Monday 11 January 2016

নীলকণ্ঠের করচা – ৩১ই ডিসেম্বর, ২০১৫




রোজ সকালে যেভাবে ঘুম থেকে উঠি, মানে ওই পান্তাখেচা মুখ করে আর কি – আজও সেই ভাবেই উঠলাম কিন্তু ক্যালেন্দার এ ডেট টা দেখে মুড টা ফ্রেস হয়ে গেলো বাবা। ইল্লি আজ ৩১এ ডিসেম্বর, মানে চুটিয়ে মাল খাবার দিন, এই একটি দিন আমাকে কেউ মাতাল বলবে না। আরে বলবেটা কি করে? আজ তো আপামর বাঙ্গালী পিয়েগা আউর জিয়েগা। না তাড়াতাড়ি পটিতটি (পটিই বলতে হবে নইলে হাগি বললেই আবার গণ্ডগোল, আচ্ছা তার মানে নৃত্য পটীয়সী মানে কি?????, না থাক সকাল সকাল বাজে কথা ভাবব না) সেরে বাজারে যেতে হবে দেখছি নইলে যা দিনকাল মালের দোকানে হাউসফুল থুড়ি স্টক শেষ না ঝুলিয়ে দেয়।

অতঃপর টি ব্রেক সেরে চটি পায়ে বাজারে বেরতে যাচ্ছি, মুখুজ্জে মশায়ের সাথে দেখা। আমায় দেখে তাচ্ছিল্য করে হেসে বলল – কি নীলকণ্ঠ বাবু সকাল সকাল চললেন কোথায়? বললাম এই একটু বাজারে যাচ্ছি, শুনে ফিক করে হেসে খচ্চর (থুড়ি পাঠক, নিজ গুনে ক্ষমা করে দিয়ো) বুড়ো বলল খাও তো হোমসার্ভিস এ, এতে আবার বাজার আসে কোথায়? নিমপাতা চেবান মুখ করে জবাব দিলাম ওই একটু কেক, মিষ্টি তিস্তি কিনতে যাচ্ছি আর কি, বিকালে কয়েকজন বন্ধু আসবে তো তাই। শালা বুড়ো বলল ও তার মানে পার্টির আয়োজন- মচ্ছব তাহলে জমবে ভালো।এই এক বাঙ্গালীর দোষ কার সুখ চোখে সয়না রে।  যাই হোক বুড়োর খাপ্পর থেকে বেঁচে দৌড় লাগালাম মালের দোকানের দিকে। যেতে যেতে দেখি কত আয়োজন ক্লাবে ক্লাবে বক্স বসছে, মুরগির দোকানে লম্বা লাইন। ছেলেপুলে এখানে সেখানে জতলা করছে আজ ডিজে তে কি গান বাজবে র ও পাড়ার ছামিয়া থুড়ি ডলি, পলি আসবে কিনা? আরও কত কিছু সব বলতে গেলে সেন্সর ফেল করে যাবে বাবা।

মালের দোকানে গিয়ে মাথাটা আরও গরম হয়ে গেলো বলে কিনা দাদা বোতল পিছু ২০ টাকা এক্সট্রা লাগবে, খরচা বেড়ে গেছে। কারন শুধোতে বলল ও দাদা বুজবেন না লাইন এ ট্রাবল বেশি, পুলিশ নেতা সবাই কে খুশ করতে হচ্ছে যে। মনে মনে খিস্তি দিতে দিতে মালটি নিয়ে ফিরছি এমন সময় দেখি আরে সামনে জান্ত নেতা  - মানে আমার পাড়ার দাদা আর কি। চুপিচুপি সাঙ্গাত কে বুজিয়ে দিচ্ছেন কোন ব্র্যান্ড নিতে হবে। চোখাছুখি হতে একগাল হেসে বলল দাদা সকাল সকাল শুরু করে দিলেন তো? ভাবি জিজ্ঞেস করি আমি না হয় সকাল সকাল তুমি কি মন্দিরে পুজো  দিতে এসেছ বাবা। তারপর চেপে গেলাম, শাসক দলের নেতা যদি মাওবাদী বলে চালিয়ে দেয়? ওই একটু হেসে সাইদ হয়ে গেলাম। মনে পড়ল ফেরার সময় অমল, পাচু কেও বলে যেতে হবে। নইলে মৌতাত জমবে না।

ফেরার সময় পাশের বাড়ির সুব্রতর সাথে দেখা – চমতকার ঝকঝকে ছেলে, আইবিএম না কোথায় জব করে। ২-৩বার নাকি ইউএস ও ঘুরে এসেছে। বললাম হাই ইয়ংমান আজ কি প্রোগ্রাম? বলল ওই কিছু না দাদা আজ তো অফিস আছে ওই একটু আর্লি বেরিয়ে পার্ক স্ট্রিট এ এঞ্জয় করব আর কি? চোক টিপে বলল দাদা আজ তো আপনার ও পার্টি আছে? তো এবার চলুন না আমার সাথে, বেলারুশ থেকে সব দান্সার আসছে। আমি বললাম ও আমার চলবে না বাবা ও তুমি যাও। সুব্রত বলল দাদা সময়ের সাথে আপডেট হন নইলে যে ফেল মেরে যাবেন।

ফিরতে ফিরতে ভাবতে লাগলাম সত্যি বড় ব্যাকডেতেদ হয়ে যাচ্ছি আমার মতো লোকেরাচারিদিকে এত আনন্দ হই হুল্লর, সত্যি ইন্ডিয়া সাইনিং, আজ লোকেরা কত খুশি? ইয়ারএন্ডে মদ খাচ্ছে, পার্টি করছে, এর অর বউএর কোমর ধরে নাচছে, বেহেড মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরছে আর দেশ আর জাতির বাপ বাপন্ত করছে। অথচও বাতে পঙ্গু বাবা-র ওষুধ টা আনতে ভুলে যাচ্ছে। মা শুকনো মুখে যখন জিজ্ঞেস করছে খোকা আজ তোর বাবার ওষুধ টা আনতে ভুলিস না যেন। আর শোন আমার মনে হয় চোখের পাওয়ার টা বেড়েছে একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাস তো বাবা। আর খোকা বলছে এই দুটো দিন চালিয়ে নাও মা, সামনের উইকে সালারি পেয়ে এনে দেব। মা চোখ মুছতে মুছতে সরে যাচ্ছে দরজা থেকে, আর খোকা বাস্ত হানী কে ফোন করে টাইম ফিক্স করতে। একবার চেঁচিয়ে মা কে বলে দিচ্ছে আজ রাতে অফিস এ কাজ আছে তাই ফিরতে পারবে না, তোমরা আর বসে থেক না খেয়ে শুয়ে পড়ো। কিংবা স্বামী স্ত্রী বড়োই বাস্ত আজকের পার্টি প্লান নিয়ে, সময় নেই তাঁদের বুড়ী মা কে একবার হ্যাপি নিউ ইয়ার বলার। অথচও এই মা পইলা বইশাক এ পায়েস রেধে খাওয়াত তার ছোট্ট সোনা টাকে আর সাথে কতরকম রান্না – পুইশাকের ঘণ্ট, মোচার বড়া, ডিমের টক আরও কত কি? আজ সেই আইটেম গুলো ফুড ফেস্টিভ্যাল এ নামী হোটেল এর না হলে মুখে রোচে না আমাদের।  

ধুস কি সব ভাবছি তখন থেকে, আজ ৩১ই ডিসেম্বর, কোথায় একটু মস্তি করব টা নয়, বসেছি দুঃখের বারমাস্যা নিয়ে। আরে বাবা দুঃখ কষ্ট তো জাগতিক নিয়মে বাধা, এগুলো আসবে যাবে। তাবলে ৩১ই ডিসেম্বর চলে গেলে পুরো একটা বছর মানে ৩৬৫ দিন। আচ্ছা পুরো ৩৬৫ দিন কি? কি জানি আমি মাতাল দাতাল মানুষ, অঙ্কে বরাবরের কাঁচা। তাই জীবনের অঙ্ক টা মেলাতে পারি নি কোনোদিনই। ধুস বাঙ্গালী তুমি আজ মাস্ট পার্ক স্ট্রীট এ ভিড় জমাও, রেস্তরা তে চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল অর্ডার করো, খুব পিয় ধুম মছাও। জড়িয়ে ধরো বান্ধবীকে থুড়ি হাগ করো (জড়িয়ে ধরো বললে কেস খেয়ে যাবে বাবা, তার চেয়ে হাগ ই ঠিক আছে)। স্বপ্ন নামুক রঙিন জলের হাত ধরে, পিছনে পড়ে থাক মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীর মানসিকতা। ঘুমিয়ে পরুক আটপৌরে তরুণী বউটির অপেক্ষা, ভালোবাসা - চুপ তার বর এখন পার্টি করছে যে। ঘুমিয়ে পরুক সেই বৃদ্ধ মা বাবা যারা অপেক্ষা করে বসে থাকেন যে তাঁদের খোকা ফিরবে, একসাথে আজ তারা রাতের খাবার টা খাবেন। কাল সকালে উঠে চায়ের সাথে কেক খাবেন আর ছুটির দিনে গল্প শুনবেন তাঁদের খোকার থেকে, খোকা যে মস্ত চাকরি করে। কিংবা সেই ছেলেটি বা মেয়েটির চোখে ঘুম আসুক যে ভাবছে আজ তার বাবা একটা বড় কেক আনবে আর সবাই মিলে গোল হয়ে বসে সেটা কাটা দেখবে – আর ভাববে সকালে কে কোন পিস টা নেবে। টিপিকাল বাঙ্গালী এখন গ্লোবাল হচ্ছে তাই সবাই চুপ – চারিদিকে আজ লেজার লাইট এর আলো, ডিজে র মিউজিক আর উল্লাস।     
Where’s The Party Tonight
      
(পাঠক, এলেখা ওই মাতাল দাতাল নীলকণ্ঠর, তাই গালাগালি সাধুবাদ সব তারি প্রাপ্য, আমি শুধু বন্ধুর উপরোধে লেখাটা পোস্ট করেছি মাত্র, চুপিচুপি জানিয়ে রাখি আমিও যেতে পারি পার্ক স্ট্রীট এ হে হে)

 

No comments:

Post a Comment