Monday 31 October 2016

পাকিস্থান – একটি ব্যর্থ দেশ তবে কি ক্লাইম্যাক্স আসন্ন?






পাকিস্থান – একটি ব্যর্থ দেশ তবে কি ক্লাইম্যাক্স আসন্ন?

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে চোখ বোলালে একটি প্রশ্ন সবার মনে উঠে আসে, সীমান্তে আবার বর্বরোচিত ঘটনা, আবার এক সৈনিকের মুণ্ডছেদ, দেহ বিকৃতি তবে কি যুদ্ধ আসন্ন্য? নাপাক পাকিস্থানকে কি সঠিক এবং জুতসই জবাব দেওয়া হবে?

না আমি যুদ্ধের স্বপক্ষে বা বিপক্ষে গলাবাজি করতে কলম ধরিনি, আমি জানি ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধলে সেটা পুরোদস্তুর যুদ্ধের রুপ নেবে, হয়তো কেন পাকিস্থান প্রথমেই পরমাণু হামলা করবে আর তাঁর প্রত্যুত্তরে পাল্টা ভারত, যার ফলে এই উপমহাদেশে আড়াই কোটির বেশি মানুষ প্রান হারাবেন, গুরুতর জখম বা সারাজীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যাবেন কম করে ৬০লক্ষের বেশি মানুষ। কিন্তু একশ্রেণীর মানুষের ভ্রান্ত উচ্চাশা, মনগড়া কিছু ভাবনার সমূলে আঘাত করাটা বেশি দরকার।

হয়তো এক এক সময় পরিস্থিতিটাই এমন দাঁড়ায় যে যুদ্ধটাই অবধারিত হয়ে যায়, এটাই যুগধর্ম। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকে যে দেশ শুধু ভারত বিরোধিতা করে এসেছে, সমগ্র বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাস রপ্তানি করে চলেছে সেই দেশের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু শত্রুর ক্ষমতা, দোষত্রুটি ভালোভাবে অনুধাবন না করে যুদ্ধে জড়িয়ে পরাটা আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ নয়। টাই যারা যুদ্ধ যুদ্ধ জিগির তুলছেন তাঁরা সবদিক চিন্তা বিবেচনা করে এই দাবি তুলছেন তো? একটু তলিয়ে দেখে নেওয়া যাক।

পাকিস্থানের নাপাক নীতি, কূট কৌশল

সম্প্রতি জইশের মুখপত্র আল-কালামের সর্বশেষ সংখ্যায় মাসুদ আজাহারের বক্ত্যব্য - ৯০-এর দশক থেকে পাক সরকার জঙ্গিদের সরাসরি সমর্থন করে ফায়দা পেয়েছে। এখন পাক সরকার আর একটু সাহস দেখালে কাশ্মীর তো বটেই, সিন্ধু জল-সমস্যাও মিটে যাবে চিরকালের জন্য। শুধু মুজাহিদিনদের জন্য দরজাটা খুলে দিক পাক সরকার। কি অকপট উক্তি? না এটা নতুন কোন কিছু নয়, আসলে এই সবই জেনারেল জিয়া উল হকের উর্বর বুদ্ধির দান। যিনি বলে গেছিলেন ভারতকে হাজার ক্ষত দিতে হবে আর সেটা ভিতর থেকেই, যাতে ভিতরের বুনিয়াদ নড়বড়ে হয়ে যায় আর আমাদের এক আঘাতেই ভেঙ্গে পড়ে। তিন তিনবার শোচনীয় পরাজয়ের পর পাকিস্থানের অঘোষিত নীতিই হল “হাজার ক্ষত আর হিট অ্যান্ড রান”। ১৯৯৯ সালে এই জেনারেল জিয়া উল হকের প্ল্যান অনুযায়ী টার্গেট বানানো হয় দেশের ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাদ্রাসা গুলিকে, যেখানে উস্কে দেওয়া হবে ভারত বিরোধী জিগির তাও ধর্ম রক্ষার নামে আগুনে সেঁকে নিয়ে। ছড়িয়ে দিতে হবে এই বার্তা – কাশ্মীরে মুসলমান ভাইরা ভারতের হিন্দু শাসকের হাতে অত্যাচারিত এবং নিপীড়িত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর একটি গাঁজর – আম পাবলিককে গিলিয়ে দাও জিহাদের লক্ষ্য হল মুঘল আমলের মুসলিম শাসন কে ফিরিয়ে আনা, অর্থাৎ কিনা ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশ, আফগানিস্থান সব এক শাসনের ছাতার নীচে চলে আসবে।


