Thursday 11 May 2017

বুরহান ওয়ানির মৃত্যুতে যদি কাশ্মীর উত্তাল হতে পারে, তাহলে উমর ফায়াজে’র মৃত্যুতে নয় কেন?



বুরহান ওয়ানির মৃত্যুতে যদি কাশ্মীর উত্তাল হতে পারে, তাহলে উমর ফায়াজে’র মৃত্যুতে নয় কেন?

এই প্রশ্নটা গত কয়েকদিন ধরে আমার মনকে কুরে কুরে খাচ্ছে, অথচও হিসাবটা মেলাতে পারছিনা। হ্যাঁ আমি জঙ্গিদের গুলিতে নিহত কাশ্মীরের তরুণ সেনা অফিসার উমর ফায়াজ পারি’র (২২) কথাই বলছি। গত ডিসেম্বর মাসেই সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম জেলার এই যুবক, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর প্রথমবার ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন, আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে। অথচও সেই প্রথম ছুটিই হল তাঁর জীবনের শেষ ছুটি, বিয়ের অনুষ্ঠান পরিণত হল তাঁর শবযাত্রায়।

সংক্ষেপে একটু জেনে নি এই উমর ফায়াজ পারি’র কথা, দপড়াশোনা দক্ষিণ কাশ্মীরের নবোদয় বিদ্যালয়ে, তারপর পুণের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে(এনডিএ)। পড়াশোনায় যথেষ্ট মেধাবী তাঁর সাথে খেলাধুলোতেও দক্ষ ছিলেন উমর। অর্থাৎ একজন গুণী, সফল মানুষের সব গুণই ছিল তাঁর মধ্যে, সেনাবাহিনীতেও তিনি অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু বুরহান ওয়ানির মতো কোনও একজন আজাদির সিপাহীর বুলেটে শেষ হয়ে গেলো এই প্রতিভাময় কাশ্মিরির জীবন।

না এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কারণ, সোপিয়ান, কুলগামের মতো এলাকায় অশিক্ষা, বেকারত্ব’র সংখ্যা অনেক বেশি। তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে, ভারত বিরোধী জেহাদে অংশগ্রহণ করছে, পাথর ছুড়ছে। বুরহান ওয়ানি তাদের কাছে ‘হিরো’, আজাদির সিপাহী। আর সেখানে উমর ফায়াজরা ব্যাতিক্রমি হলেও দেশদ্রোহী ছাড়া আর কিছুই নয়। হয়তো সেখানকার প্রত্যেক বাবা-মায়েরাই চান তাদের সন্তান উমরের মতো সফল হোক, কোন বাবা মা আর চাইবেন তাঁদের সন্তান বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করে সেনাবাহিনী বা পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারাক, এই ব্যাপারে যতই তাদের মনে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকুক না কেন, আমি নিশ্চিত তাঁরা তাঁদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কোথাই চিন্তা করে থাকবেন। আর এই বিষয়টা তথাকথিত আজাদির সিপাহীরা বেশ ভাল করেই জানত। তাই তারা উমর ফায়াজকে খুন করে ওই এলাকার মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল- ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ফল কি হতে পারে।

হতে পারে সাময়িক জয় এই বিচ্ছিনতাবাদিদের হল, কিন্তু এটা তো ঠিক আজ কাশ্মীরের মানুষ প্রকৃত উন্নয়ন চায়, শিক্ষা চায়, কর্মসংস্থান চায়। এবার সমস্যা হল যারা কাশ্মীরকে অশান্ত করে রাখতে চায় তারা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে এলাকায় কোনও রকমের উন্নয়ন না হয়, প্রতিনিয়ত অশান্তি্‌হিংসার বীজ বপন করে চলেছে, ক্রমাগত সাধারণ মানুষের মনে বিষ ঢেলে চলেছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যাতে নিরাপত্তা বাহিনী, সরকারি কর্মীদের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ঘৃণা তৈরি হয়, তাঁরা আক্রমণ, আঘাত করে বসেন তাঁদের। আসলে তারা কাশ্মীরীদের মেকি ভাবাবেগের কথা, ঝুটা আজাদির কথা বলে নাপাক পাকিস্থানের মদতে জেহাদের আগুন জ্বালিয়ে চলেছে। দুরভাগ্যের কথা দেশের কিছু আস্তিনের সাপ, মিডিয়া তথা বুদ্ধিজীবী মহল এতে মদত জুগিয়ে চলেছে। 

এখন এটাই এখন দেখার আগামী দিনে ভূস্বর্গ উমর ফায়াজের মৃত্যু নিয়ে সরব হয় কিনা? ঠিক যেমনটা আমরা লক্ষ্য করেছিলাম কাশ্মীরের ‘গ্ল্যামার বয়’ সন্ত্রাসবাদী বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর হয়েছিলো। আজ যদি ভারতীয় সেনার কাছে বুরহান ওয়ানি যদি আত্মসমর্পন করত, তাহলে তার স্বযত্নে নির্মিত ভাবমূর্তি ধাক্কা খেত বা তাকে নিয়ে যে রোমান্টিক জীবনযুদ্ধের কাহিনী তৈরি হয়েছে তার বদলে হয়ত তাকে দু’তরফের দালাল বলে বিতর্ক শুরু হত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সেরকম কিছু না হওয়ায় কাশ্মীরের কট্টরপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এবং অল পার্টি হুরিয়ত কনফারেন্সের সহযোদ্ধারা আর একটি সুযোগ পেয়ে গেলো। এই বেশ কিছু দিন ধরে আমরা দেখেছি বুরহান ওয়ানিকে একজন রাজনৈতিক নেতা তথা মহান বিপ্লবীর আদর্শ হিসেবে তুলে ধরার মতলবি প্রচেষ্টা করে চলেছে কিছু বিক্রীত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। ফলস্বরূপ প্রায় শান্ত হয়ে আসা কাশ্মীর উপত্যকা ফের রূপান্তরিত হল কান্নার উপত্যকায়, পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাল্টা প্রতিরোধে, গুলিতে কতজন বিক্ষোভকারী প্রাণ হারালেন? এর দায় কি গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী বিক্রীত এবং বিকৃত সংবাদমাধ্যমের উপর চাপালে খুব অন্যায় হবে? যারা মিথ্যা ‘আজাদি’র ধুয়ো তুলে তলে তলে পাকিস্থানের সাথে যুক্ত হবার স্বপ্ন দেখার জন্যে, নিজেদের ব্যাবসায়িক আখের গোছানর স্বার্থে বলি দিয়েছিল আম কাশ্মীরী জনগণকে। 

এখন এটাই দেখার আগামী দিনে এই মেকি সংবাদমাধ্যম উমর ফায়াজের মৃত্যু নিয়ে কতটা সরব হয়, দেশের সম্মানীয় ‘বুদ্ধিজীবী’ মহল, উমর খালিদ-কানাইয়া কুমারের মতো মহান বিপ্লবীরা কোনও প্রতিবাদ সভা করেন কি না। আর যদি না করেন তাহলে তাঁদের পাকিস্থানের পা চাঁটা কুত্তা বললে কি খুব ভুল হবে?

No comments:

Post a Comment