয় নেতৃত্তের? সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের কূটকৌশলে জন্ম নিয়েছিল যে বিষবৃক্ষ, টা রোপণের লগ্ন পার হতে না হতে ভারত আর পাকিস্তান জড়িয়ে পড়েছিল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। ধ্বংস হয়ে গেলো বহু শত বৎসরের জাতীয় ঐতিহ্য, হিমালয়ের কোল বেয়ে সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র তৈরি করেছিলো যে অখণ্ড ভারতবর্ষ, দ্বিখণ্ডিত হল তার প্রাকৃতিক সংহতিযা তেইমুর লঙ, চেঙ্গিস খান, নাদির শাহ রা করতে পারেনি, কংগ্রেসের সম্মতি নিয়ে মাউন্তব্যাটেনি কলমের খোঁচায় সেটাই হল। বহুবার বিদেশি শক্তির আক্রমণ সহ্য করেও যে অখণ্ডতা খানখান হয়নি, ১৫ই আগস্ট তাই ঘটলো। জাতীয় বিপ্লবের কি শোচনীয় পরিণতি?


তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ করো, তোমরা যে সব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙ্গে ভাগ করো, তার বেলা?
অথচও বহু আগেই এই বিষয়ে - ইংরেজ যে ভারত ছাড়ার আগে ভারতভূমিকে দু'টুকরো করে দিয়ে যাবে সে সম্বন্ধে নেতাজী বহুবার কংগ্রেসকে সতর্ক করেছেনইংরেজরা আয়ারল্যান্ডকে দু টুকরো করেছে, প্যালেস্তাইনকে ভাগ করেছে আরব ও ইহুদী রাষ্ট্রে । নীলনদের দেশকে দ্বিখণ্ডিত করেছে মিশর ও সুদানে, ব্রহ্ম দেশেও মুসলিম আর বৌদ্ধদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি করেছে। আসলে ভেদনীতিই ইংরেজের সাম্রাজ্য স্বার্থরক্ষার অপকৌশল । হরিপুরা কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতিরূপে নেতাজী তাই কংগ্রেসকে সতর্ক করে বলেছিলেন ,"আমার এতটুকুও সন্দেহ নেই যে ব্রিটিশের উদ্ভাবনা শক্তি ভারতবর্ষকে ভাগ করার কোনো-না-কোনো নিয়মতান্ত্রিক ফন্দী বের করবেই এবং এমনি করে ভারতের জনতার হাতে যে ক্ষমতা দেওয়া হবে তা অকেজো করে দেওয়া হবে” 
   
হরিপুরা কংগ্রেসের দু'বছর পরে ১৯৪০ সালে মুসলিম লিগ ভারত ভাগ করে মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি জানায় ব্রিটিশ সরকারের কাছে, তখনও নেতাজী অস্থির হয়ে দেশ বিভাগের ভয়াবহ পরিণতি সম্বন্ধে আবার সাবধানবাণী উচ্চারণ করেন বর্মা থেকে। এর পরে আবার ওয়াভেলের সঙ্গে যখন পাকিস্তান নিয়ে কংগ্রেসী নেতৃবর্গ আপস আলোচনা চালাতে থাকেন, নেতাজী তখনও ব্যাকুল হয়ে বেতারযোগে বারবার দেশ ভাগ করার সর্বনাশী পরিণতি সম্বন্ধে দেশবাসীকে সাবধান করে বলেন, "আমরা স্বাধীন ও অখণ্ড ভারতসৃষ্টির জন্য প্রাণপণ লড়েছিভারতকে ব্যবচ্ছেদ করে দেশকে খণ্ড খণ্ড করার সমস্ত প্রচেষ্টায় আমরা বাধা দেব। আমরা স্পষ্ট উপলব্ধি করেছি যে ভাগ হলে অর্থনীতি ,সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেলে আমরা সহজেই সংখ্যালঘু সমস্যার সমাধান করতে পারব। সোভিয়েত ইউনিয়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের সামনে । ভারতের চেয়েও সোভিয়েত ইউনিয়নে বহুতর সম্প্রদায় রয়েছে,তবু তারা আজ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মাতৃভূমিকে খণ্ড করার পাকিস্তানী পরিকল্পনার আমি তীব্র বিরোধী, আমাদের পবিত্র মাতৃভূমিকে খণ্ডিত কোনমতেই চলবেনাকিন্তু ক্ষমতালোভী, পলায়নপর কংগ্রেসী নেতৃবর্গ সে কথা কানে তোলেনি। নেতাজী বার বার কংগ্রেসকে বলেছেন, সংগ্রামের পথে শুধু সাম্প্রদায়িকতাই নয়, সাম্রাজ্যবাদী সব ভেদনীতিই বানচাল হয়ে যায় ।

