Thursday 21 January 2016

গুপ্তিপাড়া – টেরাকোটা মন্দির স্তাপত্তের অপরূপ নিদর্শন শুদু নয় বঙ্গ জীবনের ইতিহাসের আয়নাও



গুপ্তিপাড়া – টেরাকোটা মন্দির স্তাপত্তের অপরূপ নিদর্শন শুদু নয় বঙ্গ জীবনের ইতিহাসের আয়নাও

সকাল ০৮:৩০
টিকিট কেটে ৩নং প্ল্যাটফর্মে গিয়ে ঘড়ি দেখে দেখি ট্রেন আসতে এখন একটু দেরি আছে, সুতরাং একটু জিরিয়ে নেওয়া যেতেই পারে। অতএব বসে পড়লাম, একটু বাদে ট্রেনের ঘোষণা হল, ট্রেন ঢুকল তারও কিছু পরে। উঠে জায়গাও পেয়ে গেলাম। আমার গন্তব্য গুপ্তিপাড়া, একটুকরো ইতিহাসের টানে আর কি। ট্রেন তার আপন গতি তে ছুটে চলেছে, চোখ বুজলে একটি সিনেমার কথা খুব মনে পড়ছে আজ। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী, মহানায়ক উত্তম কুমার অভিনীত একটি জনপ্রিয় সিনেমা। তাতে কবিয়াল গানের উল্লেখ আছে –
আমি সে ভোলানাথ নইরে আমি সে ভোলানাথ নই,
আমি ময়রা ভোলা ভিঁয়াই খোলা
বাগবাজারে রই।

কিংবা

ময়মনসিংহের মুগ ভালো, খুলনার ভালো কই।
ঢাকার ভালো পাতাক্ষীর, বাঁকুড়ার ভালো দই।।
কৃষ্ণনগরের ময়রা ভালো, মালদহের ভালো আম।
উলোর ভালো বাঁদর পুরুষ, মুর্শিদাবাদের জাম।।
রংপুরের শ্বশুর ভালো, রাজশাহীর জামাই।
নোয়াখালির নৌকা ভালো, চট্টগ্রামের ধাই।।
দিনাজপুরের কায়েত ভালো, হাবড়ার ভালো শুঁড়ি।
পাবনা জেলার বৈষ্ণব ভালো, ফরিদপুরের মুড়ি।।
বর্ধমানের চাষী ভালো, চব্বিশ পরগণার গোপ।
গুপ্তিপাড়ার মেয়ে ভালো, শীঘ্র-বংশলোপ।।
হুগলির ভালো কোটাল লেঠেল, বীরভূমের ভালো বোল।
ঢাকের বাদ্যি থামলেই ভালো, হরি হরি বোল।

ঠিক ধরেছেন পাঠক, আমি ভোলা ময়রার কথা বলছি। আজকের আধুনিক জীবনে কবিগানের কথা হয়ত বর্তমান যুবসমাজ ভুলেই গেছে, কিন্তু স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভোলা ময়রার বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "বাংলাকে জাগাতে যেমন রামগোপাল ঘোষের মতো বাগ্মী, হুতোম প্যাঁচার মতো আমুদে লোকের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন ভোলা ময়রার মতো লৌকিক গায়কদের।" ইন্টারনেট খুঁজে দেখেছি, ভোলা ময়রার আদি বাড়ী এই গুপ্তিপাড়া তেই ছিল, তাই খুব ইচ্ছে এই মহান কবিয়ালের জন্মভিটে দেখে আসব। শুদু কি ভোলা ময়রা গুপ্তিপাড়ার আনাছে কানাচে ছড়িয়ে আছে অতীত বঙ্গের গৌরবময় ইতিহাস।

বাংলাদেশের প্রথম বারোয়ারি পূজা সুত্রপাত হয় এই গুপ্তিপাড়া তেই,  এই বঙ্গে পারিবারিক দুর্গাপূজার মধ্যে গুপ্তিপাড়ার সেন বাড়ির দুর্গাপূজা মতান্তরে জগদ্ধাত্রী পুজা অন্যতম প্রাচীন। কথিত আছে কোন এক কারনে কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি একবার সেন বাড়ীর দুর্গা মতান্তরে জগদ্ধাত্রী পুজায় অংশ গ্রহন করতে অস্বীকার  করেন, আর এদের মধ্যেই ১২জন একত্রিত হয়ে ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে মতান্তরে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে একটি সংগঠন গড়ে বিন্ধ্যবাসিনী জগদ্ধাত্রী পুজার আয়োজন করেন। বার জন বন্ধুর বা ইয়ারের সংগঠন বলে সেই থেকে বারোয়ারি পুজা কথাটি প্রচলিত হয়।




