Sunday 22 January 2017

আজ নেতাজীর ১২০তম জন্ম জয়ন্তী আর আমরা সুশীল সমাজ




আজ নেতাজীর ১২০তম জন্ম জয়ন্তী আর আমরা সুশীল সমাজ

‘দূরে, বহুদূরে, ওই নদী, ওই বন, উপবন, ওই পাহাড় পর্বত উপত্যকা ছাড়িয়ে আমাদের দেশ। ওই পুণ্যভূমিতেই আমরা জন্মগ্রহণ করেছি, আবার ফিরে যাব ওই দেশেই| ওই শোনো, ভারতবর্ষ আমাদের ডাকছে, ডাকছে আমাদের আত্মীয়রা|’ যে মহান বিপ্লবীর আহ্বানে দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের সব কিছু ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মাতৃভূমিকে ব্রিটিশের হাত থেকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে, যুদ্ধ শেষে হয়ত তাঁদের অনেকেই ফিরে এলেন এই ভারতভূমিতে, কিন্তু যাঁর আহ্বানে এই মুক্তির যাত্রা, সেই মহা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত ফিরলেন না শুধু তিনিই। অথচও তিনি কথা দিয়েছিলেন, তিনি ফিরে আসবেন| কিন্তু এলেন না, এক চিরবিপ্লবী কি কথা রাখলেন না, নাকি তাঁকে ফিরতেই দেওয়া হল না? কি রহস্য লুকিয়ে আছে এর পিছনে? কি ঘটেছিলো সেই সময়ে যে তাঁর ফেরা হল না? 

তাঁর না ফেরার পিছনে কত যুক্তি, কত রটনা? কেউ বলেন নেতাজী নাকি অজানা পথে যাত্রা শুরু করেন আর এক নতুন যুদ্ধের সূচনার উদ্দেশ্যে, কারো মতে ভারতবর্ষ কে শৃঙ্খলমুক্ত করার আশায় যে রাষ্ট্রের সাহায্য চাইতে গিয়েছিলেন তাঁরাই এদেশের কিছু রাজনৈতিক নেতার অঙ্গুলিহিলনে তাঁকে বন্দি করে নিক্ষেপ করেছিলেন কারাগারে। কেউ কেউ বলেন না তিনি সমাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি বৈরাগ্যের পথে যাত্রা করেন, চমৎকার বিশ্লেষণ যে মানুষটার একমাত্র স্বপ্ন ছিল ভারতের মুক্তি, তিনি সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই বেছে নিলেন বৈরাগ্য? আর যারা তৎকালীন নেতাদেরদের পদলেহন করতেন, তাঁদের শেখানো রাস্তায় হেঁটে তাঁরা নাকি নেতাজীর দর্শন পেয়েছিলেন কোন এক আশ্রমে শ্বেত শ্মশ্রুমণ্ডিত সন্ন্যাসীর মুখাবয়বে। কত সুন্দর গোয়েবোলসিও প্রচার? আর এই প্রচারের ফাঁকে খদ্দরের টুপী পরিহিত নেতা/নেত্রীর দল দিব্বি কিন্তু তাঁদের আখের গুছিয়ে নিয়েছিলেন। 