নেতাজীর কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে প্রমাণিত হল আগস্ট বিপ্লব এবং আজাদহিন্দ ফৌজের বিচারকালীন ১৯৪৫ এর গণঅভ্যুত্থানে। সেই বছরেরই নভেম্বর মাসে আপামর ভারতীয় জনতা উন্মত্ত হয়ে উঠল নেতাজী আর আজাদ হিন্দ ফৌজের নামে, কলকাতার আবাল বৃদ্ধবনিতা দলে দলে শহিদ হয়ে গৌরবের রক্তবন্যা বইয়ে দিলো, বম্বে, করাচীর দেশভক্ত নৌ সেনা রা বিদ্রোহ ঘোষণা করল, বায়ু সেনা, স্থলসেনা দের মধ্যেও উঠল বিপ্লবের ঢেউ, এই সর্বগ্রাসী বিপ্লবের পথরোধ করে এমন সামর্থ্য ব্রিটিশ শক্তির কোথায়? জয়হিন্দ আর নেতাজী জিন্দাবাদ এর বিপ্লবী আওয়াজে ভারতের আকাশ বাতাস তখন মুখরিত, বিপ্লবী জনতা তখন প্রস্তুত, ব্রিটিশ সরকার কোণঠাসা এই বৈপ্লবিক সংগ্রামে। শুদু তাই নয়, মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প উবে গেল ভারতের জাতীয় জীবন থেকে, হিন্দু- মুসলমান- শিখের সংগ্রামী ঐক্য দেখে জিন্নার মতো কুটিল কণ্ঠস্বরও স্তব্ধ হয়ে গেছিল।
সেই সময় বিদ্রোহী সেনারা কংগ্রেসি নেতাদের কাছে প্রত্যাসন্ন জাতীয় সংগ্রামের নৈতিক নেতৃত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানাল। ব্রিটিশ সরকারের ভেদনীতি আর মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িকতা নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে, আগত জাতীয় গণবিপ্লব। অখণ্ড ভারতে অখণ্ড জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা হাতের মুঠোয়। কিন্তু জনজাগরণের এই বিপ্লবী অভিযান দেখে পলায়নপর কংগ্রেস নেতৃত্ব হকচকিয়ে গেল। অহিংসার নামে ভণ্ড শান্তির আওয়াজ তুলে মুণ্ডপাত করল গণউত্থানের । লুই ফিসারের কাছে গান্ধীজী বললেন -"চারিদিকে যে হিংসার আওয়াজ এ সময় সত্যাগ্রহ সংগ্রামের কথা কল্পনাও করা যায় নাঅরাজকতা,বিশৃঙ্খলা, হিংসা ও যথেচ্ছাচারের নাম দিয়ে  চিরকালের আপসপন্থী কংগ্রেস বেছে নিল পলায়নের পথ।