শুনেছি এই গুপ্তিপাড়া বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার অন্যতম প্রধান সেনাপতি প্রখ্যাত ‘মোহনলালের’ জন্মস্থান, এছাড়া রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গীত শিক্ষাগুরু কালী মির্জাগুপ্তিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

গুপ্তি পাড়ার নামকরন সম্পর্কে আমার বিশেষ জানা নেই, তবে ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন্য পত্র পত্রিকা ঘেঁটে যা পেয়েছি তা হল – গুপ্তি পাড়া ও তৎসংলগ্ন গ্রাম গুলিতে বহু দেবদেবীর মন্দির, থান বর্তমান, আর এই জন্নেই এই অঞ্চলকে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ বলা হত। হয়ত ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’  এই নাম থেকে গুপ্ত বৃন্দাবন পল্লী’, ‘গুপ্তপল্লীও পরিশেষে গুপ্তিপাড়ানামকরণ হয়েছে এরকম ভাবা যেতেই পারে। তবে প্রাচীন কাল থেকেই গুপ্তি পাড়ার নাম প্রসিদ্ধ ছিল, সাহিত্যেও এর উল্লেখ আছে। যেমন মনসা মঙ্গলকাব্যে চাঁদ সওদাগরের চম্পকনগরী থেকে তরী ভাসিয়ে নদীপথে যাওয়ার পথে কাটোয়া, গুপ্তিপাড়া, ত্রিবেণী এই সব নগরের উল্লেখ আছে। এছাড়া গুপ্তিপাড়ার রথ পুরী বা মাহেশের রথের মতই বিখ্যাত, এইরকম একটা জায়গাতে যাচ্ছি ভেবে খুব ভালো লাগছে।

ভাবনার জাল ছিন্ন হল হকারের ডাকে – বাবু গরম শিঙ্গাড়া আছে খাবেন নাকি? নারকোল দেওয়া খেয়ে দেখতে পারেন। জিজ্ঞ্যাসা করলাম কোন স্টেশন এলো এটা? হকার দাদা বলল এটা খামারগাছি বাবু, কোথায় নামবেন? বললাম গুপ্তিপাড়া। হেসে বলল – দেরি আছে বাবু শিঙ্গাড়া খাওয়া হয়ে যাবে আপনার। এরপর আর না বলা যায়না, এমনিতেই পেটুক বলে বেশ পরিচিতি আছে আমার, আর সেই খাবার যদি মুখরোচক নোনতা হয়, তাহলে তো আর কথাই নেই। হামলে পড়লাম শিঙ্গাড়ার উপর, কিছুক্ষণের মধ্যেই শিঙ্গাড়া উদরস্ত হল। তবে এটা সত্যি, দারুন খেতে এই শিঙ্গাড়া। শিঙ্গাড়া শেষ করে আসে পাশে একটু নজর দিলাম, গুপ্তি পাড়া আর তার ইতিহাস নিয়ে ভাবতে ভাবতে সহযাত্রীদের ভুললে চলবে কেন? আলাপ হল একজন অল্পবয়সী ছেলের সাথে, নাম সুমন। কথায় কথায় জানতে পারলাম সুমন ছাত্র, টিউশন পড়তে কালনা যাচ্ছে। আমি গুপ্তিপাড়া যাচ্ছি শুনে একটু অবাক, বলেই ফেলল আপনি কি সাংবাদিক? মাথা নেড়ে বললাম নারে ভাই আমি নিছক শখের খাতিরে একটু লেখালিখি আর ছবি তুলি, সেটা এমন কিছু নয়। শুনে বলল ভালো দাদা আমি আপনাকে গুপ্তিপাড়া আসার আগে বলে দেব। একথা সেকথার পর সুমন বলল এবার আপনাকে নামতে হবে দাদা, নেক্সট স্টেশনই গুপ্তিপাড়া। বিদায় নিয়ে নেমে পড়লাম গুপ্তিপাড়া স্টেশনে, বেশ জমজমাট স্টেশন আর সাজানো গোছানো।

