Friday 25 November 2016

২৬/১১ – এক জ্বলন্ত সংগ্রামের কথা


২৬/১১ – এক জ্বলন্ত সংগ্রামের কথা

২৬/১১ নিছক কোনও সংখ্যা নয়, আপামর ভারতবাসীর মননে এই সংখ্যাটি এলে চোখ ভিজে ওঠে, সাথে সাথে চোয়াল দৃঢ় হয়ে ওঠে দুর্নিবার প্রতিরোধের ও প্রতিশোধের আশায়। ২০০৮ সালের এই দিনে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনার বিবরণে আমি যাব না, আমরা সবাই অল্প বিস্তর এই বিষয়ে জ্ঞ্যাত। কিন্তু আজ সকালে বিভিন্ন সর্বভারতীয় নিউজ পেপারের পাতা উল্টে আমি হতাশ, যারা আত্মবলিদান দিয়ে গেলেন – মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন, হেমন্ত কারকারে, বিজয় সালাস্কার, অশোক কামটে বা তুকারাম আম্বলে এবং সর্বোপরি হামলায় নিহত বা আহতদের প্রতি কোনও শ্রদ্ধাজ্ঞ্যাপন নেই, কোনও খবরও নেই যে কেমন আছে বীর শহীদদের পরিবার পরিজন। শুদু পাতা ভরতি করে লেখা নোট বাতিল ও সেই নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির খেয়োখেয়ি! মিডিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলি এটাই দেখাতে ব্যাস্ত যে নোট বাতিলের ফলে দেশের অর্থনীতি কিভাবে পিছিয়ে পড়ছে বা শাসকদল নিজের আখের কিভাবে গুছিয়ে নিয়েছে। সাধু উদ্যোগ সেবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, মিডিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলির আম আদমির প্রতি যে দায়বদ্ধতা তা সেলামের যোগ্য। তবে কেন জানিনা মনে পরে যাচ্ছে চুঁচুড়া স্টেশনে ঘুরে বেড়ানো এক শীর্ণকায়, অভাবী কিন্তু আভিজাত্যের গরিমায় ভরপুর এক জন বয়স্কা মহিলার কথা, যিনি শুদু স্টেশনে হাত বাড়িয়ে চুপ করে বসে থাকতেন, কিন্তু কোনদিনও তাঁকে কাউকে কিছু দিতে অনুরোধ করতে দেখিনি। মনে কৌতূহল জাগায় চেষ্টা করেছিলাম ওনার সাথে কথা বলে যদি কিছু তথ্য জানা যায়, কিন্তু পারিনি। উনি ওনার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এড়িয়ে গেছেন পুরো ব্যাপারটা। আশেপাশের কয়েকজনের থেকে শোনা – বড় ঘরের গৃহবধূ ছিলেন তিনি, স্বামী মারা যাবার পর তিন ছেলে সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে ওনাকে, যদিও ছেলেগুলি সব নাকি শিক্ষিত এবং নিজ জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাই মা কে জীবন থেকে বহিস্কার তাদের সাজে। যাক সে কথা, আজ আমাদের ভারতমাতার থুড়ি ভারতমাতা বললে তো আবার সেকুলার বাঙ্গালীর আঁতে লাগবে তাই দেশ মাতা এটাই ঠিক আছে, কি বলেন? যাক প্রসঙ্গে ফিরে আসি – আমাদের দেশ মাতার ও কত সুযোগ্য সন্তান (কেউ সৎ রাজনৈতিক, অবশ্য কোনও রাজনৈতিক নেতা/ নেত্রীদের নিজেকে অসৎ বলতে তো দেখলাম না, কেউ জাগরুক, নির্ভীক সাংবাদিক, সত্য তুলে ধরাই যাঁদের এক মাত্র লক্ষ্য, এছাড়া বাকিদের না হয় বাদ দিলাম। লিখতে গেলে পাতাও শেষ হয়ে যাবে) থাকতেও দেশ মায়ের একি হাল! আজও কেন দেশে এত দুঃখ, কষ্ট, এত দুর্নীতি, স্বার্থের হানাহানি? যে দেশ মাতার এত সব সুযোগ্য সন্তান সেই দেশ আজ এত সমস্যায়? না থাক প্রশ্ন করে লাভ নেই, দেশদ্রোহীর তকমা লেগে যেতে পারে। তার থেকে আমরা পিপুফিশুর দলে নাম লেখাই, কমসে কম এই প্রবাদটি সত্যি তো হবে – আপনি বাঁচলে বাপের নাম। 

(২০০৮ সালের ২৬/১১ র হামলায় নিহত সকল আত্মার শান্তি কামনা করি, সাথে আশা করি দেশ তাঁদের বলিদানকে ভুলবে না, এই হামলার পিছনে দোষীরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই লুকিয়ে থাকুক না কেন তাঁদের খুঁজে বের করে চরম শাস্তি দেওয়া হবে। জয় হিন্দ, বন্দেমাতরম।) 


No comments:

Post a Comment