জিন্না ও নেহেরুরজীর মধ্যে বিরোধ থাকলেও একদিকে ছিল তাঁদের দারুণ মিল। তাঁরা দুজনেই স্বাধীন ভূখণ্ডের সিংহাসনে বসতে চাইতেন।  প্রথম প্রথম গান্ধিজীর পরামর্শ মতো বহু সিদ্ধান্ত, কর্মসূচি নিয়েছিল কংগ্রেস তথা নেহেরু অ্যান্ড কোং। কিন্তু ক্ষমতার মধুভাণ্ড যত কাছে আসতে থাকে ততই গান্ধিজী ব্রাত্য হতে থাকলেন। দুপক্ষই নিশ্চিত হয়েছিল যে, ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবেই। পদ ও ক্ষমতার মোহে চলল নানান কূটনৈতিক চাল। অপরদিকে ব্রিটিশ রা তখন যেনতেন প্রকারে ভারত ছাড়তে পারলে বেঁচে যায়, তাই তারা আর দেরি করতে রাজি নয়। নৌবিদ্রোহের তিনদিন পরেই ঘোষিত হল ক্যাবিনেট মিশনের ভারত আগমনের কথাকিভাবে ভারত কে স্বাধীনতা দেওয়া যায় সেই নিয়ে শুরু হোল বিস্তর আলোচনা আর গবেষণা। কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, হিন্দু মহাসভা, দেশীয় রাজন্যবর্গ, তৎসহ বিশিষ্ট ব্যাবসায়িবৃন্দও কে নেই জনতার প্রতিনিধিত্তের জন্নে? ফল যা হওয়ার তাই হল – দিন গেলো, মাস বয়ে গেলো ক্ষমতা হস্তান্তরের বন্ধ্যা আলাপে। ক্যাবিনেট মিশনের কথামালার অন্তরালে জাতীয় নেতৃত্ব সিংহাসনে বসার পথ খুঁজতে ব্যাস্ত। ইতিহাসের সব থেকে মহান গনবিপ্লবের অঙ্কুর আলো দেখার আগেই হল অস্তমিত। ১৯৪২ সালের বিপ্লবে এবং ১৯৪৫ -৪৬ এর যে গণউত্থানে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ নির্মূল করে ফেলেছিল তাই আবার বিষাক্ত ফনা তুলে দংশাতে এলো ভারতীয় জনজীবনে। বিপ্লবের তরবারি ছুড়ে ফেলে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে কংগ্রেস গেলো ব্রিটিশের দরজায়, অন্যদিকে জিন্নার দেখানো রাস্তায় মুসলিম লীগও জুটল লর্ড ওয়াভেলের কাউন্সিলে। জিন্নার প্রত্যক্ষ মদতে ঘোষিত হল মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস। কংগ্রেসি নেতৃত্বের আপসমুখী কাপুরুষতা আর ক্ষমতার লোভ এবং ব্রিটিশরাজের ভেদনীতির পরিনামে জাতীয় বিপ্লবের অপমৃত্যু হল, সৃষ্টি হল ভ্রাতৃরক্তস্রাবী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামার বীভৎস দাবানল। আরও একবার মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক ঘৃণার শিকার হল সাড়া ভারতবর্ষ, নয়াখালি, পাঞ্জাব, কলকাতা যার কয়েকটি নিদর্শন মাত্র।
   
ওয়াভেলের জায়গায় এলেন সুচতুর মাউন্তব্যাটেন ও তার সুন্দরী পত্নী এদুইনা মাউন্তব্যাটেনধীরে ধীরে ব্রিটিশে সাম্রাজ্যবাদের ভেদনীতি আর মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িকতার নাগপাশে, কিংবা এদুইনা মাউন্তব্যাটেনের প্রেমের ফাঁদে আটকা পরে কংগ্রেস তথা নেহরুজি রাজি হলেন ভারত ভাগে এক বছর আগেও দম্ভ ভরে নেহরুজি ঘোষণা করেছিলেন – “সূর্য পশ্চিম দিকে উঠতে পারে, তবুও ভারত ভাগ করে পাকিস্থান প্রতিষ্ঠায় কংগ্রেস কোনদিনও রাজি হবে না”। সূর্য বরাবরের মতো পূর্ব দিকেই উঠল,  কেউ কোন প্রতিবাদ করলেন না। একজন পারতেন এই ভারতভাগ রুখে দিতে, তিনি গান্ধিজি, কিন্তু গান্ধিজি কোন এক অজানা কারনে মৌন রয়ে গেলেন।

