Tuesday 4 October 2016

কিছু টুকরো টুকরো কথা আর আমি






কিছু টুকরো টুকরো কথা আর আমি

আচ্ছা মানুষ মাত্রেই কি নিঃসঙ্গ? এই পৃথিবীতে আসা একা আবার ফিরে যাওয়াও এক একাই। মাঝে এক একটা স্টপেজে এক একজনের সাথে কিছু সময়ের পরিচয়, সম্পর্ক, ভালোবাসা কিংবা খারাপ লাগার সম্পর্ক। কে জানে এগুলো সাময়িক না সারা জীবনের? নইলে হাজারো কাজের বাস্ততায়, চেনা অচেনা লোকের ভিড়ে, উৎসবে, আনন্দে, শোকে, দুঃখে কেন আমি নিঃসঙ্গ?

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমার অগোছালো এক জীবন। অঙ্কে বরাবরের কাঁচা আমি তাই জীবনের জটিল হিসাব কোনদিনও মিলাতে পারিনি আর এখন মেলানোর ইচ্ছাও নেই। যা পেয়েছি তার থেকে হারিয়েছি অনেক বেশি, জীবনে অনেক কঠিন, প্রতিকুল দুঃসময় পার করেছি, না করেছি বললে ভুল বলা হবে, এখনও তো তাই করে চলেছি। মাঝে মধ্যে এমন অনেক কিছুর মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয় জীবন যার জন্যে আদৌ প্রস্তুত নই আমি। এরকম যে ঘটতে পারে, সেটা নিজেকে বোঝাতে বোঝাতে অনেকটা সময় কেটে যায়, ফলপ্রাপ্তি বলতে আর একটা নতুন আঘাত। ইদানীং মনের মধ্যে কালবৈশাখীর অস্থিরতা জাগে, সারাদিনের শেষে যখন ক্লান্ত হয়ে বাড়ীর পানে ফিরি, তখন ইচ্ছে করে স্বপ্নের জাল বুনতে, প্রিয়ার আদরে হারিয়ে যেতে, একটু বাড়তি Attention পেতে। যতদিন  যাচ্ছে ইচ্ছে গুলো যেন আরও চেপে বসছে মনের গভীরে।

ধুসস নিজেকে মাঝে মাঝে মনে হয় এক দিকভ্রষ্ট নাবিক, যে কোনদিনও তার গন্তব্য খুঁজে পাবে না। অসীম শূন্যতার মাঝে হারিয়ে যাবে চিরদিনের মতো, আমি কেন আমার স্বপ্নের মতো হতে পারিনা? নিদ্রাহীন চোখে হাজার একটা স্বপ্ন, ভাবি অবাক হয়ে কেন এত স্বপ্ন দেখছি? কি হবে স্বপ্ন দেখে? স্বপ্ন পুরন কি হবে এই জীবনে? জানিনা কি দোষে বা কারনে স্বপ্ন গুলো সব হারিয়ে যায়, মিথ্যে হয়ে যায়। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে গিয়ে বাস্তবকে তো ভুলে যাইনি কোনদিনও তাহলে কেন কেন? এলোমেলো ভাবনায়, অগোছালো জীবনে, গন্তব্যহীন পথে দিকভ্রান্ত পথিক আমি আজও বন্দী স্বপ্নের বেড়াজালে। খুব ভালো হতো যদি জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, স্বপ্ন গুলোকে বস্তাবন্দী করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারতাম, হয়ত মুক্তি পেয়ে যেতাম।  