খুব ভুল বললাম কি? ইতিহাস সাক্ষী আছে যুদ্ধ শেষে আজাদ হিন্দ বাহিনীর হাজার হাজার সৈনিক বন্দী হয়ে যখন স্বদেশের মাটিতে পা রাখলেন, আপামর দেশবাসী যখন তাঁদের কথা জানল, তাঁদের মুখে শুনল নেতাজি সুভাষের আত্ম ত্যাগের কাহিনী, মুহূর্তে কোটি কোটি মানুষের আক্রোশ গিয়ে পড়ল ব্রিটিশ রাজশক্তির ওপর, লক্ষ লক্ষ মানুষ বিনা আহ্বানে পথে নেমে পড়ল (যার উল্লেখ পরবর্তীকালে নৌ বিদ্রোহ ও রয়্যাল বিমানবাহিনীর বিদ্রোহে দেখতে পাই)। বেগতিক দেখে তৎকালীন নেতারা যারা খদ্দর ছাড়া আর কিছু কখনও পরেননি, রাতারাতি গায়ে কালো কোট চাপিয়ে লালকেল্লায় হাজির হয়ে গেলেন এই ভয়ে যে সময় মত ভোল না পালটালে কী জানি এই স্ততস্ফূর্ত গনবিক্ষোভ কখন দিক পরিবর্তন করে তাঁদের বাড়া ভাতে ছাই না দিয়ে দেয়, তাহলে তো এতদিনকার সাধের ‘স্বাধীনতা’ ‘স্বাধীনতা’ খেলাটাই চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে| গদিতে বসার, ক্ষমতার যে তীব্র লালসা তাঁদের মধ্যে ছিল সেটি তো পূর্ণ হতোনা|

আর নেতাজীকে নিয়ে ধোঁয়াশার খেলা অনেকটা সহজ করে দিয়েছিল তাঁদের বন্ধু ব্রিটিশ ও মার্কিনরা, চতুর ব্রিটিশ সুকৌশলে ১৯৪৫ সালের ২২ অগাস্টের একটি রেডিও ঘোষণা করে যাতে জাপান রেডিওর ভাষ্যকার জানালেন : ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জাপানের নবগঠিত সরকার এই সংবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছে যে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা, আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক শ্রী চন্দ্র বোস গত আঠারোই অগাস্ট দুপুর দুটো পঁয়ত্রিশ মিনিটে তাইহোকুতে এক বিমান দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে জাপানের একটি হাসপাতালে আনীত হন, ডাক্তারদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি| ওইদিনই মধ্যরাত্রে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন|’ 

চতুর ব্রিটিশের নেতাজীকে নিয়ে ধোঁয়াশার খেলা অনেকটা সহজ করে দিয়েছিল ১৯৪৫ সালের ২২ অগাস্টের একটি রেডিও ঘোষণা| জাপান রেডিওর ভাষ্যকার জানালেন : ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জাপানের নবগঠিত সরকার এই সংবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছে যে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা, আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক শ্রী চন্দর বোস গত আঠারোই অগাস্ট দুপুর দুটো পঁয়ত্রিশ মিনিটে তাইহোকুতে এক বিমান দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে জাপানের একটি হাসপাতালে আনীত হন| ডাক্তারদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি| ওইদিনই মধ্যরাত্রে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন|’ আর পরের দিনই সকালে জাপান সরকার নিয়ন্ত্রিত দোমেই নিউজ এজেন্সি এই একই খবর বিশ্বের প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে পৌঁছে দিল|

দুরাত্মার কি ছলের অভাব হয়? না  তাই লালকেল্লায় তিন আজাদি সৈনিকের বিচার শুরু হতেই, এক সময় যারা নেতাজীকে, জাপানিদের সঙ্গে নিয়ে দেশে ঢোকার চেষ্টা করলেই তাঁকে তরবারি দিয়ে ঠেকাবেন বলে তলোয়ার খেলা প্রাকটিস করছিলেন, তারাই এবার এগিয়ে এসে সওয়াল জবাব শুরু করেছিলেন আজাদিদের পক্ষে, কি অদ্ভুত ভোল বদল তাই না? দাঁড়ান দাঁড়ানা আরও আছে শুনবেন? একের পর এক জনরোষে ব্রিটিশ সিংহ যখন বিপর্যস্ত তখন ৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী এটলি ঘোষণা করলেন, ‘উনিশশো আটচল্লিশ সালের তিরিশে জুন ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে|’ ব্রিটিশ সিংহের প্রতিনিধি সুচতুর মাউন্টব্যাটেন চোখে আঙুল দিয়ে তদানীন্তন আন্দোলন ক্লান্ত(?) নেতাদের দেখিয়ে দিলেন জনমানসে তাঁদের ক্ষুদ্রত্ব| সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন ইম্ফল থেকে প্রলম্বিত দীর্ঘ ছায়াটির গুরুত্ব| একদিন বৈধভাবে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও সভাপতির পদ থেকে যাঁকে বিতারিত করা হয়েছিল, যাঁর স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল জনমানস থেকে, তিনিই আজ অলক্ষ্যে থেকে এক ফুৎকারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চলেছেন সবাইকে| সুতরাং পালটে ফেল ক্ষমতার হস্তান্তরের দিন; ১৯৪৮ সালের ৩০ জুনকে এগিয়ে আনা হল ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্টে| কিসের ভয়? পাছে হঠাৎ একদিন না জীবিত নেতাজী এসে হাজির হন আর জনগন সাদরে বরণ করে নেন তাঁদের প্রানপ্রিয় নেতাজীকে, জনগন অস্বীকার করে ক্ষমতার লোভে করা ভারত ভাগ কে?   

