Thursday 29 September 2016

তর্পণ কি?





তর্পণ কি?

ভারতকোষ অনুযায়ী “ জলের দ্বারা কৃত পিতৃপুরুষ এবং দেবতাদের তৃপ্তি বিধায়ক একটি অনুষ্ঠান”, একে অনেকে পিতৃযজ্ঞও বলে থাকেন। এই যজ্ঞ অনুষ্ঠানে ব্রহ্মা, বিষ্ণু,শিব প্রমুখ দেবতা, সনক-সনন্দ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সপ্তর্ষি, চতুর্দশ যম ও দ্বাদশ পূর্বপুরুষ (পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী) এবং ত্রিভুবনের উদ্দেশ্যে জল দেওয়া হয়। পিতৃপক্ষের সময় তিলতর্পণ অনুষ্ঠিত হয়,  অর্থাৎ তিল-মেশানো জলে তর্পণ হয়। তর্পণ শাস্ত্রমতে নিত্যকর্তব্য, তবে আজকের এই জেট যুগে রোজ বাপ-ঠাকুরদাদের স্মরণ করা সম্ভব হয় না বলে, লোকে পিতৃপক্ষে এবং বিশেষ করে - সর্বপিতৃ অমাবস্যায় (যে দিনটিকে আমরা ‘মহালয়া’ বলে থাকি) তিলতর্পণ করেই পিতৃকৃত্য সেরে থাকে।

এই সম্পর্কে একটি সুন্দর গল্প আছে – মহাভারতের যুদ্ধের সময়ে মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে খাবারের পরিবর্তে তাঁকে শুদুই খেতে দেওয়া হল সোনা, আর অনেকরকমের ধনরত্ন। কর্ণ অবাক হয়ে এর কারন জিজ্ঞেস করেন ইন্দ্রকে (মতান্তরে যমরাজকে)। তখন ইন্দ্র তাঁকে বললেন – দেখ বাপু তুমি তো সারাজীবন শুধু সোনাদানা মানে ধনরত্ন বিলিয়েছ, পিতৃ পুরুষকে জল দাওনি, তাই তোমার জন্যে এই ব্যবস্থা। তখন মহাবীর কর্ণ বললেন – “এতে আমার কি দোষ? আমি তো আমার প্রকৃত পিতৃ পুরুষের কথা জানতে পারলাম এই সেদিন। এর আগে তো অধিরথকেই নিজের পিতা বলে জানতাম। যুদ্ধ শুরুর আগেরদিন রাতে মাতা কুন্তী এসে বললেন আমি নাকি তাঁর ছেলে, শ্রীকৃষ্ণও তাঁহাই বললেন। পরবর্তী কালে যুদ্ধে নিজের ভাইয়ের হাতেই মরতে হল, পিতৃ তর্পণের আর সুযোগ বা সময় পেলাম কই? ইন্দ্র বুজতে পারলেন এতে কর্ণের কোন দোষ নেই। তাই তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্যে মর্ত্যলোকে ফিরে জাবার অনুমতি দিলেন আর বললেন এই এক পক্ষকাল তিনি যেন মর্ত্যলোকে অবস্থান করে পিতৃ পুরুষকে জল দেন, এতেই তাঁর পাপস্খালন হবে। যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে। সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়। হিন্দু মতে, এই সময় আমাদের স্বর্গত পিতৃপুরুষগণ স্বর্গলোক ছেড়ে নেমে আসেন মর্ত্যলোকে, এই সময় প্রথম পক্ষেই হিন্দুদের পিতৃতর্পণ করতে হয়। মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা।

No comments:

Post a Comment