আজ উপলব্ধি করেছি যদি নিজে ভালো থাকতে চাও তাহলে “স্বার্থপর” হয়ে যাও, আর সবার কাছে ভালমানুষ হয়ে থাকতে চাইলে “নিঃস্বার্থ” হও। নিঃস্বার্থ হয়ে হয়তো সবার কাছে "ভালো" সাজা যায়, কিন্তু নিজে ভালো থাকা যায় না। হয়তো সবাই তোমার প্রশংসা করে বলবে, "তুমি না খুব ভালো, তুমি মহান"। তুমি সবার জন্য স্বার্থত্যাগ করে যাবে, সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে যাবে, সবার সুখে দুঃখে পাশে থাকবে। কিন্তু দিন শেষে, যে যার মত সুখ খুঁজে নিয়ে চলে যাবে, একা তুমিই পড়ে থাকবে। কারণ তুমি "নিঃস্বার্থ"। তাই আমি মনে করি "স্বার্থপর" মানুষই ভালো থাকে। হয়ত সবাই তাকে "ভালো, মহান ইত্যাদি" বলে না, তাতে তার কিছু যায় আসে না। সে সুখেই থাকে, ঘুরে ঘুরে সে একজন "নিঃস্বার্থ" মানুষের দেখা পায় তার কাছ থেকে সে "সুখ" কুড়ায়। তারপর চলে যায় অন্য কারো কাছে সুখের সন্ধানে ... শেষ হলে আবার নতুন একজন, কিন্তু তার সুখ কুড়ানো চলতেই থাকে।   

"স্বার্থপর" মানুষ গুলোকে রাগ করে, ঈর্ষা করে "ধুরন্ধর" বলে ডাকা হয়। "নিঃস্বার্থ" মানুষগুলোকে আদর করে "বোকা" বলে ডাকা হয়। পৃথিবীর সব "কষ্ট", "শূন্যতা" আর "একাকীত্ব" নামের অনুভূতি গুলো বোকাদের জন্যই বরাদ্দ। বোকারা এগুলো প্রথমে নিতে চায় না, তাও এগুলো তাদের জোর করে গছিয়ে দেয়া হয়। এগুলোই তাদের উপহার, "নিঃস্বার্থ" হওয়ার উপহার। উপহার তো আর ফেরত দেয়া যায় না। কিন্তু আমি আজ সব ফেরত দিয়ে এখন স্বার্থপর হতে চাই।

এখন আমার খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। একটা জনমানব শূন্য দ্বীপ চাই আমার, অনেক গাছ, পশু-পাখি থাকবে, সমুদ্রের ধারে বসে আমি সমুদ্রের গর্জন শুনবো, মাথার উপরে পাখিরা উড়ে যাবে দল বেঁধে। বসে বসে দেখব টুপ করে কেমন সূর্য টা ডুবে গেলো সমুদ্রের অতল জলে। নীল জলরাশির মাঝে সাঁতার কাটবো আমি, পাশে কোন হাঙররুপী মানুষ থাকবে না। দ্বীপের মাঝে একটুকরো সবুজ গালিচা পাতা মাঠ, তার মাঝে ছোট্ট একটু মাথা গোঁজার ঠিকানা, সবুজ গালিচায় শুয়ে শান্তিতে ঘুমাব আমি, যখন চোখ মেলবো মাথার উপর হাজার তারা ঝলমল করবে। একটা চুপচাপ দ্বীপ চাই, যেখানে আমি নিজের সাথে কথা বলব। কেউ এসে মেকি সহানুভুতি জানাবে না, উপদেশ দেবে না, কোন স্বার্থ, হিংসা, লোভ থাকবেনা। কে জানে এরকম কোন দ্বীপ খুঁজে পাব কিনা? চারিদিকে সব আধুনিক, শিক্ষিত, সভ্য মানুষে ভরা, বাস্তব জগতেও গিজগিজ করছে মানুষ আবার ভার্চুয়াল জগতেও। কার হাতের ঘুড়ি হয়ে আর উড়তে চাইনা আমি, তার থেকে সুতো ছিঁড়ে অচেনা, অজানা কোন জায়গায় পরে থাকতে চাই আমি, যেখানে ঘুড়ি টাকে কেউ খুঁজতে আসবেনা।




No comments:

Post a Comment