ক্ষমতার কি অসীম মহিমা, যারা রাতারাতি ভোল পাল্টে আজাদি সৈনিকদের হয়ে সওয়াল জবাব করেছিলেন তাঁরাই ক্ষমতা পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, আজাদ হিন্দ বাহিনীর কোনও সৈনিককেই আর সামরিক বাহিনীতে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না| শুধু তাই নয়, লিখিতভাবে প্রতিরক্ষা দফতর থেকে সামরিক বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটে ফরমান গেল, কোনও সামরিক ব্যারাকেই যেন নেতাজির ছবি টাঙাবার অনুমতি দেওয়া না হয়| কীসের ভয় ছিল তাঁদের? তাঁরা তো জনগনের কাছের লোক তাঁদের নেতা, তাহলে? না এই প্রশ্নের জবাব তাঁরা দেননি আর তাঁদের উত্তরসূরি বর্তমান নেতা/ নেত্রীবৃন্দও সযত্নে এড়িয়ে যান এই সব অপ্রীতিকর প্রসঙ্গ|  

১৮২১ সালে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল তা নিয়ে আজও গবেষণা চলে| তাঁকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল কিনা সেটা জানার জন্য মৃত্যুর ২০০ বছর পরও তাঁর মাথার চুলের, দাঁতের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হয়| আর আমরা? না প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার দোহাই দিয়ে মুখ লুকিয়ে ঘুরে বেড়াই? 
এখনও পর্যন্ত কি জানতে পেরেছি আমরা? বিভিন্ন তথ্য সুত্রে এটুকুই জানা গেছে - ১৯৪৯ সালের ৯ ডিসেম্বর, জুরিখ থেকে ডক্টর এল অ্যাবেগ শরৎ বসুকে চিঠি দিয়েছিলেন| এমনকি নেশন পত্রিকায় শরৎ বসুর ওই সাক্ষাত্‍কারের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি| একইসঙ্গে ডক্টর অ্যাবেগ বলেছেন, জাপানি সূত্র থেকে ১৯৪৬-এ নেতাজির বেঁচে থাকার খবর পান তিনি|

বিভিন্ন নথিগুলো থেকে জানা যায় যে ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত নেতাজির পরিবারের ওপর নিয়মিত নজরদারি চলেছিল, নেতাজির দুই ভাইপো অমিয়নাথ বসু এবং শিশিরকুমার বসুর ওপর নজরদারি চালাত রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা|  উডবার্ন পার্ক এবং এলগিন রোডে বসু পরিবারের দুটি বাড়িতে নজরদারি চালিয়ে পাওয়া তথ্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠানো হতো| কীসের কারনে এই নজরদারি? তা কি কোনদিনও জানতে চেয়েছি আমরা? 