এই স্বপ্নের পোলাওতে ঘি ঢেলে চলেছে সবকটি ভারত বিরোধী সংগঠন, আর প্রধান বাবুর্চি পাকিস্থান তো আছেই।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে নবতম সংযজন রাজধানীর অলিন্দে আইএসআইএর চর, এর আগেও এধরনের ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি বারবার সামনে চলে আসছে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ছিদ্রগুলি। শত্রুকে আক্রমণ করতে গিয়ে এটা ভুলে গেলে চলবে না দেশের ভিতরে আজও ঘাঁটি গেঁড়ে বসে আছে মিরজাফর, জগতশেঠের দল, কে বলতে পারে শত্রুর আক্রমণ বা প্রতি আক্রমনে তাঁরা শত্রুকে রসদ যোগাবেন না দেশের ভিতর থেকে? তাই যারা আবার একটি সারজিক্যাল স্ট্রাইক  চেয়ে গলা ফাটাচ্ছেন তাঁদের উদ্দেশে বলি আজ সীমান্তে সারজিক্যাল স্ট্রাইকের  পাশাপাশি আশু প্রয়োজন দেশের অভ্যন্তরে সারজিক্যাল স্ট্রাইকের যাতে শত্রু শিবিরে তথ্য বা অন্য কোনও রকম সাহায্য না পৌছাতে পারে সেবিষয়ে সুনিচ্ছিত হওয়া দরকার।

পাকিস্থানের বিরুদ্ধে কি আদৌ পাশে পাওয়া যাবে কোনও দেশ কে?

উরি হামলার পর আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, রাশিয়ার খানিকটা সমর্থন পেয়েছি আমরা, কিন্তু পাকিস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কোনও দেশই এগিয়ে আসবে না। সবাই গা বাঁচাতে ব্যাস্ত যাতে তথাকথিত জিহাদের আঁচ নিজেদের দেশে যাতে না পড়ে। আজ যে আমেরিকা ভারতের কাছাকাছি এসেছে (হয়তো খানিকটা নিজেদের তাগিদেই, পরবর্তীকালে এই নিয়ে লেখা যাবে) ভুলে গেলে চলবে না এই আমেরিকাই সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, তদানীন্তন দোসর পাকিস্থান কে বাঁচানোর জন্যে। সেই সময় রাশিয়া ভারতের সাহায্যে এগিয়ে না এলে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতো।

বৃহৎ শক্তিগুলি অস্ত্র বিক্রয়ের সহজলভ্য বাজার হিসাবে এই উপমহাদেশে কখনই চাইবে না সমস্যার সমাধান হোক বরং চাইবে তোমরা যুদ্ধ করো, সমরাস্ত্র যা লাগবে আমরা দেবো, তোমরা শুদু কড়ি ফেলো। কে না জানে অস্ত্র যখন লাভজনক পন্য তখন যুদ্ধের থেকে বড় বিজ্ঞ্যাপন আর কিছু হতে পারে না।

তাহলে আমাদের এখন কি করা উচিত?

১) এবিষয়ে মহামতি চাণক্যের নীতি অনুসরণ করা উচিত আমাদের – আমাদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গুলিকে ঢেলে সাজাতে হবে। উস্কে দিতে হবে বালুচিস্থান, ওয়াজিরিস্থান, সিন্ধু প্রদেশ সমস্যাগুলি, যাতে ভিতরে ভিতরে গৃহযুদ্ধে ক্ষয়ে যায় পাকিস্থান। তবে ঢাকঢোল পিটিয়ে ৫৬ইঞ্চি ছাতি না পিটিয়ে (আমাদের সহজাত অভ্যাস হল যে কোনও সফলটাকে ভোট বাক্সের রাজনীতি বানানো, এর থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন) অতি সঙ্গোপনে।

২) আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সেনা ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর আমুল পরিবর্তন দরকার। দেশে নতুন নতুন শিল্প, ব্যাবসার দিক খুলে দিয়ে অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র হয়ে উঠতে হবে ভারতকে। অস্ত্র আমদানির চেয়ে দেশেই বানাতে হবে উন্নত অস্ত্র, এতে কর্মসংস্থানও হবে, দেশের পরিকাঠামো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

৩) আমেরিকা, ইসরায়েল, রাশিয়ার সাথে সামরিক সুসম্পর্ক আরও উন্নত করতে হবে, পাশাপাশি পাকিস্থানের পাশাপাশি সম্ভাব্য শত্রু কে চিনে নিতে হবে। হ্যাঁ আমি চীনের কথা বলছি, চীনই একমাত্র দেশ যে পাকিস্থানকে দরাজ হাতে সমর্থন করে। অবশ্যই নিজের স্বার্থে, চীন এশিয়া সহ সারা বিশ্বে দাদাগিরি করতে চায়, এমতাবস্থায় শত্রুর শত্রু আমার মিত্র প্রবাদটিকে যথাযথ রুপে কাজে লাগাতে হবে। চীনের প্রতিপক্ষ্য দেশগুলিকে নিয়ে একটি জোট তৈরি করতে হবে, যাতে পারস্পরিক নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। ভুলে গেলে চলবে না ভারতে বিশাল বাজারের উপর চীনের নজর আছে, সেই বাজারকে কাজে লাগিয়ে চীনকে পাকিস্থানের পাশ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। চীন ও পাকিস্থান দুটি দেশের বিরুদ্ধেই সব সময় তৈরি থাকতে হবে সামরিক এবং অর্থনৈতিক উভয়দিকেই।

