Friday 19 May 2017

গণিতজ্ঞ, কবি, দার্শনিক এবং জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম



গণিতজ্ঞ, কবি, দার্শনিক এবং জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম 
(জন্মঃ ১৮ মে, ১০৪৮; মৃত্যুঃ - ৪ ডিসেম্বর, ১১৩১)

কাল আমার একজন প্রিয় কবির জন্মদিন ছিল (আমি তাঁকে কবি, দার্শনিকই বলব, কারন গণিত জিনিসটা আমার ঠিক মাথায় ঢোকে না, অবশ্য যার জীবনের অংকই মিলল না তাঁর গণিতে কিবা প্রয়োজন), সময়ের অভাবে লিখতে পারি নি, আজ একটু চেষ্টা করলাম মাত্র।

যদিও ওমর খৈয়াম বাঙালী বা ভারতীয় কবি (বাকি উপমাগুলো দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ, গণিতজ্ঞ বাদ দিচ্ছি, ওইরকম বহুমুখী প্রতিভার বিশ্লেষণ করি তেমন সাধ্য কই আমার) নন তবু কাজী নজরুল, কান্তি ঘোষ, নরেন্দ্র দেব, মুজতবা আলী প্রমুখ সাহিত্যিকগন খৈয়ামকে বাংলা সাহিত্যে অমর করে রেখে গেছেন। মাফ করবেন খৈয়াম এর রুবাইয়াৎ অনুবাদ করা আমার মত অধমের চিন্তা করাও দু:সাহসের ব্যাপার, ক্ষমতার তো প্রশ্নই নেই। আমি শুদু প্রয়াস করলাম রুবাইয়াৎ থেকে অনুবাদ করা কয়েকটি আমার পছন্দের বাংলা কবিতা তুলে ধরার।

‘রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম-কাজী নজরুল ইসলাম’ থেকে –
১। “ঘুমিয়ে কেন জীবন কাটাস?  কইল ঋষি স্বপ্নে মোর,
আনন্দ-গুল প্রস্ফুটিত করতে পারে ঘুম কি তোর?
ঘুম মৃত্যুর যমজ-ভ্রাতা তার সাথে ভাব করিসনে,
ঘুম দিতে ঢের পাবি সময় কবরে তোর জনম-ভোর।’’

২। আমরা পথিক ধূলির পথের, ভ্রমি শুধু একটি দিন,
লাভের আঙ্ক হিসাব করে পাই শুধু দুখ, মুখ মলিন।
খুঁজতে গিয়ে এই জীবনের রহস্যেরই কূল বৃথাই
অপূর্ণ সাদ আশা লয়ে হবই মৃত্যুর অঙ্কলীন।

৩। ‘এক সোরাহি সুরা দিও, একটু রুটির ছিলকে আর,
প্রিয় সাকী, তাহার সাথে একখানি বই কবিতার,
জীর্ণ আমার জীবনজুড়ে রইবে প্রিয়া আমার সার্থ
এই যদি পাই চাইবো না কো তখ্ত আমি শাহানশার’।

কিংবা কান্তি ঘোষের অনুবাদ -

১। সেই নিরালায় পাতায় ঘেরা
বনের ধারে শীতল ছায়,
খাদ্য কিছু,পেয়ালা হাতে
ছন্দ গেঁথে দিনটা যায়!
মৌন ভাঙ্গি মোর পাশেতে
গুঞ্জে তব মঞ্জু সুর ―
সেই তো সখি স্বপ্ন আমার,
সেই বনানী স্বর্গপুর!

বা সৈয়দ মুজতবা আলীর অনুবাদ 
১। জ্ঞান-বিজ্ঞান ন্যায়-দর্শন সেলাই করিয়া মেলা
খৈয়াম কত না তাম্ব গড়িল; এখন হয়েছে বেলা
নরককুন্ডে জ্বলিবার তরে। বিধি-বিধানের কাঁচি
কেটেছে তাম্বু-ঠোককর খায়, পথ-প্রান্তরে ঢেলা ।

আশ্চর্যের কথা শুদু বাঙালী লেখকরাই নন এমন কি ইউরোপের সাহিত্যিক মহলেও ঢেউ তুলে দিয়েছিলেন ওমর খৈয়াম, সাধে কি আর মার্কিন কবি জেমস রাসেল লোয়েল ওমর খৈয়ামের রুবাই বা চতুষ্পদী কবিতাগুলোকে "চিন্তা-উদ্দীপক পারস্য উপসাগরের মনিমুক্তা "বলে অভিহিত করেছিলেন। ওমর খৈয়ামের রুবাই বা চারপংক্তির কবিতাগুলো প্রথমবারের মত ইংরেজিতে অনূদিত হয় খৃষ্টীয় ১৮৫৯ সালে, করেছিলেন এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড, আর এই অনূবাদের সুবাদেই ওমর খৈয়াম বিশ্বব্যাপী কবি হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।

অসাধারণ জ্ঞানী ওমর খৈয়ামের একটি কবিতা দিয়ে লেখাটি শেষ করছি, তাহলেই পাঠক বুঝতে পারবেন ওনার জ্ঞ্যানের ব্যাপ্তি কতদূর ছিল, যেখানে দার্শনিকরা একটি বই লিখেও যে ভাব পুরোপুরি হৃদয়গ্রাহী করতে পারেন না, গভীর অর্থবহ চার-লাইনের একটি কবিতার মধ্য দিয়ে ওমর খৈয়াম তা সহজেই তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন -

“সৃষ্টির রহস্য জানো না তুমি, জানি না আমি
এ এমন এক জটিল বাক্য যা পড়তে পারো না তুমি, না আমি
পর্দার আড়ালে তোমায় ও আমার মাঝে চলছে এ আলাপ
পর্দা যেদিন উঠে যাবে সেদিন থাকবে না তুমি ও আমি।”

ফার্সি কাব্য-জগতে ওমর খৈয়াম এক বিশেষ চিন্তাধারার পথিকৃৎ, তাঁকে নিয়ে তর্ক, বিচার, গবেষণা হচ্ছে আর হবেও, আমরা আম আদমি বরং রস আস্বাধন করি ওনার অমুল্য সৃষ্টি রুবাইয়াৎ গুলির। 

No comments:

Post a Comment