কংগ্রেস আমলে নেতাজি সংক্রান্ত নথি নষ্ট করে ফেলার মতো গুরুতর অভিযোগও উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে| তবে কি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রাণপুরুষ নেতাজী কংগ্রেসী নেতাদেরই ষড়যন্ত্রের বলি? আশঙ্কা অমুলক নয় - কংগ্রেস তৈরী হয়েছে ও বেড়ে উঠেছে ব্রিটিশের আনুকূল্যে, কংগ্রেস নেতারা বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশের পক্ষে লড়াই করার আবেদনও রেখেছিলেন। অবশ্য ব্রিটিশ প্রভুরা ভারত ত্যাগের সময়ে এই কংগ্রেসের হাতেই দিয়ে যায় ভারতের কর্তৃত্ব। কংগ্রেস নেতৃত্ব এর প্রতিদান দেন লর্ড লুইস মাউন্টব্যাটেন কে ভারতের গভর্নর জেনারেল করে, এই মাউন্টব্যাটেন ২১শে জুন ১৯৪৮ পর্যন্ত গভর্নর জেনারেল হিসেবে ক্ষমতাসীন ছিলেন কাদের স্বার্থ রক্ষায়? একদিকে আপোষ কামী, ক্ষমতা লোভী ভীরু কংগ্রেসি নেতৃত্ব আর অন্যদিকে সদা বিপ্লবী নেতাজী, যিনি ছিলেন ব্রিটিশ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। তাই বিদেশের মাটিতে নেতাজীকে গুম খুন করার পেছনে ব্রিটিশ, মার্কিন ও কংগ্রেসীদের যৌথ আঁতাতের আশঙ্কা উঁড়িয়ে দেয়া যায় কি? 

শোনা যায় ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী মারা যাওয়ার ঠিক চল্লিশ মিনিট আগে নাকি রাশিয়া থেকে ভারতে তাঁর বাড়িতে ফোন করেন আর বলেন ‘এমন একজনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, যা ভারতের কাছে বড় খবর। কে সেই ব্যক্তি, তা পরিষ্কার করে বলেননি। তবে অনেকের অনুমান, সেই ব্যক্তি হতে পারেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই নেতাজিকে খুঁজে বের করার জন্য কমিশন গঠনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। রাশিয়া যাওয়ার আগে নেতাজির ভাইপো অমিয়নাথ বসুকে সেই কথা জানিয়েও ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন যে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর কাছে নেতাজীর বিষয়ে হয়ত সুনির্দিষ্ট খবর ছিল। তিনি হয়ত সেটাই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন। এছাড়া কে এমন মানুষ হতে পারেন, যাঁর সঙ্গে দেখা হলে গোটা দেশে হইচই পড়ে যাবে? কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য রহস্যজনক মৃত্যু হয় ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর, জানা হয়ে ওঠেনি তিনি কি বলতে চেয়েছিলেন? এমন কি তাঁর মৃতদেহের ময়না তদন্তও হয়নি। তাহলে কি সন্দেহের অবকাশ থাকে না?

আমরা বিরাট কিছু চাই না, শুধু জানতে চাই, সত্যিই কি ভারতমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান নেতাজী কি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন? না ক্ষমতালোভী প্রতিক্রিয়াশীল নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন তিনি? কোনটা সত্যি বন্ধুগন? তাহলে তৎকালীন নথিপত্র কেউ দেখতে চাইলেই দেশের সরকার, নেতৃবৃন্দ কেন বারবার একই ভাঙা রেকর্ড চালিয়ে বলে: ‘এই নথি প্রকাশিত হলে একাধিক বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে’, বাঃ কি চমৎকার বন্ধুকৃত্য? ভারতমায়ের  সবচেয়ে দামাল যে ছেলেটি তথাকথিত বন্ধুদের ষড়যন্ত্রে ঘরে ফিরে এল না, ক্ষমতালোভী নেকড়েদের শিকার হল, এখনও তারা বন্ধু! ধিক রাজনীতির ব্যাবসায়িদের, তোমাদের জয় হো। সাথে জয় হোক সুশীল বুদ্ধিজীবী সমাজের যারা কথায় কথায় অন্যায়ের প্রতিবাদে গর্জে উঠেন, মোমবাতি মিছিল করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দেন তাঁরা আজ কেন নির্বাক? এই নিয়ে বললে/ লিখলে কি রাজরোষে পরতে হবে না মিডিয়ার লাইম লাইটে আসা যাবে না?      

