Saturday 8 July 2017

একটি বৃষ্টির দিনের ডায়েরি


একটি বৃষ্টির দিনের ডায়েরি

‘স্বপ্ন’ তোর কথা আজ অনেক বেশি করে মনে পড়ছে, হ্যাঁ অন্যান্য দিনের থেকে অনেক অনেক বেশি। ভোর থেকেই আঝরে ঝরছে বর্ষা, আধো ঘুমের মধ্যেই যেন টের পাচ্ছিলাম ঝম ঝম বৃষ্টির শব্দ। উঠতে ইচ্ছে করছিলো না, কিন্তু মা-র জোরাজুরিতে বিছানা ছাড়তে হল, আড়মোড়া ভেঙ্গে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি সাদা হয়ে বৃষ্টি পরে যাচ্ছে। কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে এসে জানালার পাশে বসলাম, ভেবেছিলাম আজ তো বেরোবার কোনও উপায় নেই, তাই গান শুনে, তোর কথা লিখে কাটিয়ে দেবো আজকের দিনটা। কিন্তু বিধি বাম বসের ফোনের গুঁতোয় সব ছেড়ে এই বৃষ্টির মাঝে বেরোতেই হল, আর পৌঁছেও গেলাম কর্মস্থলে।  চারিদিকে তাকিয়ে দেখি - ও হরি কেউ তো আসেনি, শুধু পিওন আর ক্লিনিং স্টাফ ছাড়া। 

কি আর করি ল্যাপটপ খুলে বসে গেলাম আমার ব্লগ নিয়ে, কিন্তু কি অদ্ভুত ধুসস গত এক ঘণ্টা ধরে এক লাইনও লিখতে পারলাম না। বসে আছি অনেক কিছুই লিখব ভাবছি, কিন্তু লেখা বেরিয়ে আসছে কই? তার থেকে বরং তোর কথা ভাবতেই বেশি ভালো লাগছে। সামনের কাঁচ দিয়ে ওপারে তাকিয়ে রইলাম, রাস্তা শুনশান, সত্যিই এরকম বৃষ্টি তে কে আর বেরোবে? কিন্তু দেখলাম দূরে রাস্তা দিয়ে বাস, গাড়ি, মোটরবাইক সবই যাচ্ছে, কয়েকজন যেন ছাতা নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে যাচ্ছে, হয়তো আমারই মতন কেউ পাগল হবে। নিজের মনেই হেসে ফেললাম। আকাশ এমন কালো মেঘে ছেয়ে রয়েছে যেন মনে হচ্ছে এখন সন্ধ্যা। সামনের কবরস্থানের আমগাছ, লিচুগাছ, বাকি সব গাছগুলো কে দেখে মনে হচ্ছে একদল ছেলে মেয়ে হুল্লোড় করে ভিজেই চলেছে। রোজই তো দেখি কিন্তু আজ যেন সব নতুন লাগছে, রোজকার চেনা জায়গা যেন এক নতুন আবেশে ধরা দিলো আজ। না কবিগুরু ঠিকই বলেছেন - ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের ওপর একটি শিশির বিন্দু।’ আজ নিজের এই নতুন আবিষ্কারে খুব আনন্দ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠি - ‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচেরে।’

আজ মনের ক্যানভাসে বারবার ভেসে উঠছে তোর ছবি, সেই দিনটার কথা খুব মনে পড়ছে, সেদিনও বৃষ্টি পড়ছিল, তবে এতটা জোরে নয়। আমি যথারীতি কলেজ কেটে স্ত্রান্দের ঘাটে গিয়ে বসেছিলাম রেলিঙে উঠে, মাথায় ছাতা আর সঙ্গী বলতে সিগারেট আর তোর ভাবনা। বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবছি আর ভ্যাবলার মতো চেয়ে আছি সামনের রাস্তার পানে, দেখছি কতো মানুষ এই বৃষ্টি মাথায় করেই ছাতা মাথায় হাঁটাহাঁটি করছে, কেউ কেউ আবার পলিথিন মোড়ানো রিকশায় বাবু হয়ে বসে এগিয়ে চলেছে গন্তব্যের দিকে। 

