Tuesday 8 November 2016

বর্তমান ৫০০ ও ১০০০ টাকা অচল – এক অন্য ৮/১১ ভারতে?



বর্তমান ৫০০ ও ১০০০ টাকা অচল – এক অন্য ৮/১১ ভারতে?

কাল সন্ধ্যে থেকে বাজার সরগরম, এটিএমে লম্বা লাইন, নিউজ চ্যানেল খুলে শঙ্কিত মুখে আপামর ভারতবাসী, সবারই কি হয় কি হয় ভাব? বাঙালী তো আর এক কাঠি সরেস, সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় করে ফেলছে পক্ষে/ বিপক্ষে হাজারো মতামত দিয়ে। কোথাও গেলো গেলো রব তো কোথাও সাধুবাদ। 

কি পদক্ষেপ নিলো আমাদের সরকার?

কাল মধ্যরাত থেকেই পাঁচশো এবং এক হাজার টাকার নোট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। আগামী ১০ নভেম্বর থেকেই সম্পূর্ণ নতুন নকশা সম্বলিত নতুন পাঁচশো এবং দু হাজার টাকার নোট চালু করতে চলেছে রিজার্ভ ব্যাংক। নতুন ৫০০ টাকার নোটের একটি দিকে থাকবে গান্ধীজির ছবি এবং উলটোদিকে থাকবে লালকেল্লার ছবি। আর নতুন ২০০০ টাকার নোটের একদিকে থাকছে গান্ধীজি ও অন্যদিকে ভারতের পাঠানো মঙ্গলযানের ছবি। উপরন্তু ২০০০ টাকার নোট থাকবে NGC (Nano GPS Chip) সমৃদ্ধ। সংক্ষেপে একটু জেনে নি কি এই NGC?

New Rs. 2000 currency is designed in mind to eradicate the black money issue using state of the art indigenous nano technology, every Rs. 2000 currency note is embedded with NGC (nano GPS Chip)

How the embedded NGC Technology Works?

The unique feature of NGC is it doesn’t need any power source. It only acts as a signal reflector. When a Satellite sends a signal requesting location, the NGC reflects back the signal from the location, giving precise location coordinates and the serial number of the currency back to the Satellite, this way every NGC embedded currency can be easily tracked and located even if it is kept 120 meters below ground level. The NGC can’t tampered with or removed without damaging the currency note.

How will this help eradicate black money menace?

Since evry NGC embedded currency can be tracked. The Satellite can identify the exact amount of money stored at a certain location. If arelatively high concentration of currency is found a certain location for a longer period of time at suspicious locations other than banks and other financial institutions. The information will be passed on to the Income Tax Department and other Secuirity Agencies for further investigation.
 

তাহলে বন্ধুরা সহজেই অনুমান করতে পারছেন সুফল কি হতে পারে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায় - আজ থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট সম্পূর্ণ কাগজের টুকরোয় পরিণত হবে। সরকারের প্রধান লক্ষ্য দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসাধু ব্যক্তি যাদের কাছে কোটি কোটি এরকম নোট গোপনে রাখা আছে। সেইসব গোপন অঘোষিত ধন আজ থেকে নিছক ছাপানো এক টুকরো কাগজে পরিণত হয়ে যাবে। পাশাপাশি সরকারের লক্ষ্য ৫০০ ও ১০০০ টাকার তাবৎ জাল নোটের কার্যকারিতা খতম করে দেওয়া। স্বাভাকিভাবেই যারা আতঙ্কিত হচ্ছেন বা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তাঁরা নিরাপদেই থাকতে পারেন কারন সরকার সাধারণ সৎ নাগরিকদের কোনও সংকটে পড়তে দেবে না, তাই একঝাঁক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

