Saturday 8 October 2016

কুমারী পূজা সম্বন্ধে কিছু কথা



(ছবি প্রতীকী মাত্র, গুগুল থেকে সংগৃহীত)

কুমারী পূজা সম্বন্ধে কিছু কথা

স্বামী বিবেকানন্দ একবার বলেছিলেন – মেয়েদের পূজা করেই সব জাত বড় হয়েছে। যে দেশে, যে জাতে মেয়েদের পূজা নেই, সেই দেশ, সেই জাত কখনও বড় হতে পারেনি আর কস্মিনকালেও পারবে না। আজ যখন চারিদিকে নারী অবমানননার ঘটনা ঘটছে, তখন কুমারী পূজার প্রাসঙ্গিকটা আর বেশি করে মনে পরে।  

কুমারী পূজা কি না জেনে অনেকে একে খাটো করেন, ব্যাঙ্গ করেন। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছেন - শুদ্ধাত্মা কুমারীতে দেবী শক্তি বেশি প্রকাশ পায়। তিনি চেয়েছিলেন কুমারী পূজার মাধ্যমে আমরা নারী জাতির প্রতি আর শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবো, আরও ভাল করে জানতে পারব সেই পবিত্র মাতৃ শক্তির স্বরূপ। সেই জন্যেই স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০১ সালে বেলুর মঠে নয়জন কুমারী কন্যার পূজার মাধ্যমে এই কুমারী পূজার পুনঃপ্রচলন করেন। সাধারণতও দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমী তিথিতে ৫ বৎসর থেকে নয় বৎসরের কোন কুমারী কন্যাকে দেবী রুপে কল্পনা করে তাঁর পূজা করা হয়। অবশ্য জগধাত্রী পুজাতেও কুমারী পূজার উল্লেখ বা উদাহরণ পাওয়া যায়।

কুমারী পূজা সম্পর্কে বিভিন্ন শাস্ত্রীয় ধারনা - বৃহদ্ধর্মপুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী দেবতাদের স্তবে প্রসন্ন হয়ে দেবী চণ্ডিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে দেখা দিয়েছিলেন। দেবীপুরাণে বিস্তারিত এ বিষয় উল্লেখ আছে। তবে অনেকে মনে করেন যে, দুর্গা পূজায় কুমারী পূজা সংযুক্ত হয়েছে তান্ত্রিক সাধনামতে। এক সময় শক্তিপীঠ সমূহে কুমারী পূজার রীতি প্রচলিত ছিল। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেও কুমারীর কথা উল্লেখ আছে। আর এ থেকে অনুমান করা কঠিন নয় যে, দেবীর কুমারী নাম অনেক পুরনো। দেবীর কুমারী নাম যেমন পুরনো, তার আরাধনা ও পূজার রীতিনীতিও তেমনি প্রাচীন এবং ব্যাপক। যোগিনীতন্ত্র, কুলার্ণবতন্য, দেবীপুরাণ, স্তোত্র, কবচ, সহস্রনাম,তন্যসার, প্রাণতোষিণী, পুরোহিতদর্পণ প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি এবং মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনানুসারে কুমারী পূজায় কোন জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যে-কোন কুমারীই পূজনীয়, এমনকি বেশ্যাকুলজাত কুমারীও। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত। তন্ত্রমতে এক থেকে ষোল বছর পর্যন্ত ব্রাহ্মণ বালিকাদের কুমারী পূজার জন্য নির্বাচিত করা যায়। তবে অন্য জাতির কন্যাকেও কুমারীরূপে পূজা করতে বাধা নেই। কিন্তু অবশ্যই তাদের ঋতুবতী হওয়া চলবে না। এদিন নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়।

দেবীর মত সাজিয়ে হাতে দেয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুরের তিলক এবং পায়ে আলতা। সঠিক সময়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়। চারদিক শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তব-স্তুতিতে পূজাঙ্গণ মুখরিত থাকে । ধর্মের বিধান অনুযায়ী এক একবয়সের কুমারীর এক এক নাম রয়েছে, যেমন - (১)এক বছরের কন্যার নাম সন্ধ্যা (২)দুই বছরের কন্যার নাম সরস্বতী (৩)তিন বছরের কন্যার নাম ত্রিধামূর্তি (৪)চার বছরের কন্যার নাম কালীকা (৫) পাঁচ বছরের কন্যার নাম সুভাগা (৬)ছয় বছরের কন্যার নাম উমা (৭)সাত বছরের কন্যার নাম মালিনী (৮)আট বছরের কন্যার নাম কুব্জিকা (৯)নয় বছরের কন্যার নাম কালসন্দর্ভা (১০)দশ বছরের কন্যার নাম অপরাজিতা (১১)এগার বছরের কন্যার নাম রুদ্রাণী (১২)বার বছরের কন্যার নাম ভৈরবী (১৩) তের বছরের কন্যার নাম মহালক্ষ্মী (১৪)চৌদ্দ বছরের কন্যার নাম পীঠনায়িকা (১৫)পনের বছরের কন্যার নাম ক্ষেত্রজ্ঞা ও (১৬)ষোল বছরের কন্যার নাম অম্বিকা।

কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব - কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। সকল নারীর মধ্যেই বিরাজিত রয়েছে দেবী শক্তি। তাই কুমারী রূপে, নারীকে দেবীজ্ঞানে সন্মান জানানোর একটি বাস্তব উদারহণ হচ্ছে কুমারী পূজা।

No comments:

Post a Comment