ভারত ভাগের খবর শুনে বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে গেছিলেন মৌলানা আজাদ, তৎক্ষণাৎ ছুটে যান গান্ধীজীর কাছে, অনুরোধ করেন – এখন একমাত্র আপনি ভরসা, একমাত্র আপনি পারেন দেশভাগ রুখে দিতে। কি বলেছিলেন শ্রদ্ধেয় বাপুজি – দেশবিভাগ যদি হয়, তবে আমার মৃতদেহের উপর দিয়েই হবেআমি যতক্ষণ বেঁচে আছি, ততক্ষণ কিছুতেই দেশবিভাগে সম্মতি দেবো না। আমরা কি দেখলাম? ১৫ই জুন দেশ বিভাগের প্রস্তাব গৃহীত হল কংগ্রেসের অধিবেশনে আর সেই প্রস্তাব সমর্থন করলেন স্বয়ং বাপুজি। এ কি আশ্চর্য ব্যাপার তাই না? কেন তিনি প্রতিবাদ করলেন না? যে অনশন তার প্রতিবাদের ভাষা কেন তিনি ভুলেগেলন সেই ভাষা। কেন আত্মসমর্পণ করলেন নেহেরু চক্রের কাছে? বাপুজির দূরদৃষ্টির অভাব ছিল না তিনি ভালোই বুজতে পেরেছিলেন ১৯৪২ সাল আর ১৯৪৭ সাল এক নয়, তার স্নেহধন্য কাছের লোকেরাই তাকে ছেড়ে ক্ষমতার লোভে ভারতভাগ মেনে নিয়েছে।
একটু ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখি স্বয়ং নেহেরুজি এ বিষয়ে কি বলেছিলেন – “আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, বয়েস হয়েছিলো, আমাদের মধ্যে খুব কম লোকের আবার বন্দিজীবন সহ্য হতো। অথচও অবিভক্ত ভারত চাইতে গেলে ওটাই ছিল অপরিহাজ্য। পাঞ্জাবে দাঙ্গা- হাঙ্গামা লেগেই ছিল, রোজ শুনছিলাম মানুষ হত্যার কাহিনী। এই অবস্থায় ভারত ভাগ মুক্তির পথ দেখাল, আমরা তাই মেনে নিলাম”।

কি অকপট যুক্তি? ব্যক্তিগত লোভ, সাধ দেশের স্বার্থের চেয়ে বড় হল? লর্ড মাউন্তব্যাটেনও বিস্মিত হয়ে গেলেন যে তাঁদের ভেদনীতির কূট চালে এতো সহজে কংগ্রেস যে আত্মসমর্পণ করল।
  
আপামর ভারতবাসীর, নেতাজীর বহুআখাঙ্কিত খণ্ডিত স্বাধীনতা এলো কিন্তু সংগ্রামের বিনিময়ে নয়, তথাকথিত শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে (যে আলোচনার বলি হয়েছিলো গোটা বাংলা আর পাঞ্জাব, ব্রিটিশ সরকারের হিসেবেই শুদু পাঞ্জাবে মারা গিয়েছিলো ৬লাখ মানুষ, ধর্ষিতা নারী, ধর্মান্তরিত, গৃহহারাদের কথা না হয় বাদ দিলেন ঐতিহাসিকরা)আর কত দ্রুত কার্যকর হল সেই আলোচনা (পাছে মৃত সুভাষের আত্মা আবার ফিরে এসে কোন বাগড়া দেয়)। কিন্তু কি কি শর্তে এলো এই স্বাধীনতা তা কি প্রকাশ করা হয়েছিলো? না যদি আমরা দুঃখ পাই, (মৃত সুভাষের আর আইএনএ-র ভুত যদি চেপে বসে?) তাই ঠিক হল স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ৫২ বছর বাদে এসব নাহয় প্রকাশ করা যাবে (যাতে আদরণীয় নেতৃবৃন্দের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি সম্পর্কে কোন দুবিধা না থাকে?) জানিনা আদৌ সেইসব শর্তাবলী প্রকাশ হয়েছে কিনা? 

ইতিহাস কিছুই ভোলে না, কাউকে ক্ষমাও করে না। সেখানে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে শুদু মুসলিম লীগ নয়, দেশ ভাগের জন্নে কংগ্রেসও সমানভাবে দায়ী। 

নেহেরুজীর রাজ্যাভিষেক আর  স্বাধীনতার মিথ্যে টোপর
১৩ আগস্ট ভাগ হল দেশ। ক্ষমতা হস্তান্তর ও ডোমিনিয়নের উদ্বোধনের জন্য১৪ আগস্টের রাতে গণপরিষদের অধিবেশন ডাকা হল । প্রধান মন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এক আবেগঘন বক্তৃতা দিলেন। বললেন, ‘Awake to freedom’ “Long years ago we made a tryst with destiny, and now the time comes when we shall redeem our pledge, not wholly or in full measure, but very substantially. At the stroke of midnight hour, when the world sleeps, India will awake to life and freedom. A moment comes which comes but rarely in history, when we step out from the old to the new, then an age ends, and when the soul of a nation, long suppressed, finds utterance. It is fitting that at this solemn moment we take the pledge of dedication to India and her people and to the still larger cause of humanity.” অর্থাৎ, মধ্যরাত্রে সারা দুনিয়া যখন ঘুমিয়ে, তখন ভারত জীবন আর স্বাধীনতায় জেগে উঠবেইত্যাদি।