দেশ আজ বড় দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, চারিদিকে শুদু নেই আর নেই, এই নৈরাজ্যের মাঝে, এত সাম্প্রদায়িক হানাহানির মাঝে, এত বিভেদের মাঝে শুদু একজনের কথাই বারে বারে মনে পড়ে তিনি আমাদের প্রানপ্রিয় নেতাজী (আজকাল তো আবার নেতাজি এই শব্দ তাও উচ্চারণ করতে লজ্জা হয়, স্বাধীন ভারতে নেতাজীর উপাধি পেয়ে বসে আছেন কোন এক যদু কুলোদ্ভব ভ্রষ্ট রাজনৈতিক নেতা)। কোথায় তার গড়ে তোলা আজাদ হিন্দ ফৌজে তো কোন বিভেদ ছিল না হিন্দু- মুসলমানে বা হিন্দু – খ্রিস্টানে? 

সবাই তার ডাকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে তাহলে আজ এই বিভেদ কেন? আসলে নেতাজী পরবর্তী নেতৃত্ব সেই বিশ্বাসযোগ্যতাই প্রমান করতে পারেনি আপামর ভারতবাসীর কাছে, যার বিষময় ফল এই দেশভাগ আর দেশভাগ পরবর্তী দাঙ্গা। তাই তো হৃদয়মথিত করে একটাই আকুতি নেতাজীর আদর্শ, ভাবনা হৃদয়ে নিয়ে দেশ সেবার কাজে এগিয়ে আসুক আগামী প্রজন্ম, গড়ে উঠুক নেতাজীর আদর্শ ভারত। আর প্রকাশ পাক নেতাজীর সম্বন্ধে সব তথ্য।
   
শেষে গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা করি বিখ্যাত কথাশিল্পী শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যাইয়ের সেই কালজয়ী কথা দিয়ে - “তুমি দেশের জন্য সমস্ত দিয়াছ, তাই ত দেশের খেয়াতরী তোমাকে বহিতে পারে না, সাঁতার দিয়া তোমাকে পদ্মা পার হইতে হয়; তাই ত দেশের রাজপথ তোমার কাছে রুদ্ধ, দুর্গম পাহাড়–পর্বত তোমাকে ডিঙাইয়া চলিতে হয়;—কোন্ বিস্মৃত অতীতে তোমারই জন্য তো প্রথম শৃঙ্খল রচিত হইয়াছিল, কারাগার ত শুধু তোমাকে মনে করিয়াই প্রথম নির্মিত হইয়াছিল,—সেই ত তোমার গৌরব! তোমাকে অবহেলা করিবে সাধ্য কার! এই যে অগণিত প্রহরী, এই যে বিপুল সৈন্যভার, সে ত কেবল তোমারই জন্য! দুঃখের দুঃসহ গুরুভার বহিতে তুমি পারো বলিয়াই ত ভগবান এত বড় বোঝা তোমারই স্কন্ধে অর্পণ করিয়াছেন! মুক্তিপথের অগ্রদূত! পরাধীন দেশের হে রাজবিদ্রোহী! তোমাকে শতকোটী নমস্কার!”

(এই লেখা কোন দ্বেষ বা বিদ্বেষ থেকে নয় ইতিহাসের সত্যটিকে বর্তমানের আলোয় দেখার প্রচেষ্টা মাত্র, এতে কেউ যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে আন্তরিকভাবেই দুঃখিত)

1 comment: