ইতিহাসের সরণী ধরে
বৈদ্যপুরে একদিন
“বাড়ির কাছে আরশী নগর, (একঘর) সেথা পড়শী বসত করে - আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”। লালন ফকিরের এই গান খানি আমায় খুব টানে। সত্যি তো ঘরের পাশে কত মনি মুক্তা
অবহেলায় ছড়িয়ে আছে, কই মন তো সেদিকে টানে না? মন সুদুর পিয়াসী হোক ক্ষতি নেই,
কিন্তু বাড়ীর কাছে আরশী নগর না দেখলে চলবে কেমন করে? তাই ভাবতে লাগলাম কোথায় যাওয়া যেতে পারে? মনে
পড়ল প্রতাপ দার কথা, সদালাপী মানুষটি বলেছিলেন – একদিন সময় করে আমার এখানে
(কালনায়) এসো, তোমাই একটা সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবো। তুমি তো পুরনো মন্দির, শিল্প
কর্ম খুঁজে বেরাও তোমার ভালো লাগবে। জিজ্ঞেস করাতে বলে ছিলেন বৈদ্যপুরের কথা। ওখানে ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের একটি দেউল আছে। প্রতাপদা কে ফোনে জিজ্ঞেস
করাতে বললেন – চলে এসো ভাই আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম। অতএব ক্যামেরা প্যাক করে
বেরিয়ে পড়লাম।
সকাল ০৮:১০
টিকিট কেটে ৩নং
প্ল্যাটফর্মে গিয়ে শুনলাম ট্রেন সেই ৮:৪০ এ, অতকিম বসে বসে লোক দেখা ছাড়া কাজ নেই।
রবিবার ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর লোক স্টেশনে, হয়ত আমারি মতন ঘরের খেয়ে বনের
মোষ তাড়াতে যাচ্ছে। বসে বসে লোক দেখছি আর ঘড়িতে কখন ৮:৪০ হবে এই অপেক্ষা করছি। ও
হরি ৮:৪৫ তখন মাইকে ঘোষণা হল যে ট্রেন আসছে, ট্রেন এলো তারও কিছু পরে। কোনক্রমে
ভিড় থেকে ক্যামেরার ব্যাগ বাঁচিয়ে ট্রেন এ উঠে দেখি খুব ভিড়, পা ফেলার জায়গা নেই।
কোনমতে একটু ভিতরে ঢুকে দাঁড়াতে পারলাম, এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখি খুব চেঁচামিচি
হচ্ছে – কারা সব বিশাল বিশাল লাগেজ নিয়ে উঠে পড়েছে আর সেই নিয়ে যত ঝামেলা। পাশ
থেকে একটি ছেলে বলল – দাদা কোথায় যাবেন? আমি বললাম – আমি তো কালনা নামব, আর তুমি?
বলল – ধাত্রীগ্রাম, একটু ঢুকে দাঁড়ান না প্লিজ। চেষ্টা করতে বিজাতীয় ভাষায়
ক্যাঁচরম্যাচর শুরু হয়ে গেলো, তাকিয়ে দেখি একদল বয়স্ক হতদরিদ্র মহিলা, বাচ্ছা
পোটলা পুটলি নিয়ে পুরো চ্যানেল দখল করে বসে আছে, যাই হোক অতি কষ্টে তাঁদের বুজিয়ে
একটু জায়গা মিলল। ওই ছেলেটি বলল – থ্যাংকস দাদা, এরা সব উড়ে বাংলা বোজে না। হেসে
বললাম – কি আর করা যাবে ভাই এই নিয়েই চলতে হবে। ভালোই আলাপ হয়ে গেলো ছেলেটির সাথে,
আর সময়ও কেটে গেলো বেশ। শেষে গুপ্তিপাড়া এসে যাওয়াতে আমি এগিয়ে গেলাম, কারন পরের
স্টেশনে আমায় নামতে হবে। কালনা তে নেমে দেখি প্রচুর লোক, ওভারব্রিজ দিয়ে নেমে
স্টেশনের বাইরে এসে ফোন করলাম প্রতাপ দা কে। প্রতাপ দা বললেন – আমি এসে গেছি আগেই
তুমি একটু এগিয়ে এসো, সামনের চায়ের দোকানে দাড়িয়ে আছি আমি। এগিয়ে এসে দেখা হল, প্রতাপ
দা বলল – চলো এই সামনেই কালনা বাসস্ট্যান্ড, ওখান থেকে বাস ধরব। আমার দাদাও আসতে
পারে, একসাথেই যাওয়া যাবে তাহলে।
সকাল ১০:০০
বাস স্ট্যান্ডে
এসে প্রতাপদা ফোনে জানল যে দাদার আসতে একটু দেরি হবে, বলল – চলো আমরা যাই, দাদা
পরের বাসে আসছে। বাসে উঠে পড়লাম, ভালোই ভিড় আছে। কন্ডাক্টর কাকা কে জিজ্ঞেস করে
জানতে পারলাম বৈদ্যপুর এখানে থেকে ১৪ কিলোমিটার।
আমি বসার জায়গা পেলেও প্রতাপ দা পেলেন না, বারবার করে বসতে বললেও কিছুতেই বসলেন
না। আমি বাসের জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছি, বাস ছুটে চলেছে আপন গতিতে। আসে পাশের দৃশ্য
কিন্তু খুব সুন্দর, যেন চিত্রকরের হাতে আঁকা একটি পটচিত্র। চারিদিকে ক্ষেত, মাঝে
মাঝে কিছু লোকালয়, দোকান স্কুল সবই আছে, যেন নিখুঁত ভাবে সাজানো সব। বাস একটা
স্টপেজে থামাতে দেখি ঝুড়ি কাঁধে একজন উঠল – ইয়া বড় বড় কুল, আপেলের সাইজের। প্রতাপদা
বলল – খাবে নাকি? আমি বললাম – না দাদা এমনি কাশি হয়েছে, তাই এখন কুল খেলে আর দেখতে
হবে না। একটু বাদে আমার পাশে জায়গা হল, প্রতাপদা বসলেন পাশে। কথায় কথায় জানতে
পারলাম প্রতাপ দার দাদাও ভারতীয় ‘পুরাতত্ত্ব
সর্বেক্ষণ’ –এর
অস্থায়ী কর্মী, এবং কালনা সার্কেলে কর্মরত।
সকাল ১১:৩০
বাস নামিয়ে দিলো বৈদ্যপুর বাজারে, নেমে দেখি ছোট্ট গ্রামীণ লোকালয়, এদিকে
ওদিকে কিছু দোকান আর বাজারের পসরা সাজিয়ে সব বসে আছে। প্রতাপ দা বলল – চা খাবে না
কিছু জল খাবার খাবে? আমি বললাম – দাদা চলো কিছু খাওয়া যাক। প্রতাপদা বলল – চলো ওই
মিষ্টির দোকানে যাওয়া যাক। মিষ্টির দোকানে গিয়ে জানতে পারলাম গরম গরম শিঙ্গাড়া
ভেজেছে, অতএব পেটুক মন খাবো খাবো করে উঠল। দুটো করে শিঙ্গাড়া উদরস্ত করে তৃপ্তির
ঢেঁকুর তুলে দাম দিতে গিয়ে দেখি আগেই দাদা দাম দিয়ে দিয়েছে। বলাতে বলল – কেন ভাই
আমি কি তোমায় একদিন ভালবেসে খাওয়াতে পারি না? কিছু বলার নেই ভালোবাসার দাবী যে বড়
ভয়ঙ্কর। আমরা এপারে এসে ছোট গলি দিয়ে
এগিয়ে চললাম আমাদের গন্তব্যের দিকে। প্রতাপ দা বলল – জানো সামনে একটা পুরনো
রাজবাড়ী পাবে, বহুদিন আগের, এখন হয়ত কেউ থাকে না। এগিয়ে এসে দেখতে পেলাম রাজবাড়ী
টি, সময়ের সাথে যুদ্ধ করে আজও টিকে আছে স্বমহিমায়। প্রতাপ দা বলল – দেখেছো কতদিন
আগেকার বাড়ী? যখন তৈরি হয়েছিলো তারপর রাস্তা উঁচু হওয়াতে আজ কত নীচে ভিত। তাকিয়ে
দেখলাম সত্যি, ভিত অনেক নিচেই। মুগ্ধ হয়ে দেখছি হঠাৎ টিয়াপাখির আওয়াজ শুনে সম্বিত
ফিরল, মুখ তুলে দেখি রাজবাড়ীর বারান্দা তে টিয়াপাখি বসে, সাথে পায়রা তো আছেই।
ক্যামেরা বার করে লেন্সবন্দি করলাম মলিন হয়ে আসা রাজবাড়ী আর টিয়াপাখি দুজন কেই।
প্রতাপদা বলল - জানো এই গোটা বৈদ্যপুর
জুড়েই টিয়াপাখি দেখা যায়, মাঝে মাঝে তো ঝাঁক ঝাঁক টিয়া উড়ে যায়। আমি হেসে বললাম –
কপাল ভালো থাকলে আজ দেখতে পাবো বোলো? একটু এগিয়ে এসে মন আটকে গেলো প্রায় ভেঙ্গে
পড়া শিব মন্দির দেখে। কালের নিয়মে আর মানুষের অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই সব
অতুলনীয় শিল্প কীর্তি গুলি। কি সুন্দর টেরাকোটার কাজ দরজার পাশের প্যানেল গুলি তে।
কোথাও উটে চেপে যাওয়ার ছবি তো কোথাও সৈন্য দলের ছবি, দেব দেবীর ছবিও, পৌরাণিক
কাহিনীও আছে এই সব প্যানেল গুলি তে। দেখে এগিয়ে চল্লাম গন্তব্যের দিকে। প্রতাপদা
বলল – জানো এখানে জলস্তর অনেক নীচে নেমে গেছে। যেতে যেতে দেখলাম সত্যিই তাই, কত
পুরানো সব পুকুর – অথচও জল নেই, কচু বন আর জংলা গাছে ঢাকা, কোথাও আবার গরু, ছাগল চরে
বেরাচ্ছে। কে জানে নাগরিক জীবনের অভিশাপ কিনা? যেভাবে চাষের প্রয়োজনে পাম্প লাগিয়ে
জল তুলে ফেলা হচ্ছে তাতে এরকম ঘটা অস্বাভাবিক নয়। যেতে যেতে আরও কয়েকটি শিব মন্দির
দেখলাম, শিল্প সুষমায় যার জুরি মেলা ভার। পটাপট ছবি তুলে নিতে ভুললাম না, প্রতাপদা
বলল – এই মোড়ের পরই জোড়া দেউল দেখতে পাবে। এগিয়ে এসে হতবাক হয়ে গেলাম বিস্ময়ে –
সামনে জোড়া দেউল, ভারতীয় ‘পুরাতত্ত্ব
সর্বেক্ষণ’ –এর
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এই দেউল আনুমানিক ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের। মানে এই দেউল সম্রাট আকবর
বা শেরশাহ সময়কার?আমার সৌভাগ্য যে এরকম একটা জায়গায় আসতে পেরেছি আজ। ভিতরে গিয়ে
দেখলাম দেউলের বহির্ভাগে আছে সুন্দর ইটের কাজ। বড় দেউলটি পূর্বমুখী আর ছোট দেউলটি
উত্তরমুখী, দুটি দেউলই পরস্পর একটি রাস্তা দিয়ে সংযুক্ত। মন্দিরের দেওয়ালে সুক্ষ
টেরাকোটার কাজ, কিছু কিছু জায়গা অবহেলায় আর কালের কশাঘাতে ভগ্নপ্রায়, তাও যেটুকু