এখন এই ব্যবস্থাগুলি জেনে নেওয়া যাক -

১) ১০ নভেম্নর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ও পোস্ট অফিসে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট জমা করতে হবে। ১০ নভেম্বর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে। ২৫ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিন্তু নির্দিষ্ট সচিত্র পরিচয়পত্র কাউন্টারে দেখিয়েই ওই নোটবদল প্রক্রিয়া করতে হবে। এই সময়সীমার মধ্যেও যাঁরা নোট বদল করে উঠতে পারবেন না তাঁদের আরও একটি শেষ সুযোগ দেওয়া হবে। সেটি হল ৩০ ডিসেম্বরের পর রিজার্ভ ব্যাংকে গিয়ে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে নোট বদল করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনও তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। কারণ হাতে থাকছে ৫০ দিন। তবে মনে রাখতে হবে একদিনে আপাতত চার হাজার টাকার বেশি মূল্যের নোটবদল করা যাবে না। কিছুদিন পর এই ৪ হাজার টাকার উর্ধসীমা বাড়ানো হবে। অতএব সৎ ভারতবাসীর নিজেদের টাকা নিজেদেরই থাকবে, বিপদে পড়বে অসাধু কালো টাকার কারবারীরাই। কারণ যাদের বাড়িতে ও অন্যত্র অসংখ্য অঘোষিত ৫০০ ও ১০০০ টাকার পাহাড় রয়েছে, তারা ওই টাকা পোস্ট অফিস বা ব্যাংকে জমা করতে পারবে না। সেটা করতে হলে আয়কর দপ্তরের কাছে হিসাব দেখাতে হবে এই সম্পদ কোথা থেকে এল? আর ব্যাংকে এই নোটবদল প্রক্রিয়াটির ভিডিও গ্রাফি করা হবে গোপনে। 

২) হাসপাতাল, শবদাহ কেন্দ্র, ওষুধ কেনা, ট্রেন ও বিমানের টিকিট কেনা, সরকারের সমবায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্র, দুগ্ধ বিক্রয় কেন্দ্র ইত্যাদি জরুরি তথা আপৎকালীন পরিষেবার ক্ষেত্রে আজ থেকে ৭২ ঘন্টা অতিরিক্ত সময়সীমা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এইসব পরিষেবার ক্ষেত্রে পুরানো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার .নোট গ্রহণ করতে হবে। 

২) আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার ব্যাংক এবং এটিএম বন্ধ থাকবে। তবে কিছু এলাকায় এটিএম দুদিনও বন্ধ থাকতে পারে। আপাতত এটিএম থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করেই তোলা যাবে। ব্যাংক এবং পোস্ট অফিসে গিয়ে যারা টাকা তুলবেন তাদের ক্ষেত্রে দিনে সর্বোচ্চ ১০০০০ টাকা এবং এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্তই তোলা যাবে। অনলাইন ব্যাংকিং, চেক, ডিমান্ড ড্রাফট ইস্যু করা কিংবা জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। একইভাবে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড দিয়ে শপিং কিংবা কোনও লেনদেনের ক্ষেত্রে নয়া নিয়ম চালু হচ্ছে না।

এবার দেখে নেওয়া যাক এই ব্যবস্থায় কারা কারা অসুবিধার সম্মুখীন হবে?