সকাল ০৯:৫০
ভালোই রোদ আছে, আর আকাশ ও পরিষ্কার, অদৃষ্টকে ধন্যবাদ দিলাম কারন ছবি ভালো উঠবে এই ওয়েদারে। স্টেশনের বাইরে এসে একজন রিকশাওয়ালার সাথে দরদাম করে শেষে ১৫০ টাকায় রফা হল। রিকশাওয়ালা বয়স্ক ব্যাক্তি, নাম জিজ্ঞেস করাতে বলল – আমার নাম মনোজ। আমি বললাম – আমি মনোজ কাকা বললে অসুবিধা নেই তো? বলল রিকশাওলার আবার অসুবিধে, তবে তোমাদের মতো বাবু রা কাকা বলবে এটা কেমন? কথায় শ্লেষ আছে ঠিকই, তবে গায়ে না মেখে বললাম – আমরা বাঙ্গালীরা বয়স্ক দের কাকা জেঠাই বলি তাই বলছি। শুনে হেসে বলল আচ্ছা তাই বোলো, এখন চাপ বাপু। তোমায় ঘুরিয়ে এনে আমায় অন্য সওয়ারি নিতে হবে তো। আমিও হেসে চেপে বসলাম, যাত্রা হল শুরু। মনে মনে ভাবতে লাগলাম – নাগরিক জীবনের বিষ এদের মনেও ঢুকে গেছে তাই এরা আজ শহর থেকে কেউ এলে কৌতুক করতে ছাড়েন না, আসলে দোষ এদের নয় দোষ আমাদের আমরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, শোষণই করে গেছি নির্লজ্জভাবে। চটকা ভাঙ্গল মনোজ কাকুর ডাকে, আগে মঠ যাবে তো? ফেরার সময় ডেশকালি তলার মন্দির ঘুরিয়ে তোমায় ইস্তিশনে ছেড়ে দেব। আমি বললাম তাই করো কাকা।



সকাল ১০:৩০
টুক টুক করে যেতে যেতে দূরে চকচকে টিন দিয়ে ঘেরা উঁচু জিনিসটা দেখে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা কাকা ওইটা কি? কাকা বলল -  আরে ওটা আমাদের রথ গো, সারাবছর এইভাবে টিন দিয়ে ঘেরা থাকে, আর ওই যে পাঁচিল দেওয়া জায়গা তা দেখছ ওটাই বেন্দাবনচন্দের মঠ। রিকশা এসে দাঁড়ালো দরজার সামনে, কাকা বলল – যাও কি দেকবে বাপু দেখে এসো, আমি একটু জিরিয়ে নি এই ফাঁকে। তবে বেশি দেরি করুনি বাপু, আমার আরও ভাড়া খাততে হবে। আমি বললাম – তুমি চিন্তা করো না কাকা, আমার জন্নে তোমার লস হবে না।
   
মঠ প্রাঙ্গনে ঢুকে বিস্ময়ে আমি হতবাক হয়ে গেলাম, যেন একটুকরো বিষ্ণুপুর উঠে এসেছে এইখানে। বাংলার স্থাপত্য শিল্পের অদ্ভূত নিদর্শন আজও বহন করে চলেছে গুপ্তিপাড়ার এই চার বৈষ্ণব মন্দির - চৈতন্য, বৃন্দাবনচন্দ্র, রামচন্দ্র এবং কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির। মন্দির চত্বর ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণএর নজরদারির আওতাধীন।

বৃন্দাবনচন্দ্রমঠ সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি তা হল – আনুমানিক ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে দশনামী শৈব সম্প্রদায় ভুক্ত সন্ন্যাসী সত্যদেব সরস্বতী বা প্রথম দণ্ডিস্বামি ছিলেন জগতগুরু শঙ্করাচার্য্যের অন্যতম ভক্তশিষ্য। সত্যদেব সরস্বতী স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে নদীয়া জেলার শান্তিপুরের এক বিধবার কুটীর থেকে শ্রীবৃন্দাবনচন্দ্রের অর্থাৎ বিষ্ণুদেবের বিগ্রহ সংগ্রহ করেন। ‘সত্যদেব সরস্বতী র প্রধান ভক্তশিষ্য জমিদার বিশ্বেশ্বর রায় শ্রীবৃন্দাবনচন্দ্রের উদ্দ্যেশ্যে তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দান করলে, শ্রী সত্যদেব গুপ্তিপাড়াকে তাঁর সাধনা স্থল রূপে নির্বাচন করেন ও বিশ্বেশ্বর রায়ের দান করা জমিতে মঠপ্রতিষ্ঠা করেন।