ইংরাজী মত অনুসারে ভারত তার স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্টকে মেনে নিলেও পাকিস্তান মুসলিম মত অনুসারে ১৪ আগস্টকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করল। সাধারণ মানুষ জানল, ভারত স্বাধীন হয়েছে। সেই সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে মুসলিমদের জন্য পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তান। কিন্তু আসলে ভারত ওই রাতে স্বাধীন হল কি? না হয়নি। হয়েছিল ব্রিটিশ-রাজ ষষ্ঠ জর্জের পদতলে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের একটা ডোমিনিয়ন বা অধিরাজ্য বা, স্বায়ত্তশাসিত উপনিবেশ, যার গভর্নর জেনারেল হলেন লর্ড লুইস মাউন্টব্যাটেন। মাউন্টব্যাটেন ২১ জুন ১৯৪৮ পর্যন্ত গভর্নর জেনারেল হিসেবে ক্ষমতাসীন ছিলেন।

২১ জুন, ১৯৪৮-এ দ্বিতীয় গভর্নর জেনারেল হিসাবে শপথ নিলেন চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী। প্রথা অনুসারে ব্রিটেনের রাজার নামেই শপথ নিতে হল। শপথে বললেন তিনি, ‘আমি চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারি যথাবিহিত প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমি মহারাজ ষষ্ঠ জর্জ, তাঁর বংশধর এবং তাঁর উত্তরাধিকারীদের প্রতি আইনানুসারে বিশ্বস্ত ও অনুগত থাকব। আমি, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী শপথ নিচ্ছি যে, আমি গভর্নর জেনারেলের পদে অধিষ্ঠিত থেকে মহারাজ ষষ্ঠ জর্জ, তাঁর বংশধর এবং তাঁর উত্তরাধিকারীদের সুষ্ঠ ও যথাযথভাবে সেবা করব।

কি সুন্দর স্বাধীনতা তাই না? কত শহিদের আত্মবলিদানের ফসল এই স্বাধীনতা,স্বাধীনতার পুন্যলগ্নে তাহলে কাদের নামে শপথ গ্রহন করলাম আমরা? অথচও কেউ কি প্রশ্ন করেছিলো যে - ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসকে কি স্বাধীনতা বলে? ডোমিনিয়নহল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত অর্ধ-স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থা।ইংলিশ কমন লঅনুসারে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ডোমিনিয়নগুলো ছিল ব্রিটিশরাজের সার্বভৌমত্বের অধীন এলাকা। ১৯২৬-এর ব্যালফোর ঘোষণা (Balfour Declaration) অনুসারে ডোমিনিয়নগুলোকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত স্বায়াত্বশাসিত অঞ্চল (“autonomous Communities within the British Empire”) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সুতরাং আইনত ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্টেও ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্তই ছিল। তাই ১৫ আগস্টের স্বাধীনতা দিবস হল কাঁঠালের আমসত্ত্ব।  

তাহলে ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস কবে?

উত্তর ২৬শে জানুয়ারী, ১৯৫০।

এই তারিখটাকে সংবিধানে সংবিধান আরম্ভের তারিখ বলে উল্লেখিত হয়েছে। এই তারিখকে প্রজাতন্ত্রদিবস হিসেবে আমরা পালন করি। এই দিনেই ভারত নিজেকে সার্বভৌম হিসেবে ঘোষণা করে। সার্বভৌমতাই প্রকৃত স্বাধীনতা। এই তারিখে সংবিধান বলবৎ হবার পর থেকে ভারতের উপর ইংল্যান্ডের সম্রাটের আর কোনো বিধিগত বা সংবিধানগত কর্তৃত্ব রইল না এবং ভারতের কোনো নাগরিকের আর ব্রিটিশ সম্রাটের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের প্রয়োজন থাকল না।