এটা ঠিক যে কোনও কঠিন, কড়া পদক্ষেপে কিছু সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়ে। দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষরা কিছু সমস্যায় পড়বেন। বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি চলে ৫০০ টাকার নোট, সেই নোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় এবং তার বদলে যথেষ্ট ১০০ টাকার নোটের জোগান না-থাকায় গৃহস্থরা হয় তাঁদের কাজ দেবেন না, না হয় আগামী ক’দিন টাকা মেটাবেন না। চা-বাগান বা আবাসনের মতো জায়গায়, যেখানে দৈনিক মজুরিতে অনেকে কাজ করেন, সেখানে বেতন মেটানোর ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা তৈরি হল। কারণ, এই দুই ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় টাকা আগাম তুলে রাখা হয়, এবং তা মূলত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে। চা-বাগানে শ্রমিকদের খাদ্যশস্য জোগানেও সমস্যা হবে বলে বহু বাগানের ম্যানেজারেরা যেমন আশঙ্কা করছেন, তেমনই আবাসন শিল্পে শ্রমিকদের দৈনন্দিন খাওয়ার খরচ মেটানো নিয়ে চিন্তায় প্রোমোটারেররা। নিম্ম আয়ের আম আদমিও বেশ সমস্যায় পড়বেন, যারা খুচরো বাজারে ব্যাবসা করে দিন নির্বাহ করেন তাঁরা টাকার অভাবে খুচরো বাজারের বিক্রেতারা কাঁচামাল তুলতে পারবেন না। যেটুকু তুলবেন তারও খানিকটা ধারে বেচতে বাধ্য হবেন। ফলে জিনিসপত্রের দাম চড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিপাকে পড়বেন চাষিরাও। কারণ, সবে ধান কাটা হয়েছে। আগামী ক’দিন তা বিক্রি করা কঠিন হবে। পাশাপাশি চলছে গম ও রবি ফসল বোনার কাজ। তার জন্য সার এবং বীজ কেনাও ধাক্কা খাবে।

আমাদের মধ্যবিত্তদের সমস্যাও কিছু কম নয়, অনেকের বাড়িতেই এখন খুব বেশি ১০০ টাকার নোট থাকে না। কিন্তু আগামী দু’দিন এটিএম থেকে টাকা তোলারও আর কোনও উপায় নেই। বুধ ও বৃহস্পতিবার সব এটিএম বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করে দিয়েছে কেন্দ্র। তার পর দৈনিক দু’হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কাল থেকেই নতুন ৫০০ টাকা ও ২০০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হবে বলে ঘোষণা করলেও তা সাধারণ মানুষের হাতে আসতে বেশ কয়েক দিন লেগে যাবে। দেশের বাজারে এখন ১৬৫০ কোটি ৫০০ টাকার নোট রয়েছে আর ১০০০ টাকার নোট রয়েছে ৬৭০ কোটি, এত নোট রাতারাতি বদলে দেওয়া কার্যত অসম্ভব। তা ছাড়া নিশ্চয়ই নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোটের মাপ আলাদা হবে তাই সেগুলো এটিএমে চালাতে গেলে এটিএম-গুলিতে প্রযুক্তিগত বদল আনতে হবে, সেটাও সময়সাপেক্ষও। 

কালো টাকা বা জাল টাকার রমরমা কমবে কি?

আমাদের দেশে কালো টাকা বেশি লেনদেন হয় আবাসন ক্ষেত্রে এবং জমির কেনাবেচায়, নতুন ব্যবস্থায় চিহ্নিত হবার সুযোগ বেশি, যাঁরা বিরাট পরিমাণে নগদ জমা করবেন, আয়কর দফতরের পক্ষে তাঁদের চিহ্নিত করে নজরদারি করা সহজ হয়ে যাবে। তবে রাঘব বোয়াল কটি ধরা পড়বে সেবিষয়ে সন্দেহ থেকেই গেলো, কারন বড় মাপের কালো টাকার ব্যবসায়ীদের টাকা খাটে অলংকারে, সোনায়, অথবা বিদেশে তাই বিদেশ থেকে কিভাবে কালো টাকা ফিরবে সেই চিন্তা রয়েই গেলো।

