Wednesday 21 June 2017

অথ সেকু, মাকু সম্বাদ



অথ সেকু, মাকু সম্বাদ

ভারতবর্ষের তথাকথিত সেকু, মাকু বুদ্ধিজীবীরা কি জানেন? পাকিস্থানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের কথা? না মনে হয়! ওনারা তো নিজ দেশে সংখ্যালঘুদের নিয়েই চিন্তিত, কে কতখানি দরদ দেখাতে পারছেন কিংবা কতখানি নিজেকে উদার, আধুনিক মনস্ক হিসাবে দেখাতে পারছেন সে বিষয়েই সদা ব্যাস্ত তাঁরা। সাধু উদ্যোগ বটেই, নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়ার রাস্তা দেখার সাংবিধানিক অধিকার যখন রয়েছেই। সব থেকে আশ্চর্য লাগে আমাদের বামপন্থী বুদ্ধিজীবী নেতা/নেত্রিদের দেখলে! যারা একদিন কিউবা, মায়নামার-এ মানবাধিকার লঙ্ঘন (সেই সঙ্গে নিজদেশে ঘণ্টা বাজান তো আছেই) নিয়ে পথ ঘাট, দৈনন্দিন জীবন স্তব্দ করে দিতেন তাঁরা পাকিস্থানে এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রা কাটছেন না কি ব্যাপার? পাছে প্রতিবেশী সংখ্যালঘু ভাইটি/ দাদাটি গোসা করে?

একটু দেখে নেওয়া যাক বর্তমানে পাকিস্থানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অবস্থা। জন্মলগ্নে পাকিস্তানে হিন্দু জনজাতির হার ছিল ২৩ শতাংশ, হিহি না সময়ের সাথে সাথে এই হার উদ্ধমুখি নয়, উল্টে কমেছে মারাত্মক হারে। কে জানে হয়তো পাকিস্থানে হিন্দু জন্মহার সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত। কত একটু শুনবেন? ২০১৭-তে এসে দেখা যাচ্ছে, তা দাঁড়িয়েছে মোটে ৬ শতাংশে। দুষ্টু লোকে কয় নাকি জোর করে ধর্মান্তকরণের জেরেই দলে দলে পাকিস্তান ছাড়ছেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা, কি মিথ্যাচার বলুন দেখি? 
সব পেয়েছির দেশ পাক পাকিস্থানে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ আদায় থুড়ি দেশভাগ শোনা কথা প্রতিশ্রুতি অবশ্য অন্যরকমই ছিল, বলা হয়েছিল - পাকিস্তানে সব ধর্মের মানুষই তাঁদের ধর্মাচরণের সমান অধিকার পাবেন, অক্ষুণ্ণ থাকবে হিন্দুদের মৌলিক অধিকার, তাঁরা সসম্মানেই সেদেশে থাকতে পারবেন, একদিন যে দেশ তাঁদের নিজেদেরই ছিল, কিন্তু কতিপয় রাজনৈতিক নেতার উচ্চাশার বলি হয়ে সেই দেশ ভাগের নামে সীমারেখা টেনে দেওয়া হল। আজকের বাস্তব বলছে সে প্রতিশ্রুতি তো পরে রাখা হয়ইনি, উলটে ফুঁ দিয়ে উড়িয়েই দেওয়া হয়েছে প্রতি পদে পদে! বেড়েছে জোর করে ধর্মান্তকরণের ঘটনা, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে গত কয়েক দশকে পাকিস্তান থেকে অনেক হিন্দু পরিবার চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। 

কি রকম সেই পরিস্থিতি (একটু গুগুল করে, বিভিন্ন পত্র পত্রিকার পাতা উল্টে বা রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন ঘোষণা/ আর্টিকেল একটু পরে নিন না), যারা তবু শুনতে চান তাঁদের উদ্দেশে বলি ধরুন ডেমো হিসাবে এই সামান্য কিছু উল্লেখ করলাম – বেঁছে বেঁছে সংখ্যালঘু হিন্দু মহিলাদের উপর চলেছে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা। হিন্দু পরিবার গুলিকে বলা হচ্ছে হয় পবিত্র ধর্ম গ্রহন করো নইলে মর, ব্যাবসায়ি, চিকিৎসক প্রভৃতি পেশার ব্যাক্তিদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি ইত্যাদি নানবিধ দাওয়াই প্রয়োগ চলছেই। তবে ডোজ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে পাকিস্তানে হিন্দুদের বসবাস ছিল ইহা ভবিষ্যতে ইতিহাস বইতেই ঠাই পাবে, আগে পাকিস্থানের অনেক জায়গাতেই হিন্দুদের দেখা মিলত, কিন্তু এখন লুপ্তপ্রায় প্রজাতির মতো সিন্ধ প্রদেশ ও গুটিকয় জায়গা ছাড়া সে দেশে হিন্দুদের দেখা মেলাই ভার।

একটি বহুল প্রচলিত নিউজ পেপারে দেখলাম - যে সিন্ধ প্রদেশে প্রতি বছর প্রায় ১০০০ মহিলাকে জোর করে পবিত্র ধর্ম গ্রহণ করানো হয়, প্রতি মাসে প্রায় ২০ জন মহিলা বিশেষত তরুণীরা এর শিকার হন। স্থানীয়  প্রশাসন কে জানালেও কোনও সুরাহা হয় না সাহায্য তো দূর অস্ত! আর একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ৫০০০ জন হিন্দু পাকিস্তান ছেড়ে ভারতেই আশ্রয় নিচ্ছেন।
অতএব কি দেখলাম বন্ধুরা? অসহিস্নুতার দেশ, উগ্র জাতীয়তার দেশ এই ভারতে শরণার্থী আসছে, ভালো ভালো রাজনৈতিক ব্যাপারীদের কাছে এর থেকে ভালো কি হতে পারে? যত শরণার্থী তত ভোট ব্যাংক। 

জয় হোক ভারতের, জয় হোক তাবড় তাবড় সেকু, মাকু বুদ্ধিজীবী, তথা রাজনৈতিক ব্যাপারীদের।

(এই অধম নিতান্তই ছাপোষা কেরানী গোত্রের, আমি না পারি তথাকথিত হিন্দুত্তের ধ্বজা ওড়াতে, না পারি তথাকথিত সেকুলার সাজতে, তাই আমাকে নিতান্তই নগন্য মনে করে ক্ষমা করিয়া দিবেন। আশাকরি রাষ্ট্রদ্রোহী বা জাতিশত্রু বলে দেগে দেবেন না।) 

No comments:

Post a Comment