স্বাধীনতার বিষবৃক্ষ আর তার বিষফল 

এ কোন সকাল যা রাতের চেয়েও অন্ধকার - অখণ্ড ভারতের মৌলিক আদর্শের প্রতি শত্রুতার পুরস্কার হিসাবেই জিন্নার পাকিস্থানের জন্ম। ভারত ও পাকিস্থান দুই দেশের জাতীয় আদর্শ সুমেরু আর কুমেরুর মতোই বিপরীতমুখী। তাই স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকেই দুই দেশের মধ্যে শুরু হল নিরবিচ্ছিন সংঘাত। ধূর্ত ব্রিতিশ যা ভেবেছিল অক্ষরে অক্ষরে তা ফলতে লাগলো, ১৫ই আগস্টের রাত কাটতে না কাটতে পশ্চিম পাকিস্থানে ও পাঞ্জাবে জ্বলে উঠল সাপ্রদায়িক হানাহানির বীভৎস দাবানল, দুই পাঞ্জাবে শুরু হল লোকবদল, পশ্চিম পাকিস্থান থেকে দলে দলে হিন্দু শিখেরা ভারতে চলে এলো, পশিম পাকিস্থান কার্যত সম্পূর্ণ রুপে হিন্দুশিখ শূন্য হয়ে গেলো। একই ভাবে পূর্ব পাকিস্থান থেকেও লক্ষ লক্ষ্ হিন্দু তাঁদের পৈত্রিক ভিটে ত্যাগ করে এদেশে আসতে বাধ্য হল। যারা পরে রইল পাকিস্থানে তাঁদের দুর্দশার কথা আজ অনেকেরই জানা। যাই হোক মুল প্রসঙ্গে ফেরা যাক - উদ্বাস্তু সমস্যার সৃষ্টি তখন থেকেই, উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের প্রয়োজনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের বোঝা চাপল ভারত সরকারের উপর। ভারত ভাগ না হলে যে টাকা গথন মুলক কাজে ব্যয় করা যেতে পারতো, শুদু মাত্র কংগ্রেসি নেতৃত্বের ক্ষমতার লোভের মাসুল গুনতে ব্যয় হতে লাগলো। 

ভারত ভাগের ফলে অখণ্ড ভারতের যে আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে সেটা সমসাময়িক কংগ্রেসি নেতৃত্ব অনুধাবন করতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্থানের গম না হলে উত্তর ভারতের খাদ্যসঙ্কট হতে পারে বা তুলা না হলে কাপড়ের কলের কি অবস্থা হতে পারে কিংবা পূর্ব বাংলার পাট না হলে কলকাতার জুটমিল গুলোর কি হতে পারে এই সম্পর্কে সম্যক ধারনা ছিল কি সমসাময়িক কংগ্রেসি নেতাদের? ঠিক একেই ভাবে ভারতের খনিজ কয়লা, লোহা, তেল, অন্যান্য শিল্পজাত জিনিষের উপর পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্থান নির্ভর ছিল। মধ্যে লাভবান হয়েছিলো তদানীন্তন ইঙ্গ মার্কিন শিল্পপতিরা। উপরি পাওনা বলতে আমাদের কপালে জুটেছিল উদ্বাস্তুদের প্রতি কখনও শেষ না হওয়া বিক্ষোভ আর বিদ্বেষ।

স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্ট্রের জাতীয় পুনর্গঠনের কাজ না করে অখণ্ড ভারত ভাগ করে খণ্ডিত অংশ দুটির মধ্যে আজন্ম বৈরিতা সৃষ্টি করে ভারত এবং পাকিস্থান উভয় রাষ্ট্রকে চিরপঙ্গু রাখার যে ফাঁদ তদানীন্তন ব্রিটিশ শাসকেরা করেছিলো সেটা অনুধাবন করতে মহামতি নেহেরুজি বা মহান জিন্না পারেননি তা নয়, তারা জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে শুদু শাসকের গদিতে বসার যে স্বপ্ন দেখে ছিলেন তার ফল ভোগ করছে আজ পাকিস্থান আর ভারত। আমরা জানি মহাভারতের পাশা খেলায় কূলবধূ দ্রোপদী হারিয়েছিল তার সম্ভ্রম, আর এখানে নেহেরুজির আর জিন্নার পাশা খেলায় অগুন্তি গৃহবধূ, তরুণী, কিশোরী মায় বৃদ্ধা নারীও হারিয়েছিল তাঁদের ইজ্জত সম্ভ্রম। উল্টে সৃষ্টি হল অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য, দলিত, সংখ্যালঘু, জাতপাতের রাজনীতি যা থেকে আজও মুক্তি মিলল না। 