৪) রক্ষণাত্মক নীতি থেকে সরে এসে রক্ষণাত্মক আক্রমণের নীতি নিতে হবে আমাদের। পাকিস্থানের অর্থনীতি এমনি বিধ্বস্ত, দৈনন্দিন পরিকাঠামোগত খরচ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে শরিফ সরকার। জঙ্গি পোষার খরচ, তাঁদের অস্ত্র শস্ত্র সমেত যাবতীয় খরচার একটা বড় অংশ আসে বিদেশ থেকে অনুদান বাবদ। পাকিস্থান এই অনুদান পেয়ে থাকে দেশের আভ্যন্তরীণ উন্নয়ন আর সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্যে, যেটা তাঁরা ব্যয় করে থাকে জঙ্গি দের মদতের কাজে।  কিন্তু আন্তজাতিক বিশ্ব ধীরে হলেও পাকিস্থানের স্বরূপ বুজতে পারছে, তাই তারাও আজ হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। আরও ব্যাপক হারে পাকিস্থানের মুখোশ বহিবিশ্বের কাছে খুলে দিতে হবে যাতে আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে পাকিস্থান। তাঁদের অর্থের যোগান বন্ধ করে দিতে হবে। সময় এসেছে মোস্ট ফেভারদ নেশনের তকমা কেড়ে নিয়ে পাকিস্থানের সাথে ব্যাবসা বানিজ্য বন্ধ করার। যাতে পাকিস্থান সমুহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, সাথে সাথে কূটনৈতিক দিক থেকেও বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে পাকিস্থানকে। নদী কূট নীতির সম্মুখীন হয়েছি আমরা, মিত্র পাকিস্থানের কথায় ইতিমধ্যে চীন ব্রহ্মপুত্রের একটি উপনদীর জল আটকাতে শুরু করে দিয়েছে, সেখানে সিন্ধু জলচুক্তি ভাঙ্গার রাস্তায় ভারত যাবে কিনা সেটা ভাবার অবকাশ থাকলেও, পাল্টা চাপ আফগানিস্থানের দিক থেকে দেওয়া যেতেই পারে। ইতিমধ্যে আফগানিস্থানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি আফগানিস্থানের পূর্বাঞ্চলে যে তিনটি প্রধান নদী আছে তাঁর উপর বাঁধ নির্মাণের জন্যে ভারতের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। যেখানে ইতিমধ্যে আফগানিস্থানের পশ্চিমাংশে হেরাট প্রদেশে হরি নদীর উপর সালমা বাঁধ ও জলাধার তৈরি করছে ভারত তাই আফগানিস্থান চায় দেশের পূর্বাঞ্চলেও এই ধরনের বাঁধ তৈরি করে দিক ভারত। আফগানিস্থান এমনিতেই পাকিস্থানি জঙ্গি সন্ত্রাসের শিকার, তাই পারস্পরিক নির্ভরতা বাড়িয়ে দুটি দেশ একত্রে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করলে আখেরে লাভ হবে। আফগানিস্থানে একটি শক্তিশালী বেস থাকা দরকার ভারতের এটা উপলব্ধি করতে হবে। 

৫) সর্বোপরি নিজের দেশের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে আস্তিনের সাপ ছোবল মারতে না পারে। সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি, তোষণের নীতি ছেড়ে সব ধর্মের মানুষকে একত্র করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই দেশ শুধু মাত্র কোনও একটি জাতির, ধর্মের মানুষের জন্যে নয় এই দেশ সমগ্র ভারতবাসীর। জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে কোনও সম্প্রদায়কে একঘরে বা নিপীড়ন করে নয়, তাঁদের সমস্যা আন্তরিকভাবে অনুধাবন করতে হবে। যাতে তাঁরা কোনও দেশ বিরোধী শক্তির কাঠপুতুল না হয়ে যেতে পারে।

দেশ নানান সমস্যার সম্মুখীন, এই দ্রোহকালে যদি শুভ বুদ্ধির উদয় না হয় তাহলে আমরাই পিছিয়ে পড়ব। অতীতকাল থেকে যুদ্ধ কোনও সমস্যার সমাধান দিতে না পারলেও যুদ্ধ হয়েছে আর ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু যুদ্ধকে এড়িয়ে কূটনৈতিক পথে যদি পাকিস্থানকে সমুচিত জবাব দেওয়া যায় এর থেকে ভালো কি বা হতে পারে। এরপরেও যদি যুদ্ধের পথে যেতে হয় সেটা নির্ণায়ক যুদ্ধই হোক।

No comments:

Post a Comment