দেখায় যায় অপূর্ব। বেশীরভাগ টেরাকোটার বক্তব্য সামাজিক চিত্র আর পুরাণের বিভিন্ন
কাহিনিকে বর্ণিত করে। বড় দেউলটির দরজার উপরে একটি ক্ষুদ্র লিপিও আছে, যার মর্মার্থ
অনুধাবন করা আমার মতো অকিঞ্চনের কাজ নয়। আমি ঘরে ঘুরে অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগলাম,
এক জায়গায় দেখি বেশ কয়েকটি টিয়া বসে আছে। সন্তর্পণে ক্যামেরা বের করে ছবি তুললাম,
অদ্ভুত লাগলো আমাদের কথার আওয়াজে উড়ে গেলো না, উল্টে ঘাড় বেঁকিয়ে দেখতে লাগলো,
সত্যিই তো ওরাই তো এই দেউলের বাসিন্দা, আমরা তো আগুন্তুক মাত্র। প্রতাপ দা বলল –
মাঝে মাঝে একঝাঁক টিয়া আসে, ওদের চেঁচামিচিতে ভরে যায় জায়গাটা। ওখানেই আলাপ হল মদন
দার সাথে – মদনদা দেউলের অস্থায়ী কর্মী, দৈনিক ৪ঘণ্টার কাজের চুক্তিতে কাজ করছেন।
দেখে দুঃখ হল এই বয়সেও মানুষটা কাজ করে চলেছেন শুদুমাত্র সংসার প্রতিপালনের জন্নে।
মদনদা খুব অল্প বেতনও পান, জানি না কবে ভারতীয় ‘পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’ এদের
প্রতি সদয় হবে।
ইতিমধ্যে
প্রতাপদার দাদা মানে প্রবীরদাও এসে গেছেন,
উনিও প্রতাপদার মতোই হাসিখুশি, সদালাপী মানুষ। এসেই জিজ্ঞেস করলেন প্রতাপ দা কে –
হ্যাঁরে ওকে কিছু খাইয়েছিস তো? প্রতাপ দা বলল – হ্যাঁ দাদা ও শুদু শিঙ্গাড়া
খেয়েছে, আচ্ছা দাদা ওই রাজবাড়ী আর বৃন্দাবন মন্দিরে যাওয়া যাবে? প্রবীরদা বললেন –
কেন যাওয়া যাবে না, চল আমি সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বিধি বাম, বৃন্দাবন
মন্দিরে গিয়ে জানা গেলো, পুরোহিত মশাই পুজা করে চাবি দিয়ে চলে গেছেন তাই ভিতরে
যাওয়া আজ আর সম্বব নয়।
প্রবীরদা বললেন –
চলো তোমায় রাজবাড়ী ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। প্রতাপ দাও সাথী হল আমাদের, একসাথে ঘুরে
দেখলাম রাজবাড়ী, কথায় কথায় জানতে পারলাম এই রাজবাড়ী তে প্রায় সব পুজাই হয়, সেই সময়
রাজবাড়ীর সব শরিকরা আসেন, মজা করে কটা দিন কাটিয়ে ফিরে যান নিজের নিজের জায়গায়। ফেরার
সময় প্রবীর দা জোর করে একটা দোকানে নতুন
গুড়ের রসগোল্লা খাওয়ালেন আমাদের কে, কোন ওজর আপত্তি শুনলেন না। তবে রসগোল্লা খেয়ে
মন ভরে গেলো ইয়া বড় সাইজ, অথচও নরম তুলতুলে, খেয়ে পুরো পেট ভরে গেলো। প্রবীর দা
বললেন চলো তোমায় বৈদ্যপুরের বাকী কয়েকটা মন্দির ঘুরে
দেখাই। ঘুরে ঘুরে আরও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট মন্দির দেখলাম, বেশিরভাগই শিব মন্দির। একজায়গায়
