Thursday 6 July 2017

ঢিল পড়েছে ঠিক জায়গামতো, তাই কি ব্যাথায় কাতরে উঠেছে ড্রাগন?


ঢিল পড়েছে ঠিক জায়গামতো, তাই কি ব্যাথায় কাতরে উঠেছে ড্রাগন?

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সিকিম সীমান্তে গোপন ঘাঁটি তৈরি করছিল বেজিং। ভুটানের সাহায্যে তাকে আঘাত করে গোটা বিষয়টিকে ভারত প্রকাশ্যে নিয়ে আসার পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে লাল চিন, তাই থেকে থেকে দেওয়া হচ্ছে চাইনিজ হুমকি।

একটু সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক এই ডোকা লা বিবাদের গল্প

ভুটান, চিন এবং ভারত (সিকিম)— এই তিনটি রাষ্ট্রের সীমান্ত যেখানে মিশেছে, সেখানেই বিতর্কিত ডোকা লা মালভূমি। যে ৭৬৪ বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ডের দখল নিয়ে ভুটানের সঙ্গে চিনের দীর্ঘকালীন চাপানউতোর চলছে, ডোকা লা অবস্থিত সেখানেই। কি ঘটেছিল সেইদিন - মাস দু’য়েক আগে চিনা ফৌজ এসে ডোকা লা-র লালটেন এলাকার বাঙ্কারগুলি ভেঙে দিতে বলে, সংগত কারনেই ভারত তাতে পাত্তা দেয়নি। শেষে চিনা সেনা সীমান্ত লঙ্ঘন করে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে বুলডোজার দিয়ে দু’টি বাঙ্কার ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ। ওই অঞ্চলে সীমান্ত পাহারা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের (আইটিবিপি) ক্যাম্প সীমান্ত থেকে বেশ কিছুটা ভিতরে। ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ (এলএসি) বরাবর টহল দেওয়ার সময় ভারতীয় জওয়ানরা সীমান্ত লাগোয়া বাঙ্কারগুলিতে বিশ্রাম নিতেন। তাই বাঙ্কার ভাঙার খবর পেয়েই ক্যাম্প থেকে বাহিনী পৌঁছে যায় এলএসি-তে, ফলে বাড়তে থাকে উত্তেজনা।

অথচও সাম্যবাদের মক্কা বলে পরিচিত চীন কি করছিলো ডোকা লা তে? ডোকা লা চিনের এলাকা না হওয়া সত্ত্বেও, চিন ওই অঞ্চলে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল। কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি অঞ্চলে চিন সামরিক ঘাঁটি তৈরির করার চেষ্টা করছিল, যাতে ভারতের স্বার্থ অরক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। রাস্তা তৈরির চেষ্টা ভারতীয় বাহিনী একাই আটকে দেয়। আর ভুটানকে সঙ্গে নিয়ে ভেস্তে দেওয়া হয় সামরিক ঘাঁটি তৈরির চেষ্টাও। সীমান্ত এলাকায় চিনের স্বেচ্ছাচারিতার চেষ্টা ভারত এই ভাবে আটকে দেবে, বেজিং তা একেবারেই আশা করেনি। তাই বাধা পেয়ে এখন সীমান্তে আস্ফালন শুরু করেছে চিনা বাহিনী।

ডোকা লা-য় চিন সামরিক পরিকাঠামো গড়লে ভারতের অস্বস্তির কারণ কী?

এই ডোকা লা মালভূমি উপত্যকা থেকে ‘শিলিগুড়ি করিডর’-এর দূরত্ব বেশি নয়। এখান থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে সহজেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। চিনের প্রবণতা এবং অতীতের রেকর্ড থেকে স্পষ্ট যে সড়ক গড়ার নাম করে সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করতে চায় বেজিং। আর তা ভারতকে নিশানায় রেখেই। এছাড়া দক্ষিন চীন সাগরে চীনা আগ্রাসনের কথা আমরা সবাই জানি, এমতাবস্তায় চীন নামক শত্রু কে বিশ্বাস করা যায় কি?

ভারত বন্ধু ভুটানের ঘোষিত অবস্থান কি এই বিষয়ে?