উঁচু বেদীর উপর কৃষ্ণচন্দ্র ও বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দির দুটি প্রতিষ্ঠিত ও বাংলার আটচালা’ (eight sloped roof) রীতিতে নির্মিত। কৃষ্ণচন্দ্র, বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দিরের অনন্য বৈশিষ্ট্যএই মন্দির দুটির উপরের তলে অন্য একটি চারচালামন্দিরের অবস্থান। বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দিরটির উচ্চতা ১৮ মিটার বা ৬০ ফুট। মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনে ৩ টি প্রবেশ পথ যুক্ত একটি বারান্দা। তিনটি প্রবেশ পথেই খিলানবা আর্চবর্তমান। খিলানগুলি কারুকার্য খচিত স্তম্ভ এর উপর ন্যস্ত। বর্তমান বৃন্দাবনচন্দ্রের মন্দিরটি বাগবাজারের জমিদার গঙ্গানারায়ণ সরকার কর্তৃক উনবিংশ শতকের প্রারম্ভে আনুমানিক ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।

বৃন্দাবনচন্দ্রমঠের চারটি মন্দিরের মধ্যে রামচন্দ্রের মন্দির শিল্প সমৃদ্ধ কারুকাজের জন্নে বেশি বিখ্যাত। শেওড়াফুলির রাজা হরিশচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে রামচন্দ্রের মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এই মন্দিরটি দেখতে দেখতে আমার বাঁশবেরিয়ার অনন্ত বাসুদেব মন্দিরের কথা মনে পড়ল, দুটি মন্দিরের স্তাপত্য প্রায় এক রকমের। রামচন্দ্রের মন্দির চারচালারীতিতে নির্মিত হলেও এই মন্দিরের ছাদের মধ্যভাগে আটকোণা মন্দিরের একটি ক্ষুদ্রাকৃতি অনুকৃতি বর্তমান।মন্দির গ্রাত্রে টেরাকোটার অপূর্ব শিল্পনিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় -  বেশীরভাগই রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনী, কৃষ্ণলীলা, বানিজ্যের জন্য সমুদ্র যাত্রা এসব কাহিনী প্রতিফলিত করে। বৃন্দাবনচন্দ্রমঠের চারটি মন্দিরের মধ্যে আনুমানিক সপ্তদশ দশকের মধ্য ভাগে  বিশ্বর রায় কর্তক নির্মিত চৈতন্য মন্দিরটিই সর্বাধিক প্রাচীন। এই মন্দিরটি বাংলার জোড় বাংলারীতিতে তৈরি, এটি দেখলে মনে হবে যে দুটি দোচালা কুটির যেন পরস্পর সংলগ্ন অবস্থায় বিদ্যমান। চৈতন্যদেবের এই মন্দির বাংলার অপূর্বটেরাকোটাস্থাপত্যের প্রথম দিকের নিদর্শন ছিল বলেই অনুমান করা হয়।
  
এছাড়াও নহবতখানা, মঠের সন্ন্যাসীদের থাকার জায়গাও দেখলাম, ঘড়ির দিকে হঠাৎ চোখ যেতে চমকে উঠলাম – প্রায় ১২টা বাজে। মনে হচ্ছে মনোজ কাকা আমায় ফেলে চলেই গেছে, তাড়াতাড়ি করে বাইরে এসে দেখি ও হরি মনোজ কাকা রিকশার উপর ঘুমে ব্যাস্ত। ডাকতে বলল – হল বাপু তোমার? কত সময় লাগালে? আমি তো বসে বসে ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। কিজে এতো পুরনো মন্দির দেখছিলে বুজিনা বাপু। আমার বাপু কুড়ি টাকা বেশি লাগবে, চলো এবার তোমায় ডেশকালি তলার মন্দির ঘুরিয়ে তোমায় ইস্তিশনে ছেড়ে দেব।