দেখলাম মুখোমুখি দুটি মন্দির, সুন্দর টেরাকোটার কাজ করা। একটিতে শিব লিঙ্গ
বর্তমান, অন্যটিতে শিব দুর্গার একত্রিত মূর্তি, প্রণাম জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। প্রবীরদা
বললেন – তোমার সময় হবে একটু, তাহলে এখানে থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আর একটি সুন্দর
জায়গা ঘুরিয়ে আনতে পারি তোমায়। ঘড়ি দেখে জানতে পারলাম, পরবর্তী ট্রেন বেশ খানিক টা
পরে, আর আমি যদি বৈঁচি দিয়ে ফিরি তাহলে সময়ও কম লাগবে। অতএব রাজি হয়ে গেলাম
প্রস্তাবে। হেঁটে হেঁটে এলাম আমরা টলার মোড় বলে একটি জায়গাতে, আসার সময় গ্রাম
বাংলার অপরূপ শোভা দেখে মনে ভরে গেলো। মাঝে মাঝেই আমি ক্যামেরা বার করে ছবি তোলায়
মগ্ন আর প্রতাপদারা হেঁটে দূরে চলে গেছেন, আবার পিছু ফিরে আমায় ডেকে নিয়ে গেছেন
এমনও হয়েছে। টলার মোড়ে আগে থাকতেই গাড়ি বলা ছিল, গিয়ে দেখি একটি বড় অটো আছে। জানতে
পারলাম অটো টি প্রতাপ দাদাদের, আমার জন্নে ডেকে নিয়েছেন। মন ভরে গেলো মানুষদুটির
ব্যাবহারে, আমি তো তাঁদের কেউ নই অথচও কত সহজে আপন করে নিয়েছেন আমায়। অটো চালকের
সাথে আলাপও হয়ে গেলো প্রতীপ পাবন মুখার্জি, প্রতাপদাদা দের মতোই হাসিখুশি, তবে ইয়ং
ছেলে। দেরি না করে চেপে বসলাম পক্ষীরাজে, আর আমাদের পক্ষীরাজ দুপাশের সবুজ ক্ষেত
চিরে পিচরাস্তা বেয়ে উড়ে চলল। যেতে যেতে ধানের গোলা, মাটির কুঁড়ে ঘর কত কিছুই
দেখলাম। আর দেখলাম মাঠের মাঝে একাকী দাড়িয়ে থাকা একটি মন্দির, প্রতীপের সাথে কথা
বলে জানতে পারলাম – ওটি জগতগৌরি মন্দির, মানে মা মনসা মন্দির। খুব জাগ্রত মন্দির
নাকি। একটু বাদে পিচরাস্তা ছেড়ে মেঠো রাস্তা ধরল আমাদের অটো, বেশ খানিকটা গিয়ে গাছ
গাছালীতে ঘেরা একটি সুন্দর মন্দিরের সামনে দাঁড়ালো অটোটি। জানতে পারলাম এটি রাখাল
রাজা মন্দির বা গোপাল মন্দির, আর জায়গাটির নাম গোপালদাসপুর। টলার মোড় থেকে যে
রাস্তাখানি ওসমানপুর যাচ্ছে, সেই রাস্তায় পাঁচ কিলো মিটার এলেই পড়বে এই মন্দির টি।
প্রতীপ
বলল সামনে একটু দূরে বেহুলা নদী, যাবেন নাকি? দেখে আসবেন আর ছবিও তুলে আসবেন।
আমিতো একপায়ে খাড়া, প্রতাপদা আর প্রবীরদা কে সাথে নিয়ে দেখতে গেলাম বেহুলা নদী। গিয়ে
দেখলাম নদীতে জল কই? নদীর জল তো খুবই কম শীর্ণধারা হয়ে বইছে নদী, জায়গায় জায়গায় জল
নেই। তবে চারিপাশে পাথরের চাই ফেলা, যা থেকে সহজেই অনুমেয় বর্ষাকালে ভয়ঙ্করী রুপ
ধরে এই নদী। প্রতীপ আর প্রবীরদাও বললেন – হ্যাঁ বর্ষাকালে এই নদী কেই চেনা যায় না,