তবে এই নতুন বাবস্থায় পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই বিপাকে পড়বে, তাঁরাই যে এদেশে বিপুল পরিমানে জাল টাকা ঢুকিয়েছে, সেটা এই তথ্যটি দেখলে পরিস্কার হয়ে যাবে - গত পাঁচ বছরে অর্থনীতিতে চালু নোটের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনীতির বহর বেড়েছে ৩০ শতাংশ। অথচ পাঁচশো টাকার নোটের সংখ্যা বেড়েছে ৭৬ শতাংশ, ১০০০ টাকার নোটের সংখ্যা ১০৯ শতাংশ। ফলে আয়-ব্যয়ের তুলনায় বড় নোটের ব্যবহার যে মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে, সেটা স্পষ্ট, সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে জাল নোটের সম্ভাবনা। জাল টাকা বড় মাপের নোটে না ছাড়লে পড়তায় পোষায় না, অথচও ২০০০ টাকার নোট থাকবে NGC (Nano GPS Chip) সমৃদ্ধ তাই বেশ বড় ধাক্কা জাল নোটের কারবারিদের।

আর কারা কারা অসুবিধায় পড়বেন?

নির্বাচনী প্রচার ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলির সবথেকে বড় হাতিয়ার হল কালো টাকা৷ ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কাছ থেকে হামেশাই কালো টাকার একটা অংশ পেয়ে থাকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলি৷ ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়ে গেল, এবার তাহলে নতুন করে অনুদান নিতে হবে৷ কিন্ত্ত সেটাও তো চেকে নিতে হবে, আর চেকে খুব বেশি ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি টাকা দেবেন না, ক্যাশে যে লেনদেন হয়, সেটা তো মূলত কালো টাকা৷ তা হলে প্রার্থী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলি খরচ সামলাবে কিভাবে? 

বিভিন্ন চিটফ্যান্দের থেকে, তোলাবাজি থেকে রাজনৈতিক নেতা, নেত্রীরা ও ভ্রষ্ট প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা এখন কি উপায়ে টাকা নেন সেটাই দেখার। 

স্যার জি আমার কিছু প্রশ্ন আছে?

মূলত পাকিস্তানেই জাল নোট ছাপা হয় ভারতের ক্ষতি করবার জন্যে, আসল টাকার সঙ্গে তার এতটাই মিল যে সাধারণ মানুষ ধোঁকা খান অনায়াসে। এই প্রয়াস কে বন্ধ করার জন্যে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই সাধুবাদের যোগ্য। কিন্তু নতুন ৫০০, ২০০০ টাকার নোটও যে জাল হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? সোশ্যাল মিডিয়াতে তো এখনি নতুন ৫০০, ২০০০ টাকার ছবি চলে এসেছে, তাহলে ভাবের ঘরে সিঁধ কাটছে কোন জনা? আমরা সবাই জানি কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে এইদেশে আসে জাল টাকা, তাহলে কি সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত নয়? বন্ধ করা দরকার সব রকমের ভ্রষ্টাচার, যাতে সীমান্তেই রুখে দেওয়া যায় এই ধরনের ঘৃণ্য উদ্যোগ। পাশাপাশি চুনোপুঁটি ছেড়ে সরকার যেন ঘাঘু রাঘব বোয়াল ধরাতেও মনোনিবেশ করেন। দেশকে ভিতর থেকে ফোঁপরা এইসব রাঘব বোয়ালরাই করে যাচ্ছে দিনের পর দিন ধরে। 

পরিশেষে, অবশেষে

আমাদের দেশে মূল, অন্যতম সমস্যা হল, আমরা সমালোচনা বেশি করি কিন্তু জাতীয় স্বার্থেও ঠিক একজোট হতে পারি না, নিজ স্বার্থে বিন্দুমাত্র ঘা পড়লেই ফুঁসে উঠি। আসুন না রাষ্ট্রের ভুল ভ্রান্তি ধরার পাশাপাশি দেশের স্বার্থে নেওয়া কঠিন পদক্ষেপের পাশে দাড়াই, কালো টাকার ও জাল টাকার বিরুদ্ধে এই লড়াই সব দেশবাসীর, একা কোনও সরকারের নয়। তাই একটু কষ্ট হলেও সরকারের পাশে থেকে ভবিষ্যতের দিকে একটু তাকাই আমরা।

No comments:

Post a Comment