আমি মিনমিন করে বললাম – ভাবছিলাম একটু তোমাদের লাইব্রেরি মানে শিশির বাণী মন্দির যাবো ভাবছিলাম, ওখানে কিছু তালপাতায় লেখা পুঁথি দেখতাম। মনোজ কাকা বলল – আরেয় লায়বেরি কি তোমার জন্নে খোলা আছে বাপু, বন্ধ হয়ে গেছে, আবার পাঁচটার পর খুলবে। অতকিম ফিরে চল মন নিজ নিকেতনে। ভেবেছিলাম কিছু দুর্লভ ভূর্জ পত্র বা তালপাতায় লেখা প্রাচীন পুঁথি দেখার সৌভাগ্য হবে অথচও ভাগ্য বিরুপ।
রিকশাতে উঠে মন ভার করে বসে আছি, মনোজ কাকা বোধহয় টের পেয়ে বলে উঠল – আরে বাপু তুমি রথের সময় কি আসবে না? আমাদের রথ খুব বিখ্যাত, কত দূর দূর থেকে লোক আসে। তখন বেশি করে টাইম নিয়ে এসো তোমায় সব ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবো। এখন ডেশকালি তলার মন্দির চলো, খুব জাগ্রত মন্দির যা চাইবে তাই পাবে। হেসে বললাম – কাকা মা আমার এমনিই বিরুপ আমার উপর তাই নতুন করে আর কিছু পাবার আশা আমার নেই। মনোজ কাকা বলল- এই তোমাদের এক রোগ বাপু, বিসসেস টা বড় কম। টা ঠিক না পেয়ে পেয়ে বিশ্বাসের ঝুলি আমার রিক্ত। কথায় কথায় এসে গেলাম দেশকালিতলার মন্দিরে, মন্দির টি পুনঃ নির্মাণ  হয়েছে। মন্দির দেখে, ছবি তুলে ফেরার সময় পেট জানান দিলো বেশ খিদে পেয়েছে। মনোজ কাকা কে বলতে জিব কেটে বলল – সত্যি তো বাপু খিদে তো পাওয়ারই কথা। কিন্তু এখন কি খাবে বলতও? আমি বললাম – কাকা একটা ভালো চায়ের দোকানে নিয়ে চলো ডিম টোস্ত আর চা খাই। মনোজ কাকা একটা দোকান দেখে রিকশা দাড় করালো, বলল যাও বাপু জলদি খেয়ে এসো। আমি বললাম – কাকা একা তো খাবো না, তুমিও এসো খাও।  কাকা অবাক হয়ে বলল আমি? না না তুমি খাও। জোর করে বসালাম, আর দুজনে গরম গরম ডিম টোস্ত আর চা খেলাম। তারপর ফিরে চললাম স্টেশনের দিকে, ফেরার পথে একটা মিষ্টির দোকান দেখে দাঁড়াতে বললাম। কাকা বলল – বাড়ীর জন্নে মিষ্টি নেবে বুজি? আমি বললাম হ্যাঁ। কাকা বলল – তাহলে মাখা সন্দেশ নাও বাপু, আমাদের এখানকার মাখা সন্দেশ, গুঁফো সন্দেশ বিখ্যাত, ও দোকানদার ভাই একটু ভালো দেখে দিয়ে দিয়ো, আমার চেনা লোক আছে বটে। দোকানদার হেসে বলল দিচ্ছি কাকা তুমি ভেবনা, মিষ্টি কিনে শেষে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম – আচ্ছা এখানে ভোলা ময়রার জন্ম ভিটে কোথায়? দোকানদার তো অবাক, শেষে বুজিয়ে বলাতে বলল – অনেক আগের ব্যাপার সাপার এখন কি আছে ওসব? তবু খুঁজে দেখুন যদি পান।

কি আর করব, পরে আসার কথা ঠিক করে ফিরে চললাম। আমরা আধুনিক বাঙ্গালীরা ইতিহাস ভুলে গেছি আজ, তাই বোধহয় আমাদের এই দৈন্য দশা। নইলে এই সোনার বাংলায় তো সবই ছিল, শুদু ছিলনা তাঁকে রক্ষা করার মতো সৎসাহস। স্টেশন এসে গেল, নেমে কাকা কে ২০০ টাকা দিতে, ৩০ টাকা ফেরত দিতে গেলো। বললাম – কাকা রেখে দাও আর দিতে হবে না, আজ তোমার অনেক খানি সময় নষ্ট করেছি আমি, ফেরার সময় বাড়ীর ছেলেপুলের জন্নে কিছু কিনে নিয়ে যেও। কাকা দুহাত ধরে বলল – রথের সময় এসো কিন্তু, সব ঘুরে দেখাব তোমায়। বিদায় নিয়ে ফিরে আসার সময় দেখি কাকা সিঁড়ির কাছে এসে দাড়িয়ে আছে। মনটা একটু খারাপ হয়ে এলো, সাধাসিধে মানুষ টা বড় ভালো, নিজের মনে করে আমায় সব ঘুরে দেখাল তো। 

স্টেশনে উঠছি আর ট্রেন এর ঘোষণা হল। এবার ফেরার পালা, পিছনে পরে থাকলো অতীত বঙ্গের এক সোনার ইতিহাস।


কিভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি তে আসতে পারেন, এছাড়াও হাওড়া – কাটওয়া শাখার ট্রেন ধরে সরাসরি নামতে পারেন গুপ্তিপাড়া স্টেশনে। নেমে পেয়ে যেতে পারেন মনোজ কাকার মতন অনেক রিকশাওলা কেই। রিকশাতে করেই ঘুরে নিতে পারেন দর্শনীয় জায়গা গুলি।
  
গুপ্তিপাড়ার ছবি দেখার জন্নে অনুরোধ করব নীচের লিঙ্কে visit করতে

 

No comments:

Post a Comment