তখন খরস্রোতা ভয়ঙ্কর রুপ, গেলো বর্ষাতেই আসে পাশের গ্রাম ভাসিয়ে দিয়েছিল এই নদী।
এবার ফেরার পালা, প্রতাপ দা বলল – তুমি সরষের ক্ষেত বলছিলে না? ওই দেখো ওই পাশে
আছে, অমনি ক্যামেরা কাঁধে দৌড় লাগালাম, গিয়ে দেখে মন জুড়িয়ে গেলো। দূর পজন্ত শুধু
হলুদে হলুদ হয়ে আছে, পটাপট কয়েকটি স্নাপ নিয়ে নিলাম। আর একজায়গায় ধান ঝাড়া হচ্ছে
মেশিনে, তাও লেন্সবন্দি করলাম, তারপর ফিরে চললাম বাড়ীর উদ্দেশে। ফিরে এলাম টলার
মোড়ে, প্রবীর দা বলেছেন এখান থেকে বাস পাবো বৈঁচি স্টেশন যাওয়ার। অল্প কিছু পরেই
বাসের দেখা মিলল, আমাকে বাসে তুলে দিয়ে তবে দুই ভাই দাঁড়িয়ে রইলেন। বাস এগিয়ে চলল,
দূরে পড়ে রইলেন সম্পূর্ণ অনাত্মীয় অথচও খুব কাছের তিনজন। যাদের ভালোবাসা, আপনবোধ
মুগ্ধ করেছে আমায়, জিতে নিয়েছে হৃদয়।
বাসে
খুব ভিড়, সামনে বসে থাকা মেয়েটিকে ক্যামেরার ব্যাগ টি ধরার জন্নে বলতে একবাক্যে
রাজি হয়ে গেলো, ধন্যবাদ জানিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। টলার মোড় থেকে বৈঁচি স্টেশন প্রায়
৫-৬ কিলোমিটার, টাইম লাগে মোটামুটি ১৫-২০ মিনিট। একটু বাদে স্টেশন এসে গেলো, টিকিট
কেটে প্ল্যাটফর্মে উঠে জানতে পারলাম আজ রবিবার তাই ট্রেন ক্যানসেল, পরবর্তী ট্রেন
সেই ২:২০ তে। মনে পড়ল আরে প্রতাপদা বারবার করে বলে দিয়েছিল যেন স্টেশনে গিয়ে একবার
ফোন করে অবশ্যই জানাই, নইলে চিন্তা করবে। মোবাইল বের করে প্রতাপদা কে ফোন করে একটু
কথা বলে নিলাম। একটু বাদে ট্রেন এলো, ফিরে চললাম বাড়ীর পানে। পিছনে পরে রইল অতীত
বাংলার গৌরবময় ইতিহাস।
কিভাবে যাবেন?
হাওড়া – কাটওয়া শাখার ট্রেন ধরে
সরাসরি নামতে পারেন কালনা স্টেশনে। নেমে যেসব বাস
বৈঁচি যাচ্ছে সেই সব বাসে উঠে নামতে হবে বৈদ্যপুর বাজার, নেমে মিষ্টির দোকানে
শিঙ্গাড়া, কচুরি খেতে কিন্তু ভুলবেন না। আমি শিওর যে শিঙ্গাড়া, কচুরির স্বাদ আপনার
মুখে অনেকদিন লেগে থাকবেই। বৈদ্যপুর হেঁটেই ঘুরে দেখতে পারেন, বাজারে ট্রাই করতে
পারেন স্পেশাল রসগোল্লা। আর যদি গোপালদাসপুরের রাখাল রাজা (গোপাল) মন্দিরে যেতে
চান বা জগত গৌরি মন্দিরে যেতে চান তো একটু হেঁটে টলার মোড়ে আসতে হবে, ওখানে অটো
পাবেন। আর যদি প্রতীপের অটো তে সওয়ার হতে চান, অবশ্যই ফোন করুন এই নম্বরে (মোবাইল
– ৯২৩২৭৩৭৬০৬)।
বৈদ্যপুর এবং গোপালদাসপুরের ছবি দেখার জন্নে অনুরোধ করব নীচের লিঙ্কে visit করতে
No comments:
Post a Comment