তথাকথিত স্বাধীনতার ৭০বছর পরেও এই দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছোবল মেরে থাকে, অথচও যদিভারতের অখণ্ডতা বজায় থাকত তাহলে দলে দলে যে সব উদ্বাস্তু এই দেশে চলে এসেছিলেন তাঁদের পুনর্বাসনের সমস্যা থাকত না, জনবিন্যাসের (এটা নিশ্চয়ই আমরা ভুলতে পারবনা দেশ ভাগ হয়েছিলো টু'নেশন থিউরির বা দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে) ভারসাম্য বজায় থাকত যা অনেকাংশেই সাম্প্রদায়িক সুস্থিতির রক্ষাকবচ হতো। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি পাকিস্থান প্রসঙ্গ না থাকলে এই দেশের হিন্দু – মুসলিম হৃদ্যতা ও ঐক্যের বুনিয়াদ অনেক দৃঢ় হতো। দুই দেশের অহেতুক শত্রুতার কারনে প্রতিরক্ষা ব্যয় যে বিশাল অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা হ্রাস পেত, সেই অর্থ দেশের উন্নতিকল্পে ব্যয় করা যেতে পারতো।

যদি দেশ ভাগ না হতো তাহলে ভারতীয় রেল আরও বিশালত্ব পেত – হাওড়া হয়ে রাজধানী এক্সপ্রেস ছুটে চলত লাহোর, করাচীর দিকে, সমঝোতা এক্সপ্রেসের আর প্রয়োজন হতো না। দেশের পূর্ব প্রান্তের ট্রেন চলত ধাক, চট্টগ্রাম, রাজশাহি সহ সারা পূর্ববঙ্গে। আগেকার সেই আসাম বেঙ্গল রেল ছুটত আপন গতিতে।আজ পূর্ব প্রান্তের রাজ্যগুলির সাথে যোগাযোগের যে বাঁধা রয়েছে, তাও বহুলাংশে হ্রাস পেত। পর্যটনের মানচিত্রে অখণ্ড ভারতের ছবি আরও উজ্জ্বল হতো – সিন্ধু সভ্যতার সেই মহেঞ্জোদারো-হরপ্পা, প্রাচীন শিক্ষাঙ্গন তক্ষলীলা, খাইবার গিরিপথ ও শিখ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থ স্থান নানকানা সাহিব, মরুতীর্থ হিংলাজ আরও কত কিছু যোগ হতো এই মানচিত্রে? ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিকেট দলও হতো অপারজেয়। না বন্ধুরা এটা শুধুমাত্র কল্পনা নয়, এটাই বাস্তব হতে পারতো যেটা আমরা হারিয়েছি আমাদের জাতীয় নেতৃবর্গের অপরিসীম লোভ আর অবিমৃশ্যকারিতায়
অথচও এই অখণ্ড গৌরবময় ভারতের স্বপ্ন যারা দেখেছিলেন তাঁদের আমরা আতঙ্কবাদী”, “টেররিস্ট”, “ডাকাত”, “সহিংসবাদীনানান সন্মানে ভূষিত করেছিলাম, আর একজন কে বলেছিলাম তোজোর কুকুর, তাকে তুলে দিয়েছিলাম এমন একটা প্লেনে যাতে সে আর কোনদিনও দেশে ফিরতে না পারে। অনুভব করেছিলাম কি সেই সব মানুষগুলোর যন্ত্রণা, যারা যে মাটিতে থাকতেন রাতারাতি সেটাই তাঁদের কাছে  বিদেশ হয়ে গেলো। এতদিন ধরে পাশাপাশি বসবাস করে থাকা সুখ দুঃখে একে অপরের কাস্ত সুখ ভাগ করে নেওয়া একে অপরের অচেনা হয়ে গেলাম! ভাই ভাইকে মারল? ঘরের মেয়ে ঘরেই ধর্ষিত হল, তবু আমরা মেনে নিলাম এই দ্বিখন্দতা? জাতির নামে, ধর্মের নামে ভাগ হয়ে গেলো দুটো দেশ। আমরা কি সত্যিই মেনে নিয়েছিলাম এই স্বাধীনতা? নাকি আমাদের মাথার উপর যারা ছিলেন সেই কংগ্রেসি নেতৃত্ব চাপিয়ে দিয়েছিল এই তথাকথিত স্বাধীনতা? প্রশ্নটা তো আমরা নিজেরাই নিজেদের করতে পারি? নাকি ভয় পাই?


(এই লেখা কোন দ্বেষ বা বিদ্বেষ থেকে নয় ইতিহাসের সত্যটিকে বর্তমানের আলোয় দেখার প্রচেষ্টা মাত্র, এতে কেউ যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে আন্তরিকভাবেই দুঃখিত)



 
 

 
 

No comments:

Post a Comment