জানিস ‘স্বপ্ন’ রিকশাওয়ালাগুলো কাকভেজা হয়ে রিকশা চালাচ্ছে, অবশ্য গরীব মানুষের আর বৃষ্টিতে ভিজলেই কি? খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে হলে তো বৃষ্টিতে ভিজেই রিকশা চালাতে হবে। ঠান্ডা-জ্বর ঝারি ওসব তো গরীবদের হয়না, ওসব রোগ বড়লোকদের, না রে? আমি, তুই বড়োলোক না হলেও ওদের মতো দিন আনি দিন খাঁই গোত্রের নয়, তাই আমি বৃষ্টির দিনে বসে বসে তোকে নিয়ে চিঠি লিখি, নষ্টালজিয়ার আক্রান্ত হই, বৃষ্টি বিলাসের নাম করে কফির কাপে চুমুক দিই, পায়ের উপর পা তুলে বাদলা দিনে প্রেমের গল্পের বই পড়ি, গান শুনি। যাক ছাড় সেদিনকার কথায় ফিরে আসি, সেদিন দেখেছিলাম রিকশায় বসে থাকা কয়েক জোড়া কপোত-কপোতীকে যারা বৃষ্টি সিক্ত না হয়েও বৃষ্টির রোমান্টিকতা কে অনুভব করছে দেহে আর মনে। আর আমি শালা বসে তোর চিন্তায় সিগারেট ফুঁকে চলেছি, সত্যিই তুই বড় বাজে ঠিক সময়ে কোনদিনও আসতে পারলি না! অলওয়েজ ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পরে স্টেশনে আসা হ্যাবিট তোর। বৃষ্টিতে মন ভাল হয়ে যাবে, হয়তো যাচ্ছিলও এমন সময় এক-ই ছাতার নীচে গল্প করতে করতে হেঁটে যাওয়া এক জোড়া ছেলে-মেয়েকে দেখে আবার তোর কথা মনে পড়ে গেল। ইসস, আজ যদি তুই আমার পাশে থাকতি? আমরা একসাথে হাঁটতাম, কতো গল্প করতাম। আমি জানি সেদিনটা সব থেকে ভালো আর সুখের দিনই হতো, কিন্তু হল না ভাগ্যের পরিহাসে তুই অন্যের হাত ধরে চলে গেলি সংসার করতে। আর আমি অন্যপথে! 

আজ যখন আবার সেই ভাগ্যের খেলায় দেখা হল আমাদের, আমি জানলাম সুখী বিবাহিত জীবনের মুখোশের আড়ালে কি নিদারুন যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে, তুইও জানলি আমার সুখী জীবনের কথা, সেদিনকার কথা আবারও মনে পরে গেলো রে। জানি আজও তুই আমারই আছিস মনে মনে, বারবার বলেও ফেলিস, তাই আজ বৃষ্টির এই সুন্দর দিনে তোকেই আমি বারবার কাছে চাই। এই যে ‘স্বপ্ন’ তুই কি দেখতে পাচ্ছিস আমি আমার হাত এখনো তোর জন্য বাড়িয়ে রেখেছি? তুই আবার সেই আগের মত আমার পাশে এসে দাঁড়া, আমার হাতটা ধর। তোর স্পর্শে আমিও পরিপূর্ণ হই রে। 

এটা একটা অসম্পূর্ণ চিঠি, যা বহুদিন আগেই জলে ভিজে হয়তো ছিঁড়েই গেছে, কোন এক পাগল ছেলে তার জীবনের আবেগঘন মুহূর্তে লিখেছিল তার প্রেমিকাকে, এখন অফিসের চার দেওয়ালের মাঝে, বাস্তবের তীব্র কশাঘাতে সে এখন শুদুই দায়িত্ব পালনে ব্যাস্ত। কেউ কিন্তু জানবেনা, মনে রাখবেনা এই ছেলেটা কোন এক অতীতে তার ‘স্বপ্ন’ কে ছুঁতে চেয়েছিল, প্রেমের জোয়ারে ভাসতে চেয়েছিল, ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল।
  
(এটা ‘আঁখি’ আর ‘স্বপ্ন’ কে নিয়ে লেখা, যদি বাস্তবের চেনা কারোর সাথে মিল খুঁজে পান, সেটা নিতান্তই কাকতালিয় বলেই ধরে নেবেন, অনুগ্রহ করে অধমকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।) 

No comments:

Post a Comment