এই বিবাদের মধ্যে ভুটান কিন্তু প্রত্যাশিত ভাবেই ভারতের পাশেই দাঁড়িয়েছে। দিল্লিতে ভুটানের রাষ্ট্রদূত ভেটসপ নামগিয়েল বলেছেন, ‘‘ডোকলাম অঞ্চলটি নিয়ে বিবাদ রয়েছে। তার চূড়ান্ত মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হবে বলে ভুটান ও চিনের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু চিন সেই চুক্তির খেলাপ করে ওই এলাকায় রাস্তা নির্মাণ করছে।’’ ডোকলামে চিনের কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের একটি ডিমার্শেও পাঠিয়েছে ভুটান।

অতঃকিম, চীন নামক মহাশক্তিধর দেশের কি বক্তব্য?

তাদের সরকারি মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ ক্রমাগত হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে আমাদের। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লু কাং মন্তব্য করেছেন, ‘‘চিনের ভূখণ্ডে অন্য দেশের নাক গলানো বরদাস্ত করা হবে না।’’ বা কখনও ১৯৬২ সালের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অথচও ১৯৬৭ সালের তাঁদের সন্মানজনক পশ্চাৎঅপসারনের কথা বলা হচ্ছে না। এছাড়াও উক্ত গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে - ‘‘ভারতের সঙ্গে চলতে থাকা সীমান্ত সঙ্ঘাতে চিন অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে, তার জন্য যুদ্ধ করতেও চিন প্রস্তুত।’’ মাঝে মাঝে ভারত মহাসাগরে ডেস্ট্রয়ার, ডুবোজাহাজ পাঠিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টাও চলছে। শেষে আবার সিকিম অন্তভুক্তি, উত্তর পূর্বরাজ্যে ঘটে চলা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দেওয়ার ভয়ও দেখানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন এটাই – “স্বাধীনতার পর থেকেই তো উত্তরপূর্বের জঙ্গি সংগঠন গুলিকে চীন সামরিক, আর্থিক ইত্যাদি সাহায্য প্রদান করে আসছে, তাহলে নতুন করে আর কি শুরু করবে তাঁরা?”

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এই জায়গায় অধমের কিছু বক্তব্য আছে, সব পেয়েছির এই মহান দেশে মীরজাফরের, উমিচাঁদ এর মতো লোকের অভাব তো নেই, বিভিন্ন্য দেশজ পত্র পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি যুদ্ধ বা যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থায় ভারতের কি করুন অবস্থা হবে সেই বিষয়ে প্রভুত জ্ঞ্যান দেওয়া হচ্ছে। অথচও মাতৃভূমির অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্যে যুদ্ধ যদি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পরে তাতে সক্রিয় যোগদান বা সাপোর্টের কথা বলতে শুনছি না। ইতিহাস সাক্ষী ভারত আগ বাড়িয়ে কোনও দেশ আক্রমণ কিন্তু করেনি, অথচও ভারতকেই বারবার পড়শি দেশগুলির আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমতাবস্থায় তামাম মিডিয়াকুল, তথা রাজনৈতিক ব্যাপারী দের কাছে অনুরোধ যে দয়া করে জাতীয় সমস্যার সময়ে পাশে দাঁড়ান, নইলে আমও যাবে আর ছালাও থাকবে না, তখন বুড়ো আঙুল চোষা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। 

এবিষয়ে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং অগ্রগণ্য, তিনি সম্প্রতি বলেছেন - ‘‘চিন এবং বাংলার মাঝে স্যান্ডউইচ হওয়ার জন্য সিকিমের মানুষ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হননি।’ বা কি চমৎকার রাজনৈতিক প্রজ্ঞ্যা? চিন এবং বাংলার মাঝে সিকিম স্যান্ডউইচ হয়ে যাচ্ছে বলে যে মন্তব্য চামলিং করেছেন, তা কি চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞ্যানহীনতার প্রকাশ নয়? সিকিম যেমন ভারতের অঙ্গরাজ্য, পশ্চিমবঙ্গও তেমনই, দুই রাজ্যের মধ্যে যদি কোনও সমস্যা থেকেও থাকে, তা হলেও সেই সমস্যাকে কি ভারত-চিন দ্বন্দ্বের সঙ্গে এক পংক্তিতে ফেলে দেওয়া যায়?

কি বলেন প্রাজ্ঞ্য সেকু/মাকু বিদ্দজনের দল? তাঁরা কি এখনও নীরবতা পালন করবেন না জাতীয় স্বার্থের খাতিরে প্রতিবাদ জানাবেন সেটা তাঁরাই ঠিক করুন।